আজঃ সোমবার ১০ নভেম্বর, ২০২৫

বাচ্চাকে টাইফয়েড টিকা দেবেন কি দেবেন না সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন?

এম মনির চৌধুরী রানা

গত কয়েকদিনে পরিচিত অপরিচিত অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন গ্রুপে প্রশ্ন করে যাচ্ছেন বাচ্চাকে টাইফয়েড এর টিকা দেবেন কি দেবেন না। ১২ ই অক্টোবর ২০২৫ হতে দেশব্যাপী শুরু হওয়া টাইফয়েড ক্যাম্পেইন এর ব্যাপার এ ছড়িয়ে পড়া নানা গুজব যাচাই বাছাই না করেই শেয়ার দিচ্ছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। এতে সমস্যা যা হচ্ছে সাধারণ মানুষের। আমাদের দেশের অর্থনীতি এমন যে এক শ্রেণি পেশার মানুষ এর জন্য টাকা কোন সমস্যা নয়। তারা সরকারি জিনিসে বিশ্বাস করেন না।সরকারি যে কোন কিছুতেই তারা ভরসা পান না। আবার বেশিরভাগ মানুষ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস ফেলেন। সরকারিতে যদি সব মানসম্পন্ন আর ভালো জিনিস পাওয়া যেতো সেই আশায় তারা বুক বাঁধে। গুজব ছড়ালে এই শ্রেণির মানুষ খুব ক্ষতিগ্রস্ত হন।তারা ভালো উদ্যোগ হতে বঞ্চিত হন।

বাংলাদেশ সারা বিশ্বে টিকা প্রদান কর্মসূচিতে মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। হাসপাতালের ডিজিজ বার্ডেন কমানোর জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন টিকাদান ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে। টিকাদান রোগ প্রতিরোধ এর অন্যতম একটা উপায়। শুধুমাত্র জনচেতনতা বা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে রোগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়।বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক টিকা প্রদানের মাধ্যমে রোগ নির্মূলের বহু ইতিহাস আছে। প্রমাণ হিসেবে স্মল পক্স, পোলিও নির্মূলের ইতিহাস পড়ে দেখতে পারেন। তাছাড়া কোন রোগের টিকা বিনামূল্যে প্রদান করতে হলে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তূকি দিতে হয়। সরকার যে কোন টিকা কেনার আগে চাহিদা নিরূপণ, প্রয়োজনীয়তা, রিস্ক বেনিফিট রেশিও সহ অনেক কিছু হিসাব করে যে কোন টিকা প্রদানের পজিটিভ নেগেটিভ দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এবার আসি টাইফয়েড এর কথায়। বিশ্বব্যাপী, টাইফয়েড একটি উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য হুমকি, যা সালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয় এবং দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে ছড়ায় ।গ্লোবাল ডিজিজ বার্ডেন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২১ সালে প্রায় ৪,৭৮,০০০ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছিল এবং এর ফলে ৮,০০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যার মধ্যে প্রায় ৬৮% ছিল শিশু।  দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ওশেনিয়ার মতো অঞ্চলে টাইফয়েড জ্বরের প্রবণতা রয়েছে । এ কারণেই পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়ায় টাইফয়েড টিকা নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাকিস্তান আর নেপালে ক্যাম্পেইন করে দেয়া হয়েছে এই টিকা। অন্যান্য উন্নত দেশে এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্তের হার প্রায় শূন্যের কোঠায় বলে সেখানে এই টিকার প্রয়োজনীয়তা নাই।ঠিক যেমন মার্স কো ভি এর মতো রোগের টিকা আমাদের দেশে প্রয়োজন নাই।

টাইফয়েডের জটিলতা এত বেশি যে বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যেককে সম্ভব হলে এই টিকা দিতো সরকার। কিন্তু বাজেটের সীমাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে এক ডোজ টাইফয়েড এর টিকা অন্তত নিশ্চিত করেছে সরকার। এই টিকাও কিন্তু ৫ বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দিবে।এরপর আরও সুরক্ষার জন্য বুস্টার ডোজ দিতে চাইলে কিনে মারতে হবে টিকাটি।সরকার আর সাপোর্ট দিতে পারবে না পরবর্তীতে।বর্তমান ক্যাম্পেইনে ৯ মাস হতে ১৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের টিকা দেয়া হচ্ছে। ১৩ ই নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত এ ক্যাম্পেইন চলবে।এরপর সামনের বছর হতে শুধুমাত্র ৯ মাস বয়সী শিশুদের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে বিনামূল্যে এ টিকাটি প্রদান করা হবে। আপনি চাইলেও সরকার আপনাকে বিনামূল্যে এ টিকাটি আর দেবে না।

তাছাড়া বাজারে পাওয়া টাইফয়েড টিকাগুলো পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিন যা তিন বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়। সরকার যে টিকাগুলো কিনেছে সেগুলো কনজুগেট ভ্যাকসিন এবং এগুলো ৫ বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। টিকাগুলো কোনভাবেই সরকার বিনামূল্যে পায়নি বা এগুলো কোন ট্রায়াল টিকা নয়। অনলাইনে আইসিডিডিআরবির গবেষণার উল্লেখ করে যে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা গুজব খাই বেশি।যাচাই বাছাই করতে আমাদের মন চায় না। অনেক শিক্ষিত মানুষও যাচাই বাছাই না করে টাইফয়েড এর টিকার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে।
তারা চিন্তাও করতে পারছেন না কতজনের ক্ষতি করছেন তারা। আপনাদের প্রতি অনুরোধ দয়া করে একটু পড়াশোনা করুন। নিজের বিবেককে কাজে লাগান। আমাদের দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষগুলো খুব অবহেলিত। তাদেরকে কনফিউজড করবেন না। তাদের বাচ্চাদের সুরক্ষিত করতে দিন।

শুধুমাত্র পূর্বে টিকা দিয়ে এলার্জির ইতিহাস থাকলে, টিকা গ্রহণ এর দিন জ্বর থাকলে বা গর্ভবতী হলে টাইফয়েড টিকা দেয়া যাবে না। কোন প্রশ্ন থাকলে সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে যেখানে টিকা দেয়া হচ্ছে সেখানে ডাক্তার এর পরামর্শ নিন। টাইফয়েড ক্যাম্পেইন একটি সুযোগ আপনার বাচ্চাকে বিনামূল্যে টাইফয়েড এর বিরুদ্ধে সুরক্ষিত করার।এ সুযোগ হেলায় হারাবেন না।ডা. জাফরিন জাহেদ জিতি
এমবিবিএস, এম এস সি( এপ্লায়েড এপিডেমিওলজি), অ্যাডভান্সড ফেলো ইন ফিল্ড এপিডেমিওলজি ( ইউ এস-সিডিসি),জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম ),
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে: চট্টগ্রাম এখন আতংকের নগরী

অন্তভর্তিকালীন সরকারের ঘোষণা ২০২৬ সালের ফ্রেরুয়ারিতে জাতীয় সাংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে আতংকিত হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম সম্প্রতি রাউজান,রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী সহ চট্টগ্রাম জুড়ে খুনের মহোৎসব চলছে। ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট সন্ধ্যা। পাঁচলাইশ এলাকার কুয়াইশ রোডের নাহার গার্ডেন নামে একটি রেস্তোরাঁর সামনে হঠাৎ একটি অটোরিকশা ঘিরে গুলির ঘটনা ঘটে। রিকশায় থাকা আনিস ঘটনাস্থলে মারা গেলেও মাসুদ নামে অন্যজন আহত অবস্থায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

এর কিছুক্ষণ বাদেই দেড় কিলোমিটার দূরে মাসুদকে তার বাড়ির সামনেই গুলি করে হত্যা করে মোটরসাইকেল আরোহী কয়েকজন। এই ধরনের টার্গেট কিলিং একসময় চট্টগ্রামে প্রায়ই ঘটত। আবারও পুরনো স্ট্যাইলের হত্যা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, সরোয়ার হোসেন বাবলার বাড়ি থেকে মিটিং করে ফেরার পথে ওই দুজনকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় দুই থানায় পৃথক দুটি মামলায় সাজ্জাদ হোসেনসহ চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

সেদিনই প্রথম সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে সরোয়ার হোসেন বাবলার দ্বন্দ্ব সামনে আসে। সরোয়ার হোসেন ছিলেন চট্টগ্রামের আলোচিত এইট মার্ডারের প্রধান আসামি ‘শিবিরের ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সাজ্জাদ হোসেন খান ও হাবীব খানের অনুসারী। পরে সাজ্জাদ হোসেন খানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান সরোয়ার হোসেন। সরোয়ারকে শায়েস্তা করতে আরেক সাজ্জাদ হোসেনকে দলে ভেড়ান সাজ্জাদ হোসেন খান। এই সাজ্জাত পরিচিতি পায় ছোট সাজ্জাদ হিসেবে। গত ১৬ মাসে চট্টগ্রাম শহরেই শুধু ৬টি টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে। যার প্রতিটি ঘটনায় ভিক্টিমরা সরোয়ার হোসেনের অনুসারী। ৫ নভেম্বার বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ঘরের সামনেই টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন সরোয়ার হোসেন বাবলা।

এর আগে গত বছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁওয়ে মাইক্রো বাসে এসে আফতাব উদ্দিন তাহসিন নামে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। চলতি বছরের ৩০ মার্চ বাকলিয়া এক্সেস রোডে প্রাইভেটকার ঘিরে গুলি করে সরোয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সেদিন গাড়িতে থাকা সরোয়ারের দুই সহযোগী মারা গেলেও ভাগ্যচক্রে বেঁচে যায় সরোয়ার। ২৫ মে সরোয়ারের আরেক অনুসারী ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে হত্যা করা হয় পতেঙ্গা এলাকায়। প্রতিটি ঘটনায় সাজ্জাত হোসেন ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী রায়হানের নাম এসেছে বারবার। চট্টগ্রাম মহানগরের বাইরেও গত দেড় বছরে আরও অন্তত ১০টি টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ঘটনায় ঘুরে-ফিরে এই চক্রের নাম এলেও আসামিরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, একটি অঘোষিত গ্যাংওয়ারের শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। যার জের ধরে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটছে। আর এর নেপথ্যে ভারতের পাঞ্জাবে থাকা একসময়কার শিবির ক্যাডার সাজ্জাত হোসেন খানই মূল চরিত্র।

সাজ্জাত হোসেন খানের দুই শিষ্য ছিলেন সরোয়ার আর ম্যাক্সন। দুজনেরই পরিচিতি ছিল ছাত্রশিবির ‘ক্যাডার’ হিসেবে। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা ছিল। বিদেশ বসে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকার শিল্প-কারখানা, মোটর পার্টসের দোকান, ভবন নির্মাণে চাঁদা আদায় করত এই চক্র। ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ফেরার পথে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সারোয়ার আটক করেছিল ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ তাকে নিয়ে বায়েজিদ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি একে-২২ রাইফেল এবং গুলি উদ্ধার করেছিল। ২০২২ সালে রহস্যজনকভাবে কলকাতায় মৃত্যু হয় ম্যাক্সনের। কারাগারে থাকাকালে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বাবলার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মুক্তির পর আসলাম চৌধুরী ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। মাত্র এক মাস আগে বাবলা বিয়ে করেন। সেই বিয়েতে এরশাদ উল্লাহ ও আবু সুফিয়ানসহ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর থেকে বাবলাকে এই বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও দেখা গেছে। এ সময় নিজেকে জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দিতেন সরোয়ার হোসেন বাবলা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গেও তার ছবি দেখা গেছে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরোয়ার হোসেন বলেছিলেন, বড় সাজ্জাদ ভারতে বসে চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি করছে। টোকাই পোলা নিয়োগ দিয়ে যখন তখন যে কাউকে গুলি করাচ্ছে। পুলিশ বড় সাজ্জাদের টোকাই বাহিনীকে ধরে না। আবার ছোট সাজ্জাদেরও একই অবস্থা। বড় সাজ্জাদের হয়ে সব কাজ করে। পুরো চট্টগ্রামে দুই সাজ্জাদ সন্ত্রাস করছে। আমি এসবের প্রতিবাদ করি। তাই আমাকে তারা শত্রু মনে করছে। পুরো বিষয়টা যে পুলিশ বিভাগ জানে, সেটি অবশ্য গোপন করেনি। বুধবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে এরশাদ উল্লাহকে দেখে বের হয়ে সাংবাদিকদের সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন ‘এরশাদ উল্লাহ নয়, টার্গেট ছিলেন সরোয়ার। সরোয়ারের অপরাধের ইতিহাস আছে।

ধারণা করা হচ্ছে, হামলার মূল টার্গেট ছিলেন সরোয়ার। ঘটনার মূল যারা, তাদের অনেকেই জেলে আছেন এবং দেশের বাইরে থেকে এর ইন্ধন আছে।’চট্টগ্রাম এখন আতঙ্কের নগরী। গত এক বছরে চট্টগ্রামে ৪৯টি খুন, রহস্যজনক মৃত্যু বা ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ নির্বাচনী প্রচারণায় গত বুধবারের হামলা নতুন করে অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। নির্বাচনের আগে এমন প্রতিহিংসা আর খুনের ঘটনা রাজনৈতিক মহলেও তৈরি করেছে শঙ্কা। নির্বাচনী প্রচারণায় এই হামলাকে শুধুই আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখতে রাজি নন রাজনৈতিক কর্মীরা। তাদের মতে, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বিএনপিকে মাঠের শক্তির একটি বার্তাও দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

সরোয়ার হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (উত্তর) উপপুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী গণসংযোগের সময় গুলির ঘটনায় পরিবার অভিযোগ দিলে আমরা মামলা হিসেবে রেকর্ড করব। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে মাঠে পুলিশ কাজ করছে।

চট্টগ্রামে প্রবাসীর ১৯ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট, আসামি গ্রেফতার

চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে ডাকাতি মামলার পলাতক আসামি মো. সাদ্দাম হোসেনকে (৩২) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭। চান্দগাঁও থানাধীন নুরুজ্জামান নাজির বাড়ি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার সাদ্দাম হোসেন ভোলার লালমোহন থানার দুলা মিয়া এলাকার মো. ফারুকের ছেলে।

র‌্যাব-৭’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এ আর এম মোজাফ্ফর হোসেন জানান, গত ২১ জুলাই সাড়ে ৮টায় দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ সামসুদ্দিন চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে এ কে খান বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে লিংক রোড় এলাকায় ডাকাতদল নগদ টাকাসহ ১৯ লাখ ৮২ হাজার ২০০ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি ৩/৪ জনকে আসামি করে হালিশহর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গোপন খবরের ভিত্তিতে চান্দগাঁও থানাধীন নুরুজ্জামান নাজির বাড়ি এলাকা থেকে এ মামলার আসামি সাদ্দামকে গ্রেফতার করা হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ