আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

ঝালকাঠি:

ঝালকাঠিতে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে কুপিয়ে হ’ত্যার চেষ্টা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি:

নলছিটি:

সত্য সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যায়যায় বেলার সম্পাদক ও প্রকাশক মোল্লা শাওনকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়েছে সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসী চিহ্নিত নলছিটি থানায় মামলা।

সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যায়যায় বেলার সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ মোল্লা শাওনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা।
জানা যায় চলতি মাসের গত ৮ তারিখে রোজ সোমবার দুপুর আনুমানিক ১:৪৫ মিনিটের সময় মোঃ মোল্লা শাওন বরিশালের সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতে একটি মামলার হাজিরা শেষে মোটরসাইকেল যোগে ঝালকাঠি যাওয়ার পথে। ঝালকাঠি বরিশাল মহাসড়কে কাচারী বাড়ি নামক স্থানে পাঁচটি মোটরসাইকেল প্রতিরোধ করে হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ি চালানো অবস্থায় কোপানো শুরু করে সন্ত্রাসীরা। মোটরসাইকেল চালানো অবস্থায় মোল্লা শাওনের বাম হাতে বগি দাও দিয়ে কোপ দেয় সন্ত্রাসীরা। এতে করে শাওনের কব্জির অর্ধেক কেটে যায়। তবুও দমে যাননি শাওন, জীবন রক্ষার প্রাণপণ তাগিদে তিনি ডান হাতে মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘটনার দিন বৃষ্টি থাকার কারণে রাস্তা প্রায় ফাঁকাই ছিল। এই সুযোগটি গ্রহণ করে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীরা বোগি দাও দিয়ে শাওনের মাথায় কোপ দিলে মাথায় থাকা হেলমেট 2খণ্ড হয়ে রাস্তার দুই দিকে চলে যায়। শাওনের মোটরসাইকেলের ডান দিকে থাকা আরেকটি মোটরসাইকেলে থাকা সন্ত্রাসীরা জি আই পাইপ দিয়ে শাওনের ডান হাতে প্রচন্ড জোরে আঘাত করলে হাতের একটি হাড় ভেঙে যায়। ওই ভাঙ্গা হাত নিয়েই শাওন মোটর বাইকে এর এক্সিলেটর চেপে জীবন বাঁচানোর তাগিদে ছুটেই চলছিলেন। এমত অবস্থায় সন্ত্রাসীরা শাওনের দুই পাশ ঘিরে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে অঙ্গে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে। শাওনের মোটরবাইক যখন ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার রায়পুরা কাচারী বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় আসে তখনই শাওনের শরীর আস্তে আস্তে নিথর হয়ে আসে। জ্ঞান হারিয়ে মটরবাইক থেকে পড়ে যান শাওন। শাওনের পড়ে যাওয়া দেখে মোটর বাইক ঘুরিয়ে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। স্থানীয় জনতা শাওনকে একটি অটোতে তুলে নিয়ে যায় ঝালকাঠি থানায়। থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহিদুল ইসলাম তার সঙ্গীও ফোর্স নিয়ে শাওনকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় ঝালকাঠি হাসপাতালে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঝালকাঠি থানা এবং নলছিটি থানা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে পুলিশি ভ্যানে করে শাওনকে নিয়ে আসা হয় বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে। বর্তমানে শাওন এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। শাওনের শরীরে প্রায় ১৭ টি কোপের চিহ্ন রয়েছে। রয়েছে অসংখ্য জিয়াই পাইপ দ্বারা আঘাতের চিহ্ন। শাওনের বাম হাতের কবজির প্রায় অর্ধেকটা কেটে গেছে এবং কয়েকটি রক্তনালী কাটা পড়ে গেছে। ওই দিনের নৃশংস ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শাওন অশ্রুসিক্ত নয়নে কাপা স্বরে তার সহকর্মীদের কাছে লেখনীর মাধ্যমে দেশবাসী ও প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার বিনীত অনুরোধ জানান। শাওন বলেন, আসিফ শিকদার মানিক, আবু আক্তার, শাহীন, শোভন, বাবু হাওলাদার, নাঈম তালুকদার সহ আরো প্রায় ছয়-সাত জন তাকে জীবনের তরে শেষ করে দেয়ার জন্য এই হামলায় অংশ নেয়। আক্রমণকারীদের পেছনেই অন্যান্য আসামিরা কয়েকটি বাইক নিয়ে শাওনকে তারা করছিল বলে জানান শাওন।

ঘটনার সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি আমতলার বাসিন্দা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আসিফ সিকদার মানিক কিছুদিন আগে ঝালকাঠি থানা পুলিশের কাছে ইয়াবাসহ ধরা পড়ে। মানিকের এই ধরা পড়ার হ্যান্ডকাফ পরিহিত ছবি সহ মোঃ মোল্লা শাওন নিউজ প্রকাশ করলে ইয়াবা ব্যবসায়ী আসিফ সিকদার মানিক দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন জেল থেকে বের হয়ে বরিশাল।সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতে মোঃ মোল্লা শাওন ও ঝালকাঠির লাসা মিজান সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দায়ের করে। এই মামলার হাজিরা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই মোঃ শাওন বরিশাল সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতে এসেছিলেন।

অপরদিকে ঝালকাঠি জেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক বিতর্কিত মেম্বার আবু আক্তার তার ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেয়ার নাম করে প্রায় ১২ জনের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করেন। সাংবাদিক মোল্লা শাওন সাবেক এই মেম্বারের ঘুষের টাকা গ্রহণ এবং স্থানীয় ঐ ইয়াবা ব্যবসায়ী আসিফ শিকদার মানিকের ইয়াবা ব্যবসার সংবাদ প্রকাশ করলে উল্লেখিত দুইজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংবাদকর্মী মোঃ মোল্লা শাওনকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তারই পরপর দুইবার অস্ত্র নিয়ে গুন্ডা দিয়ে ওই সংবাদের অংশ হিসেবে শাওন এর উপর এহেন নৃশংস হামলা চালিয়েছে বলে জানা যায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে ঝালকাঠি জেলার নলসিটি থানার অফিসার ইনচার্জ এর সরকারি মোবাইল নাম্বারে ফোন করলে তিনি জানিয়েছেন ভিকটিম মোঃ মোল্লা শাওনের চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে মামলা নাম্বার ১১/২৪ এবং পুলিশের অভিযান অব্যাহত অতি দ্রুত চিহ্নিত আসামিদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ