আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

বগুড়া শাহজাহানপুরে জোড়া হত্যা মামলার আসামী পান্নু তালুকদার গ্রেফতার

বগুড়া সংবাদদাতা

বগুড়া শাহজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল ছোট মন্ডল পাড়ার ১৭টি হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামী সাগর তালুকদার (৩৪), পিতা গোলাম মোস্তফা তালুকদার, গ্রাম-সাবরুল, তার সঙ্গী স্বপন প্রামাণিক (২৮), পিতা-মোঃ সাইফুল ইসলাম, সাবরুল হাটখোলাপাড়া ও মোঃ মোক্তার (২৮), পিতা মোঃ আনসার আলী, সাবরুল কারিগরপাড়া, সর্বথানা-শাজাহানপুর, জেলা-বগুড়াগণ গত ২২ সেপ্টেম্বর মাসে আনুমানিক ৬টায় ২০ মিনিটে মোক্তারের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল যোগে দেসমা হোদ্দপুর গ্রামস্থ সাগর তালুকদারের পত্তন নেওয়া পুকুরে মাছের খাবার দেওয়ার জন্য যায়। পুকুর থেকে ফেরার সময় আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল ছোট মন্ডলপাড়া গ্রামস্থ জনৈক মোঃ শফিকুল ইসলাম মন্ডল (৪৫), পিতা-মৃত আব্দুল গফুর এর বাড়ীর পূর্ব পাশে পাকা রাস্তার উপর পৌঁছা মাত্র পূর্ব হতে ওঁৎ পেতে থাকা আসামীগণ হাতে ধারালো চাপাতি, চাকু, রামদা ও চাইনিজ কুড়াল নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে উক্ত মোটরসাইকেলের সামনে এসে পথ রোধ করে এবং তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারিভাবে কোপানো শুরু করে। এতে সাগর তালুকদারের মাথার সামনের বাম পাশে, ঘাড়ের পিছনের অংশে, হাটুর নিচে গিরার উপরে, কোমরের ডান পাশে, পিঠের উপরে উপর্যুপরি কোপ মেরে মাথার মগজ বের করে, রক্তাক্ত জখম করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে।
উক্ত মোটর সাইকেলে থাকা বাকি দুইজন মোটর সাইকেল থেকে নিচে পড়ে গেলে স্বপন প্রামাণিক এর মুখে আঘাত করে থুতনি সহ দাতের মাড়ি থেতলানো, ভাঙ্গা ও গুরুতর জখম করে। রামদা দিয়ে স্বপন প্রামাণিক এর ডান পায়ের গোড়ালির উপরের অংশে কোপ মারিয়া পায়ের গোড়ালির রগ কেটে ফেলে, হাতের বাহুর পিছনে পিঠের অংশে, চাইনিজ কুড়াল দ্বারা একাধিক বার শরীরের বিভিন্ন অংশে কাটা রক্তাক্ত জখম করে এবং সকল আসামী মিলে তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দ্বারা স্বপন প্রামাণিক এর বিভিন্ন স্থানে কোপ মেরে কাটা গুরুতর জখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মোটরসাইকেলে থাকা মোক্তার ঘটনাস্থল থেকে নিজের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, এখন পর্যন্ত মোঃ মোক্তার এলাকায় ফিরে আসে নি।
উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ২৬ তারিখে শাজাহানপুর থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়, যার মামলা নং-১৬, তারিখ-২৬/০৯/২৪ ইং, ধারা-১৪৩/৩৪১/৩২৬/৩০৭/৩০২/১১৪/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। হত্যাকান্ডের পর থেকেই থানা পুলিশ সহ র‌্যাব-১২, সিপিএসসি, এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেলে শহরের কলোনী করতোয়া এলাকা থেকে উক্ত মামলার ২নং এজাহারনামীয় শাবরুল কলাপাড়া হাটখোলা পাড়ার আসামী মোঃ পান্নু তালুকদার (৪৮) গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত জানান, দীর্ঘদিন থেকে হত্যাকান্ডের স্বীকার সাগর তালুকদার গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ পান্নু তালুকদারকে পারভেজ হত্যা মামলা থেকে নাম কর্তনসহ ৩২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো। উল্লেখ্য যে, পারভেজ হত্যা মামলার ১নং সাক্ষী ছিলো আটককৃত আসামী মোঃ পান্নু তালুকদার (পারভেজের বড় ভাই)। হত্যাকান্ডের স্বীকার সাগর তালুকদার মামলা তুলে নেওয়ার জন্য এবং ৩২ লক্ষ টাকা চাঁদা না দিলে মোঃ পান্নু তালুকদারকে বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো। এরই প্রেক্ষিতে নিজের জীবন বাঁচাতে, এলাকায় স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে এই জোড়া হত্যা কান্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। ধৃত আসামী মামলার সাজা এড়াতে স্থানীয় আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী হতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে বিভিন্ন কৌশলে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলো। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শাজাহানপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ