আজঃ শনিবার ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

সাড়ে ৪শ বছরেও অপরূপ মাসুম খাঁ কাবুলি মসজিদ

পাবনা প্রতিনিধিঃ

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

পাবনার বিখ্যাত চলনবিল অঞ্চলের ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর এর ৪৪৪ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে আজও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে তিন গম্বুজবিশিষ্ট ‘শাহী মসজিদ’। শাহী মসজিদটি বাংলার মুসলিম স্থাপত্যে একটি নতুন অধ্যায় সংযোজন করে। পাবনা-ভাঙ্গুড়া মহাসড়কে চাটমোহর শহরের ভাদুনগর মোড় থেকে ১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম কর্নারে সুলতানী মোঘল আমলের নিদর্শন নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্যের ৪৪৪ বছরের মসজিদটি। কাকশাল গোত্রের সন্তান খান মুহাম্মদ তুকি খান ৯৮৯ হিজরি অর্থাৎ ১৫৮১ খ্রিষ্টাব্দে আকবরের শাসনামলে সৈয়দ নেতা আবুল ফতে মোহাম্মদ মাসুম খাঁর অর্থায়নে তারই সহোদর মুহাম্মদ বিন তুর্কি খান (কাকশাল) চাটমোহরে মসজিদটি নির্মাণ করেন। সম্রাট আকবরের সময়কালে মসজিদটি মাসুম খাঁ কাবুলি নামে নামকরণ করা হয়। বর্তমানে চাটমোহর শাহী মসজিদ নামে সর্বাধিক পরিচিত। চাটমোহরের তিন গম্বুজ শাহী মসজিদের শিলালিপিতে এর নির্মাতা ও নির্মাণকাল সম্বন্ধে এ পর্যন্ত কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি।

চাটমোহর উপজেলা উইকিপিডিয়া সূত্রে ও মুসল্লিদের নিকট থেকে জানা যায়, চাটমোহর শাহী মসজিদটি কালের বিবর্তনে এক সময় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ১৯৮০ এর দশকে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর মসজিদটির অবকাঠামো ঠিক রেখে নতুনভাবে নির্মাণ করেন। তবে পুনর্নিমাণের কয়েক বছর পর মসজিদের তিনটি গম্বুজ ও ছাদ প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের অধীনে মসজিদ সংস্কার ও সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মাসুম খাঁ কাবুলি মসজিদ একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। মসজিদটি সংস্কারের সময় এর অভ্যন্তরে একটি তুঘরা শিলালিপি পাওয়া যায়। শিলালিপিটি বর্তমানে রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। চাটমোহর এক সময় মোগল পাঠানদের অবাধ বিচরণভূমি এবং অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা ছিল।

মসজিদটির ভেতরের দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট, প্রস্থ প্রায় ২২ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ৪৫ ফুট। ক্ষুদ্র পাতলা নকশা খচিত লাল জাফরি ইটে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির সামনে ইদারার গায়ে কালেমা তাইয়্যেবা লিখিত এক খন্ড কালো পাথর আজো শোভিত আছে। মসজিদ অভ্যন্তরে মেহরাবের চারদিকে ইটের কারুকাজ লক্ষণীয়। ফলকে খোদাইকৃত ফার্সি অক্ষরে মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে।

বর্তমানে মসজিদটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি রয়েছেন পদাধিকার নিয়মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসা নাসের চৌধুরী। আর পেশ ইমাম হিসাবে হাফেজ কাজী আব্দুস সালাম মাসুদ এবং মুয়াজ্জিন হিসেবে রয়েছেন তরিকুল ইসলাম। আর পুরাকৃর্তি ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পক্ষে পরিচালক হিসেবে আছেন শাহজাহান আলী। শাহজাহান আলী তিন দশকের বেশি সময় ধরে এই শাহী মসজিদের দেখাশোনা করছেন।

পরিচালক শাহজাহান আলী বলেন, নথিপত্রে চাটমোহর শাহী মসজিদ মাসুম খাঁনের নামে পাওয়া গেলেও সুলতানী-মোঘল আমলের শাহী মসজিদ মনে করে সারাবছরে বহু মানুষ আসেন পাবনার চাটমোহরে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা আসেন একসারিতে তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ ও এর কারুকাজ দেখতে। সংস্কারের মাধ্যমে মূল কাঠামো ও সৌন্দর্য ধরে রাখার চেষ্টা চলছে।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা থেকে আসা শহিদুল ইসলাম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, আমি অনেক বছর হচ্ছে শুনেছি চাটমোহরে মোঘল আমলের স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম নিদর্শন চাটমোহরে প্রায় সাড়ে ৪শ বছরের পুরাতন মাসুম খাঁ কাবুলি নামে মসজিদ আছে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট চাটমোহর শাহী মসজিদের নির্মাণ কৌশলে প্রাচীন সুলতানী স্থাপত্যের প্রভাব রয়েছে। আজ এসে নিজ চোঁখে দেখে অনেক ভালো লাগলো, মসজিদে নামাজ আদায় করলাম, সকলের জন্য দোয়া করেছি।

মসজিদের মুয়াজ্জিন মো: তরিকুল ইসলাম বলেন, মাসুম খাঁ কাবুলি এই এলাকা শাসনকালে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট প্রার্থনাকক্ষ নির্মাণে মুগল রীতি মসজিদ নির্মাণ পরিকল্পনার একটি পরিপুর্ণ রূপ হিসেবেই বিবেচিত হয়। বাংলায় বিদ্যমান মুগল ইমারতের মধ্যে এই মসজিদটি সর্ব প্রাচীন নিদর্শন। যদিও ইমারত টি মুগল আমলে নির্মিত কিন্তু এটি বর্তমান রূপে এ অঞ্চলের সুলতানি স্থাপত্য রীতির সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। প্রায় প্রতিদিন অনেকেই আসেন দেখতে, ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এমন একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি।

মসজিদের ইমাম হাফেজ কাজী আব্দুস সালাম মাসুদ বলেন, দূর থেকে মসজিদটি বিশাল মনে হলেও, ভেতরে মাত্র দুই কাতার লোক নামাজে দাঁড়াতে পারেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার নামাজ আদায় হয় এই মসজিদে। এছাড়া, মসজিদের বাইরে দু’টি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় সাড়ে ৪শ বছর পূর্বে নির্মিত এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন।

কেউ মসজিদটি দেখতে আসতে চাইলে, ঢাকা থেকে ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলরুটের ভাঙ্গুড়ার বড়াল ব্রীজ স্টেশনে ও চাটমোহর স্টেশনে নেমে মাত্র ৯ ও ৪ কিলোমিটার পশ্চিম ও উত্তরে অটোরিকশা বা ভ্যানে চড়ে সহজে আসতে পারবেন। ঢাকার কমলাপুর থেকে সকালে আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে চড়ে চাটমোহরে পৌঁছাবেন দুপুরে, সময় লাগবে মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টা। চাটমোহরে ভালো মানের খাবার হোটেল রয়েছে। দুপুর থেকে ঘুরে বিকেলে পদ্মা এক্সপ্রেসে চড়ে আবার ঢাকা ফিরে যেতে পারবেন। এছাড়া, রাতযাপন করতে চাইলেও চাটমোহর, পাবনা ও ঈশ্বরদীতে রয়েছে আধুনিক সব হোটেল।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

বোয়ালখালীতে বিলুপ্ত পথে কালোজিরা ধানের আবাদ।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বোয়ালখালীতে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ঐতিহ্যবাহী কালোজিরা ধানের আবাদ। এক সময় কৃষকরা বিভিন্ন ধানের পাশাপাশি এই কালো জিরা ধানের চাষও করত। অন্যান্য ধানের চেয়ে খরচ বেশি ও ফলন কম হওয়ায় কালো জিরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা। ফলে এই কালো জিরা ধানের জায়গা দখল করে নিয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বীজের অভাবেও এই ঐতিহ্যবাহী ধানের আবাদ হ্রাস পাচ্ছে বলে জানান উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা জানান । তবে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা কিংবা প্রদর্শনী পাওয়া গেলে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথ থেকে উত্তরনের সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।

বুধবার বিকেলে বোয়ালখালীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, আমন মৌসুমে সর্বত্রই চাষ হয়েছে বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের। কালো জিরা ধানের চাষ একে বারেই নেই বললেই চলে। হাতে গুনা কয়েকজনে এই চাষ করেছে তাও সীমিত আকারে। তবে সুখের কথা, বিচ্ছিন্নভাবে কম পরিমাণে হলেও বিলুপ্তপ্রায় কালোজিরা ধানের চাষ করেছেন সারোয়াতলীর কৃষক নুরুল আলম , করলডেঙ্গার কৃষক কাওসার, পোপাদিয়া কৃষক আনোয়ার।

তিনি বলেন, একসময় প্রতিটি কৃষক পরিবারের ঐতিহ্য ছিলো সুগন্ধিযুক্ত কালোজিরা, বিন্নী, কাশিয়াবিন্নি, সরুসহ নানান জাতের ধান। এ ধান কাটার সময়কে ঘিরে গ্রাম বাংলা মেতে উঠত নবান্নের উৎসবে। এ চিকন চাল দিয়ে পিঠা-পুলি, পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ক্ষির, পায়েস, ফিরনি ও জর্দাসহ আরও সুস্বাদু মুখরোচক নানা ধরনের খাবার তৈরী করে খাওয়ানো হতো পাড়া প্রতিবেশীদের । আবহমান বাংলার ঐতিহ্য অনুযায়ী শ্বশুরবাড়িতে জামাই এলে জামাই পাতে সুগন্ধিযুক্ত চিকন চালের ভাত দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। বর্ণাঢ্য পরিবার থেকে শুরু করে নিন্ম মধ্যবিত্ত হলে ও একবেলা অবশ্যই এই চালের ভাত রান্না করা হতো। সেইসব এখন অতীত দিনের স্মৃতি। ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা মেটাতে সারাদেশ থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিবান্ধব এ সমস্ত জাতের দেশি ধান।

কৃষকরা জানান , কালোজিরা ধানের ফলন হয় কম। কানিপ্রতি অন্য জাতের ধান যেখানে ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ আড়ি উৎপাদন হয় সেখানে এ জাতের ফলন হয় সর্বোচ্চ ৩০ আড়ি পর্যন্ত। তবে বাজারে দাম দ্বিগুণ পাওয়া যায়। প্রতি কেজি চাল ৮০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি করা যায় । লাভের কথা মাথায় রেখে কৃষকেরা আমন ধানে বেশি আগ্রহী হলে ও এখন ও গ্রামের গৃহস্থ পরিবারের কাছে এ ধানের কদর সবসময়ই রয়েছে। আর তাছাড়া হাট বাজারে এখন আর এই চাল পাওয়া যায় না। এখন প্রায় বিলুপ্তের পথে ঐতিহ্যবাহী এসব সুগন্ধি ধান।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, গত ৫ বছর পূর্বে বোয়ালখালীতে ২৫ হেক্টর কৃষি জমিতে কালোজিরা ধান চাষ হতো। বর্তমানে ৫ হেক্টর জমিতে এ ধানের চাষ করেছেন কৃষকেরা। স্থানীয়ভাবে ‘কালোজিরা ধানের আবাদ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কৃষি অফিসার মো. শাহানুর ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমন ধানের অনেক উচ্চ ফলনশীল জাত রয়েছে, যে গুলোর ফলন অনেক বেশী এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম। অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলনায় কালোজিরা ধানের ফলন কম হয়। ফলন কম হলেও বাজারে এর দাম বেশি থাকে, খরচ বেশি হওয়ার কারণে কৃষকরা এ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

বোয়ালখালীতে আহল্লা দরবার শরীফ ৩ দিন ব্যাপী ওরশ আজ শুরু

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী আহলা দরবার শরীফের প্রাণসত্তা, হাযত রওয়া মুশকিল ক্বোশা, সুলতানুল মোনাজেরীন হযরতুল আল্লামা শাহসূফি গাজী আবুল মোকারেম মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম আল কাদেরী, আল চিশতি প্রকাশ নুরী বাবা (রহ.)’র ৪৯ তম উরশ শরীফ আহলা দরবার শরীফে মহা সমারোহ ১২ ডিসেম্বর ২৭ অগ্রহায়ণ ৩ দিন ব্যাপী ওরশ আজ শুক্রবার থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ।

ওরশ শরীফ পরিচালনা করবেন পীরে কামেল হযরতুল আল্লামা শাহসুফি মাওলানা আলহাজ্ব সৈয়দ এ, জেড, এম সেহাবউদ্দীন খালেদ আল কাদেরী আল চিশতী (রহ)র সাহেবজাদা আহলা দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন, রাহবারে তরিকত শাহসূফি সৈয়দ আবরার ইবনে সেহাব আল কাদেরী, আল চিশতি (মা,জ্বি,আ) সাহেব কেবলা।

ইতিমধ্যে ওরশের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থী, ভক্ত মুরিদানের ব্যাপক সমাগম হয়। তথ্য মতে, সৈয়দ আবুল মোকাররম মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম (নূরী বাবা) আল-কাদেরী আল্-আলচিশতি (রহ:) মাইজভান্ডার শরীফের গোড়া পত্তনকারী গাউসুল আজম হযরত শাহসূফী মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক) প্রকাশ হযরত কেবলার আধ্যাত্মিক শিষ্য আহলা দরবার শরীফের প্রাণ পুরুষ কুতুবে জমান হযরত শাহসূফি মাওলানা কাজী আজাদ আলী (ক) এর জৈষ্ঠ্য পৌত্র।

তিনি আধ্যাত্মিক দরবারে ভক্ত মুরীদের নিকট আল্লাহও বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত, জগতকুূলের জন্য মহানস্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ করুনা সৃষ্টিকুলে শিরোমণি, পাপী-তাপির ত্রাণকর্তা ,নবীকুলে শ্রেষ্ঠ প্রিয় হাবিব রাসূল পাক হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেম আদর্শ শিক্ষা দিয়ে যান। তিনি আল্লাহর দ্বীন ও তরিকতের খেদমতে নিজের পূর্ণ জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। অলি- ইল্লাহ ও মুরশিদের প্রতি ভক্তদেরকে পুনঃ পুনঃ,আদব শিক্ষা দিয়ে গেছেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের শেষ দিকে একবার তীব্র খরা দেখা দেয় এবং অনাবৃষ্টির কারণে গ্রামে দুর্দশা চরমে পৌঁছে। পানির অভাবে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। খাল-বিল, নদী-নালা ও পুকুর শুকিয়ে যায় এবং ক্ষেত-খামারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই যুগে গ্রামীণ এলাকায় টিউবওয়েলের ব্যবহার ছিল না, আর তাই খাল-বিল- নদী- নালা-পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় মানুষের জীবন যাপন কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা, বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদে বলা হয়েছে “পানির অপর নাম জীবন।” ঠিক এমনি এক সংকটকালে একদিন হযরত নূরী বাবা (রহ:) কধুরখীল গ্রামের এক ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদানের জন্যে সেখানে যান। গ্রামের লোকজন হযরত নূরী বাবা (রহ:)-কে কাছে পেয়ে তাঁকে মহান স্রষ্টার প্রিয় বন্ধু জেনে তাঁর খেদমতে তাঁদের এই দুর্দশার কথা আর্জি হিসেবে পেশ করেন এবং পরম করুণাময় আল্লাহ্তা’লার দরবারে এই দুর্দশা লাঘবের জন্যে তাঁকে অসিলা করেন। হযরত নূরী বাবা (রহ:) গ্রামের জনগণকে এই বলে বোঝান যে সবই আল্লাহ্ পাকের ইচ্ছা; তিনিই মুশকিল তথা সংকট দিতে পারেন, আবার তিনিই তা আসান তথা লাঘব করতে পারেন। কেননা, সবই তাঁর ইচ্ছাধীন।

হযরত নূরী বাবা (রহ:) আরও বলেন, “একদিকে আপনারা যেমন বৃষ্টির জন্যে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছেন, অন্যদিকে ইটের ভাটার মালিকরা অনাবৃষ্টির জন্যে খোদার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। এ বড়ই পরস্পর বিরোধী অবস্থান, পরস্পর বিরোধী স্বার্থের বিষয়।” কিন্তু ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিত উলামায়ে কেরাম ও সমবেত শ্রোতামন্ডলীর বারংবার বিনীত অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত নূরী বাবা (রহ:) তাঁর সারগর্ভ বয়ানসমৃদ্ধ ওয়াজ শেষে মোনাজাতের সময় হযরত রসূলে করীম (দঃ) ও বুযুর্গানে দ্বীনের অসিলায় ওই অঞ্চলে বৃষ্টির জন্যে পরম করুণাময় আল্লাহতা’লার দরবারে কাতরভাবে ফরিয়াদ করেন।

আর অমনি মোনাজাত শেষ না হতেই ঝুপ ঝুপ করে মুষল ধারে বৃষ্টি নেমে এলো। উপস্থিত সবাই প্রার্থনারত অবস্থায় তাঁদের প্রাণের আকুতি পূরণ হতে দেখে চরম বিস্ময়ে বৃষ্টিতে ভিজে যাবার কথা বিস্মৃত হলেন এবং ভাবাবেগে আপ্লুত হলেন। অতঃপর মোনাজাত শেষে হযরত নূরী বাবা (রহ:) সাহেবে দাওয়াত, অর্থাৎ, যিনি তাঁকে এখানে আনার এন্তেজাম করেছিলেন, তাঁর বাড়িতে তাশরিফ নিলে ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিত সবাই কৃতজ্ঞ চিত্তে এই মহান ওলির কাছে বায়াত হন। ইমাম যুরকানী মালেকী (রহ:) তাঁর প্রণীত বিখ্যাত আল্ মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া গ্রন্থে অসংখ্য হাদীস উদ্ধৃত করেছেন, যেগুলোতে আমরা জানতে পারি যে গাউস, আবদাল, আকতাব, নুজাবা, নুকাবা প্রমুখ ওলি-আউলিয়ার মাধ্যমে
আল্লাহ্তা’লা একটি আধ্যাত্মিক প্রশাসন জারি রেখেছেন। এই ওলি-আউলিয়ার মাধ্যমেই দুনিয়াতে বৃষ্টিপাত হয়, ফলে ফসলে মাঠ-প্রান্তর ভরে যায়, উট হৃষ্টপুষ্ট হয়, মাছ হৃষ্টপুষ্ট হয় এবং দুনিয়া থেকে বালা মসীবত দূর হয়। হযরত নূরী বাবা (রহ:)-এর এই কারামত মহানবী (দ:) এর ওই শাশ্বত বাণীর এক বাস্তব রূপ, জ্বলন্ত নজির।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ