আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

চলচ্চিত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব

মার্শাল আর্ট : বাংলাদেশের ইতিহাসে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম একটি অধ্যায় ।

কে এম রাজীব, চট্টগ্রাম।

বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে

ছোটবেলা থেকে মার্শাল আর্টের প্রতি খুব আগ্রহ ছিলো মনে। বুকে আশা আর স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠতে লাগলো জীবন। একটা সময় নিজেকে তৈরি করার লক্ষ্য স্বপ্ন দেখে মার্শাল আর্ট শিখতে বার্মা ( বর্তমানে মিয়ানমার)  যাওয়ার। সে স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তর করতে চলে গেলেন বার্মাতে ( বর্তমানে মিয়ানমার)। খোঁজ নেন মার্শাল আর্ট শেখানোর পাঠশালার। খোঁজ নিতে নিতে পরিচয় হয় মিয়ং অন ও মিয়ং টিন নামের দুই প্রশিক্ষকের যারা ছিলেন মার্শাল আর্ট নামে আত্নরক্ষার কৌশলের কৌশলী। শুরু হয় তাঁর স্বপ্ন পূরণের সূচনা। এতক্ষণ বলছিলাম বাংলাদেশে মার্শাল আটের জনক ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম এর কথা। ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম ১৯৫৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান এলাকার হাজী বদরুল আলম ও কক্সবাজার জেলার উকিয়া এলাকার চৌধুরী পরিবারের মেয়ে সুফুরা খাতুন দম্পতির ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি উকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশের একজন মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও অভিনেতা। ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশের মার্শাল আর্টের জনক হিসেবে পরিচিত এবং দেশজুড়ে এই ক্রীড়াটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পের একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। যিনি অসংখ্য এ্যাকশন চলচ্চিত্রে অভিনয়, পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন এবং বাংলাদেশ ফাইটার কারাতে ক্লাব ও বাংলাদেশ ফাইটার কারাতে অ্যাসোসিয়েশন নামের দুটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম। যা অল্প সময়ে বর্ননা করা  সম্ভব নয় । নিন্মে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো।

মার্শাল আর্ট জীবন :

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

তাঁর মার্শাল আর্ট জীবনের সূচনা ঘটে কৈশোরে, যখন তিনি তার পিতার সাথে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা) ভ্রমণ করেন। তিনি ইয়াংকিং ফাইটার কারাতে ক্লাবে মিয়ং-অন ও মিয়ং-টিন নামক প্রশিক্ষকের অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ফাইটার কারাতে-তে ৮ম ড্যান ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করেন।

তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ফাইটার কারাতে ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন কক্সবাজার সরকারি কলেজে। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সেখানেই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন। এরপর চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যান। ১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশ জুডো-কারাতে ফেডারেশন কর্তৃক দেশের প্রথম জাতীয় কারাতে কোচ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন, যা ছিল বাংলাদেশের মার্শাল আর্ট ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। ২’হাজার সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ফাইটার কারাতে অ্যাসোসিয়েশন যেখানে তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৫ সাল পর্যন্ত সংগঠনটির অধীনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুইশরও বেশি ক্লাব পরিচালিত হচ্ছে, যেগুলো তার শিষ্যদের দ্বারা পরিচালিত। প্রতি বছর জাতীয় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশের তরুণদের মধ্যে মার্শাল আর্ট ছড়িয়ে দিতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। জনপ্রিয় অভিনেতা ও মার্শাল আর্টিস্ট মাসুম পারভেজ রুবেল সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

চলচ্চিত্রে আগমন :

“””””””””””””””””””””””'”””

প্রথমে চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রবেশ করেন মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক হিসেবে, বিভিন্ন তারকাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে। তাঁর প্রশিক্ষণে দক্ষতা অর্জন করেন:- মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা), মাসুম পারভেজ রুবেল, মিশা সওদাগর, রোজিনা, ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল চৌধুরী, খালেদ মোহাম্মদ,খালেদ মনসুর, ববিতা, জুলিয়া। তাঁর কৌশলী প্রশিক্ষণের কারণে তিনি বহু চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ডিরেক্টর হিসেবে কাজের সুযোগ পান। পরবর্তীতে তিনি নিজেই অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে আবির্ভূত হন।

উল্লেখযোগ্য কাজসমূহ :

+++++++++++++++

তিনি বহু চলচ্চিত্রে বিভিন্ন ভূমিকায় কাজ করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে রয়েছে- মার্শাল হিরো, যেখানে তিনি প্রথম প্রধান অভিনেতা ও প্রযোজক হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন। মাস্টার সামুরাই, যেটি তাঁর ব্লকবাস্টার অ্যাকশন ফিল্ম ছিলো। সেখানে তিনি দোয়েলের বিপরীতে প্রধান চরিত্রে এবং খালেদ মোহাম্মদ ও সুচরিতা অভিনীয় করেন।

মরণ লড়াই, ছবিটিতে তিনি নিজেই পরিচালক, প্রযোজক ও প্রধান অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং সহশিল্পী হিসেবে রোজিনা, সোহেল রানা, সাবিহা, মিজু আহমেদ ও রাজীব অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি যেসব চলচ্চিত্রগুলোর অ্যাকশন নির্দেশনা  ও অভিনয়ও করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো- যাদু নগর, শরীফ বদমাশ, লড়াকুবিদ্রোহী, হুম সে জামানা (আন্তর্জাতিক), হিমালয়ের বুকে (আন্তর্জাতিক), জীবন জ্যোতি (আন্তর্জাতিক)।

নির্বাচিত চলচ্চিত্র তালিকা :

★★★★★★★★★★★

কারাতে মাস্টার, বিদ্রোহী মস্তান, সুন্দরী মিস বাংলাদেশ, কুংফু নায়ক, প্রেমিক রংবাজ, ডাইরেক্ট অ্যাকশন, জ্বলন্ত বিস্ফোরণ, হুমকির মুখে, পেশাদার খুনি, ওস্তাদের ওস্তাদ, সাহসী সন্তান, কুংফু কন্যা, নারীরাও প্রতিবাদী, মরণ নিশান, লাল চোখ, বিজলি তুফান ও মৃত্যুর ঘণ্টা

ব্যবসায়িক উদ্যোগ :

*****************

চলচ্চিত্র ও মার্শাল আর্টের পাশাপাশি তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক উদ্যোগসমূহ- ওস্তাদ জাহাঙ্গীর রিসোর্ট, ওস্তাদের হিলভিউ রেস্টুরেন্ট ও কনভেনশন হল ও বাংলাদেশ ফাইটার কারাতে জিম। এই প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যটন, আতিথেয়তা ও ফিটনেস খাতে অবদান রাখছে।

ব্যক্তিগত জীবন :

———————

ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম ২০০১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মাশুকা নাসরিন রাকা তাঁর সহধর্মিণী হিসেবে রয়েছে। রাকা ছিলেন একজন অভিনেত্রী, মডেল, উপস্থাপিকা, সাংবাদিক, মাইম আর্টিস্ট ও আবৃত্তিকার। এই দম্পতির দুটি সন্তান- তাজওয়ার আলম ও রেজওয়ার আলমতাঁ তার পূর্ববর্তী বিয়ে থেকেও দুটি সন্তান রয়েছে।

ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশের মার্শাল আর্ট এর জনক হিসেবে এবং  চলচ্চিত্রে মার্শাল আর্টের অসামান্য অবদানের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহু সম্মাননা ও পুরস্কার  পেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পুরস্কার :

★*★*★*★*★*★*★*★*★*★

নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র (২০০৫) বাংলাদেশে মার্শাল আর্টের জনক হিসেবে সম্মাননা, স্টার ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড (২০০৫) নিউ জার্সির বাংলাদেশি আমেরিকান অর্গানাইজেশন দ্বারা প্রদানকৃত, সিটি অফ প্যাটারসন, USA (২০০৫) বিশেষ সম্মাননা, সানরাইজ ইউকে রেডিও অ্যাওয়ার্ড (২০০৫, লন্ডন) মার্শাল আর্ট ও চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য পুরস্কৃত হন।

জাতীয় পুরস্কারসমূহ :

$$$$$$$$$$$$$$

বাচসাস পুরস্কার, বাবিসাস পুরস্কার, ট্রাব পুরস্কার, ফিল্ম ক্লাব অ্যাওয়ার্ড, সাংস্কৃতিক সাংবাদিক ইউনিটি পুরস্কার ও প্রযোজক সমিতির পুরস্কার সহ অন্যান্য পুরস্কার।

উত্তরাধিকার :

±±±±±±±±±

বাংলাদেশের মার্শাল আর্ট সম্প্রদায়ের পথিকৃৎ এবং চলচ্চিত্র ইতিহাসে একজন সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব। কয়েক দশকের নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি হাজারো শিক্ষার্থীকে অনুপ্রাণিত করেছেন, দেশজুড়ে আত্মরক্ষামূলক ক্রীড়াকে জনপ্রিয় করেছেন এবং সমাজ ও চলচ্চিত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখেছেন ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

সেনাবাহিনীকে সমরাস্ত্রে সজ্জিত পেশাদার বাহিনী গড়ার প্রত্যয় সেনাপ্রধানের

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি প্রশিক্ষিত, সুশৃঙ্খল ও আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ৮৯তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স এবং ৬০তম বিএমএ স্পেশাল কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে এ রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে সেনাবাহিনী প্রধান উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের পাশাপাশি প্যারেডের অভিবাদন গ্রহণ করেন। পাশাপাশি তিনি কৃতি ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

সেনাবাহিনী প্রধান প্রশিক্ষণ জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নবীন ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে বলেন, শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের ওপর ন্যস্ত হলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। সেনাবাহিনীকে একটি প্রশিক্ষিত, সুশৃঙ্খল এবং আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের ১৮৪ জন ও বিএমএ স্পেশাল কোর্সের ২০ জন অফিসার ক্যাডেট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেছেন। এর মধ্যে ১৮৩ জন পুরুষ ও ২১ জন মহিলা সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন।

কোম্পানি সিনিয়র আন্ডার অফিসার আজমাইন ইশরাক দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সেরা চৌকস ক্যাডেট নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ‘সোর্ড অব অনার’ এবং সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন।

প্রশিক্ষণ সমাপনকারী ক্যাডেটরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেন। আনুষ্ঠানিকতার শেষ পর্বে নবীন অফিসারদের র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পরিয়ে দেন সেনাপ্রধান ও তাদের অভিভাবকরা।
এর আগে, অনুষ্ঠানের শুরুতে সেনাপ্রধান বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট তাকে অভ্যর্থনা জানান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ১৮ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ গেল জাপানে।

চট্টগ্রামের কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র (ওয়ার সিমেট্রি) থেকে ১৮ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ উত্তোলন করে তাদের দেশে পাঠানো হয়েছে। প্রায় ৮০ বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত এসব জাপানি সৈন্যের দেহাবশেষ সমাধি থেকে তোলা হলো। সোমবার বিকেলে জাপান সরকারের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এসব দেহাবশেষ নিয়ে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ কাজে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সহায়তা দিয়েছে।

সেনাবাহিনীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জাপান সরকারের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলটি গত ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে অবস্থান করে সমাধি থেকে দেহাবশেষ উত্তোলন সম্পন্ন করেন। আর পুরো কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও খননকাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক।

চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া বাদশা মিয়া সড়কে ‘ওয়ার সিমেট্রি, চট্টগ্রাম’ হিসেবে পরিচিত এ কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্রের অবস্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৪৪-৪৫ সালের দিকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এ সমাধিসৌধ প্রতিষ্ঠা করে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের ৭০০টিরও বেশি সমাধি আছে। এর মধ্যে ১৮ জন জাপানি সৈনিকের সমাধি। বিশ্বজুড়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সমাধিক্ষেত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে ‘কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন’।


এর আগে, গত বছরের নভেম্বরে কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত ২৩ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ উত্তোলন করে দেশটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের সবার পরিচয় সমাধির ওপর লিপিবদ্ধ থাকায় জাপানে তাদের স্বজনদের শনাক্ত সহজ হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য। কুমিল্লার ময়নামতিতেও দেহাবশেষ উত্তোলনের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খনন বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীরপ্রতীক।

চট্টগ্রাম থেকে দেহাবশেষ উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ‘কুমিল্লায় প্রত্যেকটি সমাধির ওপর সৈনিকের নেমপ্লেট ছিল। চট্টগ্রামে সেটা নেই। এখানে সমাধিক্ষেত্রে একটি জায়গায় একটা নেমপ্লেটে ১৮ জনের নাম লেখা আছে। কিন্তু কোনটা কার সমাধি সেটা চিহ্নিত করা নেই। আমরা ১৮টি সমাধিই খনন করেছি। সবগুলোতে মাথার খুলি, কঙ্কাল, কোমড়ের অংশ, আঙুলের অংশসহ আরও বিভিন্ন দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে কুমিল্লার মাটি লবণাক্ত না। সেজন্য সেখানে খননকাজ সহজ ছিল। চট্টগ্রামে সেটা একটু কঠিন ছিল এবং সময়ও বেশি লেগেছে।’

খননে পাওয়া দেহাবশেষ নিয়ে জাপানের প্রতিনিধিদল ‘খুবই সন্তুষ্ট’ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকেই (সোমবার) উনাদের বিমানে তুলে দিয়ে এলাম। দেহাবশেষগুলো খুবই সতর্কতার সঙ্গে যাতে ভেঙ্গে না যায়, সেজন্য তুলা দিয়ে মুড়িয়ে বাক্সে নেওয়া হয়। আমি নিজেই সেগুলো প্যাকিং করি। এর মধ্যে কয়েকটা হাতে করে এবং আর কিছু কার্গো বিমানে পাঠানো হয়েছে।’জাপানে নিয়ে স্বজনদের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে দেহাবশেষগুলোর পরিচয় শনাক্ত করে তাদের পরিবারের কাছে দেওয়া হবে বলে দেশটির প্রতিনিধি দলের বরাতে জানান কাজী সাজ্জাদ আলী জহির।

এদিকে সেনাবাহিনীর বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, দেহাবশেষ উত্তোলন শেষে গত ২৮ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল যথাযোগ্য সামরিক মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর সেগুলো জাপানের প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়।চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘ওয়ার সিমেট্রি থেকে ১৮ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী এ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। বিষয়টি আমরা অবগত আছি।’

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ