আজঃ মঙ্গলবার ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় অচলাবস্থা: কাস্টমসে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি।

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের লাগাতার শাটডাউনের কারণে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম। এতে দেশের প্রধান বাণিজ্যিক বন্দর চরম অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে। চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ী এবং রপ্তানিকারকরা।প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরেও। কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির প্রথম দিনে শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ হতে শুরু করেছে। সকাল ছয়টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর বন্দর থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে। আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নও বন্ধ হয়ে গেছে।
জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো কার্যক্রম চালু রয়েছে। কারণ, এসব জাহাজের নিবন্ধনসহ অন্যান্য কার্যক্রমের অনুমোদন আগেই হয়েছে। তবে নতুন আসা যেসব জাহাজের নিবন্ধন হয়নি, সেগুলো জেটিতে ভেড়ানোর সুযোগ থাকবে না। অর্থাৎ কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে পুরো বন্দর অচল হয়ে পড়বে।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির শুল্কায়ন থেকে খালাস পর্যন্ত সব কার্যক্রম কাস্টমসের অনুমোদনে হয়। কাস্টমসের অনুমোদন ছাড়া এসব কার্যক্রমের কোনোটি হয় না। ফলে কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ হলে বন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়।

জানতে চাইলে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক জাহাজ কোম্পানি মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির হেড অব অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসেন চৌধুরী বলেন, আগের অনুমোদন থাকায় জেটিতে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ চলছে। তবে রপ্তানি শুল্কায়ন না হলে পণ্য রপ্তানি করা যাবে না। আবার যেসব জাহাজ এখন নিবন্ধন হয়নি, সেগুলোতে কনটেইনার ওঠানো-নামানো করা যাবে না।

সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে রাজস্ব খাতের সংস্কার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে শনিবার থেকে সারা দেশের শুল্ক–কর কার্যালয়ে লাগাতার শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হয়। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। কারণ, আমদানি-রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগ এই বন্দর দিয়ে আনা-নেওয়া হয়। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম বলেন, এই কর্মসূচি আমদানি-রপ্তানিতে ভয়াবহ সংকট তৈরি করবে। কারণ, কাস্টমসের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পুরো বন্দরে অচলাবস্থা তৈরি হবে।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, শনিবার থেকে সারাদেশে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে কমপ্লিট শাটডাউন কার্যক্রম চালু থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে। পাশাপাশি, সারাদেশের রাজস্ব দপ্তর থেকে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে।

পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা জাতীয় রাজস্ব ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার এবং এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনাও করেছেন, যাতে রাজস্ব ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সংস্কার দ্রুত সম্ভব হয়।

পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, এই আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং দেশের স্বার্থে যৌক্তিক দাবিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পালিত হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

দেশ বদলাতে থ্রি জিরো থিওরি আদর্শ মডেল: চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়াউদ্দীন বলেছেন, দেশ বদলাতে তথা পৃথিবী বদলাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর থ্রি জিরো থিওরি একটি আদর্শ মডেল। এ মডেল অনুসরণ করে আমাদের তরুণ সমাজ কাজ করলে দেশে যেমন ক্ষুধা এবং বেকারত্ব দূর হবে, তেমনি মানবজাতি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বেঁচে থাকবে।
কমিশনার রোববার চট্টগ্রামের জেলা তথ্য অফিস

আয়োজনে চট্টগ্রাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অডিটোরিয়ামে ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই সব কথা বলেন।বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আজকের বিশ্বে তরুণদের জন্য সম্ভাবনা ও সুযোগের ক্ষেত্র দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে শুধু চাকরির পিছনে ছুটে সীমাবদ্ধ না থেকে নিজেদের যোগ্যতা, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হতে হবে।

সভপতির বক্তব্যে মোঃ বোরহান উদ্দীন বলেন, যুবক-যুবতীদের নিজেরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার এবং পরিবারের লোকদেরকে ভোট দিতে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে নির্বাচন উৎসব হবে। এই উৎসবে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আশা করে সরকার। এজন্য নির্বাচনী পরিবেশকে অবাধ, সুষ্ঠু ও ভয়হীন করার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

জেলা তথ্য অফিস, চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোঃ বোরহান উদ্দীন সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আবুল বাশার, আঞ্চলিক তথ্য অফিস, চট্টগ্রামের সিনিয়র তথ্য অফিসার বাপ্পী চক্রবর্তী, সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজের অধ্যক্ষ এস এম গিয়াসউদ্দিন বাবর, আব্দুল বারী প্রমূখ বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন । যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণরত প্রায় ১৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী এবং প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ঠাকুরগাঁওয়ে নবাগত পুলিশ সুপারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা

ঠাকুরগাঁওয়ে নবাগত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেনের সাথে স্থানীয় সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৭ ডিসেম্বর রবিবার দুপুর ১২টায় জেলা পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।এসময় পুলিশ সুপার বেলাল হোসেন বলেন, মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের বাকস্বাধীনতা একমাত্র মিডিয়ার মাধ্যমেই রক্ষা করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের সেবা করাই আমার প্রথম কাজ। মাদক সব অপরাধের মূল উৎস। তাই যেকোনো মূল্যে সমাজকে মাদকমুক্ত করতে হবে। এসময় যানজট, মাদকমুক্ত করতে ও বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন পুলিশ সুপার।


এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) খোদাদাদ হোসেন,সহকারী পুলিশ সুপার রাণীশংকৈল সার্কেল স্নেহাশীষ কুমার দাস, ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফর রহমান মিঠু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান তানু সহ জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।উল্লেখ্য,গত ২৯ নভেম্বর বেলাল হোসেন ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ