আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

ঝিনাইদহে সাংবাদিক ও পরিবহন ব্যবসায়ীর মৃত্যু নিয়ে ধ্রমজাল।

ইনছান আলী ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

দৈনিক জবাবদিহি পত্রিকার ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ও পরিবহন ব্যবসায়ী আবু সেলিম মিয়ার (৫২) মৃত্যু নিয়ে ধ্রমজাল সৃষ্টি হয়েছে, এলাকায় জনমনে বিভিন্ন প্রশ্নে তাদের মৃত্যুর ঘটনা রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন নাকি কেউ তাকে হত্যা করেছে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সদস্য আবু সেলিম মিয়া ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। পুলিশ এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেরিনা (২৮) খাতুন ও রিপা কর্মকার (২৩) নামে দুই যুবতীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
মেরিনা খাতুন মাগুরার শালিখা উপজেলার সামিয়ারপাড়া গ্রামের মন্টু মন্ডলের মেয়ে। তিনি স্বামী পরিত্যক্তা। অন্যদিকে আরেক স্বামী পরিত্যক্তা রিপা কর্মকার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাতলামারী গ্রামের রবি কর্মকারের মেয়ে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবারে এই দুই যুবতী নিজেদের ভিণœ ভিন্ন ঠিকানার পরিচয় দেন। এদিকে এ ঘটনায় আরো এক নারীকে পুলিশ খুজছে। রহস্যজনক ওই নারী সেলিমের দুর্ঘটার খবরটি মেরনা ও রিপাকে প্রথম ফোন করে জানায়।

প্রত্যাক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আবু সেলিম মিয়া ঝিনাইদহ শহরের হামদহ আলফালাহ হাসপাতালের সামনে এক নারীর সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় মটরসাইকেল আরোহী অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে মাথায় আঘাত করে দ্রæত গতিতে চলে যায়। এরপর থেকে আবু সেলিম মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে প্রচার করা হয়। তার স্বজনরাও বিষয়টি নিয়ে ছিল অন্ধকারে। সেলিমের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌছালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মেরানা ও রিপার গতিবিধি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়। প্রথমে তারা নিজেদের ভুল ঠিকানায় পরিচয় দেন। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে তারা সেলিমের হামদহ এলাকার ফ্লাটে পাশাপাশি বসবাস করতেন এবং অজ্ঞাত এক নারীর ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে অজ্ঞান ও মুমুর্ষ অবস্থায় সেলিমকে হাসপাতালে নিয়ে যান বলে জানান।

অজ্ঞাত ওই নারীর সঙ্গে সেলিমের কেন এবং কি নিয়ে বাদানুবাদ হলো তা নিয়ে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন থাকার কথা কিন্তু সেলিমের শরীরে মাথার পেছনে গভীর আঘাত ব্যতিত আর কোন ক্ষত চিহ্ন নেই বলে পুলিশ জানায়। নিহত’র জামাই ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, বগুড়া থেকে ফিরে এসে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আলফালাহ হাসপাতাল এলাকায় যান তার শ^শুর। কাজ শেষে করে রাস্তা উপরে তাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে কে বা কারা। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রাত ২ টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত’র স্ত্রী মমতা বেগম জানান, তার স্বামীকে হত্যা করা হতে পারে। তিনি সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত ঘাতকদের চিহ্নি করার দাবী জানান। ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান জানান, প্রাথমিক ভাবে এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ও আশপাশের সিসি ক্যামেরা যাচাই করে হত্যার রহস্য উন্মোচন করা হবে।

তিনি জানান এ ঘটনায় মেরিনা ও রিপা নামে দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। আরো এক নারীকে আমরা খুজছি। আশা করা যায় দ্রুত মোটিভ ও ক্লু উদ্ধার হবে। এ ঘটনায় নিহত’র স্ত্রী মমতা খাতুন বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের একাধিক সুত্র মনে করছে ব্যবসায়ীক শত্রুতা অথবা নারীঘটিত কারণে সেলিম মিয়াকে হত্যা করা হতে পারে।

এদিকে বুধবার সকালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন তার গ্রামের বাড়িতে যান শোক সন্তপ্ত পরিবারকে শান্তনা দিকে। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম রায়হান ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান টিপু সাংবাদিক আবু সেলিম মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা এক বিবৃতিতে তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। প্রবাসি ছেলে সবুজ মিয়া দেশে ফিরলে বুধবার রাতে তাকে হলিধানী গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ