আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

কারবালা প্রসঙ্গে রাসূল (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী:-

কারবালা কোন ইতিহাস নয়, এটা এক ন্যায়ের প্রতীক”। যা শিক্ষা দেয়- —-

-এস এম এম সেলিম উল্লাহ

সত্য কখনো মাথা নত নাহি করে , গর্দানও যেতে পারে সত্যের তরে ।"

কারবালার শিক্ষা ও আহলে বাইতের মর্যাদা:-
হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইসলাম ও সত্যের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। তিনি ইয়াজিদের অন্যায় বায়াত গ্রহণ না করে শহীদ হন। ইসলামের স্বরূপ ও মর্যাদা রক্ষায় ইমাম (রা.)’র ভূমিকা অনন্য।
কুরআন ও হাদিসে নবী (দ.) পরিবারের (আহলে বাইত) মর্যাদা বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে। পবিত্র আহলে বাইতকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ।
রাসূল (দ.) বলেন, হাসান ও হোসাইন (রা.) জান্নাতী যুবকদের নেতা। তাঁদের ভালোবাসা মানে ইসলামের ত্যাগ ও সত্যের আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করা।
✦ আহলে বাইতের প্রেম ও কারবালার অনুপ্রেরণা:-
কারবালার আত্মত্যাগ শুধু ইতিহাস নয়, বরং ন্যায়ের প্রতীক। এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মবিসর্জনের প্রতীক।
রাসূল (দ.) এর বহু হাদিসে আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা, তাদের মর্যাদা ও শাফায়াতের কথা বলা হয়েছে।রাসূল (সা.) বলেন:“হুসাইন আমার থেকে, আমি হুসাইন থেকে। যে হুসাইনকে ভালোবাসবে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন।” (তিরমিজি)।
★কারবালা প্রসঙ্গে রাসূল (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী:-
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদতের পূর্বাভাস দেন। হযরত উম্মে সালামা (রাঃ)-কে রাসূল (সা.) জানালেন—জিবরাঈল (আঃ) এসে বললেন, তাঁর নাতি হুসাইন (রাঃ) কারবালার ময়দানে শহীদ হবেন এবং সেই জমিনের মাটিও রাসূল (সা.)-এর কাছে পৌঁছে দেন। (মুসনাদ আহমদ)।
♦ কারবালার ইতিহাস (সংক্ষেপে):-সময়: ১০ মহররম, ৬১ হিজরি (১০ অক্টোবর, ৬৮০ খ্রিঃ)।ইমাম হুসাইন (রাঃ) কুফাবাসীদের ডাকে সাড়া দিয়ে পরিবারসহ কারবালায় পৌঁছান। সেখানে তাঁকে ফাঁদে ফেলে পানিবঞ্চিত করা হয়।১০ মহররম রোযা অবস্থায় ইমাম (রাঃ) ও তাঁর সাথিরা নির্মমভাবে শহীদ হন।ইয়াজিদের বাহিনী তাঁর মুবারক মাথা কেটে দামেশকের রাজপ্রাসাদে পাঠায়।
✦ হাররার করুণ ইতিহাস:-
ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের পর ইয়াজিদের সেনারা মদিনায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়, যাকে হাররার ঘটনা বলা হয়। অসংখ্য সাহাবা ও তাবেঈ শহীদ হন। মুসলিম ইবনে ওকবা’র বাহিনী মদিনায় তিনদিন ধরে লুট, হত্যা ও নির্যাতন চালায়। সিরাত লেখকগণ বর্ণনা করেন বিশেষ করে কুরতুবী বলেন মদীনাবাসীদের মদিনা থেকে বাইরে চলে যাওয়ার কারণ এই হারার মর্মান্তিক ঘটনা যে সময় মদিনা শরীফ অবশিষ্ট সাহাবা এবং তাবেঈদের দ্বারা পরিপূর্ণ এবং লোক বসতিতে ভরপুর এবং তার চিত্তাকর্ষক সাদৃশ্য বিদ্যমান মদীনাবাসীদের ওপর একের পর এক বিপর্যয় এবং অঘটন নেমে আসে ফলে তারা মদিনা ছেড়ে বাইরে চলে যায় । দুষ্ট ইয়াজিদ মুসলিম ইবনে ওকবা র নেতৃত্বে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী যুদ্ধ করার জন্য মদিনায় প্রেরণ করে। ওই সৈন্যবাহিনী কমবক্ত লোকেরা এই হারার নামক স্থানে নিতান্ত নির্মমতা এবং অবমাননার সাথে এই মহাত্মা গণের শহীদ করেন। তারা তিন দিন পর্যন্ত মসজিদে নববীর সম্মান হানির কাজে লিপ্ত ছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রাক্কালে এজিদের কুচক্রী দল শিশু এবং মেয়ে লোক ব্যতীত ১২৪৯৭ জন লোককে হত্যা করে। যার মধ্যে ছিল ১৭০০ মুহাজির, আনসার, তাবেঈ,ওলামা ১০ হাজার সাধারণ লোক ৭০০ হাফেজে কুরআন ৯৭ জন কুরাইশ। ওই ঘটনায় এজিদের সৈন্যবাহিনী নানা প্রকার অত্যাচার অনাচার ও ধৃষ্টতাপূর্ণ অপকর্মে লিপ্ত হয় যেনার মত ভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বর্ণিত আছে এই ঘটনার পর ১০০০ মেয়েলোক অবৈধ সন্তান প্রসব করে। যেসব সাহাবায়ে কেরামকে মদিনায় জোরপূর্বক অমানুষিকভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ফেরেস্তা স কর্তৃক গোসল প্রাপ্ত হযরত হানজালার পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ, তিনি সাত পুত্র সহ শহীদ হন।এই ঘটনায় প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী সর্বশেষ লাঞ্ছিত হন এজিদ বাহিনীর হাতে। বর্ণিত আছে এই গুন্ডাবাহিনী তার দাড়ি মোবারক গোড়া থেকে উচ্ছেদ করে ফেলে। লোকেরা তার দাড়ির এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করতেন আপনি কি দাড়ি নিয়ে খেলছেন এবং দাড়ি উচ্ছেদ করে ফেলেছেন? তিনি উত্তর দিতেন না। বরং ওই শাওন দেশীয় লোক গুলো আমার উপর অত্যাচার করেছে তাদের একদল লোক আমার ঘরে প্রবেশ করে ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র নিয়ে যায় তারপর আরেকদল প্রবেশ করে কোন আসবাবপত্র না পেয়ে তারা আমার দাড়ি নিয়ে টানা হেচরা করে যার পরিণতি তোমরা এখন দেখছো। এই দুষ্টু লোকেরা এভাবে আরো কত যে অবর্ণনীয় নিপীড়ন ও নির্যাতন চালিয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

✦ ইসলামের নীতিবোধ ও ইয়াজিদি বর্বরতা:-
ইসলামে অন্যায়, অবিচার, হিংসা, চুরি, নারী নির্যাতন, মদ্যপান ইত্যাদি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ । অথচ ইয়াজিদের বাহিনী এসবের সকল সীমা অতিক্রম করেছিল।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজ কিছু লোক কারবালা এবং ওই ঘটনা নিয়ে মহরম মাস আসলে “শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো”এজিদের সাফাই গেয়ে নিজেদেরকে এজিদের উত্তরসূরী হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যস্ত। যা চরম ভাবে ইসলাম ও মানবতার পরিপন্থী। অপরদিকে কেহ আহলে বাইতের প্রেম-ভালবাসা দেখালে তাদেরকে শিয়া নামে অপপ্রচারে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। আমার বর্ণিত সত্য ঘটনা গুলোতে কারো সন্দেহ হলে সে যেন যুগের শেষ মুহাদ্দিস হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী লিখিত “জজবুল কুলুব ইলা দিয়ারেল মাহবুব”কিতাবখানা পড়ে দেখেন।

♥ হযরত ইমাম হুসাইনের (রাঃ) বিখ্যাত ভাষণ:-“অপমান আমাদের ধাতে নেই। আমি তরবারি বেছে নিয়েছি। আমি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না।”
★ কারবালার শহীদগণ:-হাশেমি পরিবার:-
আলী আকবর (রাঃ), আলী আসগর (রাঃ), হযরত আব্বাস (রাঃ), কাসিম (রাঃ), আউন (রাঃ), মুহাম্মদ (রাঃ)।সাহাবা ও তাঁদের বংশধর:-মুসলিম ইবনে আওসাজা, হানী ইবনে উরওয়া, যুহায়ের ইবনে কায়ন, জোন, নাফে ইবনে হিলাল, হুর ইবনে ইয়াজিদ (তওবা করে শহীদ), সহ মোট ৭২ জন শহীদ হন ‌।
✦ আধুনিক মুসলিমদের শিক্ষা:-
আজকের মুসলিম সমাজের অধঃপতনের কারণ হলো আদর্শ থেকে বিচ্যুতি, সত্যকে গোপন করা এবং ন্যায়বিচার ভুলে যাওয়া।কারবালার শিক্ষা হলো সত্যের পক্ষে অটল থাকা ও মিথ্যার সঙ্গে আপোষ না করা। আত্মত্যাগ, ধৈর্য, তাকওয়া ও ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা।আহলে বাইত ও ইমাম হুসাইনের (রাঃ) ভালোবাসা রাখা—ঈমানের অপরিহার্য অংশ।
✦ উপসংহার:-
কারবালা শুধু ইতিহাস নয়; এটি ন্যায়, আত্মত্যাগ ও সত্যের প্রতীক। রাসূল (সা.) এর হাদিসসমূহ আমাদের জানান যে, আহলে বাইতকে ভালোবাসা ও সম্মান জানানো ইসলামের মৌলিক শিক্ষা।কারবালার ত্যাগ আমাদের জীবনে সত্য, ন্যায় ও আল্লাহর পথে অবিচল থাকার শিক্ষা দেয়। কারবালা মানেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, সত্যের পথে অবিচল থাকা এবং প্রকৃত ইসলামি জীবন গড়া। আশুরার আত্মত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করে ইসলামি জীবনধারা গড়ার তরে বিশ্ব মুসলিম উম্মার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে সেই ত্যাগ ও প্রেমের আদর্শ অনুসরণ করার তৌফিক দিন—আমিন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

পদক্ষেপ বাংলাদেশ এর বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত ।

পদক্ষেপ বাংলাদেশ-এর আয়োজন, কর্মসূচী ব্যতিক্রম ও বৈচিত্র্যময়। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকার পরিবাগস্থ সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের উন্মুক্ত মঞ্চে জাতীয় সংগঠন ও শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত’ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ১ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সাংস্কৃতিক পর্ব—দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে : শিল্পবৃত্ত, পদক্ষেপ বাংলাদেশ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে : কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, শিল্পবৃত্ত, ঢাকা স্বরকল্পন, মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি করেন : মীর বরকত, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন : গোবিন্দলাল সরকার, মো: তাজুল ইসলাম, খাইরুল আলম।

উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন আবৃত্তিশিল্পী মীর বরকত, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জেবুন্নেসা জেবা, উদয়ন স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষক সবিতা সাহা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পদক্ষেপ বাংলাদেশ-এর সভাপতি বাদল চৌধুরী। স্বাগব বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল্লাহ সাঈদ। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মতিয়ারা মুক্তা।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়- বহু ত্যাগ, সংগ্রাম আর প্রত্যাশার ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ শুধু পতাকা আর জাতীয় সঙ্গীত বদল নয়, খোল-নলচে সব পাল্টে নতুন এক আদর্শকে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নের নবযাত্রা। এই স্বপ্নের প্রধান এবং একমাত্র উপজীব্য মানুষ। মানুষের কল্যাণ, মানুষের মুক্তি, মানুষের মর্যাদা এবং মানুষের স্বাধীন ভূমিই শেষ কথা। কত মাতা, কত ভগ্নি, কত জানা-অজানা নারী তাঁর সম্ভ্রম হারিয়েছে শুধু এই মানুষকে মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। মানুষ কল্পনাবিলাসী কিন্তু নিজেতো সে কাল্পনিক নয়Ñএ ভূমিতেই তার সৃষ্টি, বেড়ে ওঠা, ভালো-মন্দের স্বাদ নেয়া, অতঃপর ভূমিতেই মিলিয়ে যাওয়া। এ ভূমির প্রতি তার প্রচ- ভালোবাসা।

মাতৃক্রোড়ে যেমনিভাবে শিশু বেড়ে ওঠে; একইভাবে কাদা-মাটি গায়ে মেখে আলো-বাতাসে অবগাহন করে এই ভূমিকেই মাতৃক্রোড় ভেবে একদিন চিরবিদায় নেয় প্রতিটি মানবশিশু। জন্ম আর মৃত্যুতে যে ভূমিকে কখনো আলাদা করা যায় নাÑতারই অমার্যাদা করবে ভিনদেশী তস্কর! তা কি করে মেনে নেয় ধুলো-বালি গায়ে মেখে বেড়ে ওঠা এ জনপদের মানুষেরা। এ ভূমিরই সাহসী-ত্যাগী- পোড়খাওয়া এক নামÑশেখ মুজিব। মাটি আর মানুষের সাথে ছিলো যাঁর আজন্ম সখ্য, ভিনদেশী হায়েনার হিংস্র থাবায় বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তাঁর হৃদপি-; তবুও ভূমি আর মানুষের স্বাধীনতায় অবিচল থেকেছেন তিনি।

তাঁরই অঙ্গুলী হেলনে সাড়ে সাত কোটি মানুষ পরিণত হয়েছে এক একজন নেতাজী সুভাষ বসু, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, তিতুমীর, বাঘাযতিন, লক্ষ্মীবাই, ভগৎসিং, রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, সালাউদ্দিন, বরকত, আসাদ, মনুমিয়া’য়। এ গাঙ্গেয় বদ্বীপের তেরোশত নদীর জোয়ার আর পাখিদের কলতানে উচ্চারিত হয়েছে ভিনদেশী হায়েনার বিনাশ- ধ্বনি। লাঙলের ফলা থেকে তৈরি উর্বর মাটির প্রতিটি চাকা পরিণত হয়েছে শত্রুবিনাশী আনবিক বোমায়। বাঁশঝাড় উজাড় করে তৈরি হয়েছে চকচকে বেয়নেট।

নিঃশঙ্ক চিত্তে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার অগ্নিপুরুষ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সঞ্চারিত হয়েছে সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রতিটি রক্ত কণিকায়Ñবিজয় অর্জিত হয়েছে মানুষের সংগ্রাম আর আত্মদানের। বিজয় মাসের সূচনালগ্নে আমরা নতুন করে উদ্দীপ্ত হতে চাইÑমাটি আর মানুষের কল্যাণ কামনায়। আমরা বিনাশ চাই সেই নরপশুদের যারা মাটির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ভিনদেশী হায়েনাদের সঙ্গী হয়েছিলো মনুষত্বের বিনাশ সাধনে। সেই সাথে চাই আজকের এই দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’-এর সরকারি স্বীকৃতি। মাটি আর মানুষের জয় হোক, জয় হোক শুভ চিন্তা আর আদর্শের।

ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা পরিবারের দানে গড়ে উঠছে এতিম শিশু ও নারীর ক্ষমতায়ন কেন্দ্র 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পরিবারের দান করা জমিতে এতিম শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে ও নারীর স্কিল ডেভলপমেন্টের জন্য গড়ে উঠছে মির্জা রুহুল আমিন এন্ড ফাতেমা মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের আদর্শ কলোনিতে কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ চলছে। 

 আর কমপ্লেক্সটি বাসমাহ ফাউন্ডেশনের তত্বাবধানে শত শত এতিম শিশুদের মৌলিক অধিকার পাওয়ার ঠিকানা হিসেবে পরিণত হবে। যেখানে এতিম শিশুরা খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকারগুলো বিনামূল্যে নিশ্চিৎ হবে। নারীদের স্কিল ডেভলপমেন্টে কাজ করবে। 

গত এক বছর যাবৎ এ কমপ্লেক্সটির কাজ শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত চার ভাগের তিন ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে শতাধিক এতিম শিশুকে নিয়ে কমপ্লেক্সটিতে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিৎ করেছেন  কমপ্লেক্সে দায়িত্বে থাকা  বাসমাহ অরফানস হোম এর এডুকেশন ইনচার্জ আহম্মেদ আমিন।

তিনি আরও জানান, এই কমপ্লেক্সে বাসমাহ অরফানস হোম, বাসমাহ স্কুল এন্ড কালচারাল সেন্টার এবং বাসমাহ ওমেন্স এন্ড স্কিল ডেভলপমেন্ট সেন্টার হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ। এক কক্ষে চলছিলো একটি দোয়ার আয়োজন। জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও দেশের মঙ্গল কামনায় মির্জা পরিবারের উদ্যোগে এতিম শিশুদের নিয়ে এ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। 

ঠাকুরগাঁওয়ে এতিম শিশুদের মৌলিক অধিকার  ও নারীদের ডেভলপমেন্টের জন্য এমন একটি উদ্যোগকে বাস্তবায়নের পেছনের ব্যপারে জানতে চাইলে অরফান হোম এর এডুকেশন ইনচার্জ বলেন, আমাদের বাসমাহ ঠাকুরগাঁও সহ সারা দেশে পাঁচটি শাখা আছে। নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁর একটি শাখাতে মির্জা ফখরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যগণ পরিদর্শন করেন।  আমাদের কার্যক্রেম তাদের ভালো লাগে এবং এতিম শিশুদের জন্য এমন উদ্যোগ ঠাকুরগাঁওয়ে বাস্তবায়নের জন্য তারা উৎসাহ প্রকাশ করেন এবং ৭৫ শতক জমি এতিমদের জন্য দান করেন৷ এই কর্মকর্তা বলেন বাসমাহ’র  সমস্ত পক্রিয়া মেনেই এটি গড়ে উঠছে।

বাসমাহর সিইও মীর সাখাওয়াত হোসাইন এর বরাতে প্রতিষ্ঠানটির এডুকেশন ইনচার্জ আরও বলেন  বাসমাহ ফাউন্ডেশনের তত্ত্ববধানে সারা দেশ জুড়ে সেবামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে ।বাসমাহ স্কুল এন্ড কালচারাল সেন্টার,বাসমাহ ওরফান্স হোম,বাসমাহ উইমমেন্স স্কিল এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার।এ ছাড়াও শীতকালীন শীত বস্ত্র বিতরণ,কুরবানি প্রোগ্রাম,ইফতার প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ