
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন,নারীদের সুস্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাবলিক প্লেসে পর্যাপ্ত ও পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের ব্যবস্থা করা জরুরি। তিনি বলেন,আমাদের শহরগুলোতে নারীদের জন্য নিরাপদ ও স্বা¯’্যসম্মত পাবলিক টয়লেটের অভাব রয়েছে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ভোগান্তির অন্যতম কারণ।
পথচারী ও নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে স্যানিটেশান ব্যবস্থার বর্তমান চ্যালেঞ্জ সমুহ এবং যথাশীঘ্র করণীয় বিষয়ে মত বিনিময় সভা এবং “চলতি পথে টয়লেট হোক শান্তির জায়গা” ক্যাস্পইনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র ডা. শাহাদাত এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, নারীদের স্বাস্থ্য ও সম্মান রক্ষায় শহরের পার্ক, বাজার, বাসস্ট্যান্ড, ট্রেন স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও নারীদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের সংকট প্রকট। নারীরা কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাদের যাতায়াত ও জনসমাগমস্থলে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।
“টয়লেট সুবিধার অভাবে নারীরা নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারেন। দীর্ঘ সময় টয়লেট ব্যবহার না করলে মূত্রাশয়ে সংক্রমণ, কিডনি সমস্যা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। এছাড়া, স্কুল-কলেজের ছাত্রীদেরও একই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, যা তাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। নারীরা অনেক সময় সঠিক টয়লেট সুবিধার অভাবে পানি পান কমিয়ে দেন, যা ডিহাইড্রেশনসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া, পর্যাপ্ত ও পরিচ্ছন্ন টয়লেট না থাকায় তারা রাস্তার পাশে বা অনিরাপদ স্থানে যেতে বাধ্য হন, যা তাদের জন্য নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করে। সী-বিচ এলাকায় ইতোমধ্যে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শহরের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় আরও আধুনিক ও নারীবান্ধব পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা টয়লেট নিশ্চিত করতে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করছি। পাশাপাশি, এসব টয়লেট পরিচ্ছন্ন রাখা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাও আমাদের অগ্রাধিকার।
অনুষ্ঠানে ওয়াটারএইডের প্রকল্প সমন্বয়ক কে,এ, আমিন পাবলিক টয়লেটের উপর সার্বিক কার্যক্রম উপস্থাপন করে বলেন, ওয়াটারএইডের অর্থায়নে বর্তমানে ৫৪টি পাবলিক টয়লেট সারা বাংলাদেশে আছে । আমরা পাবলিক টয়লেট শব্দটি টি আস্তে আস্তে ব্যান্ডিং করছি যার নাম হবে পথের দাবী টয়লেট। আধৃুনিক ও দৃষ্টিনন্দন প্রতিবন্ধীবান্ধব এই পাবলিক টয়লেটে রয়েছে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা চেম্বার, হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, লকার,মাতৃদুগ্ধ কর্নার, নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরাসহ পেশাদার পরি”ছন্নকর্মী ও মহিলা তত্ত্বাবধায়কের ব্যবস্থা।
উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ওয়াটারএইড ও দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) সহযোগিতায় এবং অর্থায়নে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ মোট ৭টি পাবলিক টয়লেট চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে এবং ১টি পাবলিক টয়লেট চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে উদ্বোধন করা হয়েছিল।সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতায় আমরা কাজ করে যেতে চাই আগামীতে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন আলী জয় ,চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সিনিয়র আর্কিটেক্ট, থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ডিএসকের ওয়াশ ডিরেক্টর এম এ
হাকিম। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন স্কুল শিক্ষক, ছাত্র,ছাত্রী, সহ বিভিন্ন সরকারী,বেসরকারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।অনুষ্ঠানে যৌথভাবে উপস্থাপনা করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পলিসি এ্যাডভোকেসী এক্সপার্ট নুররুন নাহার ও আরেফাতুল জান্নাত প্রকল্প ব্যবস্থাপক দু:স্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকের)।