আজঃ শুক্রবার ১৪ মার্চ, ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসেও নিমন্ত্রণ পাননি প্রতিষ্ঠাতা জমিদার জগন্নাথের বংশধররা

মাঈনুল মিছির: বিভাগীয় সম্পাদক

 

পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গার পাড়ে সাড়ে ৭ একরের ক্যাম্পাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ছুটি থাকার কারণে একদিন আগে আগামী ১৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। তবে দেশের অন্যতম সেরা এ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জমি দানকারী জমিদার জগন্নাথ রায় চৌধুরীর বংশধরদের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসেও নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

 

 

রাজধানীর রায়ের বাজারে থাকেন জগন্নাথ রায়ের শেষ বংশধর কালিশঙ্কর রায় চৌধুরী। তিনি জগন্নাথ রায়ের ছেলে কিশোরীলাল রায়ের নাতির ছেলে। ভোরের কাগজের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কালিশঙ্কর রায়ের স্ত্রী ভারতী রায় চৌধুরীর কথা হয়। তিন মুঠোফোনে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমাদেরকে ডাকা হয়নি। আমার জামাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী। তাকেও কোনো নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অথচ আমার স্বামীর দাদার বাবা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জমি দান করেছিলেন। আমরা ছাড়া ঢাকায় জমিদারের বংশের কেউ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনুষ্ঠানে আমাদের বর্তমানে ডাকা হয় না।

 

 

 

এদিকে সর্বশেষ ২০১৯ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জমিদারের বংশধর হিসেবে বিশেষ মর্যাদা না পেলেও শুধুমাত্র ডাক পান কালিশঙ্কর ও তার স্ত্রী। তারা সমাবর্তনে যান। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাদের ডেকেছিলেন কথা বলার জন্য। কিন্তু অসুস্থতার জন্য দ্রুত পৌঁছাতে পারেনি বলে আক্ষেপ করেন কালিশঙ্করের স্ত্রী ভারতী রায়। তবে ১৯৯২ সালে জগন্নাথ কলেজের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে পরিবারসহ ডাক পান কালিশঙ্কর রায় চৌধুরী। দেয়া হয় বিশেষ মর্যাদা।

 

 

এদিকে একসময়ের প্রতাপশালী জমিদারের বংশধর কালিশঙ্কর রায়ের জীবন কাটছে দুর্দশায়। এ দেশের শিক্ষা বিস্তারে নিঃস্বার্থে কিশোরীলাল নিজের নামে কিশোরীলাল জুবিলি স্কুল ও তার বাবা জগন্নাথ রায়ের নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (তৎকালীণ স্কুল) জমি দেন। অথচ জীবন জীবিকার টানে বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েই চতুর্থ শেণির কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন কিশোরীলালের বংশধরের জামাতা। ছেলে না থাকায় সংসার চালানোর একমাত্র অবলম্বন বৃদ্ধ কালিশঙ্করের জামাতা বিপ্লব সাহা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োজিত। তবুও সে চাকরি অস্থায়ী।

কালিশঙ্করের স্ত্রী ভারতী রায় চৌধুরী বলেন, আমরা অর্থ সম্পদ চাই না। শুধু সম্মানটুকু চাই। জগন্নাথ কলেজ আমলে আমাদের ডাকা হতো। জুবিলি স্কুল থেকেও ডাকা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দিবসে আমাদের ডাকলে ভালো লাগবে। এছাড়া আমার জামাতার চাকরি স্থায়ী হয়ে গেলে আমরা বৃদ্ধ বয়সে শান্তি পাব।

 

 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বালিয়াটির এক সময়ের প্রতাপশালী জমিদার ও ব্রিটিশ সরকার থেকে রায় খেতাপপ্রাপ্ত কিশোরীলাল রায় চৌধুরী এ দেশের শিক্ষা বিস্তারের জন্য ১৮৬৮ সালে তার বাবা জগন্নাথ রায়ের নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর কলেজ, তারপর ২০০৫ সালে আইন পাশের মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়। ১৮ বছরের যৌবন পার হতে চলা এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ২০ হাজার শিক্ষার্থী, ৮০০ শিক্ষক রয়েছেন। বিসিএস, ব্যাংক, জুডিশিয়ারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রতি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকেন। নানা গবেষণায়ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

দেশব্যাপী নারী হেনস্থার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের মানববন্ধন

দেশব্যাপী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, অনলাইনে হেনস্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে কেন্দ্র ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।

আজ সোমবার (১০ মার্চ) সকালে চট্টগ্রামে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন করেছে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এবং পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রদল । এসময় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল নেতা মোঃ আরমান হোসেন, মোঃ মানিক রতন তানিম, সামির হায়দার, হৃদয় মোল্লা, আহসান আলমগীর চৌধুরী, সামিরা নুর সহ নেতৃবৃন্দ।

পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল নেতা
রিয়াদুল হক রিয়াদ, আতিক, জিসান সহ ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ।

টেকসই উন্নয়নে জ্বালানি নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিতের দাবি

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে “বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নারীর ক্ষমতায়নঃ টেকসই উন্নয়নে জ্বালানি নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত কর” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নারীর অংশগ্রহণ, ক্ষমতায়ন, জ্বালানি অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহন বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে। আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্লিন (কোস্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভায়রনমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক) ও বিডাব্লিউজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট), সিএসডিএফ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল

সারাদেশে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করে নারীদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণকারীরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারের প্রয়োজনীয়তা ও বিদ্যুৎ খাতে নারীর অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তা তুলে ধরেন। তারা জোর দিয়ে বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে জ্বালানি খাতে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে এবং সকল স্তরে জ্বালানির ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসাারের প্রয়োজনীয়তা ও বিদ্যুৎ খাতে নারীর অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে গুরুত্বআরোপ করেন।

ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির ৪৬ শতাংশই ব্যবহার হয় গৃহাস্থলির কাজে অর্থাৎ নারীরাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছেন কিন্তু আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানির ফলে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধির কারণে তারাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন।
নারী নেত্রী ও চিটাগাং সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, নারীরা জ্বালানি খাতে পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন, উৎপাদন থেকে বিতরণ সব ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। সারাদেশে নারীদের

মালিকানায় মাত্র ২-৪ শতাংশ জমি থাকায় বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের এড়িয়ে যান এবং পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র সুবিধাভোগী হিসেবে তাদেরদের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ‘সংবেদনশীল বিষয়’’ হিসেবে দেখেন, কিন্তু সক্রিয় অংশীদার বা নীতিনির্ধারক হিসেবে নারীদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।
চিটাগাং সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরামের প্রকল্প সমন্বয়কারী শাম্পা কে নাহার বলেন, জ্বীবাশ্ম জ্বালানী ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কারণে নারীরা নানাবিধ মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, কারণ পুরুষদের মতো তারা সহজে স্থান বদল করতে পারেন না। স্থানীয় এলাকায় বহিরাগতদের ভিড়ের কারণে নারীদের চলাচল, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন এবং মৌলিক প্রয়োজন পূরণে অসুবিধার সম্মুখীন হন। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে এসব সমস্যা সমাধানে খুব বেশি তৎপর হতে দেখা যায় না। সাধারণত পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ঊওঅ) প্রক্রিয়ার বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণের জন্যই নারীদের নামমাত্র পরামর্শ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সভায় চট্টগ্রাম ফোরাম অন ইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্যা ও ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদ্যৗস বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময় নারীদের বিশেষ প্রয়োজন, বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করেন।জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো, মাত্রাতিরিক্ত পারদ, সীসা, ক্যাডমিয়াম, সালফার ও ক্রোমিয়াম নির্গত করে। এই বিষাক্ত

ধাতুগুলো নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। নারীরা এই দূষণের সরাসরি ও নিরীহ শিকার হলেও তাদের কোনো ক্ষতিপূরণের অধিকার নেই, কারণ তাদের নামে জমির মালিকানা থাকে না। প্রচারাভিযান কর্মীরা নারীদের জন্য সহজে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান।

আলোচনা ও প্রচারাভিযানে অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনা অংশনেন সিাংবাদিক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, মহানগর মহিলা দলের সহ-সভাপতি সায়মা হক, উত্তর জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক লায়লা ইয়াছমিন, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফ্রুটস এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন এর কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সেলিম জাহ্ঙ্গাীর, ক্যাব চকবাজার থানা কমিটির সভাপতি আবদুল আলীম, অধিকার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ওসমান জাহাঙ্গীর, নারী উদ্যোক্তা ফারজানা মুক্তাদির, ছাত্র প্রতিনিধি পার্থ সরকার, হারিসা খানম সুখী প্রমুখ।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ