আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

জীবন সংগ্রামে সফল ৫ (পাঁচ) নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক


 সংগ্রামে সমাজ, পরিবারের নানা বাধা কাটিয়ে সফলতার মুখ দেখেছেন সাতক্ষীরার দেবহাটার ৫ নারী। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এসব নারীদের ৫টি ক্যাটাগরিতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় খুঁজে বের করা হয়েছে।

এসব নারীদের জীবনে রয়েছে আলাদা আলাদা জীবন কাহিনি। তাদের সেই সংগ্রামের কাহিনি ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরা হলো।

 

নুর নাহার বেগম:

জীবন চলার পথ মসৃণ নয়, আসে নানান বাঁধা-বিপত্তি। সাহসী মানুষ এসব বাধা অতিক্রম করে আত্মপ্রত্যয়ের উপর ভর করে এগিয়ে যায়। সফলতা বয়ে আনে নিজের জীবনে। পাশাপাশি যুক্ত হয় সামাজিক কাজে। অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠে অন্যদের জন্য। এমনই একজন নারী নুর নাহার বেগম। তিনি বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন। সে উপজেলার পূর্ব কুলিয়ার বাসিন্দা।

তিনি জানান, বিবাহের পর স্বামী আমার সাথে বেশ কিছুদিন ভালো ব্যবহার করে। তারপর থেকে স্বামীর নির্ধারিত উপার্জন না থাকায় আমার উপর যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করে। আমার দরিদ্র পিতা যৌতুক দিতে না পারায় আমার উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে আমাদের ঘরে একে একে তিন জন পুত্র সন্তানের জন্মগ্রহণ করে। তারপরও নির্যাতনের মাত্রা কমেনি।

এক পর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পিতার বাড়িতে চলে আসি এবং নতুন করে জীবন শুরু করি। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে অর্থ উপার্জন করে নতুন উদ্যমে বাঁচার স্বপ্ন দেখি। শত কষ্টের মধ্যেও ছেলেদের লেখা-পড়া বন্ধ হতে দেইনি। তারা প্রত্যেকেই লেখাপড়া শিখে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে তারা সকলেই প্রতিষ্ঠিত।

বর্তমানে বড় ছেলে আজহার উদ্দীন এম.এ পাশ করে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে চাকরি করছে। মেজো ছেলে সালাউদ্দীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.বি.এ পাশ করে লংকা বাংলা ফাইনান্স লিমিটেড এ কর্মরত আছে। আর ছোট ছেলে এ.কে.এম মহিউদ্দীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করে বর্তমানে চাকুরি প্রার্থী। বর্তমানে আমি আমার সন্তানদের নিয়ে অনেক ভালো আছি।

রুবিনা আক্তার:

অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া নারী রুবিনা আক্তার (২৬)। তিনি দেবহাটা উপজেলার, চন্ডীপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে সন্তান। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ৯ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় একই গ্রামের এক বেকার ছেলের সাথে সে বিবাহে আবদ্ধ হয়। পরিবার তাদের বিয়ে মেনে না নেওয়ায় বেকার স্বামীকে নিয়ে চিন্তায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে রুবিনার মাথায়। এক পর্যায়ে স্বামী দিনমজুরের কাজে যোগ দেন, আর তিনি বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন ও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে থাকেন।

এর মধ্যে তার ঘরে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান। একদিকে নিজেদের সংসার চলে না, তার উপর নতুন সদস্যের আগমন। কঠিন সময়ের মধ্যে ২০১৫ সালের সার্স এনজিওতে স্বাস্থ্য পরিদর্শকের কাজ নেয় সে। ২০১৬ সালে জিপিএ ৪.৯৬ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। একদিকে চাকুরি, অন্যদিকে সংসার ও পড়ালেখা সব মিলে তিনি খরচে ঠিকমতো সামলে দিতে পারছিলেন না। আর তাই বাড়িতে বাড়তি আয়ের জন্য ছোট পরিসরে মুরগি পালন শুরু করেন।

পরে সার্স এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বড় আকারে খামার তৈরি করেন এবং স্বামীকে একটি মৎস্যঘের লিজ করে দেন। তা থেকে লাভবান হওয়ায় ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি এখন নিজেই পুঁজি গঠন করে ফেলেছেন। বর্তমানে তার বাড়িতে সমৃদ্ধি খামার ও পুষ্টি বাগান থাকায় নিজের উৎপাদিত পণ্য পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অর্থ আয়ের পথ সৃষ্টি হয়েছে।

এখন, রুবিনা আক্তার একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি মনে করেন, নিজে একজন সফল নারী, আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছেন।

 

মিতা রানী পাল:

সফল জননী নারী মিতা রানী পাল। তিনি উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের গুরুগ্রামের অশোক পালের স্ত্রী। তার স্বামী একজন প্রান্তিক কৃষক। স্বামীর অভাবের সংসারে এক ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু হয় তার। সন্তানদের সুশিক্ষিত করতে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করেন তারা।

মিতা রানী জানান, আমার স্বামী শিক্ষা সচেতন না হওয়ায় ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়া ও খাওয়া-দাওয়াসহ সমস্ত দায় দায়িত্ব আমি নিজেই পালন করতাম। গৃহে হাঁস-মুরগি পালন করে স্বল্প আয়ের টাকা দিয়ে সন্তানদের খাতা কলম ও পড়ালেখার খরচ যোগাতাম। আমার ছেলে মেয়েরা সবাই ছিল মেধাবী ও পরিশ্রমী। তারা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাফল্যের সাথে পড়াশুনা করেছে।

বড়মেয়ে সুমা মনি পাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে এম.এস,এস পাশ করে বাংলাদেশ সরকারের কাস্টমস অফিসার পদে কর্মরত আছেন। ছেলে সঞ্জয় পাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে এম,এ পাশ করে ঝিনাইদহ জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদে কর্মরত আছেন। আর ছোট মেয়ে রমা রানী পাল সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে এম.বি.বি.এস ৫ম সেমিস্টারে অধ্যায়নরত আছে।

সালমা সুলতানা:

শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী সালমা সুলতানা। তিনি কামটা গ্রামের শওকাত মীর এর কন্যা। তিনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি হওয়ার পরেও কোন কিছুতে তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি তাঁকে।

দিনমজুর পিতার সংসারে অতি কষ্টের মধ্যে ছোট বেলা থেকে বড় হয়েছেন। কিন্তু অনেক দরিদ্রতা ও শারীরিক অক্ষমতার মাঝেও সাহস না হারিয়ে তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যান। অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার বিকাশ ঘটিয়ে লেখাপড়া শিখে এইচ.এস.সি. পাশ করে সালমা। পরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন।

নিয়োগের মাধ্যমে কামটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। বর্তমানে শিক্ষকতার পাশাপাশি উচ্চতর ডিগ্রির জন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন এই নারী। এখন, তিনি সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী একজন নারী।

 

উত্তরা দাশ:

সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা নারী উত্তরা দাশ। তিনি মাঝপারুলিয়া গ্রামের জগবন্ধু দাশের স্ত্রী। নিম্নবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ হওয়া সত্ত্বেও সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি।

উত্তরা দাশ জানান, আমি নিজের উদ্যোগে আমার এলাকায় কয়েকটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি। শিশু শ্রম ও ইভটিজিং প্রতিরোধেও কাজ করছি। সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণি বিশেষ করে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার আদায় ও তাদের সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে দরিদ্র অসহায় মানুষদের ভাতাপ্রাপ্তিতে সহযোগিতা করে থাকি। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানুষদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করি।

শিশুদের স্কুলগামী করার লক্ষ্যে গ্রামে স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত পিতা মাতাকে উৎসাহিত করা, এলাকায় কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে সেবিকার ভূমিকা পালন করছি। সেইসঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়কালীন সময়ে করণীয়, মায়ের গর্ভকালীন পরিচর্যা, শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণ ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছি।

বর্তমানে আমার এই কর্মকাণ্ড ইউনিয়নের গণ্ডি পেরিয়ে উপজেলাব্যাপী কাজ করে যাচ্ছি।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ভোলায় জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত ।

দ্বীপজেলা ভোলার আধুনিক সাহিত্য সংগঠন জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে ।গতকাল ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যায় ভোলা সদরের গঙ্গাকীর্তি হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগারে অনুষ্ঠিত জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সাধারণ সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম এর সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র প্রভাষক কবি রিপন শান, জাতীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট ভোলা জেলা শাখার সদস্য সচিব প্রভাষক কবি মিলি বসাক, জলসিঁড়ির সদস্য সচিব কবি মহিউদ্দিন মহিন, জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জলসিঁড়ির সংগঠক কবি নীহার মোশারফ, আবৃত্তিশিল্পী সমাজসেবক মীর মোশারেফ অমি প্রমুখ ।

সভায় উপস্থিত সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম কে সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সাংবাদিক কবি রিপন শানকে নির্বাহী সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সংগঠক মহিউদ্দিন মহিনকে সাধারণ সম্পাদক, কবি গবেষক কবি নীহার মোশারফ কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫- ২০২৭ গঠন করা হয়েছে ।

কমিটির সহ-সভাপতিগণ হচ্ছেন- সিনিয়র প্রভাষক কবি মিলি বসাক, কবি মোঃ জুলফিকার আলী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গণ হচ্ছেন- কবি আল মনির, আবৃত্তিশিল্পী মীর মোশারেফ অমি । অর্থ ও দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি বিলকিস জাহান মুনমুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি শাহনাজ পারুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাংবাদিক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ আরিফ । নির্বাহী সদস্যগণ হচ্ছেন- অধ্যক্ষ কবি এম এস জালাল বিল্লাহ, কবি দিলরুবা জ্যাসমিন, কবি চৌধুরী সাব্বির আলম এবং কবি এরশাদ সোহেল ।

আসছে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার বিকেল ৪ টায় ভোলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য জলসিঁড়ির মাসিক সাহিত্য সভায় নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ