আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দু*র্নীতি ফাঁ*স করে দিলেন আপন ছোট ভাই।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

প্রচার-প্রচারণার প্রথম দিনেই সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমদের আপন ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য ভোট চাইছেন ভোটারদের কাছে। এমনকী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমাবেশে সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ছোট ভাই লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

গতকাল মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তিনি। সেখানে লালমনিরহাট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল হকের (ঈগল মার্কা) জন্য ভোট চান।

মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্যে মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে গত মাসে দুইটা রিকশা দিয়েছে। যার একটা দিয়েছেন আপনার (মন্ত্রী) বাড়ির পাহারাদার জমিরকে আর একটি দিলেন আপনার ছেলের পাকোয়ানী (বাবুর্চি) ইদ্রীসকে। আর গরিব লোক ছিল না? ৫০ কোটি, একশত কোটি টাকার চেক দিয়েছেন গরিব অসহায় ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায়। সেই চেক কে পেলেন? আমিনগঞ্জের বজলুর প্রফেসর আর আদিতমারীর রাজ্জাক মাস্টার পান গরিব ক্যান্সার রোগীর চেক।

মাহাবুবুজ্জামান বলেন, গরিব মানুষের বাড়ি পোড়া গেলে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে টিন দেওয়া হয়। সেই টিন পায় আমার আপনার (মন্ত্রী) জ্যেঠাতো ভাই নজরুল মাস্টার আর কেচু মাস্টার। এরা গরিব অসহায়?

কালীগঞ্জের রুদ্বেশ্বরে দক্ষতা উন্নয়নের অফিস হবে। তার জন্য ওনি (মন্ত্রী) জমি কিনলেন ৪/৫ লাখ টাকায় গরিব কৃষকদের কাছ থেকে। সেই জমি রেজিস্ট্রি হলো ওনার (মন্ত্রী) ভাতিজা, ফুফাতো ভাই হেলাল, মোস্তফা ফারুকদের নামে। কিনলো ৫ লাখে লিখে নিলো ৩০ লাখ টাকায়। সবাই মিলে ৩০ লাখ করে ভাগ করে নিলেন। সরকারের টাকা গরিব কৃষকরা পেলে দুঃখ ছিল না। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা না করতেও মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান মাহাবুবুজ্জামান।

মাহবুবুজামান আহমেদ আরও বলেন, গোপন ফাঁস করে দেই। আপনি (মন্ত্রী) নৌকা নিয়েছেন না! নৌকায় ভিড়তে পারবেন না। কারণ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আপনি (মন্ত্রী) নৌকা পুড়িয়েছেন। নৌকা আপনাকে মান করবে না। আমার ব্যারিস্টার ছেলের বিয়েতে দাওয়াত করেছি। তিনি (মন্ত্রী) সোজা বলেছেন, আমি যাব না কাউকে যেতেও দেব না। ছেলের বিয়েতে কাউকে আসতে দেননি। উল্টো বিয়ের দিন বিদ্যুৎও বন্ধ করে দিয়েছেন। আপনি (মন্ত্রী) কেন এমন হলেন? ছেলে আর বউ মিলে আপনার মাথা নষ্ট করে দিয়েছে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মাহবুবুজামান আহমেদ বলেন, ভোটমারী থেকে মহিষখোচা পর্যন্ত তিস্তা নদীতে বাঁধ দিতে চেয়ে মন্ত্রী দেননি। তার একটাই জবাব, আপনি (মন্ত্রী) বাঁধ দেননি, আমরা আপনাকে বাদ (বয়কট) দিলাম।

পরে মঞ্চে থাকা আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হককে দেখিয়ে তার ঈগল প্রতীকে ভোট ও ভোটে কর্মী হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান মাহবুবুজামান আহমেদ।

কর্মী সভায় লালমনিরহাট ২ আসনের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল হক, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস, ভাদাই ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত রায় বিদুর, কমলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ ওমর চিশতি ও সারপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল রাজ্জাক বলেন, তালিকা, কমিটি করেছে। কমিটি যাদের তালিকা করে দিয়েছেন আমরা বিতরণ করেছি। এর থেকে বেশি কিছু আমার জানা নেই।

আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম বলেন, কমিটি করে রিকশা দরিদ্র ব্যক্তিদের দেওয়া হয়। দুই রিকশার বিষয়য়ে যেটি বলা হচ্ছে সেটি আমার সময় নয়। তবে বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে আমি জানাতে পারবো।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট ২ (আদিতমারী কালীগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি। তার শক্ত প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল হক আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে ভোট করছেন। মন্ত্রীর ছোট ভাই মাহাবুবুজামান আহমেদ বড় ভাইয়ের নৌকার ভরাডুবি করতে মরিয়া হয়ে স্বতন্ত্রের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ভোলায় জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত ।

দ্বীপজেলা ভোলার আধুনিক সাহিত্য সংগঠন জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে ।গতকাল ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যায় ভোলা সদরের গঙ্গাকীর্তি হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগারে অনুষ্ঠিত জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সাধারণ সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম এর সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র প্রভাষক কবি রিপন শান, জাতীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট ভোলা জেলা শাখার সদস্য সচিব প্রভাষক কবি মিলি বসাক, জলসিঁড়ির সদস্য সচিব কবি মহিউদ্দিন মহিন, জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জলসিঁড়ির সংগঠক কবি নীহার মোশারফ, আবৃত্তিশিল্পী সমাজসেবক মীর মোশারেফ অমি প্রমুখ ।

সভায় উপস্থিত সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম কে সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সাংবাদিক কবি রিপন শানকে নির্বাহী সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সংগঠক মহিউদ্দিন মহিনকে সাধারণ সম্পাদক, কবি গবেষক কবি নীহার মোশারফ কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫- ২০২৭ গঠন করা হয়েছে ।

কমিটির সহ-সভাপতিগণ হচ্ছেন- সিনিয়র প্রভাষক কবি মিলি বসাক, কবি মোঃ জুলফিকার আলী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গণ হচ্ছেন- কবি আল মনির, আবৃত্তিশিল্পী মীর মোশারেফ অমি । অর্থ ও দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি বিলকিস জাহান মুনমুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি শাহনাজ পারুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাংবাদিক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ আরিফ । নির্বাহী সদস্যগণ হচ্ছেন- অধ্যক্ষ কবি এম এস জালাল বিল্লাহ, কবি দিলরুবা জ্যাসমিন, কবি চৌধুরী সাব্বির আলম এবং কবি এরশাদ সোহেল ।

আসছে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার বিকেল ৪ টায় ভোলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য জলসিঁড়ির মাসিক সাহিত্য সভায় নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ