আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্তৃক ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ পালন

ডেস্ক নিউজ:

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৭ই মার্চ উদযাপিত হয়েছে। এ দিবস উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। কর্মসূচি শুরু হয় ৭ই মার্চ বৃহস্পতিবার কাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার মধ্য দিয়ে। এ সময় বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মহানগর ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড, সিভিল সার্জন কার্যালয়, রেলওয়ে পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, আরআরএফ, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, আনসার-ভিডিপি, জেলা শিক্ষা অফিস, জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিস, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, খাদ্য বিভাগ, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা শিশু একাডেমি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, সাধারণ বীমা, বন বিভাগসহ, জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, সর্বস্তরের জনসাধারণ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
পুুষ্পস্তবক অর্পণের পর জেলা শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ৭ই মার্চ দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাজীব হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ তোফায়েল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম, মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, রেঞ্জ ডিআইজি নুরেআলম মিনা, পুলিশ সুপার এস. এম শফিউল্লাহ্, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযুদ্ধা মোজাফ্ফর আহমেদ জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযুদ্ধা এ. কে. এম সরোয়ার কামাল। এতে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে শিল্পকলা ও শিশু একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ছড়াপাঠ, ৭ মার্চের ভাষণ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পরে একই স্থানে বিকাল ৩টা থেকে জেলা তথ্য অফিস ও পিআইডি কর্তৃক আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের তত্তাবধানে ডিসি হিল, সি আর বি, টাইগারপাস মোড় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, জীবন ও কর্মের উপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার মোঃ তোফায়েল ইসলাম বলেন, ৭ই মার্চের ভাষনে আছে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ এখানে মুক্তি কথাটির নানা অর্থ রয়েছে। এর একটি অর্থ হল অর্থনৈতিক মুক্তি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি আজ সারা বিশ্বের একজন নেতাতে পরিণত হয়েছে। তাঁর ভাষণে মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এশিয়া মহাদেশে অনেক নেতা রয়েছে কিন্তু দেশের স্বাধীনতাকে জনগণের হাতে তুলে দিতে পারার মত নেতা একজনই আছে। স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে এ ভাষণে গুরুত্ব অপরিসীম । তাই ইউনেস্কো এ ভাষণকে ঐতিহ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ভাষণের অর্থ হচ্ছে কোন ধরনের অন্যায়, অপশক্তি, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কাছে মাথা নত না করা। যখনই দেশের কোন দুর্যোগ আসবে বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের মাধ্যমে আমাদের মনশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের ভাষণে দেশের মুক্তিকামী মানুষ আন্দোলনের শক্তি, উৎসাহ খুজে পায় যা পরবর্তীতে দেশের আপামর জনগনকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি নুরেআলম মিনা তার সুদীর্ঘ বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ প্রচারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি আলোকপাত করেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করা পর্যন্ত বাঙালির গৌরবের ইতিহাস তুলে ধরেন। পাকিস্তানি শাসনামলের বঞ্চনার ইতিহাস কিভাবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উজ্জীবিত বাঙালি বিজয়ের ইতিহাসে রূপান্তর করে তা তার বক্তৃতায় উঠে আসে।
সভাপতির বক্তব্যে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এখানে মুক্তি বলতে তিনি বুঝিয়েছিলেন ‘ফ্রিডম ফ্রম প্রোভার্টি, ‘ফ্রিডম ফ্রম হাংগ্রি’। জাতির জনকের সেই স্বপ্ন পূরণে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। স্বাধীনতার নেপথ্যের সকল তথ্য এক এক করে তুলে ধরার জন্য অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা স্মরণ করে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা পুলিশ সুপার এস.এম শফিউল্লাহ মহান মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় ৭ই মার্চের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত হয়ে দেশকে ভালোবাসার জন্য আহবান জানান।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ রাজনীতির কবি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর কাব্যমালার অনন্য নিদর্শন। ৭ মার্চের ভাষণ শুধু ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকেই অনুপ্রাণিত করেছিল তা নয়, বরং এই ভাষণ যুগে যুগে সকল অবহেলিত, বঞ্চিত ও স্বদীনতাকামী জাতি-গোষ্ঠীকে অনুপ্রেরণা জোগাতে থাকবে। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো এই ভাষণকে বৈশ্বিক দলিল (মেমোরী অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিষ্টার-এ অর্ন্তভূক্তিকরণ) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও এই ভাষণের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ প্রদত্ত ভাষণের দিনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ জাতীয় দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।


চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গাঙ্গেয় বদ্বীপের সংগীত ব্যক্তিত্ব যোগী স্বপন কুমার দাশ’র রচিত আধ্যাত্মিক ও দেহতত্ত্ব বিষয়ক গান নিয়ে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাংবাদিক কিরন শর্মার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলক ও প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম এর পরিচালক মো.মাহফুজুল হক। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর প্রখ্যাত সাধক শ্রীমৎ স্বামী সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী’জীকে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ‘খুঁজি তাঁরে’ অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয়।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র ঘোষ (যুদ্ধকালিন কমান্ডার), আব্দুর রহিম (লোক ও মরমি শিল্পী), রূপম ভট্টাচার্য (সাংবাদিক), স ম জিয়াউর রহমান(সাংবাদিক), দিদারুল ইসলাম (সংগীত পরিচালক ও কন্ঠ শিল্পী), তন্দ্রা দাশগুপ্তা, সংগীত শিল্পী সঞ্জয় রক্ষিত সহ প্রমুখ। সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত

ছিলেন পাপিয়া আহমেদ (সংগীত প্রযোজক বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম), অপু বর্মন (সংগীত শিল্পী বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন এবং সংগীত শিক্ষক জেলা শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রাম), অপু সেনগুপ্ত (বিশিষ্ট গীতিকার বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন), দীপ্ত দত্ত সংগীত শিল্পী (বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন)।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন, খ্যাতনামা মরমি কন্ঠ শিল্পী শিমুল শীল, বাউল শিল্পী বাবুল শীল, অভিষেক দাশ, বাউল জুয়েল দ্বীপ, শিউলী চৌধুরী, আনন্দ প্রকৃতি(মো:তৌহিদুল ইসলাম), আধাত্মিক শিল্পী সুরনাথ, কাওয়ালী শিল্পী মেঘলা। ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি প্রতিযোগিতার সেরা কন্ঠ শিল্পী বাঁধন ঘোষ, ইন্দ্রিলা ঘরজা, মিম দাশ, অধরা চৌধুরী রাত্রি, আরাধ্যা মজুমদার, সৈয়দ রাসতিন, অরূপ কুমার শীল, ঊর্মি নাগ সংগীত পরিবেশন করেন।

যন্ত্র সংগীত শিল্পীতে ছিলেন- কীবোর্ডে রুবেল ঘোষ, অক্টোপ্যাডে পাপন, তবলায় উৎস, বাংলা ঢোলে হৃদয় বাঁশিতে নিলয়। সংগীত তত্বাবধানে যোগী স্বপন কুমার দাশ, অনুষ্ঠান তত্বাবধানে মো: মোহসীন(সাধারণ সম্পাদক, ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি সংসদ)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মো: সাইফুর রহমান ও ববিতা ইসলাম।

পদক্ষেপ বাংলাদেশ এর বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত ।

পদক্ষেপ বাংলাদেশ-এর আয়োজন, কর্মসূচী ব্যতিক্রম ও বৈচিত্র্যময়। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকার পরিবাগস্থ সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের উন্মুক্ত মঞ্চে জাতীয় সংগঠন ও শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত’ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ১ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সাংস্কৃতিক পর্ব—দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে : শিল্পবৃত্ত, পদক্ষেপ বাংলাদেশ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে : কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, শিল্পবৃত্ত, ঢাকা স্বরকল্পন, মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি করেন : মীর বরকত, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন : গোবিন্দলাল সরকার, মো: তাজুল ইসলাম, খাইরুল আলম।

উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন আবৃত্তিশিল্পী মীর বরকত, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জেবুন্নেসা জেবা, উদয়ন স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষক সবিতা সাহা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পদক্ষেপ বাংলাদেশ-এর সভাপতি বাদল চৌধুরী। স্বাগব বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল্লাহ সাঈদ। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মতিয়ারা মুক্তা।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়- বহু ত্যাগ, সংগ্রাম আর প্রত্যাশার ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ শুধু পতাকা আর জাতীয় সঙ্গীত বদল নয়, খোল-নলচে সব পাল্টে নতুন এক আদর্শকে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নের নবযাত্রা। এই স্বপ্নের প্রধান এবং একমাত্র উপজীব্য মানুষ। মানুষের কল্যাণ, মানুষের মুক্তি, মানুষের মর্যাদা এবং মানুষের স্বাধীন ভূমিই শেষ কথা। কত মাতা, কত ভগ্নি, কত জানা-অজানা নারী তাঁর সম্ভ্রম হারিয়েছে শুধু এই মানুষকে মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। মানুষ কল্পনাবিলাসী কিন্তু নিজেতো সে কাল্পনিক নয়Ñএ ভূমিতেই তার সৃষ্টি, বেড়ে ওঠা, ভালো-মন্দের স্বাদ নেয়া, অতঃপর ভূমিতেই মিলিয়ে যাওয়া। এ ভূমির প্রতি তার প্রচ- ভালোবাসা।

মাতৃক্রোড়ে যেমনিভাবে শিশু বেড়ে ওঠে; একইভাবে কাদা-মাটি গায়ে মেখে আলো-বাতাসে অবগাহন করে এই ভূমিকেই মাতৃক্রোড় ভেবে একদিন চিরবিদায় নেয় প্রতিটি মানবশিশু। জন্ম আর মৃত্যুতে যে ভূমিকে কখনো আলাদা করা যায় নাÑতারই অমার্যাদা করবে ভিনদেশী তস্কর! তা কি করে মেনে নেয় ধুলো-বালি গায়ে মেখে বেড়ে ওঠা এ জনপদের মানুষেরা। এ ভূমিরই সাহসী-ত্যাগী- পোড়খাওয়া এক নামÑশেখ মুজিব। মাটি আর মানুষের সাথে ছিলো যাঁর আজন্ম সখ্য, ভিনদেশী হায়েনার হিংস্র থাবায় বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তাঁর হৃদপি-; তবুও ভূমি আর মানুষের স্বাধীনতায় অবিচল থেকেছেন তিনি।

তাঁরই অঙ্গুলী হেলনে সাড়ে সাত কোটি মানুষ পরিণত হয়েছে এক একজন নেতাজী সুভাষ বসু, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, তিতুমীর, বাঘাযতিন, লক্ষ্মীবাই, ভগৎসিং, রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, সালাউদ্দিন, বরকত, আসাদ, মনুমিয়া’য়। এ গাঙ্গেয় বদ্বীপের তেরোশত নদীর জোয়ার আর পাখিদের কলতানে উচ্চারিত হয়েছে ভিনদেশী হায়েনার বিনাশ- ধ্বনি। লাঙলের ফলা থেকে তৈরি উর্বর মাটির প্রতিটি চাকা পরিণত হয়েছে শত্রুবিনাশী আনবিক বোমায়। বাঁশঝাড় উজাড় করে তৈরি হয়েছে চকচকে বেয়নেট।

নিঃশঙ্ক চিত্তে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার অগ্নিপুরুষ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সঞ্চারিত হয়েছে সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রতিটি রক্ত কণিকায়Ñবিজয় অর্জিত হয়েছে মানুষের সংগ্রাম আর আত্মদানের। বিজয় মাসের সূচনালগ্নে আমরা নতুন করে উদ্দীপ্ত হতে চাইÑমাটি আর মানুষের কল্যাণ কামনায়। আমরা বিনাশ চাই সেই নরপশুদের যারা মাটির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ভিনদেশী হায়েনাদের সঙ্গী হয়েছিলো মনুষত্বের বিনাশ সাধনে। সেই সাথে চাই আজকের এই দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’-এর সরকারি স্বীকৃতি। মাটি আর মানুষের জয় হোক, জয় হোক শুভ চিন্তা আর আদর্শের।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ