আজঃ বুধবার ১২ মার্চ, ২০২৫

পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ উপদেষ্টার কঠোর বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কঠোর বার্তা দিয়েছেন। রোববার সকালে নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে চসিক আয়োজিত পলিথিনবিরোধী এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন বার্তা দেন।

এ সময় পাহাড় কাটা বন্ধে ‘টম অ্যান্ড জেরি’ খেলা আর চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, আমি আসব-যাব, পাহাড় কাটা বন্ধ হবে। কাল আবারও পাহাড় কাটা হবে। ওরা রাতেও পাহাড় কাটে। রাতের বেলা পাহাড় পাহারা দিতে হবে। এটা সবার দায়িত্ব। এটা সরকারের আইন।

রিজওয়ানা বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা অফিস কোনো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী করতে পারে না। তাকে সবসময় প্রজাতন্ত্রের সেবায় থাকতে হবে। আমরা একটা তালিকা নিয়েছি। তালিকায় মালিকদের নাম দেয়ার কথা বললেও তারা দেননাই। দুটা মালিককে গ্রেফতার করেন, পাহাড় কাটা বন্ধ হবে। আপনি গাছ কাটলে গাছ লাগাতে পারবেন, পাহাড় কেটে পাহাড় সৃষ্টি করার জাদু নেই।

যদি জাদু না থাকে তাহলে পাহাড় কাটতে দেওয়া যাবে না।এর আগে সভার শুরুতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সিদ্ধার্থ শংকর কুন্ডু জায়ান্ট স্ক্রিনে ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ ও প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধ’ শীর্ষক চিত্র উপস্থাপন করেন।

পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, পলিথিন শপিংব্যাগের বিরোধিতা আমাদের সময়ে শুরু হয়নি। এটি ২০০২ সালে নিষিদ্ধ হয়েছে। আজ ২০২৫ সালে এসে এটি বাস্তবায়নের কথা আমরা বলছি। কতটা দুর্ভাগ্য আমাদের। জনগণের স্বার্থেই পলিথিন বন্ধ করা হয়েছিল। আমার মনে আছে, ২০০৪ থেক ২০০৬ সালে লাগাতার অভিযান করে পলিথিনের ব্যবহার প্রায় কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন কেউ বিকল্পের কথা তোলেনি।

বিকল্প আপনার-আমার সবারই আছে। এই ধোয়াগুলো তোলা হয় প্লাস্টিক-পলিথিন ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। আপনার দাদা পর্যন্ত যাব কেন? আপনার বাবা কি নিয়ে বাজারে যেতো? চটের ব্যাগ নিয়ে যেতো।

পলিথিনের অপকারিতা তুলে ধরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন বাজারে গেলে গাজরের জন্য, শসার জন্য, ফুলকপির জন্য, কাঁচা মরিচের জন্য একটা করে পলিথিন। আর মাছ-মাংসের জন্য পলিথিন তো আছেই। এটা আসলে সরকার আইন করেছে বলে আপনাকে মানতে হবে না। আপনাকে এজন্য মানতে হবে—আপনার ভবিষ্যৎ এবং সরকারের জন্য খারাপ। আমাদের দূষিত বাতাস ইনহেইল করেও আপনার বাচ্চা অসুস্থ হচ্ছে।

পলিথিন ব্যাগে খাবার রেখে খাওয়া চরম অনিরাপদ। প্লাস্টিকের গ্লাসে গরম চা-কফি দেওয়া হলে মাইক্রোপ্লাস্টিক লিকেজ হয়ে সিস্টেমে ঢুকে যাচ্ছে। এটা কেন আপনার সন্তানকে খাওয়াবেন? এটা আপনার মনে রাখতে হবে, এটা খারাপ জিনিস এবং এটির বিকল্প আছে।

পলিথিন সস্তা নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে সস্তার কথা বলেন। পলিথিন নাকি সস্তা। এটা কেমন করে সস্তা হলো? আপনি পলিথিনের জন্য আলাদা টাকা দিচ্ছেন না। পলিথিন যারা বানাচ্ছে তারা কি বিদ্যুৎ ছাড়া বানাচ্ছে? তারা কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করে আনছে। আমরা যখন পলিথিন বন্ধের কাজ শুরু করলাম তখন শ্রমিক পুনর্বাসনের ধোঁয়া তুললো। প্লাস্টিক যে তাপমাত্রায় পোড়ানোর কথা তার চেয়ে অনেক কম তাপমাত্রায় পুড়িয়ে তারা শপিংব্যাগ তৈরি করছে। এতে শ্রমিকদের ডায়োক্সিনের মুখোমুখি করছে, ফলে ক্যান্সার হচ্ছে। তখন প্লাস্টিক উৎপাদনকারীরা বলে না কেন আমার শ্রমিককে ক্যান্সার হতে দেব না?
কারখানা বন্ধ হলে মালিকরা ক্ষতিপূরণ দেবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, গার্মেন্টস বন্ধ হলে মালিক শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়। তাহলে পলিথিন কারখানা বন্ধ হলে আমরা কেন ক্ষতিপূরণ দেব। ক্ষতিপূরণ মালিক দেবে। কারণ সে তার শ্রমিককে অনিরাপদ কর্মস্থলে কাজ করিয়েছে।‘যে পাটের দাম ছিল ২৮ টাকা; যেই বললাম পলিথিন বন্ধ পাট আসবে অমনি হয়ে গেল ৪০ টাকা।

এটাতো বাংলাদেশ। আমাদের দেশটাকে তো আমরা চিনি। জিনিসগুলো প্রশ্রয় দিলে কিন্তু পলিথিন ব্যবসায়ীরাই সামনে আসবে। তাই এগুলোকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। পলিথিন ব্যাগ পুনর্ব্যবহার করা যায় না। একটা চটের ব্যাগ অনেকবার ব্যবহার করা হয়।

পলিথিন বন্ধে বাধা আসলে মুখোমুখি হতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি সকল বাহিনীর সাথে মিটিং করেছি। আমরা যখন পলিথিন কারখানা বন্ধ করতে যাব বাধা আসবে। সেই বাধা ফেইস করে আমরা বন্ধ করবো। গত সপ্তাহে আমরা কামরাঙ্গিরচরে বন্ধ করেছি। ক্রমান্বয়ে আমরা সব জায়গায় বন্ধ করবো। আপনারা কেউ পলিথিনের শপিং ব্যাগ নেবেন না।

শব্দদূষণ রোধে চট্টগ্রামে ক্যাম্পেইন করা হবে জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, হর্নের বিরুদ্ধে আমরা শিগগিরই একটা ক্যাম্পেইন শুরু করে দেব। আজ এখানে অন্তত ১২০ জন আছেন। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ গাড়ি অথবা উবার আছে। যার গাড়িতে উঠবেন ড্রাইভারকে বলবেন হর্ন বাজাবেন না। ড্রাইভার তখন বলবে, হর্ন বাজানো ছাড়া গাড়ি এ দেশে চালানো সম্ভব না। গতিটা একটু কম রাখলে হর্নও বাজাতে হবে না, দুর্ঘটনাও কমবে। অনেক রাস্তা আছে যেখানে রিকশা চলে না, সেখানে হর্ন কেন বাজাতে হবে? আপনি হর্ন বাজানো বন্ধ করলে শব্দদূষণ বন্ধ হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা এবং পলিথিন-প্লাস্টিক—এগুলো একটার সাথে একটা সম্পৃক্ত। আমাদেরকে পলিথিন-প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এটাকে আইন করে বন্ধ করতে হবে। যেভাবে ২০০৫ সালে করা হয়েছিল। ঠিক একইভাবে প্রতিটি কারখানা এবং বিপণন স্থানগুলোতে আমরা আইন প্রয়োগ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে একটা সুফল আমরা পেতে পারি।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র বলেন, প্লাস্টিকের বদলে চাল-মাছ দিচ্ছে তারা। এই কনসেপ্টে আমি তাদের প্লাস্টিকের সাথে পলিথিনও যুক্ত করতে বলেছি। আরও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে এমন। তাদের জন্য চসিকের যে মাঠ আছে সেগুলোতে পণ্য রাখার সুযোগ করে দেব। মূল জায়গা হচ্ছে পরিকল্পনা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, বলেন, চট্টগ্রাম নগরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য করপোরেশন সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রতিপালন করছি। সাম্প্রতিক সময়ে নির্দেশনা অনুযায়ী, চসিকে বোতলজাত পানি পুরোপুরি বন্ধ করেছি। আমরা লিফলেট বিতরণসহ নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম করছি।

চট্টগ্রামে ইউনিলিভার, ইপসা এবং সিটি করপোরেশন—আমরা একটি সমঝোতা স্বাক্ষর করেছি। এর মাধ্যমে আমরা অফ প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করছি। পাশাপাশি মেয়র মহোদয়ের নির্দেশনায় চসিকের ৭৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীদের সচেতন করার জন্য আমরা প্রশিক্ষণেরও উদ্যোগ নিয়েছি।

 

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

জীবন সংগ্রামের অবিচল যোদ্ধা: ৮০ বছরের বৃদ্ধ আবুল হাসেম এখনো চালাচ্ছেন রিকশা

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার চৌদ্দগ্রাম বাজারের এক চিরপরিচিত দৃশ্য—৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ রিকশাচালক আবুল হাসেম। প্রচণ্ড রোদ, শীত, বৃষ্টি—কোনো কিছুই তাকে থামাতে পারেনি। রমজানের রোজা রেখে, মাথার ওপর প্রখর সূর্য, তারপরও রিকশা চালিয়ে জীবিকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

পৌরসভার গোমারবাড়ির বাসিন্দা আবুল হাসেম ছয় সন্তানের জনক। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আজ তিনি ও তার স্ত্রী একা। চার মেয়ে বিয়ে করে স্বামীর সংসারে, আর দুই ছেলে—আরচ মিয়া ও আবু তাহের—নিজেদের পরিবার নিয়ে আলাদা থাকেন। অথচ বৃদ্ধ মা-বাবার খোঁজ নেওয়ার সময় তাদের নেই।

কেন এত বৃদ্ধ বয়সেও রিকশা চালাচ্ছেন? জানতে চাইলে আবুল হাসেম বলেন,
“আমার আর আমার স্ত্রীর খাবার, ওষুধসহ সব খরচ আমাকেই চালাতে হয়। প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়, যা দিয়ে আমাদের সংসার মোটামুটি চলে। সন্তানেরা কেউ খোঁজ নেয় না। তাই বাধ্য হয়েই রিকশা চালাচ্ছি। যতদিন বেঁচে থাকি, চাই না কারও কাছে হাত পাততে বা ভিক্ষা করে খেতে। আল্লাহর কাছে শুধু এই দোয়া করি, যেন নিজের পরিশ্রমেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চলতে পারি।”

একসময় সংসার ও সন্তানদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করা এই মানুষটিকে আজ তার নিজের রোজগারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। সমাজের প্রতিটি মানুষেরই উচিত তার মতো প্রবীণদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, তাদের দেখভালের দায়িত্ব নেওয়া। কারণ, আজকের তরুণরাও একদিন বৃদ্ধ হবে, আর তখন সমাজ যেমন ব্যবহার করবে, সেটাই তাদের প্রাপ্য হয়ে উঠবে।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে হাজারো সংস্কারে লাভ নেই ।

দেশের গণতন্ত্রের অর্ডার ফিরিয়ে আনতে গণমাধ্যমকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

গণমাধ্যমের গুরুত্বের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তারা গত ১৬ বছর অনেক কষ্টের মধ্যে থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। একটি মুক্ত বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করে আমরা গণতান্ত্রিক ঐক্যের পথে চলছি। এ সময় আগামী দিনের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই গণমাধ্যমের সকলকে সাবধানে থাকতে হবে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জণ্য গণমাধ্যমকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিকেলে নগরীর চট্টগ্রাম ক্লাবে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) এর দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের আহবায়ক ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুইয়া, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শামীম, বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী।

আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাস্তায় থেকে জনগণের সামনে সঠিক চিত্র তুলে ধরেছে। তাই আগামী দিনগুলোতে গণতন্ত্রের যে সংগ্রাম চলছে, সেটিকে সফল করার জন্য, জনগণের মালিকানা, নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাংবাদিকদের সবার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে আগামীর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো, গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনবো, মানুষের রাজনৈতিক সাংবিধানিক অর্ডার ফিরিয়ে আনবো। দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ পরষ্পর সম্মানবোধ রেখে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি পরিবর্তনে একযোগে কাজ করতে হবে।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে অন্য সংস্কার করে কোনো লাভ নেই বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে না পারি তাহলে হাজারো সংস্কার করে কোনো লাভ হবে না। তাই রাজনীতিতের সহনশীলতা থাকতে হবে। ভিন্ন মত থাকলেও অপরপক্ষকে সম্মান জানাতে হবে। এটাই হবে বিএনপির রাজনীতি, তারেক রহমানের রাজনীতি। এ রাজনীতি নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।

দেশের মানুষ নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মূল স্তম্ভ হচ্ছে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনা। গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার একমাত্র পথ। আর তার বাহক হচ্ছে, দেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি, নির্বাচন। এর অপেক্ষায় রয়েছে দেশের মানুষ। একেকটি দিন অতিবাহিত হচ্ছে অগণতান্ত্রিক পরিবেশে। যেখানে জনগণের প্রতিনিধি দেশ পরিচালনা করছেন, যেখানে জনগণের দৈনন্দিন সুখ দুখের কথা শোনা, সেই দায়িত্বপূর্ণ জনগণের কাছে জবাবদিহি এ রকম একটি সরকারের অপেক্ষায় সবাই রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের যুবক সমাজ যারা গত তিন নির্বাচনে নিজেদের ভোট প্রয়োগ করতে পারে নাই তাদের ভোট প্রয়োগের অপেক্ষা, নির্বাচিত প্রতিনিধির অপেক্ষায়, নির্বাচিত সরকারে অপেক্ষায় এবং দায়বদ্ধ সরকারের প্রতিক্ষায় জনগণ আছে।

নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য এবং গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। যাদের জনসমর্থন নেই, যারা জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না তারা বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়ে জনগণের মনে সংশয় সৃষ্টি করছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশের জনগণ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। জনগণ এখন গণতন্ত্র, সুশাসন ও মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। তাই জাতীয় নির্বাচনই হবে জনগণের প্রতিনিধি নির্ধারণের একমাত্র পথ। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে দেশনায়ক তারেক রহমানের ৩১ দফা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে সত্য তুলে ধরা যায় না। আর সত্য লিখা না গেলে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকলে পাঠক বা দর্শক প্রত্যাখ্যান করে।

আবদুল হাই শিকদার বলেন, সাংবাদিকদের বিবেকের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে। অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা, তথ্য সন্ত্রাস পরিহার করে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে হবে। সঠিক তথ্য জেনে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়, সংবাদ মাধ্যমের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেল। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা।

ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে অনেক সংবাদমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রকাশ করে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা অনেক সময় নিজেদের কাজের যথার্থতা প্রমাণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। গুজব, মিথ্যা তথ্যে সমাজ তথা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বাড়াচ্ছে। তাই সাংবাদিকদের আরো সচেতন হতে হবে।

কাদের গণি চৌধুরী বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হলেও, এটি এখন বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সামনে যে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ পেশার স্বাধীনতা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনি ও ক্ষমতামুখী সাংবাদিকতা সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বড্ড অন্তরায় সৃষ্টি করছে। তাই সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, প্রেস ক্লাবের সদস্য গোলাম মওলা মুরাদ ও মিয়া মোহাম্মদ আরিফের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইফতার মাহফিল আয়োজক কমিটির আহবায়ক শামসুল হক হায়দরী, বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাব অন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ, প্রেস ক্লাব অন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য মুস্তফা নঈম।

উপস্থিত ছিলেন-বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ হাসিব আজিজ, সিডিএ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার নুরুল করিম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ইদ্রিস মিয়া, সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম আহবায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম হোসাইনী, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, বিএনপি নেতা ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, ইদ্রিস আলী, কামরুল ইসলাম, সাঈদ আল নোমান, বিএফইউজে সহ সভাপতি খাইরুল বশর, বিজিএমইএ প্রথম সহ সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, জেলা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির আহবায়ক মকবুল কাদের চৌধুরী, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. সরওয়ার আলম, ড্যাব চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালী, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি প্রকৌশলী জানে আলম সেলিম, প্রকৌশলী মো. ওসমান, জিয়া পরিষদ চট্টগ্রাম এর সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান মোহাম্মমদ জসিম প্রমুখ।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ