আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

দেশের বিভিন্ন স্থানে মাস্টারদাসহ বিপ্লবীদের ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে যুব বিদ্রোহ দিবসের এক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাস্টারদা সূর্য সেনসহ বিপ্লবীদের ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বন্দরনগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘রাস্তা জুড়ে রোদ হোক’ শিরোনামে বোধন আবৃত্তি পরিষদ আয়োজিত ‘চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ উৎসবে’ বক্তারা এ দাবি জানান।
জানা গেছে, ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ হয়। নগরীর দামপাড়া এলাকায় তৎকালীন পুলিশ ব্যারাকের অস্ত্রাগার দখল করে নেন বিপ্লবীরা। সেখানেই অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর চার দিন স্বাধীন ছিল চট্টগ্রাম। পরে ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর সাথে মুখোমুখি লড়াই হয়। তিন ঘণ্টার সেই যুদ্ধে ৮২ জন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয় এবং ১২ জন বিপ্লবী শহীদ হন। বন্দর নগরীর জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে মাস্টারদা সূর্য সেনের একটি আবক্ষ মূর্তি এবং পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে আত্মাহুতির স্থানে বীরকন্যা প্রীতিলতার একটি আবক্ষ মূর্তি আছে। তবে বড় পরিসরে মাস্টারদা, প্রীতিলতা ও এই দলের অন্য শহীদ বিপ্লবীদের কোনো ভাস্কর্য চট্টগ্রামে নেই।
অনুষ্ঠানে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, সেই মহান শহীদদের আদর্শকে আজ তরুণদের সামনে তুলে ধরতে হবে। বাংলার ইতিহাসে গৌরবগাথা কম নয়। কিন্তু প্রায় বিস্মৃতির অতলে চলে গেছে আমাদের জাতীয় জীবনের এক অমূল্য বীরত্বগাথা চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ। যুব বিদ্রোহের মহানায়ক সূর্য সেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের শহীদদের ভাস্কর্য সারাদেশে নির্মাণ করা উচিত।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের সমস্ত অহংকার চূর্ণ করে দিয়েছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে তরুণ বিপ্লবীরা। দোর্দণ্ড প্রতাপের ব্রিটিশ শাসনের বিশাল ভারতবর্ষে চট্টগ্রামকে চার দিন স্বাধীন করে রেখেছিল অকুতোভয় বিপ্লবীরা। যুব বিদ্রোহের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। যুব বিদ্রোহে অংশ নেওয়া বিপ্লবীদের স্মরণে রাষ্ট্রকে আরো নানা উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাস্টারদা সূর্যসেনসহ বিপ্লবীদের ভাস্কর্য স্থাপন করা হোক।
উৎসবের শুরুতে যন্ত্র সংগীত পরিবেশন করেন দুর্জয় পাল ও প্রদ্যুৎ আচার্য। পরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বোধন আবৃত্তি পরিষদের সহ-সভাপতি সুবর্ণা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন কবি কমলেশ দাশগুপ্ত ও প্রীতিলতা ট্রাস্টের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য। বোধনের সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বোধনের অনুষ্ঠান সম্পাদক মৃন্ময় বিশ্বাস। পরে দলীয় নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন নৃত্য নিকেতন ও মাধুরী নৃত্যকলা একাডেমি। দলীয় গানে অংশ নেন সংগীতালয়, উদীচি শিল্পী গোষ্ঠী। একক আবৃত্তি পরিবেশনায় ছিলেন সুচয়ন ললিতকলা কেন্দ্রের আবৃত্তিশিল্পী তাসকিয়া তুন নূর তানিয়া ও নরেন আবৃত্তি একাডেমি আবৃত্তিশিল্পী পৃথা পারমিতা। কবিতা পাঠে অংশ নেন কবি ফারহানা আনন্দময়ী ও সারাফ নাওয়ার। বোধন আবৃত্তি পরিষদের শিশু ও বড়দের বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় যুব বিদ্রোহ উৎসব।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ভোলায় জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত ।

দ্বীপজেলা ভোলার আধুনিক সাহিত্য সংগঠন জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে ।গতকাল ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যায় ভোলা সদরের গঙ্গাকীর্তি হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগারে অনুষ্ঠিত জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সাধারণ সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম এর সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র প্রভাষক কবি রিপন শান, জাতীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট ভোলা জেলা শাখার সদস্য সচিব প্রভাষক কবি মিলি বসাক, জলসিঁড়ির সদস্য সচিব কবি মহিউদ্দিন মহিন, জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জলসিঁড়ির সংগঠক কবি নীহার মোশারফ, আবৃত্তিশিল্পী সমাজসেবক মীর মোশারেফ অমি প্রমুখ ।

সভায় উপস্থিত সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম কে সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সাংবাদিক কবি রিপন শানকে নির্বাহী সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সংগঠক মহিউদ্দিন মহিনকে সাধারণ সম্পাদক, কবি গবেষক কবি নীহার মোশারফ কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫- ২০২৭ গঠন করা হয়েছে ।

কমিটির সহ-সভাপতিগণ হচ্ছেন- সিনিয়র প্রভাষক কবি মিলি বসাক, কবি মোঃ জুলফিকার আলী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গণ হচ্ছেন- কবি আল মনির, আবৃত্তিশিল্পী মীর মোশারেফ অমি । অর্থ ও দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি বিলকিস জাহান মুনমুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি শাহনাজ পারুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাংবাদিক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ আরিফ । নির্বাহী সদস্যগণ হচ্ছেন- অধ্যক্ষ কবি এম এস জালাল বিল্লাহ, কবি দিলরুবা জ্যাসমিন, কবি চৌধুরী সাব্বির আলম এবং কবি এরশাদ সোহেল ।

আসছে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার বিকেল ৪ টায় ভোলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য জলসিঁড়ির মাসিক সাহিত্য সভায় নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ