
জাতীয় পার্টি রংপুরের মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী। ঈগল পাখি প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর এই প্রতিনিধি বলেন, রংপুর এক সময় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি ছিল। আমরা সারাজীবন অন্ধের মতো উনাদেরকে (জাতীয় পার্টি) ভোট দিয়ে এসেছি। কিন্তু তারা রংপুরের জন্য তেমন কোনো দৃষ্টান্ত তৈরি করতে উন্নয়ন করেনি। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় রংপুরকে উনারা পিছিয়ে রেখেছেন।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রতীক নিতে আনোয়ারা ইসলাম রানী জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসানের সভাকক্ষে যান। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন, আমরা রংপুরের সহজ-সরল মানুষেরা সরল মনে জাতীয় পার্টিকে ভালোবেসে গিয়েছি। কিন্তু উনারা আমাদেরকে ভালোবাসার প্রতিদান দেননি। উনারা (জাতীয় পার্টির নেতারা) বারবার এসে ঘুঘুর মতো আমাদের ধান খেয়ে গেছেন। আমাদের জন্য কোনো উন্নয়ন করেননি। রংপুরের মানুষ পরিবর্তন চায়। নতুন কিছু দেখতে চায়। সঠিক ও যোগ্য একজন নেতাকে দেখতে চায়।

তিনি আরও বলেন, আমি জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিএম কাদের সাহেবকে শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। আমি ছোট একজন মানুষ। আমি নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছি না, আমি একজন অংশগ্রহণকারী। নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করেছি জনগণ যেটা সিদ্ধান্ত দেবে আমি সেটাই মেনে নিব।
এ সময় আনোয়ারা বলেন, আমরা বারবার উনাদেরকে (জাতীয় পার্টি) নির্বাচিত করে এসেছি। আমি নিজেও জাতীয় পার্টিকে ভোট দিয়েছি। কিন্তু উনারা নির্বাচিত হওয়ার পর আমাদের সাধারণ জনগণের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখেন। রংপুরে বন্যা, বর্ষা, করোনা, লকডাউনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা তাদের পাশে পাই না। তাদের দেখা পাওয়া যায় না। যার কারণে রংপুরের মানুষ এখন পরিবর্তন চাইছে। আমরা পরিবর্তনে পক্ষে আছি, আমাদের কোনো পিছুটান নেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন (সিটি কর্পোরেশন ও রংপুর সদর) থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আনোয়ারা ইসলাম রানী। এই আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুর রহমান রেজু ‘একতারা’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক ‘ডাব’, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহিদুল ইসলাম ‘মশাল’ এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম ‘আম’ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
এদিকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, রংপুর জেলার ছয়টি আসনে ৪৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ে ১০ জনের মনোনয়ন বাতিল এবং ৩৯ জনের বৈধ হয়। নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পায় আরও সাতজন। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে ছয়টি আসন থেকে ১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। সোমবার প্রতীক বরাদ্দের দিনে চূড়ান্ত হওয়া ৩৬ প্রার্থীর মধ্যে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রতীক দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে রংপুর-১ আসনে নয়জন, রংপুর-২ আসনে তিনজন, রংপুর-৩ আসনে ছয়জন, রংপুর-৪ আসনে তিনজন, রংপুর-৫ আসনে আটজন এবং রংপুর-৬ আসনে সাতজনসহ মোট ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে।