আজঃ বুধবার ১৪ মে, ২০২৫

চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত ২৯০০ অটোরিকশা আটক।

এম মনির চৌধুরী রানা

চট্টগ্রাম জুড়ে নগরীর জেলা উপজেলার প্রধান সড়ক এবং অলিগলিতে বিপুলসংখ্যক ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। ফলে দুর্ঘটনা যেন নিয়মিত লেগেই আছে । শুক্রবার নগরীর কাপাসাগোলা নবাব হোটেলের পাশে হিজড়া খালসংলগ্ন ড্রেনে ব্যাটারিচালিত রিকশা পড়ে যায়। এতে মারা যায় ছয় মাস বয়সি এক শিশু। শিশুটির লাশ পাওয়া যায় ঘটনার ১৪ ঘণ্টা পর ৫ কিলোমিটার দূরে চামড়া গুদাম এলাকায়। এরপরই টনক নড়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের। শুরু হয় নগরজুড়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দের অভিযান।

বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ৫০ হাজারের ও বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা। এক সময় অলিগলিতে অল্প কিছু রিকশা চলতে দেখা গেলেও এখন বেপরোয়া এই যান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর ও জেলা উপজেলার মূল রাস্তায়। এতে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। পঙ্গুতো বরন করেছে অগনিত সাধারন মানুষ। গেলো ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের পর আরও মাথা চড়া দিয়ে উঠে এই দ্রুতগতির যান। ফলে পুলিশকে তোয়াক্কা না করে অলিগলি ছেড়ে নগরের প্রধান সড়কে চলছে এই অটোরিকশা।

তবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সচল হওয়ার পর বেড়েছে ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সিএমপির চারটি ট্রাফিক জোন সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ দিনে চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ ও ডাম্পিং হয়েছে ২৮৯৬টি। যা চট্টগ্রামের মনসুরাবাদে পুলিশের ডাম্পিং স্টেশনের বিশাল মাঠে রাখা হয়েছে এবিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাহমুদা বেগম জানান, মূল সড়কে দুর্ঘটনার বড় কারণ এই ব্যাটারিচালিত বাহনটি। তাদের দৌরাত্ম্য কমাতেই অভিযান শুরু করা হয়েছে।

পুলিশের এমন তৎপরতায় খুশি নগরবাসী। তারা বলছেন, এসব রিকশার বেশিরভাগ চালক কম বয়সী আর অদক্ষ। এতেই ঝুঁকি বেড়েছে দুর্ঘটনার। ট্রাফিক উত্তর বিভাগের ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) কামরুল ইসলাম বলেন, জব্দ ব্যাটারি রিকশা ডাম্পিংয়ে পাঠানো হচ্ছে। আমাদের জোনে এখন পর্যন্ত ৮২৯টি ব্যাটারি চালিত রিকশা জব্দ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের সড়কে চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এই অভিযান চলমান রাখবো। এদিকে নগরীর ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই শহরে ঠিক কয়টা ব্যাটারি রিকশা চলে তা জানা কঠিন তবে অসম্ভব না।

কিন্তু যারা আমদানি করে বা সংযোজন করছে বা যেখানে এইসব চার্জিং-এ যাচ্ছে সেখানে কঠোর না হলে সড়কে তাদের নিয়ন্ত্রণ কঠিন। তাছাড়া আমাদের ট্রাফিকের সদস্যরা তাদের দাঁড়াতে সিগন্যাল দিলে তারা হয় দ্রুত গতিতে ইউটার্ন নিয়ে অন্যের উপর রিকশা তুলে দিচ্ছে না হয় আমাদের সদস্যকে ধাক্কা দিয়ে আহত করছে। তবে ট্রাফিকের চারটি জোনেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। সাথে জেলা প্রশাসনও এগিয়ে এসেছে তাদের নিয়ন্ত্রণে।

সর্বশেষ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এক সমন্বয় সভায় বর্ষাকালে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একইসঙ্গে নগর পুলিশের ব্যাটারি রিক্সার বিরুদ্ধে চলমান অভিযানকে সাধুবাদ জানান। এদিকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত ২১ এপ্রিল সোমবার থেকে ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে তারা অভিযান চালাচ্ছেন ব্যাটারি রিকশার চার্জিং স্টেশনে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয় চার্জিং স্টেশনের মালিকদের।

অভিযানের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈনুল হাসান বলেন, আমরা নগরের বেশ কিছু স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ব্যাটারি রিকশাকে জরিমানা করেছি। পাশাপাশি চার্জিং স্টেশনের মালিকদের সতর্ক করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। সামনে থেকে আমাদের এ অভিযান আরও বড় পরিসরে হবে এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে ।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

সরকার প্রধান হিসেবে প্রথমবার চট্টগ্রাম আসছেন ড. ইউনূস।

অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবার চট্টগ্রামে আসছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার তিনি নিজ জন্মভূমিতে যাবেন। প্রধান উপদেষ্টা সেখানে দিনব্যাপী বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।

জানা গেছে, মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে সেখানে নির্ধারিত বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পঞ্চম সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগদান করবেন তিনি।পাশাপাশি তার পৈতৃক বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামও পরিদর্শন করবেন প্রধান উপদেষ্টা।

এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামে পৌঁছার পর বন্দর পরিদর্শন করবেন এবং বন্দরের অভ্যন্তরে এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে একটি সভায় অংশ নেবেন। এরপর তিনি বন্দর ও জাহাজ চলাচল খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বাণিজ্য সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।

সেখান থেকে যাবেন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে। সেখানে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করবেন প্রধান উপদেষ্টা। যা চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একটি অংশসহ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের বিশাল জনগোষ্ঠীর বহুল প্রতীক্ষিত সেতু।

চমেক হাসপাতাল আরও ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল তৈরি করতে প্রস্তুত।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর সেবা কার্যক্রম চালু হয় ১৯৬০ সালে। এ হাসপাতালের আসন সংখ্যার দ্বিগুণ রোগীর কারণে মেজেতে চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা যায় সব সময়। একদিকে রোগীর চাপ অন্যদিকে ডাক্তার ও নার্স সংকট। এসব বিষয় বিবেচনা করে নতুন করে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট্য ’চমেক -২ হাসপাতাল করার প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে ৫০০ শয্যা, ১৯৯৬ সালে ৭৫০ শয্যা, ২০০১ সালে ১ হাজার ১০ শয্যা, ২০১৩ সালে ১৩১৩ শয্যা এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে এ হাসপাতালকে ২২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। মাত্র ৫০০ শয্যার অবকাঠামোতে নির্মিত এ (চমেক) হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা দফায় দফায় বাড়ানো হলেও বাড়েনি জনবল। বর্তমানে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে (আউটডোরে) প্রতিদিন আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ ন। আর প্রতিনিয়ত প্রায় ৩ হাজার রোগী ভর্তি থাকছে গরিবের হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে (ইনডোরে)।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে বর্তমান নার্স সংখ্যা ১ হাজার ১৯৭ জন। এছাড়া সরকারি পর্যায়ে হাসপাতালে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি রয়েছেন ৪১৭ জন। এর মধ্যে ৩য় শ্রেণির ১১০ পদে রয়েছেন ৮৫ জন। আর ৪র্থ শ্রেণির ৫৬৬টি পদে কর্মরত রয়েছেন ৩৩২ জন। হিসেবে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদে আরো প্রায় আড়াইশ পদ শূন্য রয়েছে। অবশ্য আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ৪র্থ শ্রেণির আরো ১৯৩ জন কর্মচারী রয়েছে হাসপাতালে। চিকিৎসক ও নার্স সংখ্যা মোটামুটি চলনসই হলেও হাসপাতালে কর্মচারি সংকট প্রকট বলে জানান হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন, এমপিল, এমপিএইচ।

পরিচালকের দাবি- হাসপাতালে বিশেষ করে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী বেশি প্রয়োজন। কিন্তু এ জায়গাতেই সংকট বেশি। পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মচারী পাওয়া গেলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় আরো সন্তোষজনক পরিবর্তন আনা সম্ভব। এর বাইরে প্রশাসনিক কার্যক্রমে সহকারী পরিচালক পদ মর্যাদায় আরো কিছু সংখ্যক জনবল জরুরি জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন।
শয্যা বেড়ে এখন ২২০০ হয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে জনবল বাড়েনি। সেই

পুরনো জনবলেই সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। এত অপর্যাপ্ত জনবলে বিশাল সংখ্যক রোগী সামলানো আসলেই কঠিন। সীমিত জনবলে সেবা দিতে গিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই হিমশিম অবস্থা বলেও মন্তব্য করেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন।

এদিকে, কর্মচারি সংকটের পাশপাশি ৪৬টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট চমেক হাসপাতালে স্থান সংকটও চরম পর্যায়ে। শয্যা ছাড়িয়ে মেঝে, বারান্দা, করিডোর এমনকি সিঁড়িতেও রাখতে হচ্ছে রোগীকে। জনবল ও স্থানের এমন চরম সংকট নিয়ে এতদঞ্চলের বিশাল সংখ্যক রোগীর চাপ যেন আর নিতে পারছে না হাসপাতালটি। সবমিলিয়ে গরিবের এ হাসপাতালটি রোগীর ভারে বিপযস্ত বলা চলে। এমন পরিস্থিতিতেও এ হাসপাতালে তুলনামূলক কম খরচে বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন গরীব–অসহায় রোগীরা। বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চড়া ফি বহনে অক্ষম অসহায় রোগী মাত্রই ছুটে যান চমেক হাসপাতালে।

চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও নগরে সব মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি লোকের বসবাস। এর অর্ধেক অংশ সেবা গ্রহণ করে থাকেন একমাত্র ভরসার এই চমেক হাসপাতালে। এই হাসপাতালে চিকিৎসার মান ভালো হওয়ায় রোগীর চালপও বেড়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় রোগীকে পর্যাপ্ত সেবা প্রদানের দিক বিবেচনা করে চমেক – ২ নামে আরো একটি এক হাজার শয্যার হাসপাতাল করার প্রস্তাবনা দিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ