
চট্টগ্রাম: পূর্ব রেলওয়ের পাহাড়তলীস্থ সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) দপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা (এএও) পদে কর্মরত আমিনুল ইসলাম জুয়েল সম্প্রতি প্রকাশিত “সরঞ্জাম ক্রয়ে জোচ্চুরি” শিরোনামের সংবাদকে সম্পূর্ণ ভুয়া, ভিত্তিহীন ও মনগড়া দাবি করেছেন। তিনি বলেন, সংবাদটি শুধু তার ব্যক্তিগত সম্মানহানি নয়, সরকারি দপ্তরের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা।
জুয়েল জানিয়েছেন, তার কর্মস্থল জেনারেল শাখা, যেখানে কোনো বড় ধরনের সরঞ্জাম ক্রয়, টেন্ডার বা মালামাল সরবরাহ হয় না। তিনি বলেন— “আমার দপ্তর থেকে কোনো বড়সর ক্রয় হয় না। মাসিক ইনপ্রেস বরাদ্দ দিয়ে শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় অফিস সামগ্রী কেনা হয়—কলম, পেন্সিল, কলিং বেল, পত্রিকার বিল, ব্যাটারি, সাবান, সিলের স্ট্যাপলার পিন, বিভিন্ন ফুল–ছলা ঝাড়ু ইত্যাদি। এর বাইরে কোনো সরঞ্জাম ক্রয়ের প্রশ্নই আসে না।”

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুয়েলের বিরুদ্ধে “এক বছরের অনিয়ম” রয়েছে। কিন্তু তিনি যোগদান করেছেন মাত্র ৬ মাস আগে। জুয়েল প্রশ্ন তুলেছেন—“আমি তখন দপ্তরে ছিলামই না। এই সময়ের অনিয়ম আমাকে কীভাবে চাপানো হলো? এটি স্পষ্টভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য।”
জুয়েল আরও জানান, যাচাই–বাছাই ছাড়া এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা সাংবাদিকতার নৈতিক দায়িত্ব লঙ্ঘন। তিনি বলেন—“সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। তারা চাইলে কাউকে সম্মানিত করতে পারেন, আবার ভুল তথ্য দিয়ে অসন্মানও করতে পারেন। ব্যক্তিগত স্বার্থে মনগড়া তথ্য ছড়ানো গণমাধ্যমের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি শুধু ব্যক্তিকে নয়, পুরো সরকারি দপ্তরকে অস্থির করে তোলে। প্রয়োজনে আমি আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।”

প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, প্রধান সহকারী জগদীশ চাকমা নাকি সাংবাদিকের সামনে ঘুষের টাকা জুয়েলের কাছে বুঝিয়ে দেন। জুয়েল কিছুই না জানার ভান করেন এবং পরে টাকা টেবিলে রেখে জগদীশ চলে যান।
এই বিষয়ে জগদীশ চাকমা সাংবাদিকদের বলেন— “আমি ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম সিআরবি সোনালী ব্যাংক থেকে ৪,৫৩৭ টাকা উত্তোলন করে নিয়ম অনুযায়ী সহকারী কর্মকর্তা জুয়েলের কাছে হস্তান্তর করেছি। এটিকে ঘুষ হিসেবে প্রচার করা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও দু:খজনক। এগুলো অফিসের টাকা, ইনপ্রেস বিলের নিয়মিত বরাদ্দের অংশ।”
তিনি আরও বলেন, সংবাদে ঘটনাটি যেমন দেখানো হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সরকারি দপ্তরের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার প্রচেষ্টা।যাচাই–বাছাইয়ে দেখা গেছে, যেসব স্টক–রেকর্ড ও রিক্যুইজিশন ফাইলের উল্লেখ রয়েছে, তা বড় ক্রয় নয়, বরং নিত্যপ্রয়োজনীয় ইনপ্রেস সামগ্রীর হিসাব। যেহেতু জুয়েল এই পদে মাত্র ছয় মাস কর্মরত, তাই এক বছরের অনিয়মের অভিযোগ তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
পূর্ব রেলের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জুয়েল জোর দিয়ে বলেছেন— আমি নির্দোষ। সত্য যাচাই করলেই প্রমাণিত হবে—সংবাদটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও ভিত্তিহীন।উভয় কর্মকর্তা—জুয়েল ও জগদীশ চাকমা—সংবাদটিকে মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীলভাবে সত্য যাচাই করে সংবাদ প্রকাশের আহ্বান জানাচ্ছেন।
এদিকে, সূত্রে জানা গেছে, এর আগে পাহাড়তলীতে অবস্থিত রেলওয়ের বিভাগীয় ভুসম্পত্তি দপ্তরে এএও হিসেবে কর্মরত অবস্থায় জুয়েল লীজের নামে রেলের জায়গা বেচে খাওয়ার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর দৈনিক ঈশান-এর অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেই ঘটনার তদন্ত শেষে রেলওয়ে ভুসম্পত্তি দপ্তর থেকে তাকে ওএসডি করা হয়। পরে তাকে পাহাড়তলীতে অবস্থিত সিসিএস দপ্তরের জেনারেল সেকশনে এএও পদে পদায়ন করা হয়।
জুয়েল বলেন, সংবাদে তাকে পুনরায় ওএসডি বা অতীতে ঘটানো অন্য কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দেখানো সম্পূর্ণ মনগড়া এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই ধরনের কোনো ঘটনা আমার চাকরি জীবনে ঘটেনি। তিনি জানিয়েছেন, এটি সরকারি দপ্তরের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।










