
অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের যে চিত্র এতদিন সরকার দিয়েছে, সেটা একটা ভুয়া চিত্র বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সাম্প্রতিক সময়ে উদঘাটন হওয়া দেশের পণ্য রফতানির তথ্যে গরমিল নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে দেশবাসীর সঙ্গে কতবড় প্রতারণা করেছে, সেটা ক্রমান্বয়ে বেরিয়ে আসছে। গতকাল শনিবার সকালে নগরীর মেহেদিবাগে নিজ বাসভবনে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এ প্রতিক্রয়া জানান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে রফতানি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু গত ৩ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সংশোধনের পর তা ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার কমে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার রফতানির হিসেব ওলটপালট হয়ে গেছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে চিত্র, উন্নয়নের যে চিত্র, যেগুলোর কথা বলে দেশের মানুষের ভোটাধিকার, মানবাধিকার, আইনের শাসন, জীবনের নিরাপত্তা কেড়ে নেওয়া হয়, সেই উন্নয়নের চিত্র ক্রমান্বয়ে উন্মোচিত হচ্ছে। সেই চিত্র হচ্ছে একটা ভুয়া চিত্র। ১৪ বিলিয়ন ডলার ভুয়া রফতানি দেখানো হয়েছে, তার ফলশ্রুতিতে কী হয়েছে? আপনার প্রবৃদ্ধি বেশি দেখানো হয়েছে, অর্থনীতির সঙ্গে জিডিপির গ্রোথ বেশি দেখানো হয়েছে, ব্যালেন্স অব পেমেন্টের একটা ভিন্ন চিত্র দেখানো হয়েছে বা দেখাচ্ছে। বস্তুতপক্ষে অর্থনীতির যে মানদণ্ডগুলো আছে, সবগুলোতেই এটার একটা প্রতিফলন আছে।
১৪ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে অর্থনীতির চিত্র কী দাঁড়ায়- সেই ব্যাখা চেয়ে তিনি বলেন, এতদিন পর ধরা পড়ল ১৪ বিলিয়ন রফতানিতে নেই অর্থাৎ দেশের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে, উৎপাদন কমে যাচ্ছে, মিল-ফ্যাক্টরিগুলোতে উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। দুর্নীতি-লুটপাট করে জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার যে প্রবৃত্তি আওয়ামী লীগের হয়ে গেছে, তার প্রতিফলন ছাড়া এটা আসলে আর কিছুই নয়। চৌদ্দ বিলিয়ন ডলার ভুয়া রফতানির চিত্র দেখানোর ফলে বিবিএসের রিপোর্টগুলো নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠে গেছে, এগুলোর সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে গেছে।
দেশের অর্থনীতিকে ‘আওয়ামী মার্কা আর্টিফিশিয়াল লুটপাটের অর্থনীতির মডেল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কল-কারখানায় গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই। ব্যাংক থেকে তারা টাকা নিতে পারছে না, কারণ ব্যাংকের টাকা সরকার নিয়ে যাচ্ছে, না হলে সরকারপন্থি লোকজন বিদেশে পাচার করে যাচ্ছে। আবার ব্যাংকের টাকার সুদও বাড়িয়ে দিয়েছে। শেয়ারবাজার বলেন, ব্যাংক বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনগুলো- সব খালি করে ফেলেছে। খালি করে টাকাটা বাইরে পাচারের কারণে রিজার্ভ কমতে কমতে একেবারে তলানিতে এসে গেছে। রিজার্ভ ঠিক রাখার জন্য আমদানি করতে দিচ্ছে না। আমদানি করতে না দেওয়ার কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই যে একটা আর্টিফিশিয়াল আওয়ামী মার্কা লুটপাটের অর্থনীতির মডেল তারা দাঁড় করিয়েছে, এটা ক্রমান্বয়ে উন্মোচিত হয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতা আমীর খসরু বলেন, শুধু চৌদ্দ বিলিয়ন ডলার ভুয়া রফতানি আয় নয়, এটাই একমাত্র ফিগার নয়, বিভিন্ন খাত থেকে আরও বিভিন্ন ফিগার বেরিয়ে আসবে ক্রমান্বয়ে। তাহলে দেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? রাজনৈতিকভাবে তো দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। ভোটাধিকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার- কিছুই নেই। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের যে চিত্র এতদিন সরকার দিয়েছে, সেটা যে একটা কতবড় ভুয়া চিত্র, প্রতারণার চিত্র, সেটাও ক্রমান্বয়ে বেরিয়ে আসছে।