আজঃ মঙ্গলবার ২৫ মার্চ, ২০২৫

অবসর কাটুক দেশীয় সংস্কৃতি চর্চায়

লেখক: মো: ইয়াসির আরাফাত

অবসর মানবজীবনের এক বহু আকাঙ্ক্ষিত পর্যায়কাল। আমাদের নিত্য দিনের ছুটে চলা যেন এই এক টুকরো অবসর প্রাপ্তির খোঁজে। কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা দিনশেষে একটু প্রশান্তির আশায় থাকি, যখন ব্যস্ততার চাপে অবদমিত শখ ও সুপ্ত ইচ্ছাগুলো বাস্তবে রূপ দেওয়ার সুযোগ আসে। অনেকেই অবসরে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান, কেউবা শখের কাজগুলোর মাধ্যমে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন। কিন্তু কেমন হতো যদি এই অবসর আমরা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি, সাহিত্য ও কৃষ্টির চর্চার মাধ্যমে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারতাম?

বাংলাদেশের সংস্কৃতি হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এখানে মিশে আছে বাঙালি জাতির ইতিহাস, জীবনধারা, আচার-অনুষ্ঠান, লোকসংস্কৃতি, গান, নৃত্য, নাটক, সাহিত্য এবং আরও নানা ধরণের সাংস্কৃতিক উপাদান। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আমাদের জাতিসত্তার পরিচয় বহন করে, যা বহির্বিশ্বের কাছে আমাদের আলাদা করে তুলে ধরে। এছাড়াও, বাংলাদেশের সাহিত্য জগৎ অত্যন্ত সমৃদ্ধ। চর্যাপদ থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্দীন, জীবনানন্দ দাশের সাহিত্য আমাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে। তেমনি গ্রামবাংলার পালাগান, জারি-সারি, ভাটিয়ালি, বাউলগান, গম্ভীরা, পুঁথি-পাঠ আমাদের লোকসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ, বর্তমানের নগরায়নের প্রভাবে এবং প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের কারণে এগুলো দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।

অবসরে যদি আমরা মানসিক প্রশান্তি লাভের জন্য কোনো সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত না হই, তবে একাকীত্ব ও হীনম্মন্যতা আমাদের গ্রাস করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অবসর সময়ে কোনো সৃজনশীল কাজ বা সাংস্কৃতিক চর্চা না করলে বিষণ্নতা ও অবসাদ দেখা দিতে পারে। তাই অবসর সময়ে দেশীয় সাহিত্য, সংগীত, নাটক, লোকসংস্কৃতি চর্চা করলে মনের খোরাক যেমন মিটে, তেমনি আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্যও টিকে থাকে। বর্তমানে, বিশ্বায়নের কারণে দেশীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির ওপর বিদেশি সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। নগরায়ন, প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এবং আধুনিকতার নামে পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণ আমাদের অনেক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক চর্চাকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে। এক সময় গ্রামবাংলার প্রতিটি অঞ্চলে লোকগানের আসর বসত, পুঁথি পাঠের প্রচলন ছিল, এবং মঞ্চ নাটকের জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক। কিন্তু, এখন এসব ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ডিজিটাল বিনোদনের প্রতি এতটাই আসক্ত হয়ে পড়ছে যে তারা নিজস্ব সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, অবসর সময়ে দেশীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্য চর্চা একদিকে আমাদের মননশীলতা ও সৃজনশীলতা বাড়াবে, অন্যদিকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করবে। দেশীয় সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রখ্যাত সাহিত্যিকদের বই পড়া, নিজে কবিতা, গল্প বা প্রবন্ধ লেখা এবং সাহিত্য আলোচনা চক্রে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে। সঙ্গীত ও নৃত্য চর্চায় বাউল, ভাটিয়ালি, নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, জারি-সারি ইত্যাদির চর্চা করা এবং লোকনৃত্য শেখা ও শেখানো যেতে পারে। স্থানীয় নাট্যদল গঠন করা, মঞ্চনাটক মঞ্চায়ন করা এবং লোকনাট্যের চর্চার মাধ্যমেও দেশীয় সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তাছাড়া, গ্রামীণ হস্তশিল্প, নকশি কাঁথা, মৃৎশিল্প, শোলাশিল্প ইত্যাদির চর্চা করে এগুলোর প্রচার ও প্রসার ঘটানো যেতে পারে। প্রবীণদের কাছ থেকে গ্রামীণ গল্প ও ঐতিহাসিক কাহিনি সংগ্রহ করে তা লিখে রাখা ও প্রচার করা গেলে সেটি হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অমূল্য সম্পদ।

উপরন্তু, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতির প্রচার ও সংরক্ষণ সম্ভব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে লোকসংস্কৃতি, সাহিত্য ও ঐতিহ্য সহজলভ্য করা যেতে পারে। সাথে সাথে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে লোকসংস্কৃতিকে নতুনভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশীয় হস্তশিল্প ও কারুশিল্প আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে দেশীয় সংস্কৃতির মিলবন্ধন ঘটালে এটি টিকে থাকবে, বিকশিত হবে এবং বিশ্ব দরবারে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। এভাবে, আমরা একই সাথে আধুনিক প্রযুক্তি ও ধারার সংস্পর্শে থেকে আমাদের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সকল সংস্কৃতি ও কৃষ্টি পুনরুজ্জীবিত করতে পারি।

দেশীয় সংস্কৃতি আমাদের আত্মপরিচয়ের মূল ভিত্তি। একে অবহেলা করা মানেই আমাদের শিকড়কে দুর্বল করে ফেলা। তাই অবসর সময়কে কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং মননশীল ও সৃজনশীল কাজের জন্য ব্যয় করা উচিত। দেশীয় সাহিত্য, সংগীত, নাটক, লোকসংস্কৃতি ও কৃষ্টির চর্চার মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করতে পারি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ভান্ডার রেখে যেতে পারি। তাই আমাদের উচিত অবসর সময়কে মূল্যবান করে তোলা, যেন আমরা আমাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের গৌরব ধরে রাখতে পারি।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা জাতি কখনোই বিস্মৃত হবে না- চসিক মেয়র

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা জাতি কখনোই বিস্মৃত হবে না। একটি শোষণ, বঞ্চনাহীন, মানবিক সাম্যের উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এ দেশের মানুষ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো।’

মঙ্গলবার চট্টগ্রামের শাহ আমানত মাজার প্রাঙ্গনে ‘শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদ’ চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্দ্যেগে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে ইফতার, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন চসিক মেয়র।  

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের কালোরাত্রীতে নির্মম হত্যাযজ্ঞে সংক্ষুব্ধ হযে  চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে বিদ্রোহ করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তখন মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন। ‘

ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, শহীদ জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণায় দিশেহারা জাতি পেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অভয় মন্ত্র। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে নবীন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। হাজার বছরের সংগ্রাম মুখর এ জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। যাদের জীবন মরণ লড়াইয়ে ৯ মাসে আমরা বিজয় লাভ করেছি সেইসব অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা জাতি কখনোই বিস্মৃত হবে না। ‘

শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা আহসান উল্লাহ খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায়  বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হযরত শাহ আমানত (রাঃ) আওলাদে পাক, নগর বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা  আলহাজ শাহজাদা মুহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ খান, সিনিয়র সাংবাদিক ওয়াহিদ জামান,শাহজাদা হাবিব উল্লাহ খান মারুফ, নগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শওকত আজম খাজা, বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কাজী বেলাল, বিএনপি নেতা সৈয়দ আবুল বশর।

পরে ২৫ শে মার্চের কালরাত্রি ও মহাান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে  দোয়া মোনাজাত করা হয়।

ঐতিহ্যবাহী জামদানি বাংলাদেশের গৌরব: চসিক মেয়র

দেশপ্রেম আমাদের মধ্যে না আসবে ততক্ষণ আমরা উন্নতি করতে পারবো না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেছেন, বিদেশি পণ্য বর্জন ও দেশিয় পণ্য ব্যবহার করে হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ করতে হবে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী জামদানি বাংলাদেশের গৌরব। দেশি বস্ত্র ব্যবহারের ফলে আমাদের বস্ত্র ও জামদানি শিল্প প্রাণ ফিরে পাবে এবং দেশিয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হবে।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টার মাঠে বাংলাদেশ জামদানি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে রমজান মাসব্যাপী ঈদ বস্ত্রমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিরি এসব কথা বলেন।
ইয়াসিন আরাফাতের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মেলার উদ্যোক্তা মো. জহির আলম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহ আলম, চট্টগ্রাম দায়রা জজ আদালত বিভাগীয় পিপি এড. কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ।

প্রধান অতিথি ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে চাঁদরাত পর্যন্ত চলবে।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেবারপাড় ইউনিট বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন সওদাগর, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন, যুবদল নেতা জিহাদুর রহমান জিহাদ, নুর হোসেন উজ্জ্বল, শফিক আহম্মেদ মুরাদ, নুরুল ইসলাম, ফারুক সিকদার, মোহাম্মদ কামাল, মো. হাসেম, তৈয়ব হাসান, ব্যবসায়ী হান্নান শিকদার, শহীদ আকতার বাবুল, ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন সহ নগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ