
পঞ্চাশের দশকে হযরত গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর কুঞ্জে একটি পুষ্প প্রস্ফুটিত হয়। বলছি সৈয়দ মোহাম্মদ শাহাজাহান চৌধুরী মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর কথা। জন্মের প্রারম্ভেই নানাজান সুলতানুল আউলিয়া অছিয়ে গাউছুল আজম সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী (ক.) তাঁকে কোলে নিয়ে ভবিষ্যৎ আধ্যাত্মিক অবস্থান ইঙ্গিত করে মন্তব্য করেন। নাবগত শাহজাদার জন্মলগ্নের খুশির উল্লাসে হয়তো সে কথা অনেকের লক্ষ্যণীয় কিংবা ভাবার মতো ছিলো না।
প্রাইমারি স্কুল শেষ করে শাহনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ১৯৬৭ তে নানুপুর আবু সোবহান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। খুব সম্ভবত অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালীন পিতা আবদুল মজিদ চৌধুরী (র.) ইন্তেকাল করেছিলেন। তারপর দৌহিত্রকে নানাজান মাইজভাণ্ডার শরীফে নিয়ে যান আর সেখানে থেকেই ম্যাট্রিকুলেশনের পড়াশোনা ও পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। নানাজানের ভক্ত, বাড়বকুণ্ডস্থ তৎকালীন ডিডিটি ফ্যাক্টরির ম্যানেজার জনাব হেদায়েত সাহেব একদা দরবারে পাকে জেয়ারত কার্য সম্পন্ন করে পীরের সাথে কথা বলার সময় প্রসঙ্গত তাঁর ব্যাপার উত্থাপিত হয়। উক্ত ফ্যাক্টরিতে চাকরির জন্য হেদায়েত সাহেব তাঁকে সঙ্গে দিয়ে দিতে বলেন। সাথে সাথে অছিয়ে গাউছুল আজম শাহনগর মানুষ পাঠিয়ে দৌহিত্রকে দরবারে

আনান। হেদায়েত সাহেবের সঙ্গে তাঁকে ডিডিটি ফ্যাক্টরিতে কার্যে নিয়োগের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেন। লেবার অফিসার হিসেবে তিনি সেখানে নিয়োগকৃত হন। প্রথমত অন্যান্য সিনিয়র অফিসারদের সাথে থাকার ব্যবস্থা করলেও পরবর্তীতে মুর্শিদের পরিবার তথা বংশধর হিসেবে হেদায়েত সাহেব তাঁর জন্য আলাদা একটি থাকার স্থান ব্যবস্থা করেন।
ফ্যাক্টরিতে অফিসার হিসেবে বেশ স্বাভাবিকভাবেই কাজকর্ম করে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একদিন খবর পাঠানো হলো তিনি রাতে ঘুমান না, বেশিরভাগ সময়ই জজবা অবস্থায় (অধ্যাত্ম ভাবে উত্তপ্ত) থাকেন। এরূপ স্বাভাবিক প্রকৃতি পরিবর্তিত হওয়ায় হেদায়েত সাহেব তাঁকে দরবার শরীফ নিয়ে আসেন। এখানেই মূলত তাঁর অবস্থা পরিবর্তনের সূত্রপাত। এরপর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে জীবনাচরণ। আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে কদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর পুনরায় চাকরিতে যোগদান করে কদিন বাদে নিজে হেঁটেই বাড়বকুণ্ড থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর আবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে ডাক্তার তাঁকে চাকরিতে প্রেরণ করতে বারণ করে দেন। বহু চিকিৎসা তদবির করেও কোনো কূল কিনারা হলো না। অলক্ষ্যতে ছিলো নানাজান হয়ে হযরত গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারীর (ক.) পবিত্র বেলায়তের সম্পর্ক। যার ফলশ্রুতি ঐহিক কোনো হিসাব-নিকাশে তাঁর পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্যের অর্থ

খুঁজে না পাওয়া। আধ্যাত্মিক সম্পর্কটি প্রথমাবস্থায় নানাজান হতে প্রত্যয়ন এবং পরবর্তীতে তা প্রকাশ-বিকাশ, সংস্রব হয় বড় মামাজানের মাধ্যমে। বড় মামাজান বিশ্বঅলি শাহানশাহ হযরত শাহসূফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর অধ্যাত্ম নজরে ছিলেন জ্যৈষ্ঠ বোনপুত্র এবং তিনিই তাঁর মুর্শিদ। বাড়বকুণ্ড ফেরত হওয়ার পর থেকে শুরু হয় নতুন অধ্যায়। ইবাদত-রেয়াজতে কঠোর পরিশ্রম সাধনায় গ্রহণ করেন উচ্চতর ঐশ অবস্থান। লব্ধ করেন অসীম শক্তি। সেসবের বর্ণনা সংক্ষিপ্ত কলেবরে তুলে ধরা সম্ভব নয়।
তাঁর সংস্পর্শে অসংখ্য ঐশী অনুগ্রহ প্রত্যাশী, ইচ্ছা পূরণ অভিলাষী, কঠিন রোগে জর্জরিত ইত্যাদি নানা প্রকারের মানুষ ভিড় জমে থাকতো। দেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদসহ খ্যাতনামা বহু ব্যক্তিবর্গ তাঁর অনুগ্রহ প্রত্যাশী ছিলেন। দূর হতে করা মন্তব্য, মনে উদিত
ভাবনার কথা কিংবা কাঙ্খিত অভিলাষের ব্যাপারে তিনি বলে দিতেন তাঁরা ব্যক্ত করার আগেই। মনোবাঞ্ছা বলার প্রয়োজন হতো না, উপস্থিত হওয়া মাত্রই তিনি সে ব্যাপার সমাধান করে দিতেন। এ ঘটনা ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক। বহু জটিল কঠিন ডাক্তার ফেরত রোগীকে ঐশী অনুগ্রহ দিয়ে সুস্থ করে দিয়েছিলেন। তাঁর দ্বারা বিদ্যার্থীদের উদ্দিষ্ট লাভ, ব্যবসা বাণিজ্যে বরকত প্রাপ্তি কিংবা চাকরি বাকরিতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন ইত্যাদি নানা প্রকারের অলৌকিক ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে প্রত্যহ। সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী আল্লাহর এ মহান অলির সুদৃষ্টিতে মহান আল্লাহ অগণিত জনকে সৌভাগ্যবান করেছেন।
মাইজভাণ্ডারী অধ্যাত্ম ধারা খিজিরী প্রকৃতির। সসর্বসাধারণের বোধগম্য নয়। বেলায়তে খিজিরী অবস্থার অত্যুজ্জ্বল প্রদীপ ছিলেন শাহানশাহ হযরত শাহসূফি সৈয়দ মোহাম্মদ শাহাজাহান চৌধুরী মাইজভাণ্ডারী (ক.); যার প্রতিটি কর্ম, প্রতিটি মুহূর্তের ক্রিয়াকলাপ ছিলো দুর্বোধ্য ও রহস্যঘেরা- অর্থবাহী। প্রতিনিয়ত অসংখ্য আদম সন্তান তাঁর পবিত্র রওজা হতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়ে আল্লাহর রহমতের অধিকারী হচ্ছে।
প্রবন্ধকার- হাবিবুল বাশার