
ছবি-১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম থেকে একের পর এক পাচার হচ্ছে ‘প্রকৃতির ঝাড়ুদার’ কচ্ছপ। চট্টগ্রাম মহানগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার কচ্ছপ পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট। বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কচ্ছপের মাংস ও স্যুপ জনপ্রিয় এবং বিলাসবহুল খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। কচ্ছপের মাংসের চড়া দাম থাকায় পাচারকারীরা আর্থিক লাভের আশায় বাংলাদেশ থেকে কচ্ছপ সংগ্রহ করে। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া কচ্ছপের গন্তব্য চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, হংকং এবং সিঙ্গাপুর। সবচেয়ে বড় বাজার চীনে।
খাবার ছাড়াও চীনে কচ্ছপের মাংস ও খোলস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের টনিক বা ওষুধ তৈরি করা হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। এদিকে গত তিনমাসে ২৬২১টি বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ উদ্ধার করেছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। এরমধ্যে নভেম্বর মাসে ৫৭২, অক্টোবরে ৪০৯ ও সেপ্টেম্বরে ১৬৪০টি।জানা গেছে, ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২’ অনুযায়ী কচ্ছপ শিকার, হত্যা, বিক্রি ও পাচার দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধে জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। পাচারকারী চক্র বিপন্ন করে তুলছে কচ্ছপের জীবনচক্র।

বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, গত তিনমাসে চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৬২১টি কচ্ছপ উদ্ধার করেছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। এরমধ্যে গত ২৫ নভেম্বর মিরসরাই বড় তাকিয়া বাজার এলাকা থেকে ১৭ কেজি, মিরসরাই বাজার থেকে ২২টি, বড় তাকিয়া বাজার থেকে ২৯ কেজি, মিরসরাই হাদি ফকিরহাট থেকে ৫২টি, ২৬ নভেম্বর মিরসরাই মিঠাছড়া বাজার থেকে ১৯ কেজি, নয় দুয়ারিয়া বাজার থেকে ২১ কেজি, বাঁশখালীর বাণীগ্রাম থেকে ৩৪টি, ১৯ নভেম্বর চাঁদপুরের দোয়াভাঙ্গা এলাকা থেকে ২৫কেজি, শাহরাস্তি সূচিপাড়া থেকে ৫০ কেজি, ১৮ নভেম্বর মিরসরাই হাদী ফকির হাট থেকে ২ কেজি, বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ২০ কেজি, চাঁদপুর সদর বড় মসজিদ এলাকা থেকে ৪২টি, চট্টগ্রাম থেকে নেয়ার পথে কুমিল্লা এলাকা বাস থেকে ৪০ কেজি, ২১ অক্টোবর চাঁদপুর সদর বড় মসজিদ এলাকা থেকে ৪২টি, ১৪ অক্টোবর চাঁদপুরের শাহরাস্তির শিতোশী এলাকা থেকে ২০ কেজি, ১৫ অক্টোবর চাঁদপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে ১০০ কেজি, ১৩ অক্টোবর নোয়াখালীর সূবর্ণচর এলাকা থেকে ৩০ কেজি, ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা থেকে পাচার করার সময় যাত্রাবাড়ি ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায় বাস থেকে ১২ কেজি কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার করা কচ্ছপের মধ্যে সুন্ধি প্রজাতির কচ্ছপের সংখ্যা বেশি। ধুম ও কড়ি প্রজাতির কচ্ছপের সংখ্যাও রয়েছে। এর আগে পাচারের সময় গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক যাত্রীর লাগেজ থেকে ৯২৫টি কচ্ছপ উদ্ধার করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। কচ্ছপগুলো মালেয়েশিয়া নেয়া হচ্ছিল।

বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট কর্মকর্তারা জানান, দেশের সীমানা পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, হংকং এবং সিঙ্গাপুর যাচ্ছে কচ্ছপের চালান। দেশে খাল-বিল ও হাওড়ে প্রচুর পরিমাণ মিঠাপানির কচ্ছপ দেখা যায়। এর মধ্যে ‘সুন্ধি’ কচ্ছপ অন্যতম। অবাধ শিকার ও আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের কারণে প্রাণীটি বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কচ্ছপকে বলা হয় ‘প্রকৃতির ঝাড়ুদার’। এরা মরা মাছ ও পচা আবর্জনা খেয়ে পানি পরিষ্কার রাখে। কচ্ছপ হারিয়ে গেলে জলজ বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়বে এবং পানির গুণাগুণ নষ্ট হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে কচ্ছপের চালান প্রথমে অবৈধভাবে ভারতে পাচার হয়। বিশেষ করে যাশোর (বেনাপোল), সাতক্ষীরা(ভোমরা) আগরতলা এবং সিলেটের সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার হয়। ভারতে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের মাধ্যমে মিয়ানমার বা নেপাল হয়ে কচ্ছপগুলো চীন ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পাঠানো হয়। বাংলাদেশে প্রায় ২৫-৩০ প্রজাতির কচ্ছপ ও কাছিম রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাচার হয় সুন্ধি কচ্ছপ। এটি আকারে ছোট এবং সহজলভ্য হওয়ায় এর পাচার হয় সবচেয়ে বেশি। খোলসের চাহিদার কারণে কড়ি কচ্ছপ ও মাংসের জন্য পাচার হয় ধুম কচ্ছপ। চট্টগ্রামে যেসব এলাকা থেকে কচ্ছপ পাচার করা হয় তা হলো, বান্দরবান ও রাঙামাটি সীমান্তবর্তী এলাকা, ফটিকছড়ি, বাঁশখালী এবং মিরসরাই।
নগরীর রিয়াজ উদ্দিনবাজার কচ্ছপ পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার হয়।বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক জানান, অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত কচ্ছপ পাচারের মৌসুম। ডোবা, পুকুর কিংবা নদীতে এ সময় পানি কম থাকায় পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠে। চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার কচ্ছপ পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট। দেশে ২৫ থেকে ৩০ ধরনের কচ্ছপ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি পাচার হয় সুন্ধি কচ্ছপ। কড়ি ও ধুম কচ্ছপও মাঝে মাঝে পাচার হয়। অসীম মল্লিক আরো জানান, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে আমরা বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছি। ঢাকা থেকে গিয়ে অভিযান চালানো অনেকটা সময় সাপেক্ষ। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে।





র






