আজঃ শুক্রবার ১৬ মে, ২০২৫

দুবাই পৌঁছাবে ২২ এপ্রিল ২৩ নাবিকের মধ্যে ২১ জন ফিরবেন চট্টগ্রামে

দুবাইয়ের পথে এমভি আবদুল্লাহ চারপাশে লোহার কাঁটাতারসহ বাড়তি নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

 জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ দুবাইয়ের পথে রয়েছে। আগামী ২২ এপ্রিল দুবাইয়ের আল হারমিয়া বন্দরে নোঙর করবে বলে জানা গেছে। জাহাজের ২৩ জন নাবিকের দুজন দুবাইয়ে সাইন অফ করার কথা জানিয়েছেন। বাকি ২১ নাবিকের জাহাজটি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসার কথা রয়েছে। দুবাইয়ের পথে থাকা এমভি আবদুল্লাহ এখনও সাগরের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে থাকায় বাড়তি নিরাপত্তা নিয়েছে; জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত জাহাজটি আগামী ২২ এপ্রিল সেখানকার আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছানোর আশা করছে।গতকাল সোমবার জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, নতুন করে জলদস্যুদের হামলার শিকার না হতে প্রয়োজনীয় সব রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কয়লাবাহী জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে।শিল্প গ্রুপটির জাহাজের অবস্থান বিষয়ক দৈনিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়, এখনও ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়’ থাকায় সেখানে চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।এর অংশ হিসেবে এমভি আবদুল্লাহর রেলিংয়ের চারপাশে লোহার কাঁটাতার, ডেকে ফায়ার হোস, জাহাজে নিরাপত্তার জন্য সংরক্ষিত এলাকা সিটাডেল, ইমার্জেন্সি ফায়ার পাম্প এবং সাউন্ড সিগন্যাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কেএসআরএমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নাবিকেরা কখন সাইন অফ করবেন বা জাহাজ কীভাবে পরবর্তী ভয়েজগুলোতে যাত্রা করবে সেটি পরের বিষয়। আমরা আপাতত নাবিকদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি উদযাপন করছি। ঈদ এবং নববর্ষের আনন্দের সাথে নাবিকদের সুস্থভাবে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে বলে জানান তারা।
জিম্মি নাবিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে চট্টগ্রামের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। তারা সব বিষয়ে নাবিকদের তটস্থ রাখত। গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতে যাওয়ার সময় ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ার উপকূলে নেওয়া হয়। ৯ দিনের মাথায় জলদস্যুরা মুক্তিপণের জন্য যোগাযোগ শুরু করে। দর কষাকষির পর ৩২ দিনের মাথায় ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্তি পায়।কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজ ২২ এপ্রিল দুবাই পৌঁছাবে। যাত্রাপথে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গত রোববার দুপুরে এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের দেওয়া ফেইসবুক পোস্টের একটি ছবিতে মুক্ত নাবিকদের পাশে অপারেশন আটলান্টার কমান্ডোদের দেখা যায়। গত সোমবার বিকেলে ইইউএনএভিএফওআর অপারেশন আটলান্টা মিশন তাদের টুইট বার্তায় এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ছবি প্রকাশ করে।
এরপর রাতে কবির গ্রুপ তাদের প্রতিবেদনে জানায়, নিরাপদ এলাকায় না পৌঁছা পর্যন্ত ইইউএনএভিএফওআর এর য্দ্ধুজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে।
সোমালি উপকূল পেরিয়ে এডেন উপসাগর হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছাবে এমভি আবদুল্লাহ। এরমধ্যে এডেন উপসাগর পর্যন্ত সাগর নিরাপদ নয়। এছাড়া সমুদ্র পথে নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়নকারী এবং ঝুঁকি হ্রাসে পরামর্শদাতা এমব্রেই গার্ডিয়ান সার্ভিস নামের যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সেবা নিয়েছে জাহাজের মালিক পক্ষ এসআর শিপিং।
এর আগে গত শনিবার গভীর রাতে ৩২ দিন সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি মুক্তি পায়। বিপুল অংকের অর্থ পরিশোধের পর জাহাজটিকে মুক্তি দেয় দস্যুরা। তবে ঠিক কী পরিমাণ ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ছোট্ট সী প্ল্যান থেকে ফেলা বস্তাগুলোর সাইজ দেখে ডলারের পরিমাণ যে অনেক হবে তা বোঝা যাচ্ছিল। ডলার ভর্তি তিনটি বস্তা সী প্ল্যান থেকে ফেলতে দেখা যায়। হলদে ব্যাগে ভরে সাগরে ফেলা ডলার স্পিডবোটে থাকা জলদস্যুরা তুলে নেয়। তারা ডলারের জন্য বেশ কয়েকটি স্পিড বোট নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিল। ওই সময় জাহাজটিও কাছে নোঙর করা ছিল। জাহাজের ক্যাপ্টেনসহ নাবিকদের সকলকে ডেকে এনে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। উপরে যখন সী প্ল্যান চক্কর মারছিল তখন ডেকে লাইনে দাঁড় করানো নাবিকদের পেছন থেকে অস্ত্র তাক করে রাখা হয়েছিল। সী প্ল্যান থেকে নাবিকদের সকলে সুস্থ আছে এমনটি নিশ্চিত হওয়ার পর ডলারের বস্তা ফেলা হয়। পুরো চিত্রটির ভিডিও ধারণ করে দস্যুদের সাথে জাহাজে দোভাষী হিসেবে কাজ করা সোমালিয়ান; যে নিজে মুক্তিপণ নিয়ে দর কষাকষিসহ পুরো প্রক্রিয়ার প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে। তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে দস্যুদের সাথে সমঝোতা করা হয়। বীমা কোম্পানি দস্যুদের দাবি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করে। অবশ্য জাহাজটির এই ধরনের দুর্যোগে বীমা সহায়তার জন্য জাহাজ মালিককে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানির সাথে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক প্রতি বছর বড় অংকের ‘কিডন্যাপ অ্যান্ড র‌্যানসম’ প্রিমিয়াম পরিশোধ করে আসতে হয়েছে। দস্যুদের সাথে দর কষাকষির পুরো প্রক্রিয়ায় বীমা কোম্পানি সক্রিয় ছিল বলে সংশ্লিষ্টদের উদ্ধৃতি দিয়ে চট্টগ্রামের সিনিয়র ক্যাপ্টেন আতিক ইউ খান জানান। নাবিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, সী প্ল্যান থেকে ডলারভর্তি ব্যাগ ফেলার পর দস্যুরা তা সংগ্রহ করে জাহাজে ওঠে। গত শনিবার বিকাল তিনটা–চারটার মধ্যে তাদের হাতে ডলার পৌঁছে যায়। পরে প্রায় আট ঘণ্টা ধরে সকলে মিলে ডলারগুলো গোনে। ডলারগুলো আসল কিনা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করিয়ে আনা হয়। ডলার গুনে পরিমাণ মতো পাওয়ার পর নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে। ডলার পাওয়ার প্রায় আট ঘণ্টা পর শনিবার রাত ১২টা নাগাদ দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়। এর পরপর জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে সোমালিয়ার সমুদ্রসীমা পার করে দেয়। জাহাজটি এখন সোমালিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাঝামাঝি রয়েছে। আগামী ২২ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ দুবাইয়ের হারমিয়া পৌঁছাবে বলে গতকাল কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুর রহমান আজাদীকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, দুজন নাবিক দুবাইয়ে সাইন অফ করবেন। বাকি ২১ জন জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরবেন। এজন্য নাবিকদের ফিরতে আরো বেশ কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
জানা গেছে, এমভি আবদুল্লাহ গত বছর কেএসআরএমের বহরে যুক্ত হয়। এর আগে জাহাজটির নাম ছিল এমভি গোল্ডেন হক। জাহাজটি প্রায় ৬০ হাজার টন খোলা পণ্য পরিবহন করতে পারে। বর্তমানে দুবাইয়ের পথে থাকা এই জাহাজটি ২২ এপ্রিল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছার পর জাহাজে থাকা কয়লা খালাস করবে। এরপর জাহাজটি নতুন কোনো ভয়েজ শুরু না করে চট্টগ্রাম ফিরে আসতে পারে। এর আগে ২০১০ সালে একই কোম্পানির জাহাজ এমভি জাহান মনি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। মুক্তিপণ পাওয়ার পর ১০০ দিন পর এমভি জাহান মনি নাবিকসহ মুক্তি পেয়েছিল।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

রাজশাহীর বাজারে এসেছে লিচু

রাজশাহীর বাজারে উঠেছে লিচু ।রাস্তার পাশে ফুট পাতে বিক্রি করছে এই লিচু ।এই লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু ফল । বছরে একবার হয় এই লিচু ফল। জেনে নেওয়া যাক উপকারিতা কি কি?লিচু শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

লিচুতে ভিটামিন সি আছে, যা ত্বক, দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারী।ফ্ল্যাভানয়েডস নামের একটি উপাদান থাকে লিচুতে, যা স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। পাকা লিচু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। কারণ, এতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট।

লিচুতে থাকা পটাসিয়াম আমাদের রক্ত ও নালির চাপ কমিয়ে রক্তের স্বাভাবিক গতি বাড়ায়। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।পাশাপাশি বাজারে আনারস, ডাব ও বিক্রি হচ্ছে। প্রচন্ড গরমে মানুষ ডাবের পানি খাচ্ছে। আনারস খাচ্ছেন। অল্প কিছু আম ও বাজারে আসছে। আসলে বৈশাখ মানেই তো নানান রকমের ফলের সমারহ।

প্রচন্ড গরমে লিচু, আম, ডাবের পানি যেটাই খাবেন, এ যেন এক অমৃত স্বাদ। সৃষ্টিকর্তার এক অসীম নিয়ামত , এই স্বাদু ফল ।

বাঁশের নানান ধরনের ব্যবহার হচ্ছে যুগ যুগ ধরে।

রাস্তার পাশে বাঁশের আড়ত দেখে দাঁড়ালাম ।কথা হলো বাঁশের আরতের মালিকের সাথে।আমাদের দেশে প্রাচীনতম একটি উদ্ভিদ বাঁশ। বাঁশ আমাদের বিভিন্ন কাজে আসে। আমাদের দেশের বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলগুলোতে বাঁশ দেখা যায়। বাঁশ পাওয়া যায় না এমন কোন এলাকা নেই। গ্রামের দিকে গেলে অনেক বাঁশের ঝাড় রয়েছে ।তবে এগুলো সংখ্যা কম ।

বাঁশ দিয়ে নানান রকম কাজ করা হয়। বাঁশ দিয়ে বাড়ি তৈরি করা যায়। বাড়ির খুটি তৈরিতে বাঁশ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও বেড়া ,টং এবং ডেকোরেশন এর কাজ করতে গেলে প্রচুর পরিমাণে বাঁশের দরকার হয়। এছাড়াও এখন অনেক পরিমাণে বাড়ির কাজ হচ্ছে এজন্য বাড়িতে কাজ করতে বাঁশের প্রচুর দরকার হয়

এজন্য রাজমিস্ত্রিরা বাঁশ প্রচুর পরিমাণে কিনে নিয়ে গিয়ে বাড়ির কাজে ব্যবহার করে। এছাড়াও বাঁশ এখন ঢাকা সহ বড় বড় শহরে ট্র্যাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এজন্য বাঁশের দাম অনেক বেশি। একটি বাঁশ কিনতে গেলে ৪০০ টাকা লাগে।রাজশাহীর, মৌগাছিতে প্রচুর পানের চাষ হয় । পানের বরজ বানাতে এই বাশের ব্যপক ব্যবহার হয় ।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ