আজঃ শনিবার ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

সাভারে নৌকার প্রতিদ্ধন্ধী দুই স্বতন্ত্র শক্তিশালী প্রার্থী

সাভার সংবাদদাতা

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. এনামুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। সাভারে জমে উঠেছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি নির্বাচনের মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ঘুরিয়ে বলা যায়,‌ লড়াইটা হচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগের মনোনীত এবং অমনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে।
এবার নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান‌।তবে নৌকা প্রতীক চেয়েও না পেয়ে এবার তার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ধামশোনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।তাই শাসক দলের প্রার্থী হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের নৌকাকে রীতিমতো চোখ রাঙাচ্ছে নবম জাতীয় সংসদের সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের প্রতীক ঈগল ও স্বতন্ত্র অপর প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রতীক ট্রাক।

মূলত এই তিন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণার আমেজেই সরগরম রাজধানী সংলগ্ন ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনটি।এছাড়া অন্যান্য দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন মিলন কুমার ভঞ্জ, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব), নুরুল আমিন, গণফ্রন্ট (মাছ), মাহবুবুল হাসান, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ), আইরিন পারভীন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল), ইসরাফিল হোসেন সাভারী, এনপিপি (আম), মো. জুলহাস, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা), সাইফুল ইসলাম মেম্বার, বিএনএম (নোঙ্গর)।জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে সমর্থন জানিয়েছে। বিপরীতে এনামুর রহমানের যাদের ওপর এতদিন ভরসা করে নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারাই এখন ডিগবাজি দিচ্ছেন।

বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো বিগত এক দশকের পুরোনো সঙ্গীদের অনেকেই একে একে ছেড়ে যাওয়ায় হতাশ আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। তবে ডিগবাজীর এই সুনামি মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের ভরসা এখন নৌকা প্রতীকের ভোট ব্যাংক ছাড়াও সাধারণ মানুষের ভোট।বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নির্বাচন বর্জন ও চলমান আন্দোলনে সাধারণ ভোটারদের মন জয় করে সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনা টাকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।শেষ মুহূর্তে দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ডিগবাজি দেওয়ায় কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. এনামুর রহমান। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন কৌশল নিয়েছে দলটি।

সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, সাভার পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল গনি, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিনসহ দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা নির্বাচনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।
ডা. এনামুর রহমান বলেন, প্রার্থীদের মধ্যে কার যোগ্যতা বেশি এবং বিগত এক দশকে আমার কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করলে সাধারণ ভোটাররা নিঃসন্দেহে আমাকেই বেছে নেবেন। তৃতীয় বারের মতো নৌকার মনোনয়ন দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে আমাকে মূল্যায়ন করেছেন।দলের নেতাকর্মীদের একাংশের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ডিগবাজি দেওয়ার বিষয়ে ডা. এনামুর রহমান বলেন, এতে আমরা বিচলিত নই। নির্বাচন এলে এমন প্রবণতা স্বাভাবিক।অন্যদিকে সাভারে দীর্ঘ এক দশক রাজনীতির আড়ালে ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ। প্রচারে নেমেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের একাংশকে রাতারাতি নিজের শিবিরে ভিরিয়ে রীতিমতো চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি।

বাবা আনোয়ার জং ছিলেন সাবেক এমপি। সেই সাথে নিজেও ছিলেন এমপি। ১০ বছর পর সাভারে ফিরে পুরোনো নেতাকর্মীদের ফিরে পেয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি।তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ বলেন, নবম সংসদে বিএনপির প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সাভারের দুর্গে আওয়ামী লীগের পতাকা আমিই উড়িয়েছিলাম। অথচ রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আমাকে মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছে।
এবার স্বতন্ত্র হিসেবেও নিজের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ এসেছে বলে জানিয়েছেন তৌহিদ জং মুরাদ।

অপরদিকে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমিই জিতব।
এদিকে আওয়ামী লীগের শিবির থেকে কে কখন কীভাবে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর পক্ষে ডিগবাজি দেয়- এমন আতঙ্ক বিরাজ করছে নির্বাচনি এলাকাজুড়ে। আগের দুটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।আহত ওসমান হাদীর সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া চিকিৎসা কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।


একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে হামলায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ, প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্য গ্রহণ, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং হামলার পেছনে কোনো সংগঠিত পরিকল্পনা থাকলে তা উন্মোচনের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।

নির্বাচনী প্রচারণাকালে ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান নির্বাচনী প্রচারণাকালে ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। দুপুরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ইস্রাফিল ফরায়েজী জানিয়েছেন,নির্বাচনী প্রচারণাকালে তাকে গুলি করা হয়। এর আগে, গত নভেম্বর মাসে দেশি-বিদেশি ৩০টি নম্বর থেকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি পেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন হাদি। ১৪ নভেম্বর ফেসবুকে একটি পোস্টে তিনি জানিয়েছিলেন, তাকে হত্যা, তার বাড়িতে আগুনসহ তার মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদি ইতিমধ্যে তার ভেড়িফাইড ফেইস বুকে লিখেছিলেন, গত তিন ঘণ্টায় আমার নম্বরে আওয়ামী লীগের খুনিরা অন্তত ৩০টা বিদেশি নম্বর থেকে কল ও টেক্সট করেছে। যার সামারি হলো- আমাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তারা আমার বাড়িতে আগুন দেবে। আমার মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণ করবে এবং আমাকে হত্যা করবে।

আজ শুক্রবার ১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ইস্রাফিল ফরায়েজী জানিয়েছেন-নির্বাচনী প্রচারণাকালে তাকে গুলি করা হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ