আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

ইউক্রেন কেন ন্যাটোর সদস্য হতে মরিয়া হয়ে পড়েছে?

মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য যেসব অস্ত্রশস্ত্র পায় সেগুলো তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিলনিয়াসে ন্যাটো জোটের যে সম্মেলন এখন চলছে, সেটি ইউক্রেনিয়ান সৈন্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক মূহূর্ত। কারণ লড়াই চালিয়ে যেতে তাদের যা দরকার, তা নির্ভর করছে এই সম্মেলনের ওপর।

বেশ ব্যাপক একটা প্রত্যাশা আছে যে এই সম্মেলন থেকে ইউক্রেনকে আরও অস্ত্রশস্ত্রের প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে। সেই সঙ্গে গোলা-বারুদ, সামরিক রসদ। যুক্তরাষ্ট্র তাদের বর্তমান মওজুদ থেকে ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে গত সপ্তাহে, সেটির একটা উদ্দেশ্য নতুন অস্ত্রশস্ত্রের সরবরাহ না আসা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়টার চাহিদা পূরণ করা। কিন্তু ইউক্রেনের কাছে এই সম্মেলন কেবল অস্ত্রশস্ত্র আর গোলাবারুদের ব্যাপার নয়। ইউক্রেন যে এই সামরিক জোটে যোগ দিতে চাচ্ছে, সেটির ব্যাপারে সম্মেলন থেকে কী ধরণের অঙ্গীকার পাওয়া যাবে, সেটাই তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ন্যাটোর দরোজায় ইউক্রেন কড়া নাড়ছে বহু বছর ধরে। তারা কেবল কিছু ইতিবাচক কথা-বার্তায় সন্তুষ্ট নয়। তাদের মধ্যে এমন একটা বোধ তৈরি হয়েছে যেন তাদের স্থায়ীভাবে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে। ইউক্রেন চায় এর চেয়ে বেশি কিছু। ন্যাটো সামরিক চুক্তির একেবারে মূলে আছে আর্টিকেল ৫, যেটিতে বলা হয়েছে, যে কোন সদস্য দেশের ওপর আক্রমণ সব দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ বলে গণ্য হবে। সম্মিলিত প্রতিরক্ষার এই নীতি ইউক্রেনকে সুরক্ষা দিতে পারে। কিন্তু ন্যাটোর প্রায় সব সদস্য দেশই একমত যে, একটি দেশ যখন আগে থেকেই যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে, তখন তাকে ন্যাটোর সদস্য করা কঠিন।

‘আমাদের বিশ্বাস, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অনেক আগেই আসলে আমন্ত্রণ জানানো উচিৎ ছিল,’ বলছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেংকো, ‘ন্যাটোতে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর মানে তো এই নয় যে সাথে সাথে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হয়ে যাবে। আমরা এটা বুঝি যে, যতদিন যুদ্ধ চলছে, ততদিন ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। আমরা তো বলছি আমাদের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হোক, এবং কতদিনের মধ্যে এটা ঘটবে তার একটি সুস্পষ্ট সময়সীমা ঠিক করা হোক।’

বুখারেস্টে ২০০৮ সালে ন্যাটো জোটের যে সম্মেলন হয়েছিল, তখন ইউক্রেন এবং জর্জিয়াকে বলা হয়েছিল, ভবিষ্যতে তাদের ন্যাটো জোটের সদস্য করার কথা বিবেচনা করা হবে। কিন্তু কিভাবে এটি ঘটবে সেটি স্পষ্ট করে বলা হয়নি, এবং শীঘ্রই ঘটবে এমন কোন প্রত্যাশা কখনোই করা হয়নি। বুখারেস্ট সম্মেলনের ঐ ঘটনা রাশিয়াকে ক্রুদ্ধ করেছিল। ইউক্রেন বা জর্জিয়ার সুরক্ষার জন্য কোন ব্যবস্থা ন্যাটো জোট করেনি। ২০০৮ সালে রাশিয়া জর্জিয়ায় আক্রমণ চালায়। এরপর ইউক্রেনেও, প্রথমে ২০১৪ সালে, তারপর ২০২২ সালে। বুখারেস্ট সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের যারা অংশ নিয়েছিলেন, তারা এখন স্বীকার করেন ন্যাটোর ঐ সিদ্ধান্ত ছিল ভুল।

এবার ইউক্রেন আরও সুস্পষ্ট ঘোষণা এবং দৃঢ় নিশ্চয়তা চায়। ইউক্রেনকে সদস্য করার ব্যাপারে কী ধরণের অঙ্গীকার করা হবে এবং কতদিনের মধ্যে তা ঘটবে, সেগুলোর বিরাট প্রভাব পড়বে যুদ্ধের ওপর। যেমন, অনেকে যুক্তি দিচ্ছেন, যদি বলা হয় যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরই কেবল ইউক্রেনকে সদস্য করা হবে, তাহলে রাশিয়া এই পথ বন্ধ করার জন্য সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে নিচু মাত্রার লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু ন্যাটোর অনেক সদস্য দেশই আসলে এখনই ইউক্রেনকে কিছু দেয়ার অঙ্গীকার করার ব্যাপারে বেশ সতর্ক। তাদের আশংকা, এর ফলে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটো জোটের সত্যিকার যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশংকা বাড়বে।

তবে এরকম কথা-বার্তায় ইউক্রেন বেশ ক্ষুব্ধ। ‘সত্যি কথা বলতে কি, অনেক দিন ধরেই ন্যাটো জোট আসলে সময়ক্ষেপণ করে যাচ্ছে রাশিয়া তাদেরকে কিছু করতে দেবে কিনা, সেটা নিয়ে,’ বলছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের অফিসের একজন উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক, ‘ন্যাটোকে একেবারে খোলাখুলি কোন রাখ-ঢাক না করে বলতে হবে যে রাশিয়ার হুমকির সঙ্গে এ সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়টি শর্তযুক্ত নয়।’

ইউক্রেনিয়ানরা মনে করে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ থামানোর একটা পথ হচ্ছে তাদের ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়া। কারণ এতে যুদ্ধ আর বাড়বে না, বরং সেটি রাশিয়াকে ঠেকাবে। তবে তারা স্বীকার করে, যেটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন সম্প্রতি বেশ স্পষ্ট করে বলেছেন, এজন্য ইউক্রেনে অনেক সংস্কার দরকার হবে। যে কোন দেশ ন্যাটোর সদস্য হতে হলে এসব সংস্কার জরুরি।

তবে ইউক্রেনিয়ানরা যুক্তি দেখায় যে, ন্যাটো তো গঠনই করা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মস্কোকে মোকাবেলার জন্য। অথচ এখন ন্যাটোর হয়ে ইউক্রেনকেই কার্যত রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। ন্যাটোর পূর্ব দিকের সীমান্ত এখন রক্ষা করছে কার্যত ইউক্রেন, আর সেখানে প্রতিদিন লড়াইয়ে মারা যাচ্ছে ইউক্রেনের সৈন্য এবং বেসামরিক মানুষ। ন্যাটো জোটের ভেতরে অনেকে মনে করেন, ইউক্রেনকে সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর অনেক ঝুঁকি আছে। কিন্তু কিয়েভের অনেকের মতে, এটা ভুল। তাদের প্রশ্ন: যদি কিছু করা না হয় সেটির ঝুঁকি তাহলে কী?

তবে প্রকাশ্যে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বেশ আশাবাদী কথাবার্তাই বলে যাচ্ছেন। যদি তাদের কোন অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, বা একটি ‘শিথিল নিরাপত্তার’ নিশ্চয়তা দেয়া হয়, তখন কী হবে, সেটি নিয়ে তারা কথাবার্তা বলতে চায় না। তারা এমন কিছু বলতে চায় না যাতে মনে হতে পারে ইউক্রেন অকৃতজ্ঞ। কারণ ন্যাটো জোটের কাছ থেকে তাদের এখনো অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদের সরবরাহ দরকার।

তবে ইউক্রেনকে যদি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ জোটে না রাখা হয়, তখন দীর্ঘ মেয়াদে কী ঘটবে, সেটি নিয়ে অনেক ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাই একান্তে তাদের দুশ্চিন্তার কথা জানালেন। তাদের মতে, মস্কো তখন এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বলার চেষ্টা করবে, ‘দেখো পশ্চিমারা কীভাবে ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করেছে, পশ্চিমাদের বিশ্বাস করা যায় না।’ একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বললেন, তখন ইউক্রেনের মানুষেরও মনে হতে পারে, তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।

ইউক্রেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য করা না হলে পশ্চিমা দেশগুলো অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদের সরবরাহ কতদিন অব্যাহত রাখবে সেটাও একটা দুশ্চিন্তা। কারণ যুদ্ধে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় এক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যেও ক্লান্তি আসতে পারে। ভ্লাদিমির পুতিন এবং রাশিয়া হয়তোবা সেটার ওপরই ভরসা করছে। সূত্র: বিবিসি।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

আমিরাতে ৬শ গাড়ি দিয়ে ‘ঈদ আল ইতিহাদ ইউএই ৫৪’ বানিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে আজমান।


যানবাহন ব্যবহার করে বিশ্বের বৃহত্তম উদযাপন বাক্যাংশ তৈরি করে আজমান গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করেছে। ৬০৩টি যানবাহনকে “ঈদ আল ইতিহাদ ইউএই ৫৪” বার্তাটি স্পষ্টভাবে লেখার জন্য সাজানো হয়েছিল।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫৪তম ঈদ আল ইতিহাদ উদযাপনের সাথে মিলে যাওয়া এই কৃতিত্ব গিনেস বিচারক প্যানেল কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে এবং পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে প্রদর্শিত অসাধারণ নির্ভুলতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য উচ্চ প্রশংসা করেছে।

এই স্কেলের একটি সুস্পষ্ট বাক্যাংশ তৈরির জন্য ৬০৩টি যানবাহনের সমন্বিত চলাচলকে সমন্বয় করা একটি অভূতপূর্ব কৃতিত্ব হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে, যা অসাধারণ দৃশ্যমান প্রভাব সহ বিশ্বমানের অনুষ্ঠান সম্পাদনের জন্য আজমানের ক্ষমতাকে তুলে ধরে।

আজমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ, আজমান হোল্ডিং এবং রায়াত কোম্পানি যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল। অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়, যা নতুন রেকর্ডকে স্বীকৃতি দেয়, যা এই জাতীয় উপলক্ষকে একটি বিশিষ্ট উপায়ে উপস্থাপনের প্রচেষ্টাকে উদযাপন করে যা সংযুক্ত আরব আমিরাত ইউনিয়নের অর্জনের আনন্দ এবং গর্বকে গভীরভাবে প্রতিফলিত করে।

আজমান ৬০৩টি যানবাহন নিয়ে ‘ঈদ আল ইতিহাদ ইউএই ৫৪’ গঠনের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করেছে পর্যটন, সংস্কৃতি এবং তথ্য বিভাগের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আজিজ বিন হুমাইদ আল নুয়াইমির পৃষ্ঠপোষকতায় চিত্তাকর্ষক এবং অত্যন্ত সমন্বিত অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ১৮ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ গেল জাপানে।


চট্টগ্রামের কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র (ওয়ার সিমেট্রি) থেকে ১৮ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ উত্তোলন করে তাদের দেশে পাঠানো হয়েছে। প্রায় ৮০ বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত এসব জাপানি সৈন্যের দেহাবশেষ সমাধি থেকে তোলা হলো। সোমবার বিকেলে জাপান সরকারের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এসব দেহাবশেষ নিয়ে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ কাজে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সহায়তা দিয়েছে।

সেনাবাহিনীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জাপান সরকারের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলটি গত ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে অবস্থান করে সমাধি থেকে দেহাবশেষ উত্তোলন সম্পন্ন করেন। আর পুরো কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও খননকাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক।

চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া বাদশা মিয়া সড়কে ‘ওয়ার সিমেট্রি, চট্টগ্রাম’ হিসেবে পরিচিত এ কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্রের অবস্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৪৪-৪৫ সালের দিকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এ সমাধিসৌধ প্রতিষ্ঠা করে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের ৭০০টিরও বেশি সমাধি আছে। এর মধ্যে ১৮ জন জাপানি সৈনিকের সমাধি। বিশ্বজুড়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সমাধিক্ষেত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে ‘কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন’।


এর আগে, গত বছরের নভেম্বরে কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত ২৩ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ উত্তোলন করে দেশটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের সবার পরিচয় সমাধির ওপর লিপিবদ্ধ থাকায় জাপানে তাদের স্বজনদের শনাক্ত সহজ হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য। কুমিল্লার ময়নামতিতেও দেহাবশেষ উত্তোলনের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খনন বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীরপ্রতীক।

চট্টগ্রাম থেকে দেহাবশেষ উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ‘কুমিল্লায় প্রত্যেকটি সমাধির ওপর সৈনিকের নেমপ্লেট ছিল। চট্টগ্রামে সেটা নেই। এখানে সমাধিক্ষেত্রে একটি জায়গায় একটা নেমপ্লেটে ১৮ জনের নাম লেখা আছে। কিন্তু কোনটা কার সমাধি সেটা চিহ্নিত করা নেই। আমরা ১৮টি সমাধিই খনন করেছি। সবগুলোতে মাথার খুলি, কঙ্কাল, কোমড়ের অংশ, আঙুলের অংশসহ আরও বিভিন্ন দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে কুমিল্লার মাটি লবণাক্ত না। সেজন্য সেখানে খননকাজ সহজ ছিল। চট্টগ্রামে সেটা একটু কঠিন ছিল এবং সময়ও বেশি লেগেছে।’

খননে পাওয়া দেহাবশেষ নিয়ে জাপানের প্রতিনিধিদল ‘খুবই সন্তুষ্ট’ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকেই (সোমবার) উনাদের বিমানে তুলে দিয়ে এলাম। দেহাবশেষগুলো খুবই সতর্কতার সঙ্গে যাতে ভেঙ্গে না যায়, সেজন্য তুলা দিয়ে মুড়িয়ে বাক্সে নেওয়া হয়। আমি নিজেই সেগুলো প্যাকিং করি। এর মধ্যে কয়েকটা হাতে করে এবং আর কিছু কার্গো বিমানে পাঠানো হয়েছে।’জাপানে নিয়ে স্বজনদের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে দেহাবশেষগুলোর পরিচয় শনাক্ত করে তাদের পরিবারের কাছে দেওয়া হবে বলে দেশটির প্রতিনিধি দলের বরাতে জানান কাজী সাজ্জাদ আলী জহির।

এদিকে সেনাবাহিনীর বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, দেহাবশেষ উত্তোলন শেষে গত ২৮ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল যথাযোগ্য সামরিক মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর সেগুলো জাপানের প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়।চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘ওয়ার সিমেট্রি থেকে ১৮ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী এ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। বিষয়টি আমরা অবগত আছি।’

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ