আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থ অপারেটর-শিপিং এজেন্ট দ্বন্দ্ব, নিরসনের চেষ্টা কর্তৃপক্ষের

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থ অপারেটর ও শিপিং এজেন্টদের মধ্যে জটিলতা ও দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।জাহাজের অনবোর্ড অপারেশন নিয়ে এমন অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে জাহাজের পণ্য হ্যান্ডলিং কাজ ধীরগতি করা ও কিছু ডকুমেন্টেশন কাজ বন্ধ করার অভিযোগ তুলেছে শিপিং এজেন্টরা। তবে উভয় পক্ষকে নিয়ে বন্দরের মধ্যস্থতায় সমাধানের চেষ্টা চলমান রয়েছে।

 

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জিসিবি-৯ ও জিসিবি-১০ বার্থে থাকা দুই জাহাজে চলমান কাজের বিভিন্ন অভিযোগ তুলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন। প্রতিবছর জাহাজের অনবোর্ড অপারেশন বিলে শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধির সময় আসলে এমন জটিলতা দেখা দিলেও এবারের দ্বন্দ্ব শুরু হয় গত অক্টোবরে বার্থ অপারেটরের পক্ষ থেকে বন্দরকে এক চিঠি দেওয়ার পর থেকে

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনাল ও জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামার কাজ করে বন্দরের সাথে ৫ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ বার্থ অপারেটরস ও শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটররা। তবে চুক্তির পরেও বর্তমানে বার্থ অপারেটর সেবার ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতের ব্যয় বৃদ্ধির ফলে চুক্তি সংশোধন করে ৫৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির দাবি তোলে বন্দরে নিয়োজিত বার্থ অপারেটররা।
এদিকে জাহাজের অনবোর্ড অপারেশন নিয়ে বার্থ অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা বলছে, জাহাজে কাজ বন্ধ নেই এবং জাহাজ ছাড়ার নির্দিষ্ট সময়েই জাহাজ ছেড়ে যাবে। তার আগে অভিযোগ করা ভিত্তিহীন। বিভিন্ন ডকুমেন্টশনের যে অতিরিক্ত কাজ বার্থ অপারেটররা করে সেটি চুক্তির বাইরে। সেটি তাদের কাজ নয়।

গত বছরের ২৪ অক্টোবর বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছিল বার্থ অপারেটরস, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস এন্ড টার্মিনাল অপারেটরস ওনার্স এসোসিয়েশন। ওই সময় আগাম জানানো হয়েছিল, সেবা চার্জ বৃদ্ধি করা না হলে চুক্তির বাইরে বার্থ অপারেটররা শিপিং এজেন্টদের যেসব অতিরিক্ত কাজ তারা করে দেন সে সব আর চলমান রাখা সম্ভব হবে না।

এদিকে জাহাজের বার্থ অপারেটরদের জাহাজে অন বোর্ড অপারেশন বিল পরিশোধ করে শিপিং এজেন্টরা। তারা উভয় পক্ষকে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) গত বছরের ১২ নভেম্বর এক সভায় বসেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বার্থ অপারেটরকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে অনবোর্ড অপারেশন হ্যান্ডলিং রেট বৃদ্ধির পূর্ণাঙ্গ যৌক্তিকতা তুলে ধরে লিখিত প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়।
সেই প্রস্তাবনা বন্দর কর্তৃপক্ষ শিপিং এজেন্টদের কাছে পাঠায় এবং বার্থ অপারেটরদের যৌক্তিকতার ওপর শিপিং এজেন্টদের মতামত লিখিত আকারে দিতে বলা হয়। উভয় পক্ষের লিখিত মতামত নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আবার সভা হওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেই সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। তার আগেই দুই পক্ষ একে অপরকে অভিযোগ করছেন।

 

বার্থ অপারেটরদের পক্ষ থেকে বন্দরকে দেওয়া চিঠিতে খরচের যে বিবরণী উল্লেখ করা হয় তাতে দেখা যায় প্রতি বক্স কনটেইনারে বার্থ অপারেটরদের ৩৫৩ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে শিপিং এজেন্টদের পক্ষ থেকে পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলা হচ্ছে প্রতি কনটেইনারে বার্থ অপারেটরেরা ৬৬২ টাকা লাভ করে।এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টির সমাধান করতে জরুরি সভা চান উভয় পক্ষ।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রামে স্কুল ও দোকানে আগুন

চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড থানাধীন কলসি দিঘির পাড় উত্তর রেল গেট এলাকায় একটি কেজি স্কুল ও পাশের দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে হযরত শাহ আলী কেজি স্কুল ও দোকানে আগুন লাগে।

সিইপিজেড ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহাদাত হোসেন জানান, ভোরে খবর পেয়ে সোয়া ৬টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। প্রায় ৪০ মিনিটের চেষ্টায় সকাল পৌনে ৭ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। তবে দ্রুত পদক্ষেপে প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তা জানা যায়নি।

মশা নিধনে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহার শুরু চসিকের।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রথমবারের মতো মশা নিয়ন্ত্রণে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু করেছে। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্দেশক্রমে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মো. আশরাফুল আমিন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ শরফুল ইসলাম মাহি, কীটতত্ত্ববিদ রাশেদ চৌধুরী এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মশা নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর আগে গত ২৬ মার্চ নগরীর ১৭ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ডের সৈয়দ শাহ রোডের সামনের খালে পরীক্ষামূলকভাবে বিটিআই লার্ভিসাইড প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে আজ থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিটিআই প্রয়োগ শুরু করল চসিক।

চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ফগিং, লার্ভিসাইড ছিটানো, নালা–নর্দমা পরিষ্কার, আবর্জনা অপসারণ এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের আমেরিকান প্রযুক্তির বিটিআই ব্যবহারে মশার লার্ভা ধ্বংসে আরও কার্যকর ফল পাওয়া যাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

বিটিআই হলো একটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ব্যাকটেরিয়াভিত্তিক লার্ভিসাইড, যা বিশেষভাবে মশা, ব্ল্যাক ফ্লাই ও ফাঙ্গাস গ্ন্যাটের লার্ভা দমনে ব্যবহৃত হয়। এটি পানিতে প্রয়োগ করার পর লার্ভা খাদ্যের সঙ্গে বিটিআই গ্রহণ করে এবং ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদিত ক্রিস্টাল প্রোটিন টক্সিন লার্ভার পরিপাকতন্ত্রে কার্যকর হয়ে তাদের দ্রুত নিধন ঘটায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিটিআই মানুষের শরীর, গৃহপালিত প্রাণী, মাছসহ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর নয়; এমনকি উদ্ভিদ ও জলজ বাস্তুতন্ত্রেও কোনো বিষাক্ত প্রভাব ফেলে না। বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়ার মতো বাহক–বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে এটি একটি নিরাপদ ও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত সমাধান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ