
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. এনামুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। সাভারে জমে উঠেছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি নির্বাচনের মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ঘুরিয়ে বলা যায়, লড়াইটা হচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগের মনোনীত এবং অমনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে।
এবার নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।তবে নৌকা প্রতীক চেয়েও না পেয়ে এবার তার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ধামশোনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।তাই শাসক দলের প্রার্থী হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের নৌকাকে রীতিমতো চোখ রাঙাচ্ছে নবম জাতীয় সংসদের সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের প্রতীক ঈগল ও স্বতন্ত্র অপর প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রতীক ট্রাক।
মূলত এই তিন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণার আমেজেই সরগরম রাজধানী সংলগ্ন ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনটি।এছাড়া অন্যান্য দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন মিলন কুমার ভঞ্জ, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব), নুরুল আমিন, গণফ্রন্ট (মাছ), মাহবুবুল হাসান, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ), আইরিন পারভীন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল), ইসরাফিল হোসেন সাভারী, এনপিপি (আম), মো. জুলহাস, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা), সাইফুল ইসলাম মেম্বার, বিএনএম (নোঙ্গর)।জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে সমর্থন জানিয়েছে। বিপরীতে এনামুর রহমানের যাদের ওপর এতদিন ভরসা করে নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারাই এখন ডিগবাজি দিচ্ছেন।

বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো বিগত এক দশকের পুরোনো সঙ্গীদের অনেকেই একে একে ছেড়ে যাওয়ায় হতাশ আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। তবে ডিগবাজীর এই সুনামি মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের ভরসা এখন নৌকা প্রতীকের ভোট ব্যাংক ছাড়াও সাধারণ মানুষের ভোট।বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নির্বাচন বর্জন ও চলমান আন্দোলনে সাধারণ ভোটারদের মন জয় করে সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনা টাকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।শেষ মুহূর্তে দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ডিগবাজি দেওয়ায় কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. এনামুর রহমান। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন কৌশল নিয়েছে দলটি।
সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, সাভার পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল গনি, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিনসহ দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা নির্বাচনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।
ডা. এনামুর রহমান বলেন, প্রার্থীদের মধ্যে কার যোগ্যতা বেশি এবং বিগত এক দশকে আমার কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করলে সাধারণ ভোটাররা নিঃসন্দেহে আমাকেই বেছে নেবেন। তৃতীয় বারের মতো নৌকার মনোনয়ন দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে আমাকে মূল্যায়ন করেছেন।দলের নেতাকর্মীদের একাংশের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ডিগবাজি দেওয়ার বিষয়ে ডা. এনামুর রহমান বলেন, এতে আমরা বিচলিত নই। নির্বাচন এলে এমন প্রবণতা স্বাভাবিক।অন্যদিকে সাভারে দীর্ঘ এক দশক রাজনীতির আড়ালে ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ। প্রচারে নেমেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের একাংশকে রাতারাতি নিজের শিবিরে ভিরিয়ে রীতিমতো চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি।

বাবা আনোয়ার জং ছিলেন সাবেক এমপি। সেই সাথে নিজেও ছিলেন এমপি। ১০ বছর পর সাভারে ফিরে পুরোনো নেতাকর্মীদের ফিরে পেয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি।তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ বলেন, নবম সংসদে বিএনপির প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সাভারের দুর্গে আওয়ামী লীগের পতাকা আমিই উড়িয়েছিলাম। অথচ রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আমাকে মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছে।
এবার স্বতন্ত্র হিসেবেও নিজের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ এসেছে বলে জানিয়েছেন তৌহিদ জং মুরাদ।
অপরদিকে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমিই জিতব।
এদিকে আওয়ামী লীগের শিবির থেকে কে কখন কীভাবে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর পক্ষে ডিগবাজি দেয়- এমন আতঙ্ক বিরাজ করছে নির্বাচনি এলাকাজুড়ে। আগের দুটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ।