
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে পুরোপুরি পঙ্গু করতে দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক তান্ডবলীলা চালানো হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের সহিংসতার উদ্দেশ্য ছিল আমাদের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু করে দেয়া এবং দেশকে আবার ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করা। সেই জন্য সবাইকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান। তিনি আজ সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সন্ত্রাসী হামলায় আহতদের দেখতে শেরেবাংলা নগরের পঙ্গু হাসপাতালে এই কথা বলেন।কোটা আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’র জন্যই এত মানুষ হতাহত হলো। এইভাবে আর কেউ যেন কোন ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে না পারে, সেই দিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা লাগবে করে দেব এবং করে দিচ্ছি। যাদের অঙ্গহানী হয়েছে, তাদের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের ব্যবস্থা নেবে তাঁর সরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের সাধ্যমত আমরা করে দেব। অপরাধটা কি করেছি? এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ আর কেউ যেন এই দেশে চালাতে না পারে, সেই জন্য আমি সকলের সহযোগিতা চাই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।আহতদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।নিটোর পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী শামীম উজ্জামান আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এই সময় প্রধানমন্ত্রী আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন। এই সময় অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মহাখালীতে অবস্থিত সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শন করেন। ঐসময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্টরা এই সময় উপস্থিত ছিলেন।সরকার প্রধান একইসঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞও পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’র ফল আজকের এই অবস্থা। জালিয়ে পুড়িয়ে সব একদিকে ছারখার। আর কত মানুষ প্রাণ হারাল, কতগুলো মানুষ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।শেখ হাসিনা বলেন, সমস্ত দাবি মেনে নেওয়ার পরেও তাদের সেই শাটডাউন কেন শেষ হচ্ছে না তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।তিনি বলেন, ২০০১ সালেও বিএনপি-জামায়াত এই রকম তান্ডবলীলা চালিয়েছিল। সেসময় আওয়ামী লীগের প্রায় ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। কত মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে, হাত-পা কেটে দিয়েছে, চোখ তুলে নিয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন ও নারীদের পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। আবার ২০১৩, ‘১৪ ও ‘১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস হয়েছে । চারিদিকে আগুন লাগানো, গাড়ির মধ্যে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা। আবার ২০২৩ সালে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা। নেতা-কর্মী মেরে গাছে ঝুলিয়ে রাখা, বার বার পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা-এটা কোন ধরনের রাজনীতি আমি জানি না।তিনি নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, যেখানে আমি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি, মানুষের জীবন মান উন্নয়ন করেছি। ২০০৮ সালের আর আজকে ২০২৪ সালের বাংলাদেশ এক নয়। যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে সেবা দেয়, সেইগুলোর উপর বেশি তান্ডবলীলা চালানো হয়। আর কোন মায়ের কোল খালি হোক, তা আমি চাই না। আমিতো বাবা-মা সব হারিয়েছি। আমিতো জানি হারাবার কত কষ্ট।তিনি বলেন, সেই কষ্ট বুকে নিয়েই ’৭৫ এর পর রিফিউজি হিসেবে প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে এক রকম জোর করেই ’৮১ সালে বাংলার মানুষের জন্য দেশে ফিরে আসি।নিজের ছোট ছোট সন্তানদের রেখে দেশে ফিরে আসার স্মৃতি রোমন্থন করে বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে জাতির পিতার কন্যা বলেন, আমি আমার সন্তানদের জন্য কতটুকুই বা করতে পেরেছি, নিজেরা চাকরি-বাকরি করে নিজেদের লেখাপড়া করেছে। কিন্তু বাংলার মানুষের জন্য করেছি। আজ অন্তত বাংলার মানুষের ভাত কাপড়, চিকিৎসা, কাজের ব্যবস্থা সবইতো করে দিচ্ছিলাম। যখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেলাম, তখন আবার এই তান্ডব করে।
