আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

এবার বাবর আলীর ‘লোৎসে’ জয় দেশে ফেরার সম্ভাবনা ৩ জুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে জয় করেছেন চট্টগ্রামের সন্তান ডা. বাবর আলী, যিনি দু’দিন আগে এভারেস্ট চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার (২১ মে) নেপালের স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে তিনি ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার লোৎসে চূড়া স্পর্শ করেন। বাবরের লোৎসে জয় দেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলে মন্তব্য করেছে তার সংগঠন ভার্টিক্যাল ড্রিমারস। এর আগে গত রোববার (১৯ মে) ভোরে এভারেস্ট জয় করে বেইজ ক্যাম্প- ফোরে ফিরে আসেন বাবর। সময় লাগে প্রায় ১৪ ঘণ্টা। রাতেই লোৎসের উদ্দেশে যাত্রার কথা থাকলেও শরীর সায় দেয়নি। ধকল কাটিয়ে একদিন পর সোমবার মধ্যরাতে তিনি লোৎসে জয়ের পথে আগান।
বাবরের অভিযান সমন্বয়ক ফরহান জামান জানান, এভারেস্টের মতো লোৎসে সামিটেও বাবরের সঙ্গে ছিলেন তার শেরপা সাথী বীর বাহাদুর তামাং। অভিযানের পরিচালক প্রতিষ্ঠান স্নোয়ি হরাইজনের স্বত্বাধিকারী বোধা রাজ বান্ডারি এবং বেসক্যাম্পের ধর্মা তামাং গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফরহান জামানকে বাবরের সফল হওয়ার তথ্য দেন।
ফরহান জামান বলেন, এখনো অভিযান শেষ হয়নি। বাবর নিরাপদে বেসক্যাম্পে ফিরে এলেই আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবো। আশা করছি বাবর ২৩ মে-র মধ্যে বেসক্যাম্পে নেমে আসবে এবং ৩ জুন দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে বাবরের আগে আরও পাঁচজন এভারেস্ট জয় করেন। ২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের শীর্ষে ওঠেন মুসা ইব্রাহীম। ২০১১ ও ২০১২ সালে দু’বার এভারেস্ট জয় করেন এম এ মুহিত। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১২ সালের ১৯ মে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন নিশাত মজুমদার। একই মাসের ২৬ মে ওয়াসফিয়া নাজরীন জয় করেন এভারেস্ট। ২০১৩ সালের ২০ মে এভারেস্ট জয় করে নামার পথে মারা যান সজল খালেদ, যিনি পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে পর্বতজয় করেছিলেন। সেই অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর পর গত ১১ বছরে আর কোনো বাংলাদেশি এভারেস্টের পথ মাড়াননি। ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ের এ অভিযানে বাবরের পাশে দাঁড়ায় ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যার লিমিটেড। এছাড়া এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা ডাইভার্স ক্লাব, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ব্লু জে, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী, গিরি, ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সও বাবরের স্বপ্নপূরণের সহযাত্রী হয়েছে। আর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনের প্রতিনিধি, বন্ধু-স্বজনরাও গণতহবিল সংগ্রহ করে বাবরের পাশে দাঁড়ান।
জানা গেছে, ৩৩ বছর বয়সী বাবর আলীর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর গ্রামের নজু মিয়া হাট এলাকায়। বাবা লিয়াকত আলী কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। ২০১৭ সালে দেশে ফিরে বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন। মা লুৎফুন্নাহার বেগম গৃহিণী। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে বাবর দ্বিতীয়। বাবর আলী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে এমফিল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিজিটি সম্পন্ন করেন। ছোটবেলা থেকেই দূরন্ত প্রকৃতির বাবর কিছুদিন চিকিৎসা পেশায় থাকলেও পরিভ্রমণের নেশায় সেটা ছেড়ে দেন। ২০১৯ সালে পায়ে হেঁটে ও পরে সাইকেলে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেন। ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে সাইকেলযাত্রা শুরু করেছিলেন বাবর আলী। এক মাসের চেষ্টায় প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী গিয়ে থামেন তিনি। এভারেস্ট জয়ের আগে আরও অনেক পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন বাবর। ৪ হাজার ৯৮৪ মিটার উচ্চতার সারগো রি থেকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার মাউন্ট আমা দাবলাম-অন্তঃত ৯টি পর্বতশৃঙ্গ জয়ের রেকর্ড আছে বাবরের ভাণ্ডারে। গত ৩০ মার্চ চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে এসে বাবর আলী তার এভারেস্ট জয়ের স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন। পরদিন ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় তার এভারেস্ট জয়ের অভিযান। ৪ এপ্রিল নেপালের কাঠমান্ডু থেকে পৌঁছান লুকলাতে। ১০ এপ্রিল এভারেস্টের বেইজ ক্যাম্পে পৌঁছান তিনি। এরপর একমাস ধরে অপেক্ষার পালা। ১৪ মে শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান। ওইদিনই তিনি দ্বিতীয় ক্যাম্পে, ১৮ মে তৃতীয় ক্যাম্পে এবং ১৯ মে ভোরে ক্যাম্প ফোরে পৌঁছান। ১৯ মে সকালে তিনি ‘ডেথ জোন’ নামে পরিচিত ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতায় শৃঙ্গে আরোহণ করে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে দেন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ভোলায় জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত ।

দ্বীপজেলা ভোলার আধুনিক সাহিত্য সংগঠন জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে ।গতকাল ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যায় ভোলা সদরের গঙ্গাকীর্তি হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগারে অনুষ্ঠিত জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সাধারণ সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম এর সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র প্রভাষক কবি রিপন শান, জাতীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট ভোলা জেলা শাখার সদস্য সচিব প্রভাষক কবি মিলি বসাক, জলসিঁড়ির সদস্য সচিব কবি মহিউদ্দিন মহিন, জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জলসিঁড়ির সংগঠক কবি নীহার মোশারফ, আবৃত্তিশিল্পী সমাজসেবক মীর মোশারেফ অমি প্রমুখ ।

সভায় উপস্থিত সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম কে সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সাংবাদিক কবি রিপন শানকে নির্বাহী সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সংগঠক মহিউদ্দিন মহিনকে সাধারণ সম্পাদক, কবি গবেষক কবি নীহার মোশারফ কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫- ২০২৭ গঠন করা হয়েছে ।

কমিটির সহ-সভাপতিগণ হচ্ছেন- সিনিয়র প্রভাষক কবি মিলি বসাক, কবি মোঃ জুলফিকার আলী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গণ হচ্ছেন- কবি আল মনির, আবৃত্তিশিল্পী মীর মোশারেফ অমি । অর্থ ও দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি বিলকিস জাহান মুনমুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি শাহনাজ পারুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাংবাদিক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ আরিফ । নির্বাহী সদস্যগণ হচ্ছেন- অধ্যক্ষ কবি এম এস জালাল বিল্লাহ, কবি দিলরুবা জ্যাসমিন, কবি চৌধুরী সাব্বির আলম এবং কবি এরশাদ সোহেল ।

আসছে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার বিকেল ৪ টায় ভোলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য জলসিঁড়ির মাসিক সাহিত্য সভায় নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ