আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

ওয়ার্ড সচিবদের সেবা কার্যক্রমে সচেষ্ট থাকার আহ্বান মেয়র ডা. শাহাদাতের

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে ওয়ার্ড সচিবদের আরও দায়িত্বশীল ও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বিশেষভাবে বিভিন্ন সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে জনভোগান্তি এড়াতে দ্রুত এবং কার্যকর সেবা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।

বৃহস্পতিবার চসিক নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ওয়ার্ড সচিবদের সাথে মতবিনিময় সভায় মেয়র বলেন, “জনগণের অধিকার এবং তাদের সেবার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের গাফিলতি সহ্য করা হবে না। প্রতিটি নাগরিকের প্রয়োজনীয় সনদ পেতে যেন দুর্ভোগ না পোহাতে হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ওয়ার্ড পর্যায়ে সেবার মানোন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

মেয়র ডা. শাহাদাত বিভিন্ন সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে বিলম্ব এবং জটিলতার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “একটি জন্মনিবন্ধন বা অন্যান্য সনদ পেতে দিনের পর দিন ঘুরে বেড়ানো নাগরিকদের জন্য অমানবিক। এ ধরণের অসুবিধা দূর করতে আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষিত জনবলের ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। জনগণ আমাদের সেবা পেতে আসে, দুর্ভোগ নিয়ে ফিরে যাওয়া তাদের প্রাপ্য নয়। জনগণকে ভোগান্তি দেয়ায় ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড সচিবকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেছি এবং কয়েকজনকে বদলি করেছি। জনভোগান্তি সৃষ্টি করলে কোন ছাড় নেই।”

তিনি ওয়ার্ড সচিবদের প্রতি হুঁশিয়ারি উ”চারণ করে বলেন, যেসব কর্মচারী দায়িত্বে অবহেলা বা স্বজনপ্রীতির কারণে নাগরিক সেবা ব্যাহত করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যব¯’া নেওয়া হবে।
সভায় ওয়ার্ড সচিবদের প্রতি মেয়র নির্দেশনা দেন, সেবা গ্রহণকারীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা এবং সময়মতো সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের আ¯’া অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, “আপনাদের কাজের পদ্ধতি আরও স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। কোনো সেবা প্রত্যাশীর অভিযোগ যাতে উপেক্ষিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

ডা. শাহাদাত আরও বলেন, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদসহ অন্যান্য সরকারি সেবার ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নগরবাসী যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সনদ হাতে পান, তা নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের কথা তিনি জানান।

মেয়র সভায় উপস্থিত ওয়ার্ড সচিবদের আরও উদ্যমী হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “চট্টগ্রামের উন্নয়নে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নগরীকে আরও আধুনিক এবং পরিবেশবান্ধব করে তুলতে হবে। ওয়ার্ড পর্যায়ে টিসিবির পণ্য সরবরাহ এবং পরি”ছন্ন কার্যক্রম ঠিকমতো হচ্ছে  কীনা সে বিষয়ে ওয়ার্ড সচিবরা সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। ”

সভায় ওয়ার্ড সচিবরা তাদের কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেন এবং কাজের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেন। মেয়র তাদের দেওয়া তথ্য এবং পরামর্শ শোনার পাশাপাশি তাদের কার্যক্রম নিয়মিত মূল্যায়নের নির্দেশ দেন।

মেয়র জানান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তিনি বলেন, “একটি স্বচ্ছ, কার্যকর এবং জবাবদিহিমূলক প্রশাসনই নাগরিক সেবা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিনসহ ৪১টি ওয়ার্ডের সচিব।

 

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রামে স্কুল ও দোকানে আগুন

চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড থানাধীন কলসি দিঘির পাড় উত্তর রেল গেট এলাকায় একটি কেজি স্কুল ও পাশের দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে হযরত শাহ আলী কেজি স্কুল ও দোকানে আগুন লাগে।

সিইপিজেড ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহাদাত হোসেন জানান, ভোরে খবর পেয়ে সোয়া ৬টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। প্রায় ৪০ মিনিটের চেষ্টায় সকাল পৌনে ৭ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। তবে দ্রুত পদক্ষেপে প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তা জানা যায়নি।

মশা নিধনে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহার শুরু চসিকের।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রথমবারের মতো মশা নিয়ন্ত্রণে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু করেছে। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্দেশক্রমে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মো. আশরাফুল আমিন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ শরফুল ইসলাম মাহি, কীটতত্ত্ববিদ রাশেদ চৌধুরী এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মশা নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর আগে গত ২৬ মার্চ নগরীর ১৭ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ডের সৈয়দ শাহ রোডের সামনের খালে পরীক্ষামূলকভাবে বিটিআই লার্ভিসাইড প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে আজ থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিটিআই প্রয়োগ শুরু করল চসিক।

চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ফগিং, লার্ভিসাইড ছিটানো, নালা–নর্দমা পরিষ্কার, আবর্জনা অপসারণ এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের আমেরিকান প্রযুক্তির বিটিআই ব্যবহারে মশার লার্ভা ধ্বংসে আরও কার্যকর ফল পাওয়া যাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

বিটিআই হলো একটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ব্যাকটেরিয়াভিত্তিক লার্ভিসাইড, যা বিশেষভাবে মশা, ব্ল্যাক ফ্লাই ও ফাঙ্গাস গ্ন্যাটের লার্ভা দমনে ব্যবহৃত হয়। এটি পানিতে প্রয়োগ করার পর লার্ভা খাদ্যের সঙ্গে বিটিআই গ্রহণ করে এবং ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদিত ক্রিস্টাল প্রোটিন টক্সিন লার্ভার পরিপাকতন্ত্রে কার্যকর হয়ে তাদের দ্রুত নিধন ঘটায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিটিআই মানুষের শরীর, গৃহপালিত প্রাণী, মাছসহ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর নয়; এমনকি উদ্ভিদ ও জলজ বাস্তুতন্ত্রেও কোনো বিষাক্ত প্রভাব ফেলে না। বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়ার মতো বাহক–বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে এটি একটি নিরাপদ ও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত সমাধান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ