
আপন চাচার হাতে অপহরণের শিকার শিশু আফিয়া জান্নাত আরোয়া’ (০৮)কে উদ্ধারসহ অপহরণ চক্রের দুই অপহরণকারী’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫।বুধবার (১৩ নভেম্বর) শিশু আফিয়া জান্নাত আরোয়াকে উদ্ধারের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান র্যাব -১৫।
গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সাড়ে ৭ টার দিকে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা লিংক রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই অপহরণকারীকে গ্রেফতার ও শিশু আফিয়া’কে উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১৫ সূত্রে জানানো হয়, গত ১১ নভেম্বর (মঙ্গলবার) মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে রামু ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসের চর সিকদারপাড়া এলাকাস্থ এমদাদুল উলুম মাদ্রাসা গেইটের সামনে থেকে শিশু আফিয়া জান্নাত আরোয়া (০৮)কে অপহরণ করা হয়।
ভিকটিম আফিয়া ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডস্থ অফিসের চর সিকদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারুল হকের মেয়ে।
সেই রামু ফতেখাঁরকুল অফিসের চর সিকদারপাড়া অছি উদ্দিন জামাদার নূরানী মাদ্রাসার ২য় শ্রেণীর ছাত্রী। প্রতিদিনের ন্যায় ঐদিন সকাল ৮.২০ মিনিটের সময় মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে ওৎ পেতে থাকা অজ্ঞাত অপহরণকারী চক্র তার পথরোধ করে জোরপূর্বক তাকে সিএনজি যোগে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

বিষয়টি ভিকটিমের পরিবার জানতে পেরে অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধারের লক্ষ্যে ঘটনাস্থল এবং তার আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুজি করেন। পরবর্তীতে ঐদিন সকাল ১১ টার দিকে তার মায়ের মোবাইল নম্বরে কল করে ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা মুক্তিপণ দাবীসহ তাদের দাবী মত মুক্তিপণের টাকা না দিলে অপহৃত শিশুটিকে মানব পাচারকারীর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে দিবে অথবা খুন করে লাশ গুম করে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয় অপহরণকারী’রা।
এ ঘটনায় শিশু আফিয়া’র মা বাদী হয়ে রামু থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০২০) এর ৭/৮/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং ৩২, তাং ১২/১১/২০২৪।

এনিয়ে,তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অপহরণকারীদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হয়ে মামলা দায়েরের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই দুই অপহরণকারী গ্রেফতার ও অপহরণের শিকার শিশুটি’কে উদ্ধার করা হয়।
এসময় অপহরণকারীদের থেকে ৩টি মোবাইল, ০১টি হাত ঘড়ি, ০১টি এটিএম কার্ড এবং নগদ ৯,০০০/- (নয় হাজার) টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত অপহরণকারী’রা হলেন, রামু ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সিকদার পাড়া অফিসের চর এলাকার মোঃ নুরুল আবছার এর পুত্র
হাসনাইনুল হক প্রকাশ নাঈম (২৩) ও একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পূর্ব দ্বীপ ফতেখাঁরকুল এলাকার আব্দুস ছোবহান এর পুত্র মোঃ শাহীন (২৫)।
র্যাব-১৫ সূত্রে আরো জানানো হয়, অপহরণকারী’রা দু’জনই বন্ধু এবং গ্রেফতারকৃত হাসনাইনুল হক প্রকাশ নাঈম ভিকটিম আফিয়া জান্নাত আরোয়া’র আপন চাচা। গ্রেফতারকৃত নাঈম বিদেশ যাওয়ার জন্য পরিবারের কাছে টাকা চাইলে বাসা থেকে টাকা না দেয়ায় সে তার বন্ধু গ্রেফতারকৃত শাহীন’কে নিয়ে তারই আপন ভাতিজিকে অপহরণের পরিকল্পনা করে।
পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে সিএনজিতে তুলে প্রথমে ঈদগাঁও এর দিকে নিয়ে যায়। চতুরতার কৌশল অবলম্বন করে তারা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের জন্য ঈদগাঁও থেকে চৌফলদন্ডি এবং চৌফলদন্ডি থেকে কুতুপালং এ নিয়ে যায় শিশুটি’কে।
তারপর সেখানে গ্রেফতারকৃত শাহীনের এক চাচার বাসায় অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে ভিকটিমের পরিবারে কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ মুক্তিপণ দাবী করে। এছাড়া ভিকটিমের পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি দেয়ার পাশাপাশি তারা নেয় নাটকীয়তার আশ্রয়। ভিকটিমের শরীরে নকল ব্যান্ডেজ করে ছবি তুলে পাঠানো হতো পরিবারের কাছে। যাতে ভিকটিমের পরিবার মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে তাড়াতাড়ি তাদের চাহিদা মোতাবেক মুক্তিপণ দিয়ে দেয়। এরই মধ্যে ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে ৭০,০০০/- (সত্তর হাজার) টাকা মুক্তিপণ আদায় করে পুনরায় নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষে তারা কুতুপালং থেকে মেরিন ড্রাইভ রোড হয়ে কলাতলী এবং কলাতলী থেকে লিংক রোড এলাকায় আসলে র্যাবের হাতে আটক হয়।
উদ্ধারকৃত ভিকটিমসহ গ্রেফতারকৃত অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের রামু থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।