আজঃ সোমবার ১০ নভেম্বর, ২০২৫

একমাসে ৬৫টি অভিযান চট্টগ্রামে হোটেল-রেস্তোরাঁয় মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধি

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রাম মহানগরের লালদীঘির পাড় এলাকায় মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে নেতৃত্ব দেন চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা

চট্টগ্রাম মহানগরে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। গ্রাহকের আকর্ষণ বাড়াতে নানা ধরনের ক্ষতিকর রং ও কেমিক্যাল মিশিয়ে খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা সরাসরি ভোক্তাদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অভিযানে এমন চিত্র উঠে এসেছে। এসব ভেজাল খাদ্যপণ্যের ভয়াবহ বিস্তার জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তৈরি করেছে। এছাড়া বেকারি পণ্য ও মিষ্টান্নে ভেজাল উপাদান ব্যবহার এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার নগরের লালদীঘির পাড় এলাকায়
ভেজালবিরোধী অভিযানে দুই রেস্টুরেন্টকে জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালালেও অসাধু ব্যবসায়ীরা সামান্য মুনাফা লাাভের আশায় গ্রাহকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

জানা গেছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় নগরজুড়ে শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ৪০টি ও জেলা অফিস চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৫টি অভিযান চালিয়েছে। বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় সবচেয়ে বেশি অনিয়ম পেয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত জুলাই ও আগস্ট মাসে নগর ও জেলায় মিলিয়ে মোট ৫৯টি অভিযান চালায়। এসব অভিযানে ৭১টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একাধিক অভিযানে এমন অসংখ্য অনিয়ম ধরা পড়লেও বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসছে না। অভিযানের সময় জরিমানা দিয়ে ব্যবসায়ীরা আবারও পুরোনো নিয়মে ফিরে যাচ্ছেন। নগরবাসী ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সদস্যদের অভিযোগ- আইনের কঠোর প্রয়োগ ও নিয়মিত নজরদারি না থাকায় ভেজাল খাদ্যের এই ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন প্রান্তের বেকারি ও মিষ্টির দোকানে ভেজালের ছড়াছড়ি। দুধ, ঘি, ময়দা ও মিষ্টিতে ব্যবহার করা হচ্ছে পঁচা ডিমসহ নিম্নমানের উপাদান, সঙ্গে থাকছে ক্ষতিকর কেমিক্যাল। মিষ্টির আকর্ষণ বাড়াতে বিপজ্জনক রং ব্যবহার করা হচ্ছে- যা দীর্ঘমেয়াদে লিভার ও কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করছেন অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, শুধু বেকারি বা মিষ্টান্নেই নয়, শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর অবস্থাও উদ্বেগজনক। রান্নাঘরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, খাদ্যদ্রব্যে তেলাপোকার অবাধ বিচরণ, খাদ্য প্রস্তুতকরণের স্থানে ইদুরের বাসা, কাঁচা ও রান্না করা খাবার পাশাপাশি ফ্রিজে রাখা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে শিল্পলবণ, বাসি তেল ও মেয়াদোত্তীর্ণ কেমিক্যাল, রংসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপকরণ। আবার ফাঙ্গাস পড়া বা বাসি খাবার পুনরায় গরম করে ভোক্তাকে দেওয়া হচ্ছে। ভোক্তারা মনের অজান্তেই এসব খাবার গ্রহণ করছে- যা ধীরে ধীরে দেহে নানা রোগের কারণ হয়ে উঠছে। নগরের অলিগলিতে গড়ে উঠেছে ভেজাল চিপসের কারখানা। যা বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার ক্ষতি করছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টের অবস্থা ভয়াবহ। আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। আমরা আমাদের সীমিত জনবল দিয়ে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। তবে ব্যবসায়ীরা যদি দায়িত্বশীল না হন তাহলে কোনো কিছুই পরিবর্তন সম্ভব নয়।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির তালিকাভুক্ত ৩৫০টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে এর বাইরে ছোট-বড় মিলিয়ে হোটেল-রেস্টুরেন্টর সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। সমিতিটির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ও মহানগরের সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ আবদুল হান্নান বাবু বলেন, অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বা যেকোনো উপায়ে অর্থ জোগাড় করে হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় নেমে পড়ছেন। তাদের কোনো অতীত অভিজ্ঞতা নেই। মুনাফাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। খাবারকে মুখরোচক, আকর্ষণীয় করে তুলতে তারা ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করছেন।

ভেজাল খাদ্য ও অস্বাস্থ্যকর খাবার দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের জটিল রোগসহ নানান শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমাদের খাবারে যেভাবে ভেজাল দেওয়া হচ্ছে- এটা আসলেই একটা উদ্বেগের বিষয়। ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কার্যকরী উদ্যোগ নিলে ভালো হয়। যদিও তাদের জনবলে ঘাটতি আছে। তবুও এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাদা নজর দিতে হবে। ঘন ঘন অভিযান পরিচালনা করতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, মানুষ এখন মুনাফাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। ব্যবসার আড়ালে সেবামূলক কাজ করতে হয়- সেটাই ভুলে যাচ্ছে। খাদ্য ব্যবসায় ভেজাল দেওয়া বা মানহীন খাবার দেওয়া- একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে হোটেল-রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা হয়নি। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। তারা সমন্বয় করে কাজ করলে সমস্যার সমাধান হবে।

এদিকে মঙ্গলবার ভেজালবিরোধী অভিযানে নগরের দুই রেস্টুরেন্টকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভ্রাম্যমাণ আদালত। নগরের লালদীঘির পাড় এলাকায় এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা।অভিযানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হোটেলের খাবার রান্না, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক, রং ও ফ্লেভার ব্যবহার এবং ফুটপাত দখল করে দোকানের পণ্য রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার বিষয়টি আমলে নেন ম্যাজিস্ট্রেট।

এসব অপরাধে জালালাবাদ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টকে ২০ হাজার টাকা ও কে সি দে রোডের ডেগচি বাড়ি রেস্টুরেন্টকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমদ।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে: চট্টগ্রাম এখন আতংকের নগরী

অন্তভর্তিকালীন সরকারের ঘোষণা ২০২৬ সালের ফ্রেরুয়ারিতে জাতীয় সাংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে আতংকিত হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম সম্প্রতি রাউজান,রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী সহ চট্টগ্রাম জুড়ে খুনের মহোৎসব চলছে। ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট সন্ধ্যা। পাঁচলাইশ এলাকার কুয়াইশ রোডের নাহার গার্ডেন নামে একটি রেস্তোরাঁর সামনে হঠাৎ একটি অটোরিকশা ঘিরে গুলির ঘটনা ঘটে। রিকশায় থাকা আনিস ঘটনাস্থলে মারা গেলেও মাসুদ নামে অন্যজন আহত অবস্থায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

এর কিছুক্ষণ বাদেই দেড় কিলোমিটার দূরে মাসুদকে তার বাড়ির সামনেই গুলি করে হত্যা করে মোটরসাইকেল আরোহী কয়েকজন। এই ধরনের টার্গেট কিলিং একসময় চট্টগ্রামে প্রায়ই ঘটত। আবারও পুরনো স্ট্যাইলের হত্যা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, সরোয়ার হোসেন বাবলার বাড়ি থেকে মিটিং করে ফেরার পথে ওই দুজনকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় দুই থানায় পৃথক দুটি মামলায় সাজ্জাদ হোসেনসহ চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

সেদিনই প্রথম সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে সরোয়ার হোসেন বাবলার দ্বন্দ্ব সামনে আসে। সরোয়ার হোসেন ছিলেন চট্টগ্রামের আলোচিত এইট মার্ডারের প্রধান আসামি ‘শিবিরের ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সাজ্জাদ হোসেন খান ও হাবীব খানের অনুসারী। পরে সাজ্জাদ হোসেন খানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান সরোয়ার হোসেন। সরোয়ারকে শায়েস্তা করতে আরেক সাজ্জাদ হোসেনকে দলে ভেড়ান সাজ্জাদ হোসেন খান। এই সাজ্জাত পরিচিতি পায় ছোট সাজ্জাদ হিসেবে। গত ১৬ মাসে চট্টগ্রাম শহরেই শুধু ৬টি টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে। যার প্রতিটি ঘটনায় ভিক্টিমরা সরোয়ার হোসেনের অনুসারী। ৫ নভেম্বার বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ঘরের সামনেই টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন সরোয়ার হোসেন বাবলা।

এর আগে গত বছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁওয়ে মাইক্রো বাসে এসে আফতাব উদ্দিন তাহসিন নামে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। চলতি বছরের ৩০ মার্চ বাকলিয়া এক্সেস রোডে প্রাইভেটকার ঘিরে গুলি করে সরোয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সেদিন গাড়িতে থাকা সরোয়ারের দুই সহযোগী মারা গেলেও ভাগ্যচক্রে বেঁচে যায় সরোয়ার। ২৫ মে সরোয়ারের আরেক অনুসারী ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে হত্যা করা হয় পতেঙ্গা এলাকায়। প্রতিটি ঘটনায় সাজ্জাত হোসেন ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী রায়হানের নাম এসেছে বারবার। চট্টগ্রাম মহানগরের বাইরেও গত দেড় বছরে আরও অন্তত ১০টি টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ঘটনায় ঘুরে-ফিরে এই চক্রের নাম এলেও আসামিরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, একটি অঘোষিত গ্যাংওয়ারের শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। যার জের ধরে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটছে। আর এর নেপথ্যে ভারতের পাঞ্জাবে থাকা একসময়কার শিবির ক্যাডার সাজ্জাত হোসেন খানই মূল চরিত্র।

সাজ্জাত হোসেন খানের দুই শিষ্য ছিলেন সরোয়ার আর ম্যাক্সন। দুজনেরই পরিচিতি ছিল ছাত্রশিবির ‘ক্যাডার’ হিসেবে। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা ছিল। বিদেশ বসে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকার শিল্প-কারখানা, মোটর পার্টসের দোকান, ভবন নির্মাণে চাঁদা আদায় করত এই চক্র। ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ফেরার পথে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সারোয়ার আটক করেছিল ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ তাকে নিয়ে বায়েজিদ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি একে-২২ রাইফেল এবং গুলি উদ্ধার করেছিল। ২০২২ সালে রহস্যজনকভাবে কলকাতায় মৃত্যু হয় ম্যাক্সনের। কারাগারে থাকাকালে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বাবলার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মুক্তির পর আসলাম চৌধুরী ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। মাত্র এক মাস আগে বাবলা বিয়ে করেন। সেই বিয়েতে এরশাদ উল্লাহ ও আবু সুফিয়ানসহ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর থেকে বাবলাকে এই বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও দেখা গেছে। এ সময় নিজেকে জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দিতেন সরোয়ার হোসেন বাবলা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গেও তার ছবি দেখা গেছে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরোয়ার হোসেন বলেছিলেন, বড় সাজ্জাদ ভারতে বসে চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি করছে। টোকাই পোলা নিয়োগ দিয়ে যখন তখন যে কাউকে গুলি করাচ্ছে। পুলিশ বড় সাজ্জাদের টোকাই বাহিনীকে ধরে না। আবার ছোট সাজ্জাদেরও একই অবস্থা। বড় সাজ্জাদের হয়ে সব কাজ করে। পুরো চট্টগ্রামে দুই সাজ্জাদ সন্ত্রাস করছে। আমি এসবের প্রতিবাদ করি। তাই আমাকে তারা শত্রু মনে করছে। পুরো বিষয়টা যে পুলিশ বিভাগ জানে, সেটি অবশ্য গোপন করেনি। বুধবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে এরশাদ উল্লাহকে দেখে বের হয়ে সাংবাদিকদের সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন ‘এরশাদ উল্লাহ নয়, টার্গেট ছিলেন সরোয়ার। সরোয়ারের অপরাধের ইতিহাস আছে।

ধারণা করা হচ্ছে, হামলার মূল টার্গেট ছিলেন সরোয়ার। ঘটনার মূল যারা, তাদের অনেকেই জেলে আছেন এবং দেশের বাইরে থেকে এর ইন্ধন আছে।’চট্টগ্রাম এখন আতঙ্কের নগরী। গত এক বছরে চট্টগ্রামে ৪৯টি খুন, রহস্যজনক মৃত্যু বা ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ নির্বাচনী প্রচারণায় গত বুধবারের হামলা নতুন করে অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। নির্বাচনের আগে এমন প্রতিহিংসা আর খুনের ঘটনা রাজনৈতিক মহলেও তৈরি করেছে শঙ্কা। নির্বাচনী প্রচারণায় এই হামলাকে শুধুই আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখতে রাজি নন রাজনৈতিক কর্মীরা। তাদের মতে, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বিএনপিকে মাঠের শক্তির একটি বার্তাও দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

সরোয়ার হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (উত্তর) উপপুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী গণসংযোগের সময় গুলির ঘটনায় পরিবার অভিযোগ দিলে আমরা মামলা হিসেবে রেকর্ড করব। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে মাঠে পুলিশ কাজ করছে।

চট্টগ্রামে প্রবাসীর ১৯ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট, আসামি গ্রেফতার

চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে ডাকাতি মামলার পলাতক আসামি মো. সাদ্দাম হোসেনকে (৩২) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭। চান্দগাঁও থানাধীন নুরুজ্জামান নাজির বাড়ি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার সাদ্দাম হোসেন ভোলার লালমোহন থানার দুলা মিয়া এলাকার মো. ফারুকের ছেলে।

র‌্যাব-৭’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এ আর এম মোজাফ্ফর হোসেন জানান, গত ২১ জুলাই সাড়ে ৮টায় দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ সামসুদ্দিন চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে এ কে খান বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে লিংক রোড় এলাকায় ডাকাতদল নগদ টাকাসহ ১৯ লাখ ৮২ হাজার ২০০ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি ৩/৪ জনকে আসামি করে হালিশহর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গোপন খবরের ভিত্তিতে চান্দগাঁও থানাধীন নুরুজ্জামান নাজির বাড়ি এলাকা থেকে এ মামলার আসামি সাদ্দামকে গ্রেফতার করা হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ