আজঃ সোমবার ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্ণফুলীর সঙ্গে যুক্ত আটটি খালের মুখে ৫৫ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত আটটি খালের প্রবেশমুখ খনন করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষের ড্রেজিংয়ের আওতায় থাকা আটটি খাল হচ্ছে- রাজাখালী খাল, চাক্তাই খাল, ফিশারিঘাট, জোবায়ের খাল, লইট্টা খাল, বিএফটি খাল, অভয়মিত্র খাল এবং পিকে সেন খাল। ইতোমধ্যে এসব খালের মুখে ৫৫ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে বলে বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, আমরা বন্দরের পক্ষ থেকে কর্ণফুলী নদীর মূল চ্যানেলে ড্রেজিং এবং নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোর প্রবেশমুখের বর্জ্য অপসারণের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। মাননীয় উপদেষ্টাবৃন্দের মতবিনিময় সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের আলোকে আমরা বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে এ কার্যক্রম আরও জোরদার করেছি। শহরে বিশেষ করে রাজাখালী ও চাক্তাই খালসহ নদীর সঙ্গে যুক্ত খালগুলো, যেগুলো আমাদের বন্দরের জলসীমার মধ্যে পড়েছে, সেগুলোর পানিপ্রবাহ ঠিক রাখার কাজ চলছে।

জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া মেগাপ্রকল্পসহ সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং শুরু করেছেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের চারজন উপদেষ্টা। গত ১৯ জানুয়ারি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক এবং সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চট্টগ্রামে এসে বন্দর, সিটি করপোরেশন, সিডিএ, ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরবর্তীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও চট্টগ্রামে এসে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসেছিলেন।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালে ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং’ নামে ২৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করে। ২০২২ সাল থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। নৌবাহিনী এ প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ফেরানোর পাশাপাশি এবং নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আটটি খালের মুখ খনন করা হচ্ছে এ প্রকল্পের আওতায়।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক আরো জানান, দুটি কাটার সাকশান ড্রেজার, একটি এম্পিবিয়াস ড্রেজার এবং একটি বর্জ্য অপসারণকারী জাহাজ বে ক্লিনার-১ প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত আছে। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার ঘনমিটার মাটি তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের আওতায় ৫৫ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আমরা আশা করছি বর্ষার আগেই খালগুলোর প্রবেশমুখে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক হবে। আমরা আমাদের এ কাজ নিয়মিত চালু রাখবো। তবে সমস্যাটা হচ্ছে খালের ভেতরে, সেখানে তো কাজ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। খালের ভেতরে যদি প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্যের জন্য পানি আটকে যায়, সেক্ষেত্রে প্রবেশমুখ ড্রেজিং করলেও পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক হবে না। এজন্য নগরবাসীকে সচেতন করতে হবে, যাতে কেউ খাল-নালায়, ড্রেনে সরাসরি বর্জ্য নিক্ষেপ না করেন।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ দুটি, সিটি করপোরেশন একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চার প্রকল্পে মোট ব্যয় প্রায় ১৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

দেশ বদলাতে থ্রি জিরো থিওরি আদর্শ মডেল: চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়াউদ্দীন বলেছেন, দেশ বদলাতে তথা পৃথিবী বদলাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর থ্রি জিরো থিওরি একটি আদর্শ মডেল। এ মডেল অনুসরণ করে আমাদের তরুণ সমাজ কাজ করলে দেশে যেমন ক্ষুধা এবং বেকারত্ব দূর হবে, তেমনি মানবজাতি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বেঁচে থাকবে।
কমিশনার রোববার চট্টগ্রামের জেলা তথ্য অফিস

আয়োজনে চট্টগ্রাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অডিটোরিয়ামে ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই সব কথা বলেন।বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আজকের বিশ্বে তরুণদের জন্য সম্ভাবনা ও সুযোগের ক্ষেত্র দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে শুধু চাকরির পিছনে ছুটে সীমাবদ্ধ না থেকে নিজেদের যোগ্যতা, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হতে হবে।

সভপতির বক্তব্যে মোঃ বোরহান উদ্দীন বলেন, যুবক-যুবতীদের নিজেরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার এবং পরিবারের লোকদেরকে ভোট দিতে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে নির্বাচন উৎসব হবে। এই উৎসবে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আশা করে সরকার। এজন্য নির্বাচনী পরিবেশকে অবাধ, সুষ্ঠু ও ভয়হীন করার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

জেলা তথ্য অফিস, চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোঃ বোরহান উদ্দীন সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আবুল বাশার, আঞ্চলিক তথ্য অফিস, চট্টগ্রামের সিনিয়র তথ্য অফিসার বাপ্পী চক্রবর্তী, সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজের অধ্যক্ষ এস এম গিয়াসউদ্দিন বাবর, আব্দুল বারী প্রমূখ বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন । যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণরত প্রায় ১৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী এবং প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ঠাকুরগাঁওয়ে নবাগত পুলিশ সুপারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা

ঠাকুরগাঁওয়ে নবাগত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেনের সাথে স্থানীয় সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৭ ডিসেম্বর রবিবার দুপুর ১২টায় জেলা পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।এসময় পুলিশ সুপার বেলাল হোসেন বলেন, মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের বাকস্বাধীনতা একমাত্র মিডিয়ার মাধ্যমেই রক্ষা করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের সেবা করাই আমার প্রথম কাজ। মাদক সব অপরাধের মূল উৎস। তাই যেকোনো মূল্যে সমাজকে মাদকমুক্ত করতে হবে। এসময় যানজট, মাদকমুক্ত করতে ও বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন পুলিশ সুপার।


এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) খোদাদাদ হোসেন,সহকারী পুলিশ সুপার রাণীশংকৈল সার্কেল স্নেহাশীষ কুমার দাস, ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফর রহমান মিঠু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান তানু সহ জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।উল্লেখ্য,গত ২৯ নভেম্বর বেলাল হোসেন ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ