
ঐতিহ্যবাহী বাওয়া স্কুলের মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা নিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। রোববার প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে প্রথম সভায় অংশ নেন তিনি। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, “বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা চট্টগ্রামে মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয়। এই স্কুলে শিক্ষাদানের সুযোগ পাওয়া
শিক্ষকদের জন্য যেমন গর্বের, তেমনি এখানে সন্তানদের পড়ানোর সুযোগ পাওয়াও অভিভাবকদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। ঐতিহ্যবাহী বাওয়া স্কুলের মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নিব। ”

তিনি বলেন, “চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এই স্কুলটির একটি বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। এটির ঐতিহ্য, গৌরব এবং শিক্ষার মান অক্ষুণ্ণ রাখতে আমরা কাজ করব। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের জন্য আরও উন্নত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ, মানসম্মত শিক্ষা এবং উন্নত জীবনধারার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করা হবে।”
ডা. শাহাদাত হোসেন স্কুলের সামনের রাস্তায় যানজট এবং অপ্রতুল পরিকল্পনার বিষয়ে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “স্কুলের সামনের রাস্তায় যানজট ও বিশৃঙ্খলা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি এ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এটি কেবল একটি স্কুলের সমস্যা নয়, চট্টগ্রাম নগরের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনেই একই সমস্যা বিদ্যমান। এই বিষয়গুলো সমাধানের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। আমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে স্কুলগুলোর সামনের রাস্তা, ফুটপাত এবং যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য কাজ করছি।”

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যার ওপর আলোকপাত করে মেয়র বলেন, “জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম বড় সমস্যা। এই সমস্যা দীর্ঘদিনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামের ৭১টি খালের মধ্যে বর্তমানে ৫৭টির অস্তিত্ব রয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৬টি খালে কাজ চলছে। বাকি ২১টি খালের উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য বড় অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছি। চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে হলে এই খালগুলোও খনন করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে অসংগঠিত পরিকল্পনার কারণে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এখন প্রায় ১৪০০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে বাজেট। কিন্তু তাতেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত হয়নি। জলাবদ্ধতা নিরসনে আরও সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। পরিকল্পনাবিদদের সঙ্গে আলোচনা এবং বাস্তবায়নকারীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করাই এই সমস্যার সমাধান এনে দিতে পারে।”
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন, সবুজ এবং বাসযোগ্য নগরে পরিণত করার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি ইতোমধ্যে ৪০ হাজারের বেশি ডাস্টবিন বিতরণ করেছি এবং আরও পরিকল্পনা আছে প্রতিটি স্কুল ও দোকানের সামনে এগুলো স্থাপন করার। এছাড়া, জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ পলিথিন এবং প্লাস্টিক বর্জ্য। এগুলো অপসারণের জন্য আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছি।”
তিনি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের গুরুত্ব নিয়ে বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য আজকের দিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি স্কুলে একজন সাইকোলজিস্ট থাকা প্রয়োজন। অনেক ছাত্র-ছাত্রী তাদের পারিবারিক বা সামাজিক সমস্যার কারণে সঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারে না। সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। প্রতিটি স্কুলে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ প্রয়োজন, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান বাড়াতে সহায়তা করবে।”
শিক্ষার্থীদের পুষ্টির বিষয়ে মেয়র বলেন, “সকালের নাস্তা শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়ার আগে এক গ¬াস দুধ, একটি ডিম এবং একটি কলা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এটি তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি এবং ভালো ফলাফল অর্জনে সহায়তা করবে।”
মেয়র তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “আমি মেয়র হিসেবে নই, বরং একজন সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগর গড়ে তোলা আমাদের সবার দায়িত্ব। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তবে এগুলো সফল করতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।”
শেষে তিনি বলেন, “আজকে আমি মেয়র হিসেবে আছি, কাল থাকব না। কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই নগরের দায়িত্ব নিবে। তাদের জন্য একটি সুন্দর নগর উপহার দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমি আশাবাদী, চট্টগ্রামকে আমরা একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ এবং উন্নত নগরীতে রূপান্তরিত করতে পারব।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরিফ উল হাসান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধি মো. ইউসুফ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক প্রতিনিধি হোসনে আরা বেগম, সহকারী প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম, রাজিয়া বেগমসহ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।