আজঃ মঙ্গলবার ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

চমেক হাসপাতালে চার মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ধর্ষণের শিকার ১৪৮ নারী-শিশু

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রামে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলছে। বেশিরভাগ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য বা পরিচিতজনদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশী। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত চার মাসে ধর্ষণের শিকার ১৪৮ নারী ও শিশু চিকিৎসা নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাধীদের দ্রুত বিচার না হওয়া এবং সামাজিক প্রতিরোধ দুর্বল থাকায় ধর্ষণের ঘটনা লাগামহীনভাবে বাড়ছে।অপরাধের ধরণ বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবারের নিকটজন, প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়দের দ্বারাই ধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটছে। যা সামাজিকভাবে ভুক্তভোগীদের জন্য আরও দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি করছে।

নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্যোগ এবং ভুক্তভোগীদের মানসিক সহায়তা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা গেলে এ ধরনের অপরাধ কমার সম্ভাবনা কম।
নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর ভাষ্য, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা যেন সহজে আইনি ও চিকিৎসা সহায়তা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক লজ্জা বা ভয় কাটিয়ে তাদের সামনে আসার জন্যও সঠিক পদক্ষেপ দরকার।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেবল আইনগত ব্যবস্থা নিলেই সমস্যার সমাধান হবে না, ধর্ষণের মতো অপরাধ কমাতে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ড. আনোয়ারা আলম বলেন, এই আইনের সংস্কার করতে হবে। বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে সেটা বন্ধ করতে হবে। আইনে যে সবোর্চ্চ শাস্তির কথা বলা হয়েছে সেটা হতে হবে দৃষ্টান্তমূলক। সেটা প্রিয়জন আর প্রতিবেশী যেই হোক। ধর্ষণ প্রতিরোধের জন্য একেবারে রুট লেভেল থেকে রাষ্টের সবোর্চ্চ পর্যায়ে পজিটিভ ভূমিকা থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মোবাইলে পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ করতে হবে। এটি পুরুষ যে বয়সের হোক না কেন-তাদের ভোগবাদী প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না আর তখন অবুঝ অসহায় শিশুরা আক্রান্ত হয়। সোজা কথায় এই বিষয়টি এখন অশনিসংকেত। সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এটি বন্ধ করার জন্য নীতিনির্ধারণীদের আন্তরিক হওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত চার মাসে (ডিসেম্বর থেকে মার্চ) ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে এসেছে ১৪৮ জন নারী ও শিশু। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এদের মধ্যে ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

ওসিসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছে ৩৬ জন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ জনে। আর চলতি মাসের ২৫ মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালে এসেছে ৩১ জন।
এদিকে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও অনেক ভুক্তভোগী হাসপাতালে ভর্তি হন না বা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না। তবু যেসব ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, তার পরিসংখ্যানই ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, আগের চেয়ে সম্প্রতি ধর্ষণের কেস বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর প্রথমে অনেকেই জরুরি বিভাগে আসে, এরপর আমরা ওসিসিতে রেফার করি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, ভিকটিম প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই চলে যায়, ভর্তি হয় না। এ কারণে পরিসংখ্যানে হয়তো প্রকৃত চিত্র পুরোপুরি উঠে আসে না।
চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, ধর্ষণের শিকার অনেক নারী ও শিশু সামাজিক লজ্জা, ভয় এবং পারিবারিক চাপের কারণে চিকিৎসা সেবা ও আইনি প্রক্রিয়ার পুরোটা সম্পন্ন করতে পারেন না। বিশেষ করে যারা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে চলে যান, তারা বিচার প্রক্রিয়ায়ও খুব একটা এগোতে পারেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওসিসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে ধর্ষণের ঘটনায় আসা বেশির ভাগ কেসে দেখা যায় বিয়ের আশ্বাসে কিংবা প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করা হয় বলে তারা জানান। এমনও ঘটনা আছে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়ে শিশুদের প্রেম, বিয়ে ও ফাঁদে ফেলে প্রতারণার মাধ্যমে ধর্ষণ করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন কিছুর প্রলোভন দেখিয়ে পাঁচ-ছয় বছরের শিশুদেরও ধষর্ণ করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

দেশ বদলাতে থ্রি জিরো থিওরি আদর্শ মডেল: চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়াউদ্দীন বলেছেন, দেশ বদলাতে তথা পৃথিবী বদলাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর থ্রি জিরো থিওরি একটি আদর্শ মডেল। এ মডেল অনুসরণ করে আমাদের তরুণ সমাজ কাজ করলে দেশে যেমন ক্ষুধা এবং বেকারত্ব দূর হবে, তেমনি মানবজাতি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বেঁচে থাকবে।
কমিশনার রোববার চট্টগ্রামের জেলা তথ্য অফিস

আয়োজনে চট্টগ্রাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অডিটোরিয়ামে ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই সব কথা বলেন।বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আজকের বিশ্বে তরুণদের জন্য সম্ভাবনা ও সুযোগের ক্ষেত্র দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে শুধু চাকরির পিছনে ছুটে সীমাবদ্ধ না থেকে নিজেদের যোগ্যতা, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হতে হবে।

সভপতির বক্তব্যে মোঃ বোরহান উদ্দীন বলেন, যুবক-যুবতীদের নিজেরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার এবং পরিবারের লোকদেরকে ভোট দিতে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে নির্বাচন উৎসব হবে। এই উৎসবে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আশা করে সরকার। এজন্য নির্বাচনী পরিবেশকে অবাধ, সুষ্ঠু ও ভয়হীন করার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

জেলা তথ্য অফিস, চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোঃ বোরহান উদ্দীন সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আবুল বাশার, আঞ্চলিক তথ্য অফিস, চট্টগ্রামের সিনিয়র তথ্য অফিসার বাপ্পী চক্রবর্তী, সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজের অধ্যক্ষ এস এম গিয়াসউদ্দিন বাবর, আব্দুল বারী প্রমূখ বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন । যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণরত প্রায় ১৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী এবং প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ঠাকুরগাঁওয়ে নবাগত পুলিশ সুপারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা

ঠাকুরগাঁওয়ে নবাগত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেনের সাথে স্থানীয় সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৭ ডিসেম্বর রবিবার দুপুর ১২টায় জেলা পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।এসময় পুলিশ সুপার বেলাল হোসেন বলেন, মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের বাকস্বাধীনতা একমাত্র মিডিয়ার মাধ্যমেই রক্ষা করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের সেবা করাই আমার প্রথম কাজ। মাদক সব অপরাধের মূল উৎস। তাই যেকোনো মূল্যে সমাজকে মাদকমুক্ত করতে হবে। এসময় যানজট, মাদকমুক্ত করতে ও বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন পুলিশ সুপার।


এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) খোদাদাদ হোসেন,সহকারী পুলিশ সুপার রাণীশংকৈল সার্কেল স্নেহাশীষ কুমার দাস, ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফর রহমান মিঠু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান তানু সহ জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।উল্লেখ্য,গত ২৯ নভেম্বর বেলাল হোসেন ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ