আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

প্রতিনিয়ত তাড়া করছে আতংক চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজারে নিরাপত্তাহীনতায় আড়তদাররা।

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী রেয়াজউদ্দিন বাজারে আতংকের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন আড়তদাররা। একের পর এক হামলা, লুটপাট, ভাংচুরের ও উচ্ছেদের হুমকিতে প্রতিনিয়ত তারা আতংককে সঙ্গী করে আড়ত চালিয়ে যাচ্ছেন। হামলাকারীরা প্রশাসনকেও তোয়াক্কা করছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে থানা পুলিশও আদালতের শরানাপন্ন হয়েও কোন কাজ হচ্ছেনা বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

জানা গেছে, রেয়াজউদ্দিন বাজারে দীর্ঘদিন ধরে আড়তদারী ব্যবসা পরিচালনা করছেন মোহাম্মদ মিন্টু সওদাগর। তার মালিকানাধীন দোকান ‘মেসার্স রফ বাণিজ্যালয়’ নিয়ে চলমান বিরোধে আদালতের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দোকানঘরের মালিক বারবার সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালিয়ে তাকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশি উপস্থিতি থাকলেও সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গিয়ে বারবার ফিরে এসে হামলা চালাচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগী।


প্রায় ১৮ বছর ধরে রেয়াজউদ্দিন বাজারে ‘মেসার্স রফ বাণিজ্যালয়’ নামে আড়তদারী ব্যবসা পরিচালনাকারী মিন্টু সওদাগর এই ব্যবসার মাধ্যমে তিনি স্থানীয় পাইকারি বাজারে একটি নির্ভরযোগ্য অবস্থান তৈরি করেন। দোকানঘরটি তিনি নিয়মিত মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে ভোগদখল করে আসছিলেন। তার দাবি, সময়মতো ভাড়া পরিশোধসহ দোকানঘরের মালিকের সব শর্ত যথাযথভাবে পালন করে তিনি দোকান চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই দোকানঘরের মালিক কোনো পূর্ব নোটিশ বা আইনি প্রক্রিয়া না মেনে, কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে নিয়ে দোকানে হামলা চালান।

মিন্টু সওদাগরের অভিযোগ, মোছাম্মদ ইসমত আরা রউফ, তার দুই ছেলে রাকিব রেজা ও আবদুর রাহাত তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দোকানের মালামাল ভাঙচুর করে, নগদ অর্থ লুটে নেয় এবং আমাকে ও কর্মচারীদের মারধর করে দোকান থেকে জোর করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনার পর মিন্টু সওদাগর স্থানীয় কতোয়ালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং পরবর্তীতে ২৩ মে ২০২৪ তারিখে আদালতের আশ্রয় নেন।


এদিকে গত বছরের ২৩ মে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি আদেশ জারি করেন, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মিন্টু সওদাগর তার পূর্বের অবস্থায় দোকানে ব্যবসা পরিচালনা করবে এবং তাকে বাধা দেওয়া যাবে না। আদালত এ সংক্রান্ত একটি স্থিতিবস্থার আদেশও জারি করেন।
কিন্তু আদালতের এই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দোকান মালিক পুনরায় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দোকানে হামলা চালান বলে অভিযোগ করেন ওই ব্যবসায়ী।

স্থানীয় আড়তদাররা জানান, পুলিশ এলে সন্ত্রাসীরা এলাকা ত্যাগ করে; কিন্তু কিছু সময় পরই তারা আবার ফিরে আসে এবং আগের মতোই ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ নিয়ে আশপাশের দোকানদার ও সাধারণ জনগণের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে রেয়াজউদ্দিন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ সওদাগর বলেন, একজন ব্যবসায়ীকে ইচ্ছে মতো দোকান থেকে বের করে দেওয়া যায় না। এটা একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। সময় দিতে হয়। তাছাড়া দোকানঘর মালিকের শর্ত পূরণ হলে ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদের কোনো সুযোগ নেই। এখন বিষয়টি আদালতের হাতে, সেখানে যা সিদ্ধান্ত হবে সেটাই চূড়ান্ত।
জানতে চাইলে রেয়াজউদ্দিন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক শিবলী জানান, দোকানে হামলা এবং ভাংচুরের খবর পেয়ে সমিতির লোকজন ছুটে গিয়ে মিন্টু সওদাগরকে উদ্ধার করে। এরপরও হামলা অব্যাহত থাকলে স্থানীয় কোতোয়ালী থানাকে অভিহিত করলে পুলিশ এসে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু শুনা যায় সন্ত্রাসীরা বারবার হামলা করে মিন্টুর ওপর।

এ বিষয়ে বৈঠকের পরও কোন সুরাহা না হলে বিষয়টি আদালতে মামলার জন্য প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে। ব্যবসায়ী মিন্টু যাতে নিয়মিত তার ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে তারজন্য আদালত নিষেধাজ্ঞা জারী করে। যা এখনো বহাল রয়েছে। তিনি বলেন, জানতে পেরেছি সন্ত্রাসীরা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মিন্টু সওদাগরের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

আমরাও চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা হোক। তিনি যাতে সুন্দর ভাবে নিরাপদে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে। এলাকাবাসী এবং আশপাশের ব্যবসায়ীরা হামলা ও দোকান ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। একজন প্রতিবেশী দোকানদার বলেন, আমরা সবাই আতঙ্কে থাকি। আজ ওর দোকানে হামলা হয়েছে, কাল হয়তো আমাদের দিকেও চোখ পড়বে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত দ্রুত এই সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা।

এ বিষয়ে কেতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ইতোমধ্যে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে স্থানীয়রা দাবি করছেন, হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে দ্বিধাগ্রস্ত।

মোহাম্মদ মিন্টু সওদাগর বলেন, আমি এখন আদালতের নির্দেশনার আশ্রয় নিয়ে দোকানে বসে আছি, কিন্তু প্রতিনিয়ত ভয় নিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমি চাই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে এবং আমার মতো একজন সাধারণ ব্যবসায়ীকে ন্যায়বিচার পায়।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ