আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চলছে নির্মাণকাজ

মো: গোলাম কিবরিয়া , রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি

অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নির্মাণকাজ চলছে রাজশাহীতে। নানা সমালোচনার মধ্যেই চলতি বছরের শুরুতে শুরু হয় রাজশাহীর পাঁচ ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় সেই নির্মাণ কার্যক্রম। যন্ত্রপাতি গুটিয়ে লাপাত্তা হন ঠিকাদার ও শ্রমিকরাও। তবে মাসখানেক বিরতি দিয়ে আবারও শুরু হয়েছে নির্মাণকাজ। কিন্তু এখন সেই ফ্লাইওভার নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক আর সমালোচনা। এবার নির্মাণকাজে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর বিলসিমলা রেলক্রসিং এলাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কাজ করছে মেসার্স মজিদ অ্যান্ড সন্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি দিনে ও রাতে প্রকাশ্যে সরাসরি বিদ্যুতের লাইন থেকে তার সংযুক্ত করে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে নিজেদের যন্ত্রপাতি পরিচালনা করছে। রাতে কাজ করার জন্য রাখা হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগও। নগরীর বিলসিমলা রেলগেট পার হয়ে নির্মাণাধীন চার নম্বর পিলারসংলগ্ন বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে দেখা গেছে। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে ওয়েল্ডিং মেশিন চালাতেও দেখা গেছে। একই সময় নগরীর বহরমপুর রেলক্রসিং এলাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারেও একই চিত্র দেখা গেছে। এদিকে নগরীর হড়গ্রাম রায়পাড়া রেলক্রসিং এলাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কাজ করছেন মেসার্স ডেনকো লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটিও দিনে-রাতে প্রকাশ্যে সরাসরি বিদ্যুতের লাইন থেকে তার সংযুক্ত করে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে নিজেদের যন্ত্রপাতি পরিচালনা করছে। রাতে কাজ করার জন্য সেখানেও রাখা হয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটের সংযোগ। সেখানে গিয়ে দেখা য়ায়, প্রতিটি বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকেই পৃথক সংযোগ লাইন নিচে নামানো আছে। এমনকি একটি লাইন থেকে সরাসরি লোহা কাটতে ও ঝালাই করতেও দেখা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেসার্স মজিদ অ্যান্ড সন্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক জার্জিসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সেখানে দুটি সংযোগ নেওয়া আছে। অবৈধভাবে কোনো বিদ্যুৎ আমরা ব্যবহার করছি না। তবে বিলসিমলা এলাকার অবৈধ লাইনের ব্যাপারে জানানো হলে তিনি এক প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। সেই প্রকৌশলী অবশ্য অবৈধ সংযোগের ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’ এদিকে মেসার্স ডেনকো লিমিটেডের প্রকৌশলী সঞ্জয় বলেন, ‘আমরা বিদ্যুতের লাইন নামিয়ে রেখেছি। আমরা ওই লাইন ব্যবহার না করে জেনারেটর ব্যবহার করি। মূলত এগুলো সিটি করপোরেশনের রোড লাইটের লাইন থেকে নামানো।’ অবৈধ লাইনে সরাসরি লোহা কাটা ও ঝালাইয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমনটি হওয়ার কথা না। আমি কাল পরিদর্শনে গিয়ে বিস্তারিত জানাব।’ এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আল মঈন পরাগ বলেন, ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কোনো বিদ্যুৎ তারা ব্যবহার করতে পারে না। যদি ব্যবহার করে থাকে, তবে এর দায়ভার তাদের নিতে হবে। আমি এক্ষুনি আমার অফিসারদের খোঁজ নিতে বলছি।’ কিছুক্ষণ পরই রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী ফোন করে জানান, মজিদ অ্যান্ড সন্স দুটি বৈদ্যুতিক মিটার সংযোগ ব্যবহার করছে। তাদের প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল আসছে। আর ডেনকো লিমিটেডের বিদ্যুৎ লাইন নেই। তারা জেনারেটরের মাধ্যমে কাজ করে। অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। রাসিকের প্রশাসক ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই সিটি করপোরেশন বা অন্য কারও বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার করতে পারে না। অবৈধভাবে কিছু করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ভোলায় জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত ।

দ্বীপজেলা ভোলার আধুনিক সাহিত্য সংগঠন জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে ।গতকাল ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যায় ভোলা সদরের গঙ্গাকীর্তি হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগারে অনুষ্ঠিত জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সাধারণ সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম এর সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র প্রভাষক কবি রিপন শান, জাতীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট ভোলা জেলা শাখার সদস্য সচিব প্রভাষক কবি মিলি বসাক, জলসিঁড়ির সদস্য সচিব কবি মহিউদ্দিন মহিন, জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জলসিঁড়ির সংগঠক কবি নীহার মোশারফ, আবৃত্তিশিল্পী সমাজসেবক মীর মোশারেফ অমি প্রমুখ ।

সভায় উপস্থিত সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম কে সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সাংবাদিক কবি রিপন শানকে নির্বাহী সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সংগঠক মহিউদ্দিন মহিনকে সাধারণ সম্পাদক, কবি গবেষক কবি নীহার মোশারফ কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫- ২০২৭ গঠন করা হয়েছে ।

কমিটির সহ-সভাপতিগণ হচ্ছেন- সিনিয়র প্রভাষক কবি মিলি বসাক, কবি মোঃ জুলফিকার আলী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গণ হচ্ছেন- কবি আল মনির, আবৃত্তিশিল্পী মীর মোশারেফ অমি । অর্থ ও দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি বিলকিস জাহান মুনমুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি শাহনাজ পারুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাংবাদিক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ আরিফ । নির্বাহী সদস্যগণ হচ্ছেন- অধ্যক্ষ কবি এম এস জালাল বিল্লাহ, কবি দিলরুবা জ্যাসমিন, কবি চৌধুরী সাব্বির আলম এবং কবি এরশাদ সোহেল ।

আসছে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার বিকেল ৪ টায় ভোলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য জলসিঁড়ির মাসিক সাহিত্য সভায় নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ