আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে চিকিৎসক অপহরণে দুই আসামি কারাগারে

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রামের এক চিকিৎসককে অপহরণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় দুই আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী সহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন। রাউজান এলাকায় চাঁদা না পেয়ে চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম নামে ওই চিকিৎসককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে উক্ত মামলার একই আদেশে অপর আরেকজনের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। এর আগে, তারা আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন, পাইওনিয়ার হসপিটালের পরিচালক মনজুর হোসেন এবং সুপারভাইজার মো. জাহাঙ্গীর আলম। জামিনপ্রাপ্ত আসামি হলে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান ডা. ফজল করিম ওরফে বাবুল।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়ার বাসিন্দা চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় পথেরহাটে তার পরিচালিত প্রাইভেট চেম্বারে (অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার) রোগী দেখছিলেন। এসআই টোটন মজুমদার তাকে বিএনপির কমিটিতে নাম থাকায় ক্রসফায়ার দেওয়ার হুমকি দেন; অন্যথায় বাঁচতে চাইলে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় এসআই টোটন মজুমদার, এসআই শাফায়েত আহমদ, রাউজান থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমকে চেম্বারে গিয়ে অপহরণ করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে নোয়াপাড়ার অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে তাকে সাদা পোশাকে অপহরণ করা হয়। এরপর তার মাথায় পিস্তল রেখে চিৎকার না করতে বলে এবং আসামিরা চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মারধর করে। পরে এসআই টোটন মজুমদারসহ আসামিরা মিলে ২০১৫ সালে ৪ এপ্রিল তারিখের একটি মিথ্যা মামলা সাজায়। সেই মামলার প্রেক্ষিতে ১৫ এপ্রিল রাত ৮ টার দিকে গ্রেপ্তার করে প্রায় ৮ ঘণ্টা পর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ আসামি পাইওনিয়ার হসপিটালের চেয়ারম্যান ডা. ফজল করিম ওরফে বাবুল সহায়তায় ওই মিথ্যা মামলার চার্জশিট দিয়ে মামলার বিচার নিষ্পত্তির জন্য ২০১৫ সালের ১৮ জুন সংশ্লিষ্ট গ্রাম আদালতে পাঠান।
তবে এর আগের দিন ১৭ জুন মামলাটির ভিকটিম মো. রাসেল শেখ ওরফে মো. রাসেল ড্রাইভার হলফনামায় উল্লেখ করেন, প্রকৃতপক্ষে কথিত ওই ঘটনার তারিখে তার সাথে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমের দেখা হয়নি বা এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বাদী কেন ওই মামলাটি করেছে তার জানা নেই। এই বিষয়ে তাকে কোনো ডাক্তার পরীক্ষা করে নাই। তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো রকম জিজ্ঞাসাবাদও করে নাই।
চলতি বছরের (২০২৪) ১৩ আগস্ট আসামি পাইওনিয়ারের সুপারভাইজার মো. জাহাঙ্গীর আলমও হলফনামা ঘোষণা করেন, রাউজান থানার এসআই টোটন মজুমদার, সাবেক এসআই শাফায়েত আহমদ, তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আদেশে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চাপে পড়ে মিথ্যা মামলায় বাদী হিসেবে যুক্ত হন। ওই মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করলে তার কোনো আপত্তি নেই। ২৯ আগস্ট গ্রাম আদালতে মামলাটি বাদী ও সাক্ষীর হলফনামা বিবেচনা করে এবং অভিযোগকারী পক্ষের অনুপস্থিতি ও মিথ্যা অভিযোগ হিসেবে প্রমাণ হওয়ায় খারিজ করা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এড.নাজমুল বলেন আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জামিনপ্রাপ্ত হয়ে আজ বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদের মধ্যে দুইজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ এবং পুলিশি প্রতিবেদন জমা পর্যন্ত অপর একজনকে জামিন দেন। এর আগে চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভুক্তভোগী চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, রাউজান থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, উপপরিদর্শক (এসআই) টোটন মজুমদার, রাউজান থানার সাবেক এসআই শাফায়েত আহমদ।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।


চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গাঙ্গেয় বদ্বীপের সংগীত ব্যক্তিত্ব যোগী স্বপন কুমার দাশ’র রচিত আধ্যাত্মিক ও দেহতত্ত্ব বিষয়ক গান নিয়ে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাংবাদিক কিরন শর্মার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলক ও প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম এর পরিচালক মো.মাহফুজুল হক। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর প্রখ্যাত সাধক শ্রীমৎ স্বামী সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী’জীকে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ‘খুঁজি তাঁরে’ অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয়।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র ঘোষ (যুদ্ধকালিন কমান্ডার), আব্দুর রহিম (লোক ও মরমি শিল্পী), রূপম ভট্টাচার্য (সাংবাদিক), স ম জিয়াউর রহমান(সাংবাদিক), দিদারুল ইসলাম (সংগীত পরিচালক ও কন্ঠ শিল্পী), তন্দ্রা দাশগুপ্তা, সংগীত শিল্পী সঞ্জয় রক্ষিত সহ প্রমুখ। সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত

ছিলেন পাপিয়া আহমেদ (সংগীত প্রযোজক বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম), অপু বর্মন (সংগীত শিল্পী বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন এবং সংগীত শিক্ষক জেলা শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রাম), অপু সেনগুপ্ত (বিশিষ্ট গীতিকার বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন), দীপ্ত দত্ত সংগীত শিল্পী (বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন)।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন, খ্যাতনামা মরমি কন্ঠ শিল্পী শিমুল শীল, বাউল শিল্পী বাবুল শীল, অভিষেক দাশ, বাউল জুয়েল দ্বীপ, শিউলী চৌধুরী, আনন্দ প্রকৃতি(মো:তৌহিদুল ইসলাম), আধাত্মিক শিল্পী সুরনাথ, কাওয়ালী শিল্পী মেঘলা। ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি প্রতিযোগিতার সেরা কন্ঠ শিল্পী বাঁধন ঘোষ, ইন্দ্রিলা ঘরজা, মিম দাশ, অধরা চৌধুরী রাত্রি, আরাধ্যা মজুমদার, সৈয়দ রাসতিন, অরূপ কুমার শীল, ঊর্মি নাগ সংগীত পরিবেশন করেন।

যন্ত্র সংগীত শিল্পীতে ছিলেন- কীবোর্ডে রুবেল ঘোষ, অক্টোপ্যাডে পাপন, তবলায় উৎস, বাংলা ঢোলে হৃদয় বাঁশিতে নিলয়। সংগীত তত্বাবধানে যোগী স্বপন কুমার দাশ, অনুষ্ঠান তত্বাবধানে মো: মোহসীন(সাধারণ সম্পাদক, ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি সংসদ)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মো: সাইফুর রহমান ও ববিতা ইসলাম।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ