আজঃ বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে ছয় মাসে আড়াই হাজারেরও বেশি নিষিদ্ধ ক্রিম জব্দ, চর্মরোগের ঝুঁকি।

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একের পর এক ঢুকছে নিষিদ্ধ ক্রীম। এসব নিষিদ্ধক্রীমগুলো মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ঢুকছে চট্টগ্রামে।পাকিস্তানে তৈরি এসব ক্রিম পাঁচ বছর আগে ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও প্রায়ই যাত্রীদের লাগেজ থেকে জব্দ করছে বিমানবন্দর কাস্টমস ও এনএসআই।

গত ছয় মাসে আড়াই হাজারেরও বেশি নিষিদ্ধ ক্রিম জব্দ করা হয়েছে।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, অতিমাত্রায় পারদ থাকায় ত্বকের জন্য ক্ষতিকর এসব ক্রিম ‘লাগেজ পার্টি’র মাধ্যমে এনে গোপনে বিক্রি করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এতে করে মারাত্মক চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।সূত্র জানায়, গৌরী ক্রিম মূলত তৈরি হয় পাকিস্তানে। দুবাই হয়ে এই নিষিদ্ধ ক্রিম চট্টগ্রামে ঢুকছে। এরপর দেশে বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। আর এসবের নেপথ্যে রয়েছে দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় ‘আকাশপথ’ ব্যবহার করে যাত্রীদের মাধ্যমে এসব ক্রিম আনা হচ্ছে।
এদিকে গত

এদিকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ২২ ডিসেম্বর রাত ১০টায় চার যাত্রীর লাগেজ তল্লাশি করে ৫০ পিস নিষিদ্ধ গৌরী ক্রিম জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের কাছ থেকে ৮৬৭ কার্টন সিগারেটও জব্দ করা হয়। চার যাত্রী হলেন,রেজাউল করিম, মিজানুর রহমান, রিদওয়ানুল হক ও মো. সালাউদ্দিন। তারা দুবাই থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ওই রাত সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রামে পৌঁছান।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, জব্দ করা সিগারেটের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩০ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ওই চার যাত্রীকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

এর আগে গত ২২ নভেম্বর সকালে কাস্টমস এনএসআই ও কাস্টমস ইন্টেলিজেন্সের যৌথ তল্লাশিতে দুই যাত্রীর ব্যাগ থেকে জব্দ করা হয় ২৫০ পিস গৌরী ক্রিম। মো. ফখরুল ইসলাম ও মো. আশরাফুল ইসলাম নামে দুই যাত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করে চট্টগ্রামে আসেন। এচাড়া ৮ নভেম্বর সকালে দুবাইফেরত যাত্রীর মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের কাছ থেকে ১২টি নিষিদ্ধ ক্রিম উদ্ধার করে এনএসআই ও শুল্ক গোয়েন্দা। অন্যদিকে ২০ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় দুই যাত্রী ইমিগ্রেশন শেষ করে ব্যাগেজ নিয়ে গ্রিন চ্যানেল (শুল্ককরযুক্ত পণ্য না থাকলে এই পথে যাওয়া যায়) অতিক্রম করার সময় এনএসআই কর্মকর্তারা তাদের তল্লাশি করে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ২ হাজার ৭৬ পিস গৌরী ক্রিম জব্দ করা হয়। দুবাই থেকে আসা ও দুই ছিলেন ফেনী সদরের মো. আরিফুল ইসলাম এবং চট্টগ্রামের রাউজানের মোশাররফ হোসেন। তাদের পাসপোর্ট নম্বর নথিভুক্ত করে জরিমানা করা হয় এবং সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়।১৮ জুন মধ্যপ্রাচ্যের ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এই দুই যাত্রী কাছ থেকে ১৪০ পিস গৌরী ক্রিম জব্দ করা হয়। ওই দুই যাত্রী ছিলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মোহাম্মদ আবু নাসের এবং নগরের চাঁন্দগাও থানা এলাকার মিন্টু দেবনাথ।

জানা গেছে, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন’ (বিএসটিআই) ২০২০ সালে আটটি রং ফর্সাকারী ক্রিমে ক্ষতিকর মাত্রায় পারদ ও হাইড্রোকুইনোন পায়। এসব প্রসাধনী ব্যবহার করলে চর্মরোগসহ নানা জটিল রোগ হতে পারে, এমন সতর্কতা জারি করে সেগুলো বিক্রি, বিপণন ও আমদানিনিষিদ্ধ করে সংস্থাটি। এই আটটি ক্রিমের একটি হলো ‘গৌরী ক্রিম’ ও ’ডিউ ক্রিম’ অন্যতম।

এরপর ২০২৩ সালের নিষিদ্ধের তালিকায় যোগ হয় আরও ১০টি ক্রিম। নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে, পাকিস্তানের গৌরী কসমেটিকসের (প্রা.) ‘গৌরী ক্রিম’, এসজে এন্টারপ্রাইজের ‘চাঁদনী ক্রিম’, কিউসি ইন্টারন্যাশনালের ‘নিউ ফেস’, ক্রিয়েটিভ কসমেটিকসের ‘ডিউ’, নুর গোল্ড কসমেটিকসের ‘নুর হারবাল বিউটি ক্রিম’, নুর গোল্ড কসমেটিকসের ‘নুর গোল্ড বিউটি ক্রিম’, গোল্ডেন পার্ল কোম্পানির ‘গোল্ডেন পার্ল ক্রিম’, হোয়াইট পার্ল কসমেটিকস ইন্টারন্যাশনালের ‘হোয়াইট পার্ল ক্রিম’, পুনিয়া ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেডের ‘ফাইজা ক্রিম’, লোয়া ইন্টারন্যাশনালের ‘পাক্স’ ও ‘নাভিয়া ক্রিম’, লাইফ কসমেটিকসের ‘ফ্রেশ অ্যান্ড হোয়াইট ক্রিম’, ফেস লিফট কসমেটিকসের ‘ফেস লিফট ক্রিম’, শাহিন কসমেটিকসের ‘ফেস ফ্রেশ ক্রিম’ ও আনিজা কসমেটিকসের ‘আনিজা গোল্ড’।

বিএসটিআইয়ের ল্যাব পরীক্ষায় পাওয়া গেছে, গৌরি ক্রিমে পারদের পরিমাণ ৭৫৫.৮৫ পিপিএম—যেখানে গ্রহণযোগ্য মাত্রা মাত্র ১ পিপিএম! শুধু গৌরি নয়, বাজারের আরও সাতটি ব্র্যান্ডেও পাওয়া গেছে বিপজ্জনক মাত্রার পারদ ও হাইড্রোকুইনোন। তাই এসব ক্রিম আমদানি ও বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বিএসটিআই।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রাম বন্দরে পরিদর্শনে এলেন থাইল্যন্ডের রাষ্ট্রদূত।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বাংলাদেশে নিযুক্ত থাইল্যন্ডের রাষ্ট্রদূত এইচ.ই মি. থিটিপর্ন চিরাসাওয়াদি এর নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদল বুধবার চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছেন। এর আগে প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দরে আগমনের পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এর সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। থাই রাষ্ট্রদূত রেনং পোর্ট-চট্টগ্রাম পোর্ট জাহাজ চলাচল বিষয়ে ইতোমধ্যে সম্পাদিত বাস্তবায়নের উপর আলোকপাত করেন। বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড এফটিএ স্বাক্ষরের বিষয়ে সরকারী উচ্চ পর্যায়ে তিনি আলোচনা শুরু করার অনুরোধ করেন। আগামী এপ্রিলে রেনং পোর্ট থেকে চট্টগ্রাম পোর্টে প্রথম শিপমেন্ট চালু হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

চেয়ারম্যান, চবক দুই দেশের মধ্যে কি কি পণ্য আমদানী-রপ্তানী করা যায় তা নিয়ে বাজার যাচাইয়ের বিষয়ে সভায় আলোচনা করেন। এসময় উভয় দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফর ট্রেড সম্প্রসারনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। আগত অতিথিদের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর একটি প্রেজেন্টেশন প্রদান করা হয়। সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সরেজমিনে পরির্দশন করেন এবং বন্দরের সার্বিক অগ্রগতি ও কর্মদক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

রাউজানে হিন্দু বাড়িতে আগুন দেয়ায় জড়িতদের তথ্য দিলে পুরস্কার।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

চট্টগ্রামের রাউজানে দরজা আটকে বসত বাড়িতে আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের ধরিয়ে দিতে আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। উপজেলার সুলতানপুর ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পরিদর্শন করে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এ পুরস্কার ঘোষণা করেন। তবে কত টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে তা বলা হয়নি।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ