আজঃ রবিবার ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে চট্টগ্রামের আড়তদারদের পাওনা প্রায় ২৫ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে এবার কোরবানি ৯ লাখ পশু, চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা মাত্র সাড়ে ৪ লাখ

রাজধানী ঢাকার ১৭০টি ট্যানারি থাকলেও চট্টগ্রামে রয়েছে মাত্র একটি। চট্টগ্রামে আরও কয়েকটি ট্যানারি থাকলে চামড়া বেচাকেনায় অনেক সুবিধা হতো। ফলে বরাবরের মতো বিপুল পরিমাণ চামড়া সংগ্রহের সুযোগ থাকলেও সুষ্ঠু প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ নিয়ে দেখা দেয় গভীর অনিশ্চয়তা। এ পরিস্থিতি কেবল

চট্টগ্রামের আড়তদারদের নয়, সামগ্রিকভাবে দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পের ভবিষ্যতকেও প্রশ্নের মুখে ফেলছে। একসময় চট্টগ্রামে ৩০টিরও বেশি ট্যানারি ছিল, যা স্বাধীনতার পরও ২২টি ছিল। বর্তমানে রিফ লেদার ছাড়া আর কোনো ট্যানারি সক্রিয় নেই। এটি চট্টগ্রামের চামড়ার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ক্রয় করে। এছাড়া দেশের অন্য বিভাগ ও জেলা থেকেও তারা চামড়া সংগ্রহ করে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে এবার ৯ লাখের কাছাকাছি কোরবানি হওয়ার কথা জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে জানানো হলেও কাঁচা চামড়া আড়তদারদের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা মাত্র সাড়ে ৪ লাখের মত।
সূত্র জানা গেছে, চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর চামড়া সংগ্রহ হয় প্রায় চার লাখ। এরমধ্যে গরুর চামড়া প্রায় তিন লাখ এবং ছাগলের চামড়া প্রায় এক লাখ। অথচ এই বিশাল পরিমাণ চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য চট্টগ্রামে একমাত্র ট্যানারি হলো রিফ লেদার লিমিটেড।

টিকে গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানটি বছরে এক লাখ পিস কাঁচা চামড়া কিনতে সক্ষম হয়। তাই মোট সংগ্রহের বড় অংশ প্রক্রিয়াজাতকরণের অক্ষমতায় সমস্যায় পড়েন আড়তদাররা। তাই চট্টগ্রামের সিংহভাগ চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ঢাকার হাজারীবাগ ও সাভারে হেমায়েতপুরের ট্যানারিগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়। এই নির্ভরতা চট্টগ্রামের আড়তদারদের জন্য এক দীর্ঘস্থায়ী সংকটের জন্ম দিয়েছে।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রতি বছরই গড়ে ৩ থেকে ৪ লাখের মত কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদারসহ ছোটখাট ব্যবসায়ীরা।গত বছর কোরবানির দিন চট্টগ্রামে আড়াই থেকে তিন লাখের মত কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদার এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় তিন লাখ ৬১ হাজার পিসে।

তবে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা প্রতি বছর যে পরিমাণ কোরবানি হবে বলে তথ্য দেন-সেই পরিমাণ কোরবানি হয় না বলে জানান চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির আহ্বায়ক আবদুল জলিল। তিনি বলেন, জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা কিসের ভিত্তিতে বলেন সেটা আমরা বুঝি না। উনারা যে পরিমাণ কোরবানির কথা বলেন-কোরবানি শেষে আমরা সেই পরিমাণ চামড়া খুঁজে পাই না। আমরা আড়তদার সমিতিতে যারা আছি তারাসহ আরো কিছু খুচরা-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিলে প্রতি বছর গড়ে-৩৪ লাখের মত কোরবানি পশুর চামড়া পেয়ে থাকি। গতবার আমরা একেবারে দোহাজারী থেকে শুরু করে পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ,

বিবিরহাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা হয়ে রাউজান, হাটহাজারী, নাজিরহাট, ফটিকছড়ি পর্যন্ত ৪ লাখের কাছাকাছির কোরবানি পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম। প্রতি বছর এরকমই; ৪ লাখের মত লবণজাত করে থাকি আমরা।
চট্টগ্রামের বৃহত্তর কাঁচা চামড়া আড়তদার-ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামে কাঁচামালের সহজলভ্যতা, সহজলভ্য শ্রমিক, পরিবহন সুবিধা এবং ব্যাংক ঋণ সুবিধাসহ সব ধরনের অবকাঠামোগত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নতুন ট্যানারি গড়ে উঠছে না। এটা খুবই দুঃখজনক।

এদিকে আড়তদারদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ ঢাকার ট্যানারিগুলোর বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা প্রতি বছর কোরবানির চামড়া বাকিতে কেনেন এবং সেই টাকা সময় মতো পরিশোধ করেন না। ২০১৫ সাল থেকে এই সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে চট্টগ্রামের আড়তদারদের প্রায় ২৫ কোটি টাকা আটকা পড়ে আছে। এই বকেয়া পাওনা আদায় না হওয়ায় অনেক আড়তদার নিঃস্ব হয়ে গেছেন এবং তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এ বিষয়ে আড়তদার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০১৫ সালের সমস্যাটার কারণে আমাদের অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এখন আমরা যারা ব্যবসা করছি, তারাও নগদ টাকায় ব্যবসা করতে পারি না। যেমন গতবছরের টাকা আমরা এখনও পাইনি। তবে ২০১৬ সাল থেকে ট্যানারিগুলো আমাদের যে বছর চামড়া নেয় সেবছর একটা অংশ দেয়। আর বড় অংশের টাকা পরের বছর কোরবানির আগে দেয়। এটা নিয়ম করে ফেলেছে। লেনদেনটা যদি নগদ করা হতো, তাহলে আমাদের অনেক সুবিধা হতো।

সংগঠনটির সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল কাদের সর্দার বলেন, পুঁজি হারিয়ে প্রায় ২৫০-৩০০ আড়তদার-ব্যবসায়ী থেকে এখন ২৫-৩০ জনে ঠেকেছে। অন্যরা দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন। এখন যারা এ ব্যবসায় আছেন, তারা যদি পাওনা আদায় করতে না পারে তাহলে চট্টগ্রামে এ চামড়া ব্যবসা আরও খারাপ হবে।
তিনি আরও বলেন, এখনো মুখের কথায় চামড়া বেচাকেনা হয়। ট্যানারি মালিকেরা শুধু একটি স্লিপ দেন, তাতে আইনি ভিত্তি না থাকায় বকেয়া পাওনা নিয়ে বছরের পর বছর ঘুরছেন ব্যবসায়ীরা। এই মৌখিক লেনদেন এবং আইনি সুরক্ষার অভাব আমাদের অবস্থা আরও নাজুক করেছে।

এ নিয়ে আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, আমরা চাই এ ব্যবসা রক্ষার স্বার্থে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আর কোরবানে অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী চামড়া সংগ্রহ করে। তাদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন পর্যাপ্ত লবণ সংগ্রহ করে। চামড়া সংগ্রহের পরপর লবণ মেখে তারপর বেচাবিক্রি করে। অথবা সময় নষ্ট না করে আমাদের কাছে তাড়াতাড়ি বিক্রি করে। যেন চামড়া নষ্ট না হয়। আর ট্যানারি চাইলে তো সেটা দিনে দিনে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তবে এ বিষয়ে যদি সরকারিভাবে ট্যানারি ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করে তাহলে ভালো হবে।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কেনা হয়। লবণ দেয়ার পর ট্যানারি মালিকরা যখন আমাদের কাছ থেকে চামড়া নিতে আসেন তখন তারা অনেক চামড়া বাদ দিয়ে দেন। আড়তদার সমিতির ব্যবসায়ীরা জানান, গুদাম ভাড়া নিয়ে, শ্রমিকের বেতন দিয়ে–লবণ দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার পর ট্যানারি মালিকদের কাছে বাকিতে চামড়া বিক্রি করতে হয়।

চট্টগ্রামের আড়তদারদের অভিযোগ ঢাকার অনেক ট্যানারি মালিক বাকিতে চামড়া নিয়ে এক বছরেও টাকা পরিশোধ করেন না। যার কারণে অনেক আড়তদার লোকসানে পড়ে তাদের ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদাররা আরো জানান, চট্টগ্রামে আড়তদার সমিতিতে এখন ১১২ জনের মত সদস্য থাকলেও তার অর্ধেকও এখন এই পেশায় নেই। তারা এখন কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করেন না।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

পদক্ষেপ বাংলাদেশ এর বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত ।

পদক্ষেপ বাংলাদেশ-এর আয়োজন, কর্মসূচী ব্যতিক্রম ও বৈচিত্র্যময়। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকার পরিবাগস্থ সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের উন্মুক্ত মঞ্চে জাতীয় সংগঠন ও শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত’ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ১ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সাংস্কৃতিক পর্ব—দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে : শিল্পবৃত্ত, পদক্ষেপ বাংলাদেশ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে : কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, শিল্পবৃত্ত, ঢাকা স্বরকল্পন, মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি করেন : মীর বরকত, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন : গোবিন্দলাল সরকার, মো: তাজুল ইসলাম, খাইরুল আলম।

উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন আবৃত্তিশিল্পী মীর বরকত, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জেবুন্নেসা জেবা, উদয়ন স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষক সবিতা সাহা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পদক্ষেপ বাংলাদেশ-এর সভাপতি বাদল চৌধুরী। স্বাগব বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল্লাহ সাঈদ। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মতিয়ারা মুক্তা।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়- বহু ত্যাগ, সংগ্রাম আর প্রত্যাশার ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ শুধু পতাকা আর জাতীয় সঙ্গীত বদল নয়, খোল-নলচে সব পাল্টে নতুন এক আদর্শকে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নের নবযাত্রা। এই স্বপ্নের প্রধান এবং একমাত্র উপজীব্য মানুষ। মানুষের কল্যাণ, মানুষের মুক্তি, মানুষের মর্যাদা এবং মানুষের স্বাধীন ভূমিই শেষ কথা। কত মাতা, কত ভগ্নি, কত জানা-অজানা নারী তাঁর সম্ভ্রম হারিয়েছে শুধু এই মানুষকে মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। মানুষ কল্পনাবিলাসী কিন্তু নিজেতো সে কাল্পনিক নয়Ñএ ভূমিতেই তার সৃষ্টি, বেড়ে ওঠা, ভালো-মন্দের স্বাদ নেয়া, অতঃপর ভূমিতেই মিলিয়ে যাওয়া। এ ভূমির প্রতি তার প্রচ- ভালোবাসা।

মাতৃক্রোড়ে যেমনিভাবে শিশু বেড়ে ওঠে; একইভাবে কাদা-মাটি গায়ে মেখে আলো-বাতাসে অবগাহন করে এই ভূমিকেই মাতৃক্রোড় ভেবে একদিন চিরবিদায় নেয় প্রতিটি মানবশিশু। জন্ম আর মৃত্যুতে যে ভূমিকে কখনো আলাদা করা যায় নাÑতারই অমার্যাদা করবে ভিনদেশী তস্কর! তা কি করে মেনে নেয় ধুলো-বালি গায়ে মেখে বেড়ে ওঠা এ জনপদের মানুষেরা। এ ভূমিরই সাহসী-ত্যাগী- পোড়খাওয়া এক নামÑশেখ মুজিব। মাটি আর মানুষের সাথে ছিলো যাঁর আজন্ম সখ্য, ভিনদেশী হায়েনার হিংস্র থাবায় বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তাঁর হৃদপি-; তবুও ভূমি আর মানুষের স্বাধীনতায় অবিচল থেকেছেন তিনি।

তাঁরই অঙ্গুলী হেলনে সাড়ে সাত কোটি মানুষ পরিণত হয়েছে এক একজন নেতাজী সুভাষ বসু, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, তিতুমীর, বাঘাযতিন, লক্ষ্মীবাই, ভগৎসিং, রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, সালাউদ্দিন, বরকত, আসাদ, মনুমিয়া’য়। এ গাঙ্গেয় বদ্বীপের তেরোশত নদীর জোয়ার আর পাখিদের কলতানে উচ্চারিত হয়েছে ভিনদেশী হায়েনার বিনাশ- ধ্বনি। লাঙলের ফলা থেকে তৈরি উর্বর মাটির প্রতিটি চাকা পরিণত হয়েছে শত্রুবিনাশী আনবিক বোমায়। বাঁশঝাড় উজাড় করে তৈরি হয়েছে চকচকে বেয়নেট।

নিঃশঙ্ক চিত্তে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার অগ্নিপুরুষ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সঞ্চারিত হয়েছে সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রতিটি রক্ত কণিকায়Ñবিজয় অর্জিত হয়েছে মানুষের সংগ্রাম আর আত্মদানের। বিজয় মাসের সূচনালগ্নে আমরা নতুন করে উদ্দীপ্ত হতে চাইÑমাটি আর মানুষের কল্যাণ কামনায়। আমরা বিনাশ চাই সেই নরপশুদের যারা মাটির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ভিনদেশী হায়েনাদের সঙ্গী হয়েছিলো মনুষত্বের বিনাশ সাধনে। সেই সাথে চাই আজকের এই দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’-এর সরকারি স্বীকৃতি। মাটি আর মানুষের জয় হোক, জয় হোক শুভ চিন্তা আর আদর্শের।

ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা পরিবারের দানে গড়ে উঠছে এতিম শিশু ও নারীর ক্ষমতায়ন কেন্দ্র 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পরিবারের দান করা জমিতে এতিম শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে ও নারীর স্কিল ডেভলপমেন্টের জন্য গড়ে উঠছে মির্জা রুহুল আমিন এন্ড ফাতেমা মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের আদর্শ কলোনিতে কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ চলছে। 

 আর কমপ্লেক্সটি বাসমাহ ফাউন্ডেশনের তত্বাবধানে শত শত এতিম শিশুদের মৌলিক অধিকার পাওয়ার ঠিকানা হিসেবে পরিণত হবে। যেখানে এতিম শিশুরা খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকারগুলো বিনামূল্যে নিশ্চিৎ হবে। নারীদের স্কিল ডেভলপমেন্টে কাজ করবে। 

গত এক বছর যাবৎ এ কমপ্লেক্সটির কাজ শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত চার ভাগের তিন ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে শতাধিক এতিম শিশুকে নিয়ে কমপ্লেক্সটিতে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিৎ করেছেন  কমপ্লেক্সে দায়িত্বে থাকা  বাসমাহ অরফানস হোম এর এডুকেশন ইনচার্জ আহম্মেদ আমিন।

তিনি আরও জানান, এই কমপ্লেক্সে বাসমাহ অরফানস হোম, বাসমাহ স্কুল এন্ড কালচারাল সেন্টার এবং বাসমাহ ওমেন্স এন্ড স্কিল ডেভলপমেন্ট সেন্টার হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ। এক কক্ষে চলছিলো একটি দোয়ার আয়োজন। জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও দেশের মঙ্গল কামনায় মির্জা পরিবারের উদ্যোগে এতিম শিশুদের নিয়ে এ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। 

ঠাকুরগাঁওয়ে এতিম শিশুদের মৌলিক অধিকার  ও নারীদের ডেভলপমেন্টের জন্য এমন একটি উদ্যোগকে বাস্তবায়নের পেছনের ব্যপারে জানতে চাইলে অরফান হোম এর এডুকেশন ইনচার্জ বলেন, আমাদের বাসমাহ ঠাকুরগাঁও সহ সারা দেশে পাঁচটি শাখা আছে। নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁর একটি শাখাতে মির্জা ফখরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যগণ পরিদর্শন করেন।  আমাদের কার্যক্রেম তাদের ভালো লাগে এবং এতিম শিশুদের জন্য এমন উদ্যোগ ঠাকুরগাঁওয়ে বাস্তবায়নের জন্য তারা উৎসাহ প্রকাশ করেন এবং ৭৫ শতক জমি এতিমদের জন্য দান করেন৷ এই কর্মকর্তা বলেন বাসমাহ’র  সমস্ত পক্রিয়া মেনেই এটি গড়ে উঠছে।

বাসমাহর সিইও মীর সাখাওয়াত হোসাইন এর বরাতে প্রতিষ্ঠানটির এডুকেশন ইনচার্জ আরও বলেন  বাসমাহ ফাউন্ডেশনের তত্ত্ববধানে সারা দেশ জুড়ে সেবামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে ।বাসমাহ স্কুল এন্ড কালচারাল সেন্টার,বাসমাহ ওরফান্স হোম,বাসমাহ উইমমেন্স স্কিল এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার।এ ছাড়াও শীতকালীন শীত বস্ত্র বিতরণ,কুরবানি প্রোগ্রাম,ইফতার প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ