
চট্টগ্রাম নগরীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বসানো হয়েছে স্পিড ক্যামেরা। ইতোমধ্যে গাড়ির গতি মনিটরিং করছে এই ক্যামেরা। অতিরিক্ত গতি এবং দুর্ঘটনারোধে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সম্প্রতি এই স্পিড ক্যামেরা বসিয়েছে।কোন গাড়ি ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চললে ক্যামেরায় ওই গাড়ির ছবি উঠবে এবং অটো জরিমানা হবে। জরিমানা পরিশোধের জন্য একটি সময় বেঁধে দেয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জরিমানা আদায় না করলে মামলার ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমেও এই জরিমানা আদায়ের সুযোগ থাকবে।
এদিকে পরবর্তীতে লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেডের উভয়পাশে ১০টি ক্যামেরা ও স্পিড সাইন বসানো হবে। যেখানে ক্যামেরা থাকবে তার একটু আগেই স্পিড সাইন থাকবে, চালকদের সতর্ক করতে এই সাইন বসানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে কোন যানবাহন নির্ধারিত গতির (ঘণ্টায় সর্ব্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার) বেশি চালালে এই ক্যামেরায় তা ধরা পড়বে। সেই সাথে বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে যানবাহন চালককে জরিমানার আওতায় আনা হবে। প্রথম কিছুদিন পরীক্ষামূলক এই ক্যামেরা চললেও কিছুদিনের মধ্যে জরিমানা কার্যকর হবে বলে জানায় সিডিএ।
এদিকে, আগামী ৩ ডিসেম্বর থেকে টোলের আওতায় আসছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। টোল আদায় শুরু হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ফ্রিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হবে। টোল আদায়ের জন্য নগরীর পতেঙ্গাপ্রান্তে চারটি অস্থায়ী টোলবুথ প্রস্তুত করা হয়েছে। পরবর্তীতে নগরীর লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ১০টি টোলবুথ বসানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, আগামী ৩ ডিসেম্বর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু হবে। ওইদিন সকালে উদ্বোধন শেষে টোল আদায় শুরু হবে। এরপর থেকে নির্ধারিত যানবাহন টোল আদায়ের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারবে। ইতোমধ্যে গাড়িভেদে টোলের হার মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়েছে। পতেঙ্গাপ্রান্তে টোলবুথ প্রস্তুত রয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১৪ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি চট্টগ্রাম শহরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সাড়ে নয় মাস পর গত ২৬ আগস্ট পরীক্ষামূলকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস চললেও পরবর্তীতে মোটরসাইকেলসহ সবধরনের যানবাহন চলাচল শুরু করে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে জিইসি মোড় থেকে উঠে পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে নামার সুযোগ থাকবে। আবার পতেঙ্গা থেকে উঠে নগরীর টাইগারপাস, লালখানবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে নামার জন্য র্যাম্প রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, নিমতলা, কেইপিজেড, ফকিরহাট, সিইপিজেডে ওঠানামার নয়টি র্যাম্প থাকবে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রকল্পের ব্যায় বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। খরচ বেড়েছে ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সংশোধিত প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজই শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পরে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
স্পিড ক্যামেরা প্রসঙ্গে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, গাড়ির গতি সীমিত রাখতে ও দুর্ঘটনারোধে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে স্পিড ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে আপাতত এই ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পরবর্তীতে এটি কার্যকরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইমতিয়াজ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান পাইলট প্রকল্প হিসেবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে এই স্পিড ক্যামেরা বসিয়েছে। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো এই স্পিড ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আপাতত পাইলট প্রকল্প হিসেবে পতেঙ্গাপ্রান্তে একটি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোন গাড়ি ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চললে ক্যামেরায় ওই গাড়ির ছবি উঠবে এবং অটো জরিমানা হবে। জরিমানা পরিশোধের জন্য একটি সময় বেঁধে দেয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জরিমানা আদায় না করলে মামলার ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমেও এই জরিমানা আদায়ের সুযোগ থাকবে।