আজঃ শনিবার ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

জমির ধরণ ও পরিমাণ ভেদে ঘুষ নির্ধারণ করে দিয়ে বিতর্কিত।

মাহাবুবুর রহমান রনি, রূপগঞ্জ(নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি:

অবশেষে রূপগঞ্জের পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেলের সেই এসিল্যান্ডের বদলি

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেলের জমির ধরণ ও পরিমাণ ভেদে ঘুষ নির্ধারিত করে দেওয়া সেই বিতর্কিত সহকারী কমিশনার (ভূমি) উবায়দুর রহমান সাহেলকে গত ৮এপ্রিল মঙ্গলবার বদলি করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে তাকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে বদলি করা হয়। স্বেচ্ছাচারি এসিল্যান্ড উবায়দুর রহমান সাহেলের বদলির খবরে এলাকার জমির মালিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

তার অন্যত্র বদলি হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে সাধারণ জমির মালিকরা। সদ্য যোগদান করা এসিল্যান্ড মোঃ তাছবীর হোসেনের কাছে জমি মালিকদের প্রত্যাশা, তিনি ঘুষমুক্ত নামজারিসহ অন্যান্য কার্যক্রম দ্রুত পরিচালনা করবেন।
নামজারি বা নাম খারিজ করতে সরকার নির্ধারিত খরচ কোর্ট ফি ২০টাকা, নোটিশজারি ৫০টাকা, খতিয়ান ফি ১০০টাকা, রেকর্ড সংশোধন ফি ১হাজার টাকা সর্বমোট ১ হাজার ১৭০ টাকা। এক্ষেত্রে এসিল্যান্ড উবায়দুর রহমান সাহেল জমির ধরণ ও পরিমাণ ভেদে ঘুষের টাকা নির্ধারণ করে দেন। সে অনুযায়ী নামজারির ক্ষেত্রে অর্পিত সম্পত্তি ‘ক’ তালিকায় প্রকাশিত জমি, ‘খ’ তালিকায় প্রকাশিত জমি ও নরমাল জমির নামজারি করা হয়।

জমির ধরণ হিসেবে ‘ক’ তালিকায় প্রকাশিত ১শতাংশ জমির নামজারি ৫হাজার টাকা, ‘খ’ তালিকায় প্রকাশিত ১শতাংশ জমির নামজারি ৩হাজার টাকা ও নরমাল ১শতাংশ থেকে ১০শতাংশ জমির নামজারি ১০হাজার টাকা থেকে ২০হাজার টাকা ঘুষ নির্ধারণ করে দিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) উবায়দুর রহমান সাহেল বিতর্কিত হয়ে উঠে। এছাড়া রাজউকের পূর্বাচল উপশহরের ৩কাঠা প্লটের জমির নামজারি ২০হাজার টাকা, ৫কাঠা প্লটের জমির নামজারি ৩০হাজার টাকা, সাড়ে ৭কাঠা প্লটের জমির নামজারি ৪০হাজার টাকা ও ১০কাঠা প্লটের জমির নামজারি ৭৫হাজার টাকা নির্ধারণ

করে দেন। জমির কাগজপত্রের গড়মিল অনুযায়ী টাকার পরিমাণ আরো বেশি আদায় করা হয়। আদায়কৃত টাকার ২৫ভাগ ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ২৫ভাগ সার্ভেয়ার ও কানুনগো, ৫০ভাগ সহকারী কমিশনার ভূমি উবায়দুর রহমান সাহেল ভাগ ভাটোয়ারা করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সুযোগ পেয়ে ইউনিয়ন তহসিলদাররা ঘুষবাণিজ্যে মেতে উঠে।

গত ২০২৪ সালের ১৪জুলাই এককালের ছাত্রলীগ নেতা উবায়দুর রহমান সাহেল রূপগঞ্জের পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি উপজেলা ভূমি অফিসকে অনিয়ম, ঘুষবাণিজ্য আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। এরপর উপজেলা ভূমি অফিসের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। তার বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা, জাল দলিলে জমি নামজারি (খারিজ) করা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সেবাপ্রত্যাশীদের হয়রানি করাসহ নানা অভিযোগ উঠে।

জানা গেছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ততবিরে উবাদুর রহমান সাহেল পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেলে সহকারী কমিশনার(ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন। রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা, দাউদপুর, ভোলাবো, রূপগঞ্জ ও কাতেয়পাড়া ইউনিয়ন নিয়ে পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেল গঠিত হয়। রূপগঞ্জ ইউনিয়নের বাঘবের কেয়ারিয়া এলাকায় গোলাম দস্তগীর গাজী আবাসন প্রকল্প জি পার্ক গড়ে তোলা হয়। কাঞ্চন পৌরসভা, কাতেয়পাড়া, ভোলাবো ও দাউদপুর ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশতাধিক আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠে। এখানে দায়িত্বে নিয়োজিত করেন উবায়দুর রহমান সাহেলকে। আবাসন প্রকল্পের পাশাপাশি সাধারণ জমির মালিকদের কাছ থেকে নামজারি করতে নেওয়া হতো বিপুল পরিমাণ টাকা। একজনের জমি অন্যজনের নামে নামজারি করা হয়। আবার মিসকেস করে অর্থের বিনিময়ে জমির সঠিক মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হতো। এসব টাকা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আনুপাতিক হারে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে আসছে।

গত এক বছরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উবায়দুর রহমান সাহেল পূর্বাচল উপশহরের ৩নম্বর সেক্টরের গুতিয়াবো এলাকায় প্লট ও আশপাশের এলাকায় জমি ক্রয় করেছেন। হয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক। ছাত্রলীগ করা উবায়দুর রহমান সাহেল জমির খারিজ করতে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। আবাসন প্রকল্পের যোগসাজসে জমি না কিনে জোর পূর্বক বালু ভরাট, খাড়া দলিল, ভূয়া দলিলে নামজারি করা হয়। এসকল আবাসন প্রকল্প গুলোর হাত থেকে রেহাই পেতে নামজারি ও মিসকেস মামলা দায়ের করেন জমি মালিকরা। আর এ অফিসে নামজারি করা মানে অসীম ভোগান্তি মাথা নেয়া। এসিল্যান্ড আবাসন প্রকল্পের মালিকদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে আতাঁত করেই নামজারি করতে দেরি করেন। উবায়দুর রহমান সাহেলের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে জমির মালিকরা।

ভূমিহীনদের মাঝে কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত, খতিয়ানের ভুল সংশোধন, নামজারি ও জমাভাগ, ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণীর আপত্তি-নিষ্পত্তি, দেওয়ানি আদালতের রায় বা আদেশমূলে রেকর্ড সংশোধন, ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন নিষ্পত্তি, জমা একত্রকরণ ও বিবিধ কেসের আদেশের নকল বা সার্টিফায়েড কপি প্রদান কোনটিরই টাকা ছাড়া কাজ হয় না।

সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে দালালেরা যে টাকা নেন, তা ভাগ-বাঁটোয়ারাও হয় নানা ধাপে। ভূমি অফিসে নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায়, জমির পর্চা (খসড়া) তোলা সহ সকল কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিকভাবে বাড়তি টাকা নেয়া হয়। চুক্তির টাকা ছাড়া কোনো ফাইলই নড়ে না। তার দুর্নীতির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ভূমি মালিকেরা। ঘুষখোর এই ভূমি কর্মকর্তা তার ইচ্ছামত দুর্নীতি করে চলেছেন।
পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার উবায়দুর রহমান সাহেল তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি বদলি হয়ে গেছি। ব্যস্ততা দেখিয়ে এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।

এ ব্যাপারে সদ্য যোগদানকারী পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার মোঃ তাছবীর হোসেন বলেন, জমি নামজারির ডিজিটাল সেবা ই-নামজারি সার্ভারটি ঠিক থাকলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তি, হয়রানি ও ঘুষ ছাড়াই সঠিক সময়ে নাজমারি পেয়ে যাবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

ইরান ওমান উপসাগরে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ইরান ওমান উপসাগরে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে । তেলবাহী জাহাজটিতে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার ১৮ নাবিক রয়েছে। ইরানি গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়- ছয় মিলিয়ন লিটার চোরাচালানকৃত ডিজেল বহনকারী একটি তেলবাহী জাহাজ ওমান উপকূলে আটক করা হয়েছে।

চন্দ্রগঞ্জ থানা পরিদর্শন করেন নবাগত পুলিশ সুপার মো:আবু তারেক

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

লক্ষ্মীপুর জেলার সদ্য যোগদান করা পুলিশ সুপার জেলার বিভিন্ন থানা পরিদর্শন ও থানায় কর্মরত অফিসারদের সাথে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেন।
তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা আকস্মিক পরিদর্শন করেন লক্ষ্মীপুর জেলার নবাগত পুলিশ সুপার মোঃ আবু তারেক। এসময় চন্দ্রগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ও কর্মরত সবাই ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

থানা পরিদর্শনকালে পুলিশ সুপার ফোর্সদের থাকার ব্যারাক ও বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন এবং সকল পুলিশ সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এছাড়াও সকল পুলিশ সদস্যদের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।

উল্লেখ্য চন্দ্রগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোরশেদ আলম চলতি মাসের ৬ তারিখে এ থানায় যোগদান করেন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ