আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

একমাসে ৬৫টি অভিযান চট্টগ্রামে হোটেল-রেস্তোরাঁয় মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধি

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রাম মহানগরের লালদীঘির পাড় এলাকায় মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে নেতৃত্ব দেন চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা

চট্টগ্রাম মহানগরে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। গ্রাহকের আকর্ষণ বাড়াতে নানা ধরনের ক্ষতিকর রং ও কেমিক্যাল মিশিয়ে খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা সরাসরি ভোক্তাদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অভিযানে এমন চিত্র উঠে এসেছে। এসব ভেজাল খাদ্যপণ্যের ভয়াবহ বিস্তার জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তৈরি করেছে। এছাড়া বেকারি পণ্য ও মিষ্টান্নে ভেজাল উপাদান ব্যবহার এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার নগরের লালদীঘির পাড় এলাকায়
ভেজালবিরোধী অভিযানে দুই রেস্টুরেন্টকে জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালালেও অসাধু ব্যবসায়ীরা সামান্য মুনাফা লাাভের আশায় গ্রাহকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

জানা গেছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় নগরজুড়ে শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ৪০টি ও জেলা অফিস চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৫টি অভিযান চালিয়েছে। বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় সবচেয়ে বেশি অনিয়ম পেয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত জুলাই ও আগস্ট মাসে নগর ও জেলায় মিলিয়ে মোট ৫৯টি অভিযান চালায়। এসব অভিযানে ৭১টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একাধিক অভিযানে এমন অসংখ্য অনিয়ম ধরা পড়লেও বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসছে না। অভিযানের সময় জরিমানা দিয়ে ব্যবসায়ীরা আবারও পুরোনো নিয়মে ফিরে যাচ্ছেন। নগরবাসী ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সদস্যদের অভিযোগ- আইনের কঠোর প্রয়োগ ও নিয়মিত নজরদারি না থাকায় ভেজাল খাদ্যের এই ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন প্রান্তের বেকারি ও মিষ্টির দোকানে ভেজালের ছড়াছড়ি। দুধ, ঘি, ময়দা ও মিষ্টিতে ব্যবহার করা হচ্ছে পঁচা ডিমসহ নিম্নমানের উপাদান, সঙ্গে থাকছে ক্ষতিকর কেমিক্যাল। মিষ্টির আকর্ষণ বাড়াতে বিপজ্জনক রং ব্যবহার করা হচ্ছে- যা দীর্ঘমেয়াদে লিভার ও কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করছেন অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, শুধু বেকারি বা মিষ্টান্নেই নয়, শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর অবস্থাও উদ্বেগজনক। রান্নাঘরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, খাদ্যদ্রব্যে তেলাপোকার অবাধ বিচরণ, খাদ্য প্রস্তুতকরণের স্থানে ইদুরের বাসা, কাঁচা ও রান্না করা খাবার পাশাপাশি ফ্রিজে রাখা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে শিল্পলবণ, বাসি তেল ও মেয়াদোত্তীর্ণ কেমিক্যাল, রংসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপকরণ। আবার ফাঙ্গাস পড়া বা বাসি খাবার পুনরায় গরম করে ভোক্তাকে দেওয়া হচ্ছে। ভোক্তারা মনের অজান্তেই এসব খাবার গ্রহণ করছে- যা ধীরে ধীরে দেহে নানা রোগের কারণ হয়ে উঠছে। নগরের অলিগলিতে গড়ে উঠেছে ভেজাল চিপসের কারখানা। যা বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার ক্ষতি করছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টের অবস্থা ভয়াবহ। আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। আমরা আমাদের সীমিত জনবল দিয়ে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। তবে ব্যবসায়ীরা যদি দায়িত্বশীল না হন তাহলে কোনো কিছুই পরিবর্তন সম্ভব নয়।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির তালিকাভুক্ত ৩৫০টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে এর বাইরে ছোট-বড় মিলিয়ে হোটেল-রেস্টুরেন্টর সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। সমিতিটির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ও মহানগরের সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ আবদুল হান্নান বাবু বলেন, অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বা যেকোনো উপায়ে অর্থ জোগাড় করে হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় নেমে পড়ছেন। তাদের কোনো অতীত অভিজ্ঞতা নেই। মুনাফাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। খাবারকে মুখরোচক, আকর্ষণীয় করে তুলতে তারা ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করছেন।

ভেজাল খাদ্য ও অস্বাস্থ্যকর খাবার দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের জটিল রোগসহ নানান শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমাদের খাবারে যেভাবে ভেজাল দেওয়া হচ্ছে- এটা আসলেই একটা উদ্বেগের বিষয়। ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কার্যকরী উদ্যোগ নিলে ভালো হয়। যদিও তাদের জনবলে ঘাটতি আছে। তবুও এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাদা নজর দিতে হবে। ঘন ঘন অভিযান পরিচালনা করতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, মানুষ এখন মুনাফাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। ব্যবসার আড়ালে সেবামূলক কাজ করতে হয়- সেটাই ভুলে যাচ্ছে। খাদ্য ব্যবসায় ভেজাল দেওয়া বা মানহীন খাবার দেওয়া- একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে হোটেল-রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা হয়নি। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। তারা সমন্বয় করে কাজ করলে সমস্যার সমাধান হবে।

এদিকে মঙ্গলবার ভেজালবিরোধী অভিযানে নগরের দুই রেস্টুরেন্টকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভ্রাম্যমাণ আদালত। নগরের লালদীঘির পাড় এলাকায় এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা।অভিযানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হোটেলের খাবার রান্না, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক, রং ও ফ্লেভার ব্যবহার এবং ফুটপাত দখল করে দোকানের পণ্য রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার বিষয়টি আমলে নেন ম্যাজিস্ট্রেট।

এসব অপরাধে জালালাবাদ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টকে ২০ হাজার টাকা ও কে সি দে রোডের ডেগচি বাড়ি রেস্টুরেন্টকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমদ।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

পদক্ষেপ বাংলাদেশ এর বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত ।

পদক্ষেপ বাংলাদেশ-এর আয়োজন, কর্মসূচী ব্যতিক্রম ও বৈচিত্র্যময়। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকার পরিবাগস্থ সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের উন্মুক্ত মঞ্চে জাতীয় সংগঠন ও শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত’ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ১ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সাংস্কৃতিক পর্ব—দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে : শিল্পবৃত্ত, পদক্ষেপ বাংলাদেশ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে : কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, শিল্পবৃত্ত, ঢাকা স্বরকল্পন, মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি করেন : মীর বরকত, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন : গোবিন্দলাল সরকার, মো: তাজুল ইসলাম, খাইরুল আলম।

উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন আবৃত্তিশিল্পী মীর বরকত, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জেবুন্নেসা জেবা, উদয়ন স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষক সবিতা সাহা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পদক্ষেপ বাংলাদেশ-এর সভাপতি বাদল চৌধুরী। স্বাগব বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল্লাহ সাঈদ। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মতিয়ারা মুক্তা।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়- বহু ত্যাগ, সংগ্রাম আর প্রত্যাশার ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ শুধু পতাকা আর জাতীয় সঙ্গীত বদল নয়, খোল-নলচে সব পাল্টে নতুন এক আদর্শকে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নের নবযাত্রা। এই স্বপ্নের প্রধান এবং একমাত্র উপজীব্য মানুষ। মানুষের কল্যাণ, মানুষের মুক্তি, মানুষের মর্যাদা এবং মানুষের স্বাধীন ভূমিই শেষ কথা। কত মাতা, কত ভগ্নি, কত জানা-অজানা নারী তাঁর সম্ভ্রম হারিয়েছে শুধু এই মানুষকে মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। মানুষ কল্পনাবিলাসী কিন্তু নিজেতো সে কাল্পনিক নয়Ñএ ভূমিতেই তার সৃষ্টি, বেড়ে ওঠা, ভালো-মন্দের স্বাদ নেয়া, অতঃপর ভূমিতেই মিলিয়ে যাওয়া। এ ভূমির প্রতি তার প্রচ- ভালোবাসা।

মাতৃক্রোড়ে যেমনিভাবে শিশু বেড়ে ওঠে; একইভাবে কাদা-মাটি গায়ে মেখে আলো-বাতাসে অবগাহন করে এই ভূমিকেই মাতৃক্রোড় ভেবে একদিন চিরবিদায় নেয় প্রতিটি মানবশিশু। জন্ম আর মৃত্যুতে যে ভূমিকে কখনো আলাদা করা যায় নাÑতারই অমার্যাদা করবে ভিনদেশী তস্কর! তা কি করে মেনে নেয় ধুলো-বালি গায়ে মেখে বেড়ে ওঠা এ জনপদের মানুষেরা। এ ভূমিরই সাহসী-ত্যাগী- পোড়খাওয়া এক নামÑশেখ মুজিব। মাটি আর মানুষের সাথে ছিলো যাঁর আজন্ম সখ্য, ভিনদেশী হায়েনার হিংস্র থাবায় বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তাঁর হৃদপি-; তবুও ভূমি আর মানুষের স্বাধীনতায় অবিচল থেকেছেন তিনি।

তাঁরই অঙ্গুলী হেলনে সাড়ে সাত কোটি মানুষ পরিণত হয়েছে এক একজন নেতাজী সুভাষ বসু, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, তিতুমীর, বাঘাযতিন, লক্ষ্মীবাই, ভগৎসিং, রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, সালাউদ্দিন, বরকত, আসাদ, মনুমিয়া’য়। এ গাঙ্গেয় বদ্বীপের তেরোশত নদীর জোয়ার আর পাখিদের কলতানে উচ্চারিত হয়েছে ভিনদেশী হায়েনার বিনাশ- ধ্বনি। লাঙলের ফলা থেকে তৈরি উর্বর মাটির প্রতিটি চাকা পরিণত হয়েছে শত্রুবিনাশী আনবিক বোমায়। বাঁশঝাড় উজাড় করে তৈরি হয়েছে চকচকে বেয়নেট।

নিঃশঙ্ক চিত্তে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার অগ্নিপুরুষ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সঞ্চারিত হয়েছে সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রতিটি রক্ত কণিকায়Ñবিজয় অর্জিত হয়েছে মানুষের সংগ্রাম আর আত্মদানের। বিজয় মাসের সূচনালগ্নে আমরা নতুন করে উদ্দীপ্ত হতে চাইÑমাটি আর মানুষের কল্যাণ কামনায়। আমরা বিনাশ চাই সেই নরপশুদের যারা মাটির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ভিনদেশী হায়েনাদের সঙ্গী হয়েছিলো মনুষত্বের বিনাশ সাধনে। সেই সাথে চাই আজকের এই দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’-এর সরকারি স্বীকৃতি। মাটি আর মানুষের জয় হোক, জয় হোক শুভ চিন্তা আর আদর্শের।

ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা পরিবারের দানে গড়ে উঠছে এতিম শিশু ও নারীর ক্ষমতায়ন কেন্দ্র 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পরিবারের দান করা জমিতে এতিম শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে ও নারীর স্কিল ডেভলপমেন্টের জন্য গড়ে উঠছে মির্জা রুহুল আমিন এন্ড ফাতেমা মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের আদর্শ কলোনিতে কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ চলছে। 

 আর কমপ্লেক্সটি বাসমাহ ফাউন্ডেশনের তত্বাবধানে শত শত এতিম শিশুদের মৌলিক অধিকার পাওয়ার ঠিকানা হিসেবে পরিণত হবে। যেখানে এতিম শিশুরা খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকারগুলো বিনামূল্যে নিশ্চিৎ হবে। নারীদের স্কিল ডেভলপমেন্টে কাজ করবে। 

গত এক বছর যাবৎ এ কমপ্লেক্সটির কাজ শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত চার ভাগের তিন ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে শতাধিক এতিম শিশুকে নিয়ে কমপ্লেক্সটিতে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিৎ করেছেন  কমপ্লেক্সে দায়িত্বে থাকা  বাসমাহ অরফানস হোম এর এডুকেশন ইনচার্জ আহম্মেদ আমিন।

তিনি আরও জানান, এই কমপ্লেক্সে বাসমাহ অরফানস হোম, বাসমাহ স্কুল এন্ড কালচারাল সেন্টার এবং বাসমাহ ওমেন্স এন্ড স্কিল ডেভলপমেন্ট সেন্টার হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ। এক কক্ষে চলছিলো একটি দোয়ার আয়োজন। জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও দেশের মঙ্গল কামনায় মির্জা পরিবারের উদ্যোগে এতিম শিশুদের নিয়ে এ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। 

ঠাকুরগাঁওয়ে এতিম শিশুদের মৌলিক অধিকার  ও নারীদের ডেভলপমেন্টের জন্য এমন একটি উদ্যোগকে বাস্তবায়নের পেছনের ব্যপারে জানতে চাইলে অরফান হোম এর এডুকেশন ইনচার্জ বলেন, আমাদের বাসমাহ ঠাকুরগাঁও সহ সারা দেশে পাঁচটি শাখা আছে। নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁর একটি শাখাতে মির্জা ফখরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যগণ পরিদর্শন করেন।  আমাদের কার্যক্রেম তাদের ভালো লাগে এবং এতিম শিশুদের জন্য এমন উদ্যোগ ঠাকুরগাঁওয়ে বাস্তবায়নের জন্য তারা উৎসাহ প্রকাশ করেন এবং ৭৫ শতক জমি এতিমদের জন্য দান করেন৷ এই কর্মকর্তা বলেন বাসমাহ’র  সমস্ত পক্রিয়া মেনেই এটি গড়ে উঠছে।

বাসমাহর সিইও মীর সাখাওয়াত হোসাইন এর বরাতে প্রতিষ্ঠানটির এডুকেশন ইনচার্জ আরও বলেন  বাসমাহ ফাউন্ডেশনের তত্ত্ববধানে সারা দেশ জুড়ে সেবামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে ।বাসমাহ স্কুল এন্ড কালচারাল সেন্টার,বাসমাহ ওরফান্স হোম,বাসমাহ উইমমেন্স স্কিল এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার।এ ছাড়াও শীতকালীন শীত বস্ত্র বিতরণ,কুরবানি প্রোগ্রাম,ইফতার প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ