এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ভাই-বোনদের বিরুদ্ধে আটটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ এসব মামলা করা হয়েছে বলে সংস্থাটির

উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ জানিয়েছেন। গ্রামের প্রান্তিক লোকজনকে ব্যবসায়ী সাজিয়ে নিজ মালিকানাধীন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলাগুলো করা হয়েছে। মামলায় জাবেদ পরিবারের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মচারী এবং ইউসিবিএল ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। মামলায় দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং মানিলান্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও (৩) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আট মামলার প্রতিটিতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ছোট ভাই ও ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি আসামি হিসেবে আছেন। সাতটি মামলায় ব্যাংকটির আরেক পরিচালক জাবেদের আরেক ভাই আসিফুজ্জামান চৌধুরী আসামি হিসেবে আছেন। তিনটি মামলায় জাবেদের বোন ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক রোকসানা জামান চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে।এছাড়া ইউসিবিএল’র বিভিন্ন বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা, পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্য এবং জাবেদ পরিবারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আরও কয়েকজন কর্মচারীকে প্রতিটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।

যাদের ব্যবসায়ী সাজিয়ে ঋণ নেওয়া হয়েছে তারা হলেন- সেলুন কর্মচারী রাজধন সুশীল, কৃষক মো. মাঈন উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও নুরুল ইসলাম, প্রবাসী সাইফু উদ্দিন, ফুটবল খেলোয়াড় দিদারুল আলম এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক আমির হামজা।
আটটি মামলায় মোট ৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রামের সহজ-সরল লোকজনের কাছ থেকে কৌশলে বিভিন্ন তথ্য ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়ে তাদের নামে ইউসিবিএল-এ হিসেব খোলা হয়।
এরপর তাদের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়। আর জাবেদ পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নামে খোলা একই ব্যাংকের হিসেব নম্বরে সেই টাকা স্থানান্তর করে পরবর্তীতে তা তুলে নিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালে এ অনিয়ম ও জালিয়াতি সংঘটিত হওয়ার সময় ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তখন ব্যাংকে জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। জাবেদের ভাই-বোন ও পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সদস্য প্রভাব সৃষ্টি করে ঋণ অনুমোদন করেন এবং সেগুলো মিলেমিশে আত্মসাত করেন।
একই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গত নভেম্বরে আরও চারটি মামলা করেছিল দুদক।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ প্রয়াত শিল্পপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর বড় ছেলে। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। সেখান থেকে বাবু একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাবেদ প্রথমে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হিসেবে
পারিবারিক ব্যবসা আরামিট গ্রুপ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড দেখাশোনা করতেন। ব্যবসায়ী সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবাও একই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
২০১২ সালে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুর পর সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের রাজনীতিতে অভিষেক হয়। সরাসরি সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেয়ে ‘খালি মাঠে গোল দেন’। এরপর ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এরমধ্যে প্রথমবার প্রতিমন্ত্রী ও দ্বিতীয় দফায় পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন। ২০২৪ সালে আবারও মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে মন্ত্রীসভায় আর জায়গা হয়নি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে লন্ডনে তার অবস্থানের তথ্য প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। এর আগে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে ১৪০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানিলন্ডারিং আইনে ছয়টি মামলা করেছিল দুদক। এসব মামলায় জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য আসামি হিসেবে আছেন।










