আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার, প্রতারক চক্রের এক সদস্য গ্রেপ্তার 

সাহিদ বাদশা বাবু , লালমনিরহাট ::

চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে ভুয়া পরীক্ষা ও নিয়োগপত্র দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় এক প্রতারক চক্রের প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  গ্রেপ্তার আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই আসামির নাম শিবলু লোমান চৌধুরী। তিনি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাসিন্দা।এর আগে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ বুধবার (১ মে) রাতে ঢাকার উত্তরা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।ভুয়া নিয়োগপত্র ও টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় মিজানুর রহমান নামে এক ভুক্তভোগী বাদী হয়ে চক্রের প্রধান শিবলু লোমান চৌধুরীসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে লালমনিরহাট আদালতে একটি মামলা করেছিলে।এজাহার সূত্রে জানা গেছে, প্রতারক শিবলু লোমান চৌধুরী নিজেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের ডিজির এপিএসের পরিচয় দিয়ে চাকরির দেওয়ার ফাঁদ পাতে। তিনি রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় একটি চক্র তৈরি করে। গত ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকা ফার্মগেটে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়িতে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে জনবল নিয়োগের একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে প্রতারণা চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে তা খবর ছড়িয়ে দেয়।
পরে ওই পদে চাকরি দেওয়ার জন্য চক্রের সদস্য আলমগীর ও ভুয়া ডিবি কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী আব্দুর রহমানের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী চামটারপাড় এলাকার মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ১৯ লাখ, ভুরুঙ্গামারি উপজেলার আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে ৫ লাখ, লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের ধনঞ্জয় গ্রামের ইউনুস আলীর কাছ থেকে ৫ লাখ, রংপুর মিঠাপুকুর এলাকার শোয়েব আলীর কাছ থেকে ৫ লাখ, একই এলাকার আতিকুর রহমানের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ  টাকা হাতিয়ে নেয়।টাকা নেওয়ার পর প্রতারক চক্রটি গত বছরের ২৭ নভেম্বর কৌশলে ঢাকা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি কক্ষে ভুয়া পরীক্ষা নেয়। পরবর্তীতে গত ১ জানুয়ারি চাকরি প্রত্যাশীদের হাতে একটি করে নিয়োগপত্র তুলে দেয়। নির্ধারিত তারিখে চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে তারা বুঝতে পারে এটি ভুয়া নিয়োগপত্র এবং নিয়োগ পরীক্ষা ছিল সাজানো।
ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইলে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের নামে মামলা করে। সম্প্রতি চক্রের সদস্য আব্দুর রহমান চাকরিপ্রত্যাশী কুড়িগ্রামের মিজানুর রহমানের নামে অপহরণ মামলা করে। এ ছাড়া চাকরির নামে টাকা নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় সংবাদ করায় প্রতারক চক্রটি রংপুরের স্থানীয় দৈনিক গণকন্ঠ, দৈনিক লাখোকণ্ঠ পত্রিকা ও স্থানীয় দৈনিক দাবানল পত্রিকার প্রতিবেদকদের নামেও মামলা করে।ভুক্তভোগী চাকরিপ্রত্যাশী মিজানুর রহমান বলেন, গোয়ালের গরু ও জমি বন্ধক রেখে টাকা দিয়েছি। এখন আবাদি কোনো জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে জীবন চালাচ্ছি।লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের ধনঞ্জয় আরেক ভুক্তভোগী ইউনুস আলী বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা শেষে নিয়োগপত্র দেওয়ার পর বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছি। অর্থের অভাবে এখন পরিবার নিয়ে খুব কষ্ট আছি।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে প্রতারক চক্রের সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, কুড়িগ্রামের মিজানুর রহমানের সঙ্গে আমার যে লেনদেন ছিল তা প্রায় শোধ করে দিয়েছি। বাকি টাকাও দ্রুত পরিশোধ করব। তবে পত্রিকার প্রতিবেদকদের নামে কেন মামলা করেছেন? এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।
লালমনিরহাট সদর থানার ওসি ওমর ফারুক  বলেন, গ্রেপ্তার শিবলু চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে লালমনিরহাটে এনে শুক্রবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ