আজঃ শুক্রবার ১৪ নভেম্বর, ২০২৫

দুবাই পৌঁছাবে ২২ এপ্রিল ২৩ নাবিকের মধ্যে ২১ জন ফিরবেন চট্টগ্রামে

দুবাইয়ের পথে এমভি আবদুল্লাহ চারপাশে লোহার কাঁটাতারসহ বাড়তি নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

 জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ দুবাইয়ের পথে রয়েছে। আগামী ২২ এপ্রিল দুবাইয়ের আল হারমিয়া বন্দরে নোঙর করবে বলে জানা গেছে। জাহাজের ২৩ জন নাবিকের দুজন দুবাইয়ে সাইন অফ করার কথা জানিয়েছেন। বাকি ২১ নাবিকের জাহাজটি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসার কথা রয়েছে। দুবাইয়ের পথে থাকা এমভি আবদুল্লাহ এখনও সাগরের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে থাকায় বাড়তি নিরাপত্তা নিয়েছে; জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত জাহাজটি আগামী ২২ এপ্রিল সেখানকার আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছানোর আশা করছে।গতকাল সোমবার জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, নতুন করে জলদস্যুদের হামলার শিকার না হতে প্রয়োজনীয় সব রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কয়লাবাহী জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে।শিল্প গ্রুপটির জাহাজের অবস্থান বিষয়ক দৈনিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়, এখনও ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়’ থাকায় সেখানে চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।এর অংশ হিসেবে এমভি আবদুল্লাহর রেলিংয়ের চারপাশে লোহার কাঁটাতার, ডেকে ফায়ার হোস, জাহাজে নিরাপত্তার জন্য সংরক্ষিত এলাকা সিটাডেল, ইমার্জেন্সি ফায়ার পাম্প এবং সাউন্ড সিগন্যাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কেএসআরএমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নাবিকেরা কখন সাইন অফ করবেন বা জাহাজ কীভাবে পরবর্তী ভয়েজগুলোতে যাত্রা করবে সেটি পরের বিষয়। আমরা আপাতত নাবিকদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি উদযাপন করছি। ঈদ এবং নববর্ষের আনন্দের সাথে নাবিকদের সুস্থভাবে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে বলে জানান তারা।
জিম্মি নাবিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে চট্টগ্রামের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। তারা সব বিষয়ে নাবিকদের তটস্থ রাখত। গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতে যাওয়ার সময় ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ার উপকূলে নেওয়া হয়। ৯ দিনের মাথায় জলদস্যুরা মুক্তিপণের জন্য যোগাযোগ শুরু করে। দর কষাকষির পর ৩২ দিনের মাথায় ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্তি পায়।কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজ ২২ এপ্রিল দুবাই পৌঁছাবে। যাত্রাপথে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গত রোববার দুপুরে এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের দেওয়া ফেইসবুক পোস্টের একটি ছবিতে মুক্ত নাবিকদের পাশে অপারেশন আটলান্টার কমান্ডোদের দেখা যায়। গত সোমবার বিকেলে ইইউএনএভিএফওআর অপারেশন আটলান্টা মিশন তাদের টুইট বার্তায় এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ছবি প্রকাশ করে।
এরপর রাতে কবির গ্রুপ তাদের প্রতিবেদনে জানায়, নিরাপদ এলাকায় না পৌঁছা পর্যন্ত ইইউএনএভিএফওআর এর য্দ্ধুজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে।
সোমালি উপকূল পেরিয়ে এডেন উপসাগর হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছাবে এমভি আবদুল্লাহ। এরমধ্যে এডেন উপসাগর পর্যন্ত সাগর নিরাপদ নয়। এছাড়া সমুদ্র পথে নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়নকারী এবং ঝুঁকি হ্রাসে পরামর্শদাতা এমব্রেই গার্ডিয়ান সার্ভিস নামের যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সেবা নিয়েছে জাহাজের মালিক পক্ষ এসআর শিপিং।
এর আগে গত শনিবার গভীর রাতে ৩২ দিন সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি মুক্তি পায়। বিপুল অংকের অর্থ পরিশোধের পর জাহাজটিকে মুক্তি দেয় দস্যুরা। তবে ঠিক কী পরিমাণ ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ছোট্ট সী প্ল্যান থেকে ফেলা বস্তাগুলোর সাইজ দেখে ডলারের পরিমাণ যে অনেক হবে তা বোঝা যাচ্ছিল। ডলার ভর্তি তিনটি বস্তা সী প্ল্যান থেকে ফেলতে দেখা যায়। হলদে ব্যাগে ভরে সাগরে ফেলা ডলার স্পিডবোটে থাকা জলদস্যুরা তুলে নেয়। তারা ডলারের জন্য বেশ কয়েকটি স্পিড বোট নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিল। ওই সময় জাহাজটিও কাছে নোঙর করা ছিল। জাহাজের ক্যাপ্টেনসহ নাবিকদের সকলকে ডেকে এনে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। উপরে যখন সী প্ল্যান চক্কর মারছিল তখন ডেকে লাইনে দাঁড় করানো নাবিকদের পেছন থেকে অস্ত্র তাক করে রাখা হয়েছিল। সী প্ল্যান থেকে নাবিকদের সকলে সুস্থ আছে এমনটি নিশ্চিত হওয়ার পর ডলারের বস্তা ফেলা হয়। পুরো চিত্রটির ভিডিও ধারণ করে দস্যুদের সাথে জাহাজে দোভাষী হিসেবে কাজ করা সোমালিয়ান; যে নিজে মুক্তিপণ নিয়ে দর কষাকষিসহ পুরো প্রক্রিয়ার প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে। তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে দস্যুদের সাথে সমঝোতা করা হয়। বীমা কোম্পানি দস্যুদের দাবি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করে। অবশ্য জাহাজটির এই ধরনের দুর্যোগে বীমা সহায়তার জন্য জাহাজ মালিককে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানির সাথে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক প্রতি বছর বড় অংকের ‘কিডন্যাপ অ্যান্ড র‌্যানসম’ প্রিমিয়াম পরিশোধ করে আসতে হয়েছে। দস্যুদের সাথে দর কষাকষির পুরো প্রক্রিয়ায় বীমা কোম্পানি সক্রিয় ছিল বলে সংশ্লিষ্টদের উদ্ধৃতি দিয়ে চট্টগ্রামের সিনিয়র ক্যাপ্টেন আতিক ইউ খান জানান। নাবিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, সী প্ল্যান থেকে ডলারভর্তি ব্যাগ ফেলার পর দস্যুরা তা সংগ্রহ করে জাহাজে ওঠে। গত শনিবার বিকাল তিনটা–চারটার মধ্যে তাদের হাতে ডলার পৌঁছে যায়। পরে প্রায় আট ঘণ্টা ধরে সকলে মিলে ডলারগুলো গোনে। ডলারগুলো আসল কিনা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করিয়ে আনা হয়। ডলার গুনে পরিমাণ মতো পাওয়ার পর নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে। ডলার পাওয়ার প্রায় আট ঘণ্টা পর শনিবার রাত ১২টা নাগাদ দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়। এর পরপর জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে সোমালিয়ার সমুদ্রসীমা পার করে দেয়। জাহাজটি এখন সোমালিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাঝামাঝি রয়েছে। আগামী ২২ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ দুবাইয়ের হারমিয়া পৌঁছাবে বলে গতকাল কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুর রহমান আজাদীকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, দুজন নাবিক দুবাইয়ে সাইন অফ করবেন। বাকি ২১ জন জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরবেন। এজন্য নাবিকদের ফিরতে আরো বেশ কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
জানা গেছে, এমভি আবদুল্লাহ গত বছর কেএসআরএমের বহরে যুক্ত হয়। এর আগে জাহাজটির নাম ছিল এমভি গোল্ডেন হক। জাহাজটি প্রায় ৬০ হাজার টন খোলা পণ্য পরিবহন করতে পারে। বর্তমানে দুবাইয়ের পথে থাকা এই জাহাজটি ২২ এপ্রিল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছার পর জাহাজে থাকা কয়লা খালাস করবে। এরপর জাহাজটি নতুন কোনো ভয়েজ শুরু না করে চট্টগ্রাম ফিরে আসতে পারে। এর আগে ২০১০ সালে একই কোম্পানির জাহাজ এমভি জাহান মনি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। মুক্তিপণ পাওয়ার পর ১০০ দিন পর এমভি জাহান মনি নাবিকসহ মুক্তি পেয়েছিল।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি একই দিন গণভোট করার সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ- মুহাম্মদ শাহেদ

জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি একই দিন গণভোট করার সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এদেশে আ’লীগের রাজনীতির কবর রচিত হয়েছিল ৫ আগস্ট। তারই ধারাবাহিকতায় হাসিনার ডাকে লকডাউন প্রত্যাখ্যান করেছে এদেশের আপামর জনসাধারণ। ফ্যাসিবাদের দোসর সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের ঠিকানা বিএনপি যুবদলে হবে না। কেউ যদি বিএনপি-যুবদলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা বাজি করে তাহলে সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিএনপি যুবদলের মহানগর নেতৃবৃন্দকে জানানোর অনুরোধ করেন।

তিনি গতকাল ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৪২নং নাসিরাবাদ সাংগঠনিক ওয়ার্ড যুবদলের উদ্যোগে চট্টগ্রাম-১০ নির্বাচনী এলাকায় আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পক্ষে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও কেন্দ্র ভিত্তিক স্থানীয় জনগণের সাথে উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন-বিএনপির রাজনীতি এদেশের মাটি ও মানুষের জন্য। সবার আগে বাংলাদেশ এটাই আমাদের রাজনৈতিক দর্শন। আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ মনোনীত প্রার্থী সংসদীয় আসন (চট্টগ্রাম -১০), বীর চট্টলার কৃতি সন্তান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করতে যুবদল দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই আসনটি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আসন ছিলো ১৯৯১ সালে। সুতরাং এটা আমাদের জন্য অন্য আসনের চেয়ে অধিক তাৎপর্য বহন করে। ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ-লোভ- লালসা ত্যাগ করে নি:স্বার্থভাবে ধানের শীষের জন্য কাজ করতে হবে। প্রতিটি ঘরে ঘরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বার্তা তথা ৩১ দফা পৌঁছে দিতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইঞ্জি: জমির উদ্দিন নাহিদ, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব ইব্রাহিম খলিল, নগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম রাসেল, সাবেক প্রচার সম্পাদক জিল্লুর রহমান জুয়েল, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আসিফ চৌধুরী লিমন, ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রফিক, মুহাম্মদ কামাল, ইব্রাহিম খান। ৪২নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মাসুদ আলমের সভাপতিত্বে উঠান বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন মহানগর যুবদল নেতা ইলিয়াস হাসান মঞ্জু, শাবাব ইয়াজদানী, কলিম উল্লাহ, প্রফেসর সাঈদুল হক সিকদার, মুহাম্মদ আলী, নুরুল কবির পলাশ, মুহাম্মদ মাহবুব, আফতাব আহমেদ, শফিউল বাশার শামু, শাকিল চৌধুরী, মুহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী রিটু, মুহাম্মদ ইউসুফ, জহির, আমির হোসেন, বশর, ফিরোজ, ফারুক, নুরুল হক, খোকন মোল্লা, রশিদ, বাবুল, ইব্রাহিম, হালিম, আলম, শরীফ, পাঁচলাইশ থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মীর শাহরিয়ার, শুভ রায়, রুবেল, মিনহাজুল হক মিনার, ওয়াহিদুল আলম সুমিত, প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

 

৯ মাসে রেকর্ড ১৩.৯৫ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটক পেল দুবাই।

 

দুবাইয়ের পর্যটন খাত ২০২৫ সালে তার ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রেখেছে, বছরের প্রথম নয় মাসে ১৩.৯৫ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে, যা ২০২৪ সালের একই সময়ের মধ্যে ১৩.২৯ মিলিয়ন ছিল।

পরিসংখ্যানগুলি অবসর, ব্যবসা এবং সাংস্কৃতিক ভ্রমণের জন্য একটি শীর্ষস্থানীয় গন্তব্য হিসাবে আমিরাতের স্থায়ী বিশ্বব্যাপী আবেদনকে পুনরায় নিশ্চিত করে।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে গড়ে প্রতিদিন ৫১,১০০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক দর্শনার্থী দুবাইতে এসেছেন, যা আগের বছরের ৪৮,৭০০ জনেরও বেশি দৈনিক আগমনের তুলনায়, প্রতিদিন প্রায় ২,৩০০ অতিরিক্ত দর্শনার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রবণতার ফলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ দুবাইতে পর্যটক আগমনের রেকর্ড ভঙ্গকারী বছর হবে। শহরে হোটেলে থাকার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগের বছর ৩১.২ মিলিয়নের তুলনায় ৩২.৭ মিলিয়ন রুম রাতের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা ৫ শতাংশ বৃদ্ধি। এর ফলে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫,৪৯৫ রুম রাত বুক করা হয়েছে, যা আমিরাত জুড়ে আবাসনের টেকসই চাহিদা প্রতিফলিত করে।

পর্যটন বিশ্লেষকরা আশা করছেন যে বছরের শেষ প্রান্তিকে এই গতি আরও ত্বরান্বিত হবে, যা দুবাইয়ের শীতকালীন ইভেন্ট মরসুম, প্রধান প্রদর্শনী এবং উৎসব উদযাপনের দ্বারা সমর্থিত, যা ঐতিহ্যগতভাবে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করে এবং পর্যটন ব্যয় বৃদ্ধি করে।

ডিইটি দ্বারা ট্র্যাক করা সাতটি মূল কর্মক্ষমতা সূচকে, যার মধ্যে দর্শনার্থীদের আগমন, গড় দৈনিক হার, প্রতি উপলব্ধ কক্ষে রাজস্ব, দখলের স্তর এবং থাকার সময়কাল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, দুবাইয়ের আতিথেয়তা খাত লাভ করেছে।

হোটেলের ধারণক্ষমতা ক্রমাগত সম্প্রসারণ সত্ত্বেও, গড় হোটেল দখলের হার ৭৮.৭ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২৪ সালে একই সময়ের মধ্যে ৭৬.৪ শতাংশ ছিল।

কার্লটন হোটেলসের সিইও হুসনি আব্দুলহাদি বলেন, ফলাফলগুলি এই খাতের স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজনযোগ্যতা তুলে ধরে।

হোটেল সরবরাহ বৃদ্ধি সত্ত্বেও, দখলের মাত্রা উচ্চ রয়ে গেছে, এমারাত আল ইয়ুম আব্দুলহাদির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন। দুবাইয়ের আতিথেয়তা শিল্প দৃঢ়ভাবে কাজ করে চলেছে, যা অবসর এবং ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীদের জন্য বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসাবে আমিরাতের খ্যাতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।

তিনি আরও বলেন যে দর্শনার্থীর সংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি, বর্ধিত হোটেল ধারণক্ষমতা এবং টেকসই দখল শক্তিশালী চাহিদা এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধিকে প্রতিফলিত করে, উল্লেখ করে যে পরিসংখ্যানগুলি বিকশিত বাজারের গতিশীলতার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে দুবাইয়ের পর্যটন খাতের পরিপক্কতা এবং নমনীয়তা প্রদর্শন করে।

দুবাই সফলভাবে তার উৎস বাজারগুলিকে বৈচিত্র্যময় করেছে এবং নতুন দর্শনার্থী বিভাগে তার আবেদন প্রসারিত করেছে, আব্দুলহাদি বলেন। এটি ব্যবসা, অবসর এবং সম্মেলন পর্যটনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসাবে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।

তিনি আশা করেন যে বড় ইভেন্ট, উৎসবের ছুটির মরসুম এবং ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগকারীদের আস্থার দ্বারা উৎসাহিত হয়ে বছরের শেষ পর্যন্ত এই খাতের শক্তিশালী কর্মক্ষমতা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, দুবাইয়ের দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া, উদ্ভাবন এবং স্মার্ট পরিষেবাগুলিতে ক্রমাগত বিনিয়োগের সাথে মিলিত হওয়া, শহরের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা এবং একটি শীর্ষ পর্যটন ও আতিথেয়তা গন্তব্য হিসাবে এর অবস্থানের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।

এদিকে, তথ্য দেখায় যে ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে হোটেলের আয় ১৩ বিলিয়ন দিরহাম ছাড়িয়ে গেছে, যা গত বছরের একই সময়ের মধ্যে ১১.৬ বিলিয়ন দিরহাম ছিল, যা ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ গড় দৈনিক হার এবং ব্যস্ত কক্ষের রাতের বৃদ্ধির কারণে এই বৃদ্ধি ঘটেছে।

সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ, গড় দৈনিক কক্ষের হার ৫০৯ দিরহামে পৌঁছেছে, যা ২০২৪ সালে ৪৮৭ দিরহাম ছিল, যেখানে প্রতি উপলব্ধ কক্ষের আয় ৪০১ দিরহামে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের ৩৭২ দিরহামের তুলনায়, যা বছরের পর বছর ৮ শতাংশ বৃদ্ধি প্রতিফলিত করে।

হোটেল অতিথিদের মধ্যে থাকার গড় সময়কাল ৩.৬ রাত স্থির ছিল, যা আকর্ষণ এবং বিশ্বমানের আতিথেয়তা অফারগুলির ক্রমবর্ধমান পোর্টফোলিওর মধ্যে দর্শনার্থীদের ব্যস্ততা বজায় রাখার দুবাইয়ের ক্ষমতা প্রদর্শন করে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ