আজঃ শুক্রবার ১৩ জুন, ২০২৫

সত্যকে দাবিয়ে রাখা যায় কিছুদিন, ইতিহাসকে চাপা দেওয়া যায় কিছু পৃষ্ঠায়

রাজনীতির মুখোশের আড়ালে ইতিহাসের রক্তচিহ্ন।

লেখক, শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর

সময় একদিন সত্যকে ফিরিয়ে আনে।

যে রাজনীতি একদিন ছিল জাতির মুক্তির অগ্নিস্নান, আজ তা পরিণত হয়েছে ক্ষমতার নিষ্ঠুর বৃত্তে বন্দি এক নিষ্প্রাণ নাট্যশালায়। আদর্শের নামগন্ধ নেই, নীতির কথা বললে কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে। অথচ এই ভূখণ্ডের রাজনীতির ভিত্তি রচিত হয়েছিল রক্ত, ত্যাগ আর চেতনায়; যেখানে মাটি ও মানুষের প্রতি ছিল গভীর দায়বদ্ধতা।

আজকের রাজনীতি যেন এক সুপরিকল্পিত ভুলে যাওয়ার প্রকল্প। ইতিহাসের প্রাচীন দেয়ালে যে মূল্যবোধের শব্দ খোদাই ছিল, সেসব এখন বিবর্ণ—ছিন্নমূল। নেতৃত্ব এখন আর আলো ছড়ায় না, বরং প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করে বিভ্রান্তির কুয়াশা। রাজনীতিকদের অধিকাংশই আজ চরিত্রের বদলে চাতুর্যে বিশ্বাসী, আদর্শের বদলে কৌশলে অভ্যস্ত।

অথচ ইসলামী রাজনৈতিক ঐতিহ্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ব্যঞ্জনায় গাঁথা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাষ্ট্রদর্শনে ছিল জবাবদিহিতা, দয়া ও সুবিচারের নিখাদ দৃষ্টান্ত। সেখানে শাসক ছিলেন দাসের মতো সেবক, আর শাসিতরা ছিলেন তার দায়িত্বের অঙ্গ। খলিফা ওমর (রা.) বলেছিলেন, “ফোরাত নদীর তীরে একটি কুকুরও যদি ক্ষুধায় মারা যায়, তার হিসাব ওমরকে দিতে হবে।” এমন কথার ভার কি আজকের কোনো শাসক ধারণ করেন?

ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, রাজনীতি যদি জনগণের পাশে না দাঁড়ায়, তবে তা এক সময় জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। যে রাজনীতি মানুষকে একতাবদ্ধ করার বদলে বিদ্বেষ ছড়ায়, যে রাজনীতি ধর্মকে ব্যবহার করে বিভাজনের জন্য, সে রাজনীতি পবিত্র নয়—তা আত্মঘাতী।

আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি দীর্ঘকাল ধরে রাজনীতিকে এক গভীর চিন্তার জায়গা হিসেবে দেখেছে। বঙ্কিম থেকে শুরু করে কাজী নজরুল, বঙ্গবন্ধু থেকে শহীদুল্লাহ কায়সার—সাহিত্যিকেরা রাজনীতির সৌন্দর্য ও দায়িত্বের কথা বলে গেছেন। কিন্তু আজকের কালে রাজনীতিকে কেন্দ্র করে সাহিত্য যেন বিব্রত, ভীত, নির্বাক। কারণ কলম আজ চাপে, মত আজ নিয়ন্ত্রিত, আর চিন্তা আজ বিক্রয়যোগ্য পণ্যে রূপ নিয়েছে।

তারপরও আশার প্রদীপ নিভে যায়নি। সময়ের এক ফাঁকে জন্ম নেয় প্রতিরোধ, জন্ম নেয় নতুন চিন্তা। সেই চিন্তাই ইতিহাসকে পুনরায় জাগিয়ে তোলে, মানুষের ভেতরকার অন্ধকার ভেদ করে আলোর খোঁজে পাঠায়।

আমাদের প্রয়োজন এমন এক রাজনীতি, যা কেবল দখলের নয়, দায়িত্বের। যেখানে নেতৃত্ব মানে ক্ষমতা নয়, সেবা। যেখানে বিরোধিতা মানে শত্রুতা নয়, ভিন্নমতের সৌন্দর্য। যেখানে ধর্ম ব্যবহৃত হয় অনুপ্রেরণার জন্য, নিপীড়নের জন্য নয়।

সত্যকে দাবিয়ে রাখা যায় কিছুদিন, ইতিহাসকে চাপা দেওয়া যায় কিছু পৃষ্ঠায়—কিন্তু সময় একদিন সত্যকে ফিরিয়ে আনে। তখন মুখোশ খুলে পড়ে পড়ে; রাজনীতির মুখ দেখায় রক্তমাখা আয়না। সেই আয়নায় প্রতিফলিত হয় এক জাতির কান্না, আর ইতিহাসের প্রতিধ্বনি।আমরা কি সেই দিনটির জন্য প্রস্তুত?

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

রাজশাহীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত।

রাজশাহীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে শাহ মখদুম কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে সাতটায়। বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিপুল পরিমাণ মুসল্লি এ জামাতে অংশ নেন।

এছাড়াও ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ বিএনপির নেতারাও।ঈদের নামাজ শেষে রাজশাহী মহানগরবাসীসহ দেশ ও জাতির কল্যান কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত সাড়ে ৭টায়।

চট্টগ্রাম মহানগরের পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, ঈদের দিন প্রথম জামাত শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায়, আর দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের খতিব সৈয়দ আলাউদ্দিন আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরী। দ্বিতীয় জামাত পরিচালনা করবেন পেশ ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আহমদুল হক।

চসিকের সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, নগরবাসীর সুবিধার্থে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরের বিভিন্ন এলাকায় আরও ৯টি ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৭টায়।
জামাতগুলোর স্থান হলো— লালদীঘির পাড় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শাহী জামে মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন জামে

মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ, সাগরিকা এলাকার মা আয়েশা সিদ্দিকী (র.) চসিক জামে মসজিদ। এছাড়া নগরের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় মসজিদ ও ঈদগাহে নিজ উদ্যোগে ঈদের জামাতের আয়োজন করবেন স্থানীয় মুসল্লিরা।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ