আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

অভিভাবকহীন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজ-জেলা প্রশাসনও নীরব-চলছে হযবরল অবস্থা।

বদিউজ্জামান রাজাবাবু চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা বহু অপরাধের হোতা অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক জুলাই আন্দোলনের পর থেকে কলেজে অনুপস্থিত বা পলাতক থাকলেও এবং তিনি ফৌজদারী মামলায় হাজতবাস করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আওয়ামীলীগের আমলের নির্যাতিত শিক্ষকরা অফিস অফিস ঘুরে বেড়ালেও অদ্যবধি অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কেন তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক বা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছেনা ?-এ প্রশ্ন এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণের।

জানা গেছে, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ এনামুল হককে জোর করে সরিয়ে অবৈধ উপায়ে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের আমলে ২০১৪ সালে অধ্যক্ষ হয়েছিলেন মোঃ এজাবুল হক। চাকরী জীবনে তিনি মাঝে মধ্যে তার বিশাল বাহিনী নিয়ে কলেজে যেতেন এবং তিনি কখনো একটিও ক্লাস নেননি। শুধু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, চাকরীর প্রলোভনে লাখ লাখ টাকা আদায়সহ স্বেচ্ছাচারী কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি কখনো পেশাদার শিক্ষক হতে পারেননি বলে অধিকাংশ শিক্ষকের উপর ক্ষমতার স্টিম রোলার চালিয়ে নির্যাতন করতেন।
তিনি এ কলেজটিকে মাদক, ষড়যন্ত্র ও পাওনাদারদের আখড়া বানিয়েছিলেন। তার কারণে কলেজটি এখন অনেক সমস্যায় জর্জরিত। কারণ তিনি জুলাই আন্দোলনের পর থেকে অদ্যবধি কলেজে অনুপস্থিত থেকেও বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাইকোর্টে রীট করে কলেজটিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছেন। ফলে কলেজে চলছে হযবরল অবস্থা। জরুরী ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে কলেজের সার্বিক শৃ্খংলা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন বলে সুধীজনরা মনে করছেন। তার এবং কলেজের হযবরল অবস্থা বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে অনেকবার আবেদন দিয়েও কোন কাজ হয়নি বলে জানা গেছে।
অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক ফৌজদারী মামলার আসামী হওয়ায় গত ১০ মার্চ ২০২৫ থেকে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। তাঁর ২ দিনের রিমান্তও হয়। সরকারী চাকরী বিধির ৪১ এর ২ ও ৩ ধারায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালুসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেয়ার বিধান থাকলেও অদ্যবধি শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তবে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৪/২/২০২৫ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহিনা পারভিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হককে ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজে অনুপস্থিত থাকাসহ ১০টি বিষয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয় এবং ১০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলেও অদ্যবধি তিনি সে জবাব না দিয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছেন।

জুলাই আন্দোলনের সময় থেকে অধ্যক্ষ এজাবুল হক এর অপসারণ দাবি করে শিক্ষার্থীরা মানব বন্ধন, মিছিল ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এদিকে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক বুলির বিরুদ্ধে কয়েকটি তদন্ত হলেও তিনি একটিতেও উপস্থিত হননি। এদিন গত ২৭ নভেম্বর ২০২৪ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে প্লাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে তদন্ত টিমের সামনেই শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচী পালন করে, যার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

কলেজের শিক্ষকরা জানিয়েছেন তিনি বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে টেন্ডার ছাড়া অবৈধভাবে কলেজের ৭/৮টি ফলজ ও বনজ গাছ কর্তন করেছেন, যার প্রমাণ শিক্ষকরা সংরক্ষণ করেছেন।
এমপিও এবং ইএফটি উভয় একাউন্ট থেকে ১ বছরের বেতন তুলে আত্মসাতের চেষ্টা করেছিলেন যার প্রমাণও নির্যাতিত শিক্ষকদের কাছে রয়েছে।

একজন মহিলা শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০২২ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হককে অযোগ্য অধ্যক্ষ হিসেবে জেলা শিক্ষা অফিসারের প্রতিবেদন দাখিল হলেও অজ্ঞাত কারণে জেলা প্রশাসন আজো কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিনি মহারাজপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান থাকাকালে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ইউপি সদস্যরা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা দেয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করেন তৎকালীন ডিডিএলজি তাজকির-উজজামান এবং তিনি অভিযোগের সত্যতার বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ২০২০ সালে পাঠালেও আজো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, যে কারণে মহারাজপুর ইউনিয়নের জনগণ সরকারের উপর তখন থেকেই ক্ষিপ্ত রয়েছেন। আত্মসাৎ করা সরকারের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার আইন থাকলেও আজো জমা করা হয়নি বলে জানা গেছে।

কলেজ সরকারীকরণের সময় লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি, শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করা, মহিলা শিক্ষকদের প্রতি বিভিন্ন নির্যাতন ও ইভটিজিং, শিক্ষকদের চাকরী খেয়ে নেয়ার ভয়ভীতি দেখানো, অসৎ উদ্দেশ্যে ছাত্র হোস্টেল বন্ধ করে দেয়াসহ তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকায় কলেজ, কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে। জুলাই আন্দোলনের আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয় ডজনেরও অধিক।

উল্লেখ্য যে, সরকারিকৃত কলেজের চাকরী বদলীযোগ্য না হওযায় এবং অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক এর চাকরীকালীন বিষয় গণিত এর পদ সরকারীকরণের সময় সৃষ্ট হয়নি বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্ধীন এক কর্মকর্তা মৌখিকভাবে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

আগামী ২৬/৬/২৫ তারিখ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এ সময় প্রতি বছর বিদায়-বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও এ বছর এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ না থাকায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ও প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কর্মস্থলে চুরি করা টাকা ফেরত না দেওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলোচিত চোর মেরাজ শ্রীঘরে।

নিজ কর্মস্থলে চুরি করা ৬০ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে আপস করে ১৫ লক্ষ টাকার চেক ও ১ বছরের মদ্ধে ৪৫ লক্ষ টাকা ফেরত দিবে মর্মে স্ট্যাম্প করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের মেসার্স শাওন ট্রেডার্স এর ম্যানেজার জহির রায়হান মেরাজ (৩৪) নামে এক যুবক।

জানা গেছে, মের্সাস শাওন ট্রেডার্স এর দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ অত্র প্রতিষ্ঠানে যাবতীয় মালামাল বিক্রয়ের নগদ টাকার হিসাব নিকাশ সহ অত্র প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ন কাজ কর্মে কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করিয়া আসছিলেন মোঃ জহির রায়হান মেরাজ। প্রতিদিন মের্সাস শাওন ট্রেডাস এর কাজ কর্ম শেষে বিভিন্ন কায়দা কৌশলে প্রায় ৫,০০০/-টাকা থেকে ১০,০০০/- টাকা পর্যন্ত চুরি করত, যা সি সি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে ধরা পাড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।

উক্ত ঘটনায় মেরাজকে জিজ্ঞেসাবাদ করলে উপস্থিত উভয় পক্ষের শালিশদারগনের সামনে মেরাজ চুরির কথা স্বীকার করেন। গত ৩ বছর যাবত সে বিভিন্ন কায়দা কৌশলের মাধ্যমে আনুমানিক ৬০,০০,০০০/- (ষাট লক্ষ) টাকা চুরি করেছে। ৩০/০৯/২০২৩ তারিখে চুরির ঘটনা সত্যতা স্বীকার করিয়া অত্র অঙ্গীকার নামা দলিলে স্বীকার ও অঙ্গীকার করে যে, উক্ত ৬০,০০,০০০/- (ষাট লক্ষ) টাকার মধ্যে আগামী ০৪/১০/২০২৩ ইং তারিখের নগদে ১৫,০০,০০০/- (পনের লক্ষ) টাকা মের্সাস শাওন ট্রেডাস এর নামে ফেরত দেবে এই মর্মে জহির রায়হান মেরাজ এর স্বাক্ষরিত ঢাকা ব্যাংক চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখা যাহার চলতি এ্যাকাউন্ট নং ৩০৫২০০০০০৬৬৫৩, চেক নং ১০৩২৩৭১ একখানা চেক প্রদান করেন এবং অবশিষ্ট ৪৫,০০,০০০/- (পঁয়চল্লিশ লক্ষ) টাকা পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে মের্সাস শাওন ট্রেডাস কে পরিশোধ করিতে বাধ্য থাকিব।

যদি উক্ত ১৫,০০,০০০/- (পনের লক্ষ) টাকা ০৪/১০/২০২৩ ইং তারিখের মধ্যে পরিশোধ করিতে না পারি ও ৪৫,০০,০০০/- (পঁয়চল্লিশ লক্ষ) টাকা আগমী ১ বছরের মধ্যে মের্সাস শাওন ট্রেডাস কে পরিশোধ করিতে না পারে বা পরিশোধে কোন প্রকারে টালবাহানা করে তবে অত্র চেকের বলে ও অঙ্গীকার নামা দলিল বলে মের্সাস শাওন ট্রেডাস এর স্বত্বাধীকারী মেরাজের উপর যে কোন প্রকার আইনগত ব্যবস্থা লইতে পারিবেন। পরবর্তীতে মেরাজ কোন প্রকার টাকা ফেরত না দেওয়ায় মেসার্স শাওন ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী মোঃ সামিরুল আলম (শাওন) বাদী হয়ে আদালতে ২টি মামলা দায়ের করেন উক্ত ৪৫ লক্ষ টাকার স্ট্যাম্পের মামলায় (মামলা নাম্বার সিআর ১১২৪/২০২৪) আদালত গত ৩ নভেম্বর মেরাজের নামে ওয়ারেন্ট জারি করলে সদর মডেল থানার এএসআই মোতালের মেরাজকে গ্রেফতার করেন।

এ বিষয়ে সদর মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার মোঃ রাজু আহমেদ বলেন, ৪৫ লক্ষ টাকার একটি স্ট্যাম্পের মামলায় ওয়ারেন্ট থাকায় আসামি জহির রায়হান মিরাজকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিপুল পরিমাণ নেশা জাতীয় ট্যাবলেট জব্দ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিপুল পরিমাণ নেশা জাতীয় ট্যাবলেট জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (৫৯ বিজিবি)র সদস্যরা।রবিবার (২৩ নভেম্বর) মধ্যরাত ১.২০মিনিটে মহানন্দা ব্যাটালিয়ন (৫৯ বিজিবি) এর অধীনস্থ চাঁনশিকারী বিওপি’র ০১টি বিশেষ টহল দল সীমান্ত পিলার ১৯৬/৫-এস হতে আনুমানিক ২০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার ভোলাহাট ইউনিয়নের চামুচা গ্রামস্থ গড়ের মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত একটি আখ ক্ষেতে অভিযান পরিচালনা করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা গিয়েছিল, অভিযানস্থলে বিপুল পরিমাণ নেশাজাতীয় ট্যাবলেট মজুদ রয়েছে এবং চোরাকারবারীরা সুযোগ বুঝে দেশের অভ্যন্তরে পাচার করবে।

সে সুনির্দিষ্ট তথ্যের প্রেক্ষিতেই তাৎক্ষণিকভাবে অভিযানটি পরিচালিত হয় এবং টহলদল আখক্ষেত তল্লাশী করে একটি প্লাস্টিকের বস্তায় অভিনব কায়দায় মোড়ানো অবস্থায় থাকা ৩,১৯০ পিস ভারতীয় নেশাজাতীয় ট্যাবলেট (TENSIWIN) উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে উদ্ধারকৃত ট্যাবলেটগুলো সাধারণ ডায়েরীর মাধ্যমে ভোলাহাট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান।

এ ব্যাপারে মহানন্দা ব্যাটালিয়ন (৫৯ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল গোলাম কিবরিয়া, বিজিবিএম, বিজিওএম বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মাদকসহ সকল ধরনের চোরাচালানের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিজিবি’র আভিযানিক কার্যক্রম বেগবান রয়েছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ