আজঃ বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

চমেক হাসপাতালে চার মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ধর্ষণের শিকার ১৪৮ নারী-শিশু

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রামে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলছে। বেশিরভাগ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য বা পরিচিতজনদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশী। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত চার মাসে ধর্ষণের শিকার ১৪৮ নারী ও শিশু চিকিৎসা নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাধীদের দ্রুত বিচার না হওয়া এবং সামাজিক প্রতিরোধ দুর্বল থাকায় ধর্ষণের ঘটনা লাগামহীনভাবে বাড়ছে।অপরাধের ধরণ বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবারের নিকটজন, প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়দের দ্বারাই ধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটছে। যা সামাজিকভাবে ভুক্তভোগীদের জন্য আরও দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি করছে।

নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্যোগ এবং ভুক্তভোগীদের মানসিক সহায়তা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা গেলে এ ধরনের অপরাধ কমার সম্ভাবনা কম।
নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর ভাষ্য, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা যেন সহজে আইনি ও চিকিৎসা সহায়তা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক লজ্জা বা ভয় কাটিয়ে তাদের সামনে আসার জন্যও সঠিক পদক্ষেপ দরকার।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেবল আইনগত ব্যবস্থা নিলেই সমস্যার সমাধান হবে না, ধর্ষণের মতো অপরাধ কমাতে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ড. আনোয়ারা আলম বলেন, এই আইনের সংস্কার করতে হবে। বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে সেটা বন্ধ করতে হবে। আইনে যে সবোর্চ্চ শাস্তির কথা বলা হয়েছে সেটা হতে হবে দৃষ্টান্তমূলক। সেটা প্রিয়জন আর প্রতিবেশী যেই হোক। ধর্ষণ প্রতিরোধের জন্য একেবারে রুট লেভেল থেকে রাষ্টের সবোর্চ্চ পর্যায়ে পজিটিভ ভূমিকা থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মোবাইলে পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ করতে হবে। এটি পুরুষ যে বয়সের হোক না কেন-তাদের ভোগবাদী প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না আর তখন অবুঝ অসহায় শিশুরা আক্রান্ত হয়। সোজা কথায় এই বিষয়টি এখন অশনিসংকেত। সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এটি বন্ধ করার জন্য নীতিনির্ধারণীদের আন্তরিক হওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত চার মাসে (ডিসেম্বর থেকে মার্চ) ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে এসেছে ১৪৮ জন নারী ও শিশু। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এদের মধ্যে ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

ওসিসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছে ৩৬ জন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ জনে। আর চলতি মাসের ২৫ মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালে এসেছে ৩১ জন।
এদিকে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও অনেক ভুক্তভোগী হাসপাতালে ভর্তি হন না বা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না। তবু যেসব ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, তার পরিসংখ্যানই ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, আগের চেয়ে সম্প্রতি ধর্ষণের কেস বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর প্রথমে অনেকেই জরুরি বিভাগে আসে, এরপর আমরা ওসিসিতে রেফার করি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, ভিকটিম প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই চলে যায়, ভর্তি হয় না। এ কারণে পরিসংখ্যানে হয়তো প্রকৃত চিত্র পুরোপুরি উঠে আসে না।
চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, ধর্ষণের শিকার অনেক নারী ও শিশু সামাজিক লজ্জা, ভয় এবং পারিবারিক চাপের কারণে চিকিৎসা সেবা ও আইনি প্রক্রিয়ার পুরোটা সম্পন্ন করতে পারেন না। বিশেষ করে যারা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে চলে যান, তারা বিচার প্রক্রিয়ায়ও খুব একটা এগোতে পারেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওসিসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে ধর্ষণের ঘটনায় আসা বেশির ভাগ কেসে দেখা যায় বিয়ের আশ্বাসে কিংবা প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করা হয় বলে তারা জানান। এমনও ঘটনা আছে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়ে শিশুদের প্রেম, বিয়ে ও ফাঁদে ফেলে প্রতারণার মাধ্যমে ধর্ষণ করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন কিছুর প্রলোভন দেখিয়ে পাঁচ-ছয় বছরের শিশুদেরও ধষর্ণ করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

গাজীপুরের পূবাইলে ১২৪কেজি গাঁজাসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার।

গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল থানা সংলগ্ন এলাকায় বুধবার র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১২৪ কেজি গাঁজাসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।

গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা হচ্ছে-সুমেরখোলা গ্রামের কালিয়া থানার নড়াইল জেলার মৃত মোঃ আঃ মজিদ এর ছেলে মোঃ সোহাগ শেখ (৩৯), নগগ্রামের কালিয়া থানার নড়াইল জেলার -মোঃ মিজানুর বিশ্বাস এর ছেলে মোঃ আশিক বিশ্বাস ওরফে আকাশ (২১) ও -মোঃ শফিক মিয়ার ছেলে মোঃ সাগর মিয়া (২০)

এসময় তাদের ব্যবহৃত বালু ভর্তি ট্রাক তল্লাশী করে ১২৪ কেজি গাঁজাসহ ৩টি মোবাইল ফোন, ৪টি সিমর্কাড এবং নগদ ৩ হাজার ৮ শত টাকা উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব জানায়, ধৃত আসামীরা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবৎ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাকি দিয়ে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা হতে পাইকারী দরে গাঁজা ক্রয় করে নিয়ে এসে ঢাকা জেলা ও গাজীপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট সরবরাহ করে থাকে। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতারকৃত আসামীদের পূবাইল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

নেত্রকোনার পূর্বধলায় ভারতীয় মদসহ তরুণী আটক।

ভারতীয় মদের বোতলসহ এক তরুণীকে আটক করেছে নেত্রকোনার পূর্বধলা থানা পুলিশ। আটককৃত মাদক ব্যবসায়ী ফারজানা খাতুন ঝুমা (২১)। তিনি নেত্রকোনা দুর্গাপুর উপজেলার কেরনখলা গ্রামের রজব আলী মেয়ে। জব্দকৃত মাদকের বাজার মূল্য আনুমানিক ১৮ হাজার টাকা।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এসব তথ্য নিশ্চিত করেন পূর্বধলা থানার ওসি মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম জানান, পাঁচ বোতল আইস ব্র্যান্ডের ও দুই বোতল অন্য ব্র্যান্ডের মদসহ সাত বোতল ভারতীয় মদসহ তরুণীকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

এরআগে গত বুধবার শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি আঞ্চলিক মহাসড়কের পূর্বধলার জারিয়া ইউনিয়নের গোজাখালী কান্দা বাজার এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ী ওই তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বুধবার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিতোষ ও সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শাজাহান কবিরসহ সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যসহ শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কের গোজাখালী কান্দা বাজারে চেক পোস্ট স্থাপন এবং সন্দেহজনক একটি যাত্রীবাহী অ্টো রিকশা (সিএনজি) থামানো হয়। তল্লাশীকালে পাঁচ বোতল আইস ব্র্যান্ডসহ সাত বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভারতীয় মদ জব্দ করা হয়। এসব মাদক সাথে থাকার দায়ে ফারজানা খাতুন ঝুমা নামে এক মাদক ব্যবসায়ী তরুণীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা হয়।

পূর্বধলা থানার ওসি জানান, মাদক ব্যবসায়ী ফারজানা খাতুন ঝুমা দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুর সীমান্ত এলাকা থেকে আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় মাদক সংগ্রহ এবং এসব মাদক দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ও কেনাবেচার সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এরই মধ্যে গ্রেফতারকৃত তরুণীকে মাদক মামলায় জেলা আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।জিরো টলারেন্স নীতির আলো’কে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান থানার ওসি মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ