আজঃ মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর, ২০২৫

যুদ্ধবন্দীর বিনিময়ে শিক্ষা: প্রিয় নবী (দ:) সেরা কর্মসূচি

ড. মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী

লেখক: কলাম লেখক, রাজনীতিক

কবির কল্পনা, শিল্পীর আলপনা, দার্শনিকের চিন্তা, সাহিত্যিকের লেখনী, সূরাকারের সূর যেখানে ব্যর্থ সেখান হতে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (দঃ)’র প্রশংসা শুরু। মানুষের মগজ মস্তিষ্ক এক বিস্ময়কর বস্তু। আধুনিক বিজ্ঞানীদের সেরা বিজ্ঞানী বলা হয় আলবার্ট আইনস্টাইনকে।আইনস্টাইনের মাথার মগজ ছিল দেড় লিটার। প্রায় মানুষের মস্তিষ্ক এ রকম। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন, একটি কম্পিউটারের দাম যদি হয় এক লক্ষ টাকা , তাহলে দেড় লিটার মস্তিষ্কের দাম হবে দশ হাজার কোটি টাকা। দুনিয়ার মহাকালের সকল মানুষের মস্তিষ্ক ব্যয় করে চিন্তা-গবেষণা করলে আল্লাহর একটি চিন্তার সমান হবে না। সমস্ত মানবের শক্তি ব্যয় করলে আল্লাহর একটি কাজের সমান হবে না।

মহান আল্লাহ পাক তাঁর কুদরতী শক্তি ব্যবহার করে তাঁর নবী (দঃ)’র মর্যাদা ঘোষণা করেছেন ‘ওয়ারা ফান লাকা জিকারাকা’… (আল কোরআন) অর্থাৎ হে নবী আমি আপনার প্রশংসাকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছি। কতটুকু উঁচুতে নিলেন, তার সীমানা কোথায়,তা বান্দার ধারণায় নেই।এই চিন্তার ক্ষমতা বান্দার নেই। যে নবী (দঃ)’র প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক নিজেই উঁচুতে নিয়ে গেছেন, তাঁকে দুনিয়ার কোন শক্তি শত চেষ্টায় নিচে নামাতে পারবে না। কেউ নিচে নামাতে চাইলে সে নিজেই নিচে নেমে যাবে,কেউ তাকে আর উপরে তুলতে পারবে না।

কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদ বলেছেন, ‘পৃথিবীর তাবৎ উপন্যাসিক যাঁর কোটের পকেট থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তাঁর নাম দস্তয়ভস্কি। আরেকজন আছেন মহামতি টলস্টয়। এক রেলস্টেশনে যখন টলস্টয় মারা গেলেন, তখন তাঁর ওভারকোটের পকেটে একটি বই পাওয়া গেল। বইটির নাম Sayings of Prophet। বইটি ছিল টলেস্টরের খুবই প্রিয়।এটি সবসময় তিনি সঙ্গে রাখতেন। সময় পেলেই পড়তেন। বইটিতে হযরত মোহাম্মদ (দঃ)’র বিভিন্ন সময়ে বলা ইন্টারেস্টিং কথাগুরো গ্রন্থিত। আমি বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাই, আমাদের কয়জন বইটি পড়েছেন? টলেস্টয় যে বইটি পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন, সেই বই আমাদের প্রত্যেকের একবার কী পড়া উচিৎ নয়? (সূত্র হাসান হাফিজের লেখা, ‘হুমায়ুন আহমদ তাঁর স্পষ্টবাদিতা’ লেখা দ্রঃ)

যিনি পথকলি জায়েদকে লালন পালন করে যুদ্ধের সেনাপতি (একটি যুদ্ধের) করতে পারেন, দাসীকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারেন,বিধবাকে উন্মুল মোমিনের মর্যাদা অধিষ্টিত করতে পারেন, কৃষ্ণাঙ্গ হযরত বেলাল (রা:)কে সহচরের মর্যাদার আসনে বসাতে পারেন তাঁর নাম ‘মুহম্মদ’ (দঃ)। তৎকালে এ ধরনের মহান কাজ করা দুনিয়ার বুকে সম্ভব ছিল না, অথচ একজন রাষ্ট্রনায়ক ও সেরা ধর্ম প্রবর্তক হয়ে এ ধরনের অহিংস কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।মহানবী হযরত মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (দঃ) ছিলেন সর্বপ্রথম সকল ধর্মের মানুষের সেবক তরপর ধর্মপ্রচারক। সকল ধর্মের মানুষের কল্যাণের কারণে ধর্ম প্রচারকের পূর্বেই তিনি ‘আল আমিন’ উপাধী পেয়েছেন। নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে তিনি সকল মতের মানুষের কল্যাণে সামাজিক সংগঠন ‘হিলফুল ফুজুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বধর্মের মানুষের কল্যাণ ব্যতীত অমুসলমানদের দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট করা সম্ভব হতো না। তিনি মক্কায় ধর্ম প্রচারক আর মদিনায় ছিলেন রাষ্ট্র নায়কও।

মদিনায় যখন হিজরতের পর রাষ্ট্র নায়ক নির্বাচিত হন তখন মদিনায় মুসলমানের সংখ্যা ছিন মাত্র ২ শত জন। যা মদিনার জনসংখ্যার কম বেশী ৬/৭ ভাগ। তিনি ছিলেন অমুসলিম ভূখণ্ডের মুসলিম রাষ্ট্রনায়ক।সংখ্যালঘু মুসলমানদের নবীকে কেন সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলমানরা রাষ্ট্রনায়ক করলেন? কারণ তিনি সর্বধর্মের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।মক্কার কাফিরগণ প্রিয় নবী (দঃ) কে জন্মভূমি হতে বিতাড়ন করেছেন সে কথা সবাই উচ্চস্বরে উচ্চারণ করেন কিন্তু মদিনার কাফিরগণ তাঁকে রাষ্ট্রনায়ক নির্বাচিত করেছেন সে কথা কেউ বলতে চায় না। নবী পাক (দঃ)’র মহামানবতার পথ অনুসরণ করে আউলিয়া কেরামগণ দুনিয়াব্যাপী ধর্ম প্রচারের আগে সর্বধর্মের মানুষের সেবা-কল্যাণ করেন। এই মানবতার সেবায় যুক্ত হয়ে মানুষ দলে দলে আউলিয়া কেরামের হাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

প্রিয় নবী (দঃ) দুনিয়ার মানুষের নিকট যে ক্ষমা আদর্শ রেখে গেছেন তা অন্যকোন মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কাফির সর্দার আবু সুফিয়ান ছিলেন ইসলাম ও মহানবী (দঃ)’র চরম শত্রু। যার নেতৃত্বে শত শত সাহবী শহীদ হন। নবী পাক (দঃ)’র প্রাণপ্রিয় চাচা হযরত আমির হামজা (রা:) কে যে ব্যক্তি টুকরো টুকরো করে শহীদ করে। আবু সুফিয়ানের মত যে সব কাফির মুসলমানদের উপর চরম অমানুষিক নির্যাতন করেছিল মক্কা বিজয়ের পর প্রিয় নবী (দঃ) তাঁদের ক্ষমা ঘোষণা করে বলেন,’আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। তোমরা সবাই মুক্ত। আমি তোমাদের সাথে সেই কথাই বলছি, যে কথা হযরত ইউসুফ (আ:) তাঁর ভাইদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন,আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। যাও তোমরা সবাই মুক্ত’।
হযরত ইউসুফ (আঃ) নিজ ভাইদের ক্ষমা করেছিলেন, এই ভাইয়েরা আবু সুফিয়ানের মত চরম জুলুম করেনি। আবু সুফিয়ান তো আপন ভাই ছিলো না, ছিলো হত্যাকারী ও নির্যাতনকারী। তাদের ক্ষমা করা কোন সাধারণ বিষয় নয়।

এ ধরনের ক্ষমা ইতিহাস দুনিয়াতে আজ পর্যন্ত কেউ রচনা করতে পারেননি। শুধু ক্ষমা নয়, এ ধরনের হত‍্যাকারী একটি মাত্র বাক্য উচ্চারণ করার সাথে সাথে প্রিয়নবী (দঃ)’র সহচর, সাহাবায়ে রাসুল হয়ে যান। সেই মর্যাদাপূর্ণ বাক্যটি হলো; ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ।’ একটি বাক্য উচ্চারণের মাধ্যমে প্রিয় নবী (দঃ) সাহাবী হয়ে যাওয়ার ঘটনা ইতিহাসে বিরল।

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (দ:) যুদ্ধবন্দীদের প্রতি যে আচরণ করেছেন, বর্তমান ইউরোপ আমেরিকার রাষ্ট্রগুলো সে ধরনের আচরণ করা চিন্তাই করা যায়না। মুসলমানের নবী (দঃ)’র নির্দেশে সাহাবীরা না খেয়ে যুদ্ধবন্দীদের খাওয়াতেন। ভালো খাওয়াটা যুদ্ধবন্দীদের হাতে তুলে দিতেন। বদরের যুদ্ধে ৭০ জন নিহত, ৭০ জন বন্দী হয়। বন্দীদেরকে ১০ জন মুসলমানকে শিক্ষিত করার বিনিময়ে মুক্তি দিয়ে ছিলেন। আধুনিক যুগে খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচি পালন করা হয়। অথচ এ ধরনের কর্মসূচি ‘বন্দী মুক্তির বিনিময়ে শিক্ষা’ চৌদ্দশত বছর পূর্বেই মহানবী (দঃ) পালন করেছিলেন।

মহানবী হযরত মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (দঃ) ছিলেন ধৈর্যের পাহাড়। ছোটবেলা হতে তাঁর ধৈর্য গুণের বিকাশ ঘটতে থাকে। এতিম অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে মা ও দাদাকে হারান। বাল্যকাল হতে কঠিন পরিশ্রম করে উপার্জন করতে শিখেন। জীবনটা শুরু হয় ধৈর্য্যের অবলম্বন দিয়ে। তিনি কঠিন বিপদ এবং বাধার মধ্যে দৃঢ়তার সাথে ধৈর্যধারণ করতেন। আবার ঠিক তেমনি বিজয়ের সময় ধৈর্যধারণ করতেন। যখনই কোন বিজয় তাঁর পদচুম্বন করেছে, তখন তিনি আত্মসংবরণ করতেন। আল্লাহর দরবারে শোকর আদায় করতেন। দুনিয়ার সেরা সেরা ব্যক্তি, মনীষী, নেতার পাবলিক লাইফ এক রকম আর প্রাইভেট লাইফ হয়ে থাকে অন্য রকম। কিন্তু প্রিয় নবী (দঃ)’র ব্যক্তি আর সামাজিক জীবনে কোন পার্থক্য বিন্দু মাত্র ছিল না।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা উন্নতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে অহংকার ও দাম্ভিকতায় মাতোয়ারা হয়ে যায়। নবী পাকের জীবনে এ ধরনের কোন দম্ভ অহমিকার বিন্দু মাত্র প্রকাশ ঘটেনি। হযরত আনাস (রা:) ছোটকাল হতে প্রিয় নবী (দঃ)’র কাছে থাকতেন। হযরত আনাস (রা:) বর্ণনা করেছেন, ‘আল্লাহর কসম করে বলছি, দীর্ঘ দশ বছর আমি প্রিয় নবী (দঃ)’র যত খেদমত করেছি, তার চেয়ে বেশী খেদমত আমি উনার হতে পেয়েছি। দীর্ঘ দশ বছরে তিনি আমার কোন কথা ও কাজে বিরক্ত প্রকাশ করেননি। এই হলো নবী (দঃ)’র আদর্শ।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কালিয়াকৈরে শ্রমিক দলের বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়

রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচির আলোকে কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রমবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন কবির খানের সমর্থনে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল গাজীপুর জেলা শাখার কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌর শ্রমিক দলের উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচি শুরু হয় কালিয়াকৈর বাস টার্মিনাল থেকে।
র‍্যালিটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা, সফিপুর, মৌচাক, কোনাবাড়ি, বোর্ডঘর ও সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় বাস টার্মিনালে ফিরে এসে এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ও গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মিনার উদ্দিন, এবং গাজীপুর জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ আলহাজ্ব উদ্দিন যুবরাজ।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌর শ্রমিক দলের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দসহ বিপুলসংখ্যক শ্রমিক, পরিবহন কর্মী ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী।

বক্তারা বলেন, “গাজীপুর-১ আসনের শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের প্রকৃত প্রতিনিধি হিসেবে মোঃ হুমায়ুন কবির খানই যোগ্য প্রার্থী। আমরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আহ্বান জানাই—গাজীপুর-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মোঃ হুমায়ুন কবির খানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হোক।”

তারা আরও বলেন, “শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে সাধারণ জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করছি। এই ভোট হবে পরিবর্তনের ভোট, এই ভোট হবে শ্রমজীবী মানুষের সরকারের পক্ষে।”

র‍্যালি ও আলোচনা সভা চলাকালে কালিয়াকৈরের বিভিন্ন এলাকায় “ধানের শীষে ভোট দিন, শ্রমজীবীর জয় হোক”—এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো অঞ্চল।
শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের মুখে একটাই প্রত্যাশা—গাজীপুর-১ আসনে শ্রমিক নেতা মোঃ হুমায়ুন কবির খানকে সংসদে দেখতে চায় তারা।

পাবনা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবীতে চাটমোহরে জন সমুদ্রে..

পাবনা প্রতিনিধিঃ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে ঘিরে ৭০,পাবনা-০৩ (চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। প্রার্থী পরিবর্তন এবং স্থানীয় নেতৃত্ব থেকে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নের দাবিতে সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশাল জনসমাবেশ। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে উপজেলা ও পৌর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। মাঠজুড়ে সৃষ্টি হয় জনসমুদ্রের মতো এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।


সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিএনপির কঠিন সময়েও চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরের নেতাকর্মীরাই দলকে টিকিয়ে রেখেছেন। মামলা, জেল, নির্যাতন সবকিছু মোকাবিলা করে তাঁরা বিএনপির পতাকা উড়িয়েছেন। অথচ এখন যদি বহিরাগত কাউকে ধানের শীষের প্রার্থী করা হয়, তা স্থানীয় নেতাকর্মীরা মেনে নেবেন না। তারা বলেন, এই এলাকার রাজনীতি এই এলাকার মানুষই ভালো জানে। বাইরে থেকে কাউকে এনে জনগণের ভোট চাওয়া সম্ভব নয়।

বক্তারা আরো সতর্ক করে বলেন, যদি স্থানীয়তার ভিত্তিতে যোগ্য, গ্রহণযোগ্য ও ত্যাগী নেতাকে প্রার্থী করা না হয়, তবে নির্বাচনের ফলাফল দলের জন্য শুভ হবে না। মাঠ পর্যায়ে যারা বছরের পর বছর লড়াই করেছেন, তাদের উপেক্ষা করলে আন্দোলন-সংগ্রামের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ আসনে যেন স্থানীয় এবং ত্যাগী নেতারই মনোনয়ন দেওয়া হয়।

চাটমোহর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তায়জুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন,
চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কে.এম আনোয়ারুল ইসলাম,চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা, ভাঙ্গুড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাড. মজিবুর রহমান, ভাঙ্গুড়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মতিন রাজু, চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল আজিজ, ফরিদপুর পৌর যুবদলের সদস্য সচিব কাকন হোসেন, ভাঙ্গুড়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম, চাটমোহর পৌর বিএনপি নেতা আবু তালেব, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম হৃদয় সহ আরও অনেকে।

সমাবেশে বক্তারা এক কণ্ঠে বলেন, যারা দুঃসময়ে বিএনপির পতাকা ধরে রেখেছেন, যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদেরই প্রার্থী করা হোক। বহিরাগত চাপিয়ে দিলে মাঠে কোনো সাড়া মিলবে না। তবুও যদি বহিরাগত প্রার্থী কি রাখা হয় তবে এ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর পরাজয়ের দায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের নয়, দলের উচ্চ পর্যায়কে নিতে হবে।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চাটমোহর উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান হোসেন।

সমাবেশ শেষে স্থানীয় নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল বের করে চাটমোহর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। মিছিল শেষে তারা আবারও ঘোষণা দেন “চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া- ফরিদপুরের জনগণ স্থানীয় প্রার্থীই চায়; এই দাবির প্রতিফলন না ঘটলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ