আজঃ শুক্রবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

রূপগঞ্জে কৃষি জমির টপসয়েল যাচ্ছে অবৈধ ইটভাটা। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মানুষ

মাহাবুবুর রহমান রনি, রূপগঞ্জ(নারায়ণগঞ্জ)প্রতিনিধি:

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাবো, মাসাবো, আতলাপুর, তেতলাবো, বরপা, আওখাবো, কর্ণগোপ, সাওঘাট, গোলাকান্দাইল, বলাইখা, বেলদি, দেবই, কামালকাঠি, চারিতাল্লুক, বিরাবো, কাঞ্চন পৌরসভাসহ আশপাশের এলাকার অবৈধ ইটভাটায় অবাধে তিন ফসলি কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে। এখন তিন ফসলি জমির টপসয়েল বিক্রির হিড়িক পড়েছে। স্থানীয় ভ‚মিদস্যুদের দাপটে অসহায় সাধারণ কৃষক ও স্থানীয় অধিবাসীরা।

এছাড়া মাটিবোঝাই ভারী ডামট্রাক সড়কে চলার কারণে নষ্ট হচ্ছে রাস্তা। ধুলাবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
বিরাবো ইসলামপুর গ্রামের প্রবাসী আহাদ আলীর স্ত্রী আলেয়া আক্তার বলেন, তার স্বামী ও সন্তান সৌদী প্রবাসী। তাদের অনুপস্থিতিতে ভ‚মিদস্যরা দিন-রাত আমাদের বাড়ির পাশের ধান ক্ষেত বেকু দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যে কোন সময় আমার বাড়িটি সৃষ্ট গর্তে পরে বিলিন হয়ে যেতে পারে। আমি তাদের বাঁধা দেওয়ায় সন্ত্রাসীরা আমাকে হুমকি প্রদান করছে। আমরা এখন চরম নিরাপত্তহীনতায় রয়েছি।
দাউদপুরের খৈসাইর গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিন ফসলী জমির মাটি গভীর করে কেটে ইটভাটায় নেওয়ার পর সৃষ্ট গর্তে আমার জমির সবুজ রংয়ের ধানগাছসহ ধসে পড়ছে। এরই মধ্যে ভ‚মিদস্যূরা আমার ধান ক্ষেতের দুই পাশের জমির মাটি বেকু দিয়ে গভীর করে কেটে নিয়ে গেছে। আশপাশের লোকজন কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা, মামলা, ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। কোনো কোনো ভাটার সামনে কয়লার স্ত‚প থাকলেও আড়ালে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার ভেতরে রয়েছে কাঠের স্ত‚প। আশপাশের গাছগুলো বিবর্ণ। মরেও গেছে অনেক গাছ। এক্সকাভেটর দিয়ে কৃষি ও ফসলি জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। কোনো কোনো জমি ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরে মাটি কাটা হচ্ছে। আর ভেঙে পড়ছে আশপাশের জমি। ইটভাটায় মাটি নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ভটভটির দাপটে সড়কগুলোতে দেখা দিচ্ছে খানাখন্দ। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
কোন জমিতে সবুজ ধান গাছ। আবার কোন জমিতে ভরা গমের শীষ। পাশের জমিগুলো ১৫ থেকে ২০ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। আলু, গম ধানসহ ফসলি জমি কিছুই রেহাই পাচ্ছে না ভ‚মিদস্যুদের হাত থেকে। কৃষি জমির টপসয়েল হারিয়ে কৃষকরা এখন বোবা কান্নায় কাঁদছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধিরীর ইসলামপুর গ্রামের পৈত্রিক সম্পত্তিও ভ‚মিদস্যুদের থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

রূপগঞ্জে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শতাধিক অবৈধ ইটভাটা কৃষিজমির টপ সয়েল গিলে ফেলছে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। হুমকির মুখে পড়ছে জনজীবন। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালালেও থামেনি অনিয়ম। অবৈধ ইটভাটার মালিকদের আন্দোলন, সংগ্রাম, সভা, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে থমকে গেছে প্রশাসনের অভিযান।

জনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থাপিত এসব অবৈধ ইটভাটায় কৃষিজমির টপ সয়েল ব্যবহার করায় উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। জনবসতি এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে কেউ ইটভাটা করতে পারবে না। সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না কোনো ইটভাটার মালিক। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রূপগঞ্জবাসী।
ভোলাবো ইউনিয়নের আতলাপুর এলাকার কৃষক করিম মিয়া বলেন, আমার চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করি। কিন্তু এ বছর পাশের জমিতে ভেকু দিয়ে গভীর খনন করে মাটি কেটে নেওয়ায় আমার জমি ভেঙে পড়েছে। তাই ফসলও করতে পারছি না।

বেদলী এলাকার কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ইটভাটায় মাটি কেটে নেওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে কমছে কৃষি জমি। মাটি পরিবহণে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। তৈরি হয়েছে পরিবেশগত ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। গ্রামীণ সড়কগুলো এক বছরও টিকছে না।
কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে। ইট প্রস্তুতের জন্য বিভিন্ন গ্রামের কৃষি জমি থেকে নেওয়া মাটি স্ত‚প করা হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। এসব ইটভাটার কারণে একদিকে ক্ষতি হচ্ছে ফসলি জমির অন্যদিকে মাটিবাহী ট্রলির আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে সড়কের।

ইটভাটার বেশ ক’জন মালিক বলেন, কৃষক জমির মাটি বিক্রি করছেন তাই কিনেছি। জোর করে তো আর মাটি কাটছি না। আমরা ছাড়াও আরও চারটি ইটভাটা রয়েছে। তারাও কৃষকের কাছ থেকে মাটি কিনছেন। মাটি কিনছি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তারা কোথা থেকে মাটি তুলছেন তা জানা নেই।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ইটভাটায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিয়ম বর্হিভ‚তভাবে কোন কাজ করতে দেওয়া হবে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ, এইচ, এম রাসেদ বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অন্য স্থানের ন্যয় রূপগঞ্জ উপজেলাও রয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, কেউ নিয়মবহির্ভ‚তভাবে ইটভাটা চালালে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

বোয়ালখালীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হনুমান উদ্ধার,চকরিয়া সাফারি পার্কে অবমুক্ত

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পৌর সদরের গোমদণ্ডী ফুলতল মোড়ে লোকালয়ে ঢুকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে একটি মুখপোড়া হনুমান। আজ শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হনুমানটি আহত অবস্থায় সড়কে পড়ে গেলে স্থানীয় দুই যুবক মো. মুন্না ও ফয়সাল তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে।

মুন্না জানান, হনুমানটি সকাল থেকে ভবনের ছাদ ও গাছে লাফালাফি করছিল। দুপুরের দিকে একটি গাছ থেকে ছাদে লাফ দিতে গিয়ে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিচে পড়ে যায়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা এসএম সাইদুল আলম সাঈদ বলেন, “হনুমানটির আংশিক লোম পুড়েছে, তবে গুরুতর জখম হয়নি। তাকে স্যালাইন দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং এখন অনেকটাই সুস্থ।

পরে বন বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বনবিভাগের চট্টগ্রাম সদর রেঞ্জার মুহাম্মদ ইসমাইল হোসাইন জানান, “এটি একটি মুখপোড়া হনুমান, যা প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রাণিটিকে চকরিয়া সাফারি পার্কে পাঠানো হবে, যেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকবে।”তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের উদ্ধার ও চিকিৎসা উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মুন্না ও ফয়সালকে ধন্যবাদ জানাই তাদের মানবিকতার জন্য।”

কালিয়াকৈরে পৌর বজ্রের দখলে আঞ্চলিক সড়ক শালবন মানুষের দুর্ভোগ।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভা দেশের উন্নত পৌরসভার তালিকায় থাকলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রয়েছে চরম অব্যবস্থা।

সোমবার (২১এপ্রিল) সরেজমিনে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, কিছু এলাকায় ডাম্পিং ব্যবস্থাপনা থাকলেও তা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। নজরদারির অভাবে শহরের সড়ক, ফুটপাত ও শালবন আবাসিক এলাকা ক্রমশই পরিণত হচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে।

পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাটিকাটা এলাকার সফিপুর-বড়ইবাড়ী আঞ্চলিক সড়কে দেখা গেছে, দিন-রাত সেখানে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য। নির্দিষ্ট ডাম্পিং জোন থাকা সত্ত্বেও তা এড়িয়ে ঠিকাদাররা সড়কের ওপরেই ময়লা ফেলছেন, ফলে যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত ময়লার কারণে এ সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়েছে। যানবাহন চলাচলেও সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ ভোগান্তি। দুর্গন্ধে আশেপাশের বাড়িঘরেও অবস্থান করা দায় হয়ে পড়েছে। কখনো কখনো রাস্তা এতটাই ময়লায় ভরে যায় যে, পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় চলাচল।

একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কালামপুর পূর্বপাড়া এলাকায়। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে মহল্লার প্রবেশপথে সরকারি শালবনের জমিতে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে একদিকে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে চলাচলেও তৈরি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা।

এছাড়াও কালিয়াকৈর হাইটেক সিটির পাশে বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির প্রস্তাবিত ভবনের জমিও দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনায় সয়লাব হয়ে রয়েছে।

নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কালিয়াকৈর পৌরসভায় কয়েক লাখ মানুষ বসবাস করে। আবাসিক এলাকার বর্জ্য অপসারণে পৌর কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয়দের ক্ষোভ ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে কালিয়াকৈর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল আলম তালুকদার বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আজ থেকেই অতিরিক্ত পরিবহন সংযুক্ত করে ময়লা অপসারণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কালিয়াকৈর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ বলেন, নাগরিক ভোগান্তির বিষয়টি আমরা অবগত। পৌর এলাকায় অব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। শহরের পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজন হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব কালিয়াকৈর গড়ে তোলা।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ