আজঃ শনিবার ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

রূপগঞ্জে কৃষি জমির টপসয়েল যাচ্ছে অবৈধ ইটভাটা। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মানুষ

মাহাবুবুর রহমান রনি, রূপগঞ্জ(নারায়ণগঞ্জ)প্রতিনিধি:

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাবো, মাসাবো, আতলাপুর, তেতলাবো, বরপা, আওখাবো, কর্ণগোপ, সাওঘাট, গোলাকান্দাইল, বলাইখা, বেলদি, দেবই, কামালকাঠি, চারিতাল্লুক, বিরাবো, কাঞ্চন পৌরসভাসহ আশপাশের এলাকার অবৈধ ইটভাটায় অবাধে তিন ফসলি কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে। এখন তিন ফসলি জমির টপসয়েল বিক্রির হিড়িক পড়েছে। স্থানীয় ভ‚মিদস্যুদের দাপটে অসহায় সাধারণ কৃষক ও স্থানীয় অধিবাসীরা।

এছাড়া মাটিবোঝাই ভারী ডামট্রাক সড়কে চলার কারণে নষ্ট হচ্ছে রাস্তা। ধুলাবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
বিরাবো ইসলামপুর গ্রামের প্রবাসী আহাদ আলীর স্ত্রী আলেয়া আক্তার বলেন, তার স্বামী ও সন্তান সৌদী প্রবাসী। তাদের অনুপস্থিতিতে ভ‚মিদস্যরা দিন-রাত আমাদের বাড়ির পাশের ধান ক্ষেত বেকু দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যে কোন সময় আমার বাড়িটি সৃষ্ট গর্তে পরে বিলিন হয়ে যেতে পারে। আমি তাদের বাঁধা দেওয়ায় সন্ত্রাসীরা আমাকে হুমকি প্রদান করছে। আমরা এখন চরম নিরাপত্তহীনতায় রয়েছি।
দাউদপুরের খৈসাইর গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিন ফসলী জমির মাটি গভীর করে কেটে ইটভাটায় নেওয়ার পর সৃষ্ট গর্তে আমার জমির সবুজ রংয়ের ধানগাছসহ ধসে পড়ছে। এরই মধ্যে ভ‚মিদস্যূরা আমার ধান ক্ষেতের দুই পাশের জমির মাটি বেকু দিয়ে গভীর করে কেটে নিয়ে গেছে। আশপাশের লোকজন কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা, মামলা, ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। কোনো কোনো ভাটার সামনে কয়লার স্ত‚প থাকলেও আড়ালে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার ভেতরে রয়েছে কাঠের স্ত‚প। আশপাশের গাছগুলো বিবর্ণ। মরেও গেছে অনেক গাছ। এক্সকাভেটর দিয়ে কৃষি ও ফসলি জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। কোনো কোনো জমি ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরে মাটি কাটা হচ্ছে। আর ভেঙে পড়ছে আশপাশের জমি। ইটভাটায় মাটি নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ভটভটির দাপটে সড়কগুলোতে দেখা দিচ্ছে খানাখন্দ। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
কোন জমিতে সবুজ ধান গাছ। আবার কোন জমিতে ভরা গমের শীষ। পাশের জমিগুলো ১৫ থেকে ২০ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। আলু, গম ধানসহ ফসলি জমি কিছুই রেহাই পাচ্ছে না ভ‚মিদস্যুদের হাত থেকে। কৃষি জমির টপসয়েল হারিয়ে কৃষকরা এখন বোবা কান্নায় কাঁদছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধিরীর ইসলামপুর গ্রামের পৈত্রিক সম্পত্তিও ভ‚মিদস্যুদের থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

রূপগঞ্জে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শতাধিক অবৈধ ইটভাটা কৃষিজমির টপ সয়েল গিলে ফেলছে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। হুমকির মুখে পড়ছে জনজীবন। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালালেও থামেনি অনিয়ম। অবৈধ ইটভাটার মালিকদের আন্দোলন, সংগ্রাম, সভা, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে থমকে গেছে প্রশাসনের অভিযান।

জনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থাপিত এসব অবৈধ ইটভাটায় কৃষিজমির টপ সয়েল ব্যবহার করায় উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। জনবসতি এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে কেউ ইটভাটা করতে পারবে না। সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না কোনো ইটভাটার মালিক। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রূপগঞ্জবাসী।
ভোলাবো ইউনিয়নের আতলাপুর এলাকার কৃষক করিম মিয়া বলেন, আমার চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করি। কিন্তু এ বছর পাশের জমিতে ভেকু দিয়ে গভীর খনন করে মাটি কেটে নেওয়ায় আমার জমি ভেঙে পড়েছে। তাই ফসলও করতে পারছি না।

বেদলী এলাকার কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ইটভাটায় মাটি কেটে নেওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে কমছে কৃষি জমি। মাটি পরিবহণে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। তৈরি হয়েছে পরিবেশগত ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। গ্রামীণ সড়কগুলো এক বছরও টিকছে না।
কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে। ইট প্রস্তুতের জন্য বিভিন্ন গ্রামের কৃষি জমি থেকে নেওয়া মাটি স্ত‚প করা হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। এসব ইটভাটার কারণে একদিকে ক্ষতি হচ্ছে ফসলি জমির অন্যদিকে মাটিবাহী ট্রলির আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে সড়কের।

ইটভাটার বেশ ক’জন মালিক বলেন, কৃষক জমির মাটি বিক্রি করছেন তাই কিনেছি। জোর করে তো আর মাটি কাটছি না। আমরা ছাড়াও আরও চারটি ইটভাটা রয়েছে। তারাও কৃষকের কাছ থেকে মাটি কিনছেন। মাটি কিনছি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তারা কোথা থেকে মাটি তুলছেন তা জানা নেই।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ইটভাটায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিয়ম বর্হিভ‚তভাবে কোন কাজ করতে দেওয়া হবে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ, এইচ, এম রাসেদ বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অন্য স্থানের ন্যয় রূপগঞ্জ উপজেলাও রয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, কেউ নিয়মবহির্ভ‚তভাবে ইটভাটা চালালে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

ইরান ওমান উপসাগরে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ইরান ওমান উপসাগরে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে । তেলবাহী জাহাজটিতে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার ১৮ নাবিক রয়েছে। ইরানি গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়- ছয় মিলিয়ন লিটার চোরাচালানকৃত ডিজেল বহনকারী একটি তেলবাহী জাহাজ ওমান উপকূলে আটক করা হয়েছে।

চন্দ্রগঞ্জ থানা পরিদর্শন করেন নবাগত পুলিশ সুপার মো:আবু তারেক

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

লক্ষ্মীপুর জেলার সদ্য যোগদান করা পুলিশ সুপার জেলার বিভিন্ন থানা পরিদর্শন ও থানায় কর্মরত অফিসারদের সাথে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেন।
তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা আকস্মিক পরিদর্শন করেন লক্ষ্মীপুর জেলার নবাগত পুলিশ সুপার মোঃ আবু তারেক। এসময় চন্দ্রগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ও কর্মরত সবাই ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

থানা পরিদর্শনকালে পুলিশ সুপার ফোর্সদের থাকার ব্যারাক ও বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন এবং সকল পুলিশ সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এছাড়াও সকল পুলিশ সদস্যদের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।

উল্লেখ্য চন্দ্রগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোরশেদ আলম চলতি মাসের ৬ তারিখে এ থানায় যোগদান করেন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ